গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য কতটুকু র্যাম দরকার ?
প্রযুক্তিপণ্য আমাদের প্রাত্যহিক কর্মময় জীবনধারাকে শুধু বদলে দিয়েছে বললে ভুল হবে। কেননা, প্রযুক্তিপণ্যের নানামুখী উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ আমাদের চিত্তবিনোদনের ধারাকেও বদলে দিয়েছে ব্যাপকভাবে। মূলত এ কারণেই বলা যায়, প্রযুক্তিপণ্য অফিসগলি পেরিয়ে এখন আবাসস্থলেও শোভা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে কমপিউটার গেমিং বা মাল্টিমিডিয়া ফাংশনালিটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। গেমাররা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন গেমের জন্য আপগ্রেড করছেন তাদের প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড, র্যাম, সাউন্ড কার্ড ইত্যাদি। এসব হার্ডওয়্যার পণ্য সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। যারা রাখেন, তারা মূলত গ্রাফিক্স কার্ড, প্রসেসর বা র্যাম সম্পর্কে ধারণা রাখেন। কিন্তু গেমিং পারফরমেন্সের জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের সত্যিই কতটুকু র্যাম দরকার, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন খুব কম লোকই। বেশিরভাগ গেমারই মনে করেন, যত বেশি র্যাম, গেমিং পারফরমেন্স তত ভালো। এ ধারণা কী সর্বতোভাবে সত্য? এমন ধারণার উদ্ভবের পেছনে যৌক্তিক কারণ কী? এবং ব্যবহারকারীর জন্য সত্যিকার অর্থে কতটুকু র্যাম দরকার ? ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এবারের হার্ডওয়্যার বিভাগে।
সাধারণত বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের তৈরি করা প্রযুক্তিপণ্যের উন্নয়ন ও সংস্করণ ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে নাম্বার ব্যবহার করতে স্বাচছন্দ্য বোধ করেন বেশি। কেননা, এর মাধ্যমে ক্রেতার সামনে সরাসরি এবং সহজে পণ্যের উন্নয়নের কথা তুলে ধরা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভার্সন ২.০ বলতে সবসময় ভার্সন ১.০-এর চেয়ে ভালো ও উন্নত বোঝায়। ৩ গি.হা.-এর ক্লকস্পিড অবশ্য ২ গি.হা.-এর ক্লক স্পিডের চেয়ে অধিকতর দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং অনুরূপভাবে বলা যায় ৪ গি.বা. র্যাম অবশ্যই ৩ গি.বা.-এর চেয়ে ভালো। এটি সর্বজনগৃহীত সত্য এবং খুব কম লোকই এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে চাইবেন।
কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট, এই সহজ নাম্বার ধারণা থেকে অনেক জটিল ধরনের। এখানে কখনো কখনো ভার্সন ২.০-এর চমৎকার মার্জিত ভাব ইন্টারফেস খুঁজে পাওয়া যায় না, যার কারণে ব্যবহারকারীরা ভার্সন ১.০ ব্যবহারে বাধ্য হন। কখনো কখনো ৩ গি.হা. ক্লকস্পিড ২ গি.হা. ক্লকস্পিডের চেয়ে ধীরগতিসম্পন্ন হয়, যদি তা নিম্নতর আর্কিটেকচারভিত্তিক হয়। এমনকি কখনো কখনো অধিকতর র্যা মও পারফরমেন্সে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে না।
গ্রাফিক্স কার্ড প্রস্ত্ততকারকরা এ খাতে তাদের ব্যবসায়ের যাত্রার প্রথম থেকেই র্যামের পরিমাণকে কাজে লাগিয়ে আসছে মার্কেটিং টুল হিসেবে। এক সময় র্যামের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দরকার হতো গ্রাফিক্স কার্ডে ১০২৪x৭৬৮ রেজ্যুলেশন রান করানোর জন্য। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে থ্রিডি এক্সসেলারেটরের আবির্ভাব ঘটে এবং গ্রাফিক্স কার্ডের র্যামকে কাজে লাগানো হতে থাকে টেক্সচার স্টোর করতে এবং অনুমোদন করা হয় অ্যান্টি অ্যালাইসিং পোস্ট প্রসেসিং ও নরমাল ম্যাপিংয়ের ফিচার।
গ্রাফিক্স কার্ডের র্যাম কোথায় কোথায় ব্যবহার হচ্ছে সেদিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলে ধরা হয়নি এ লেখায়। বরং এখানে তুলে ধরা হয়েছে দৃঢ়ভাবে একত্রে ঠাসা বাস্তব দৃশ্যের প্রতি, যা বিভিন্ন পরিমাণে গ্রাফিক্স কার্ডের গেমিং এক্সপেরিয়েন্সে পাওয়া যায়। যদি গ্রাফিক্স কার্ডের অন-বোর্ড র্যাম বেশি থাকে, তাহলে সত্যিকার অর্থে কেমন সুবিধা পেতে পারেন তাই এ লেখায় পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হয়েছে।
র্যাম ব্যান্ডউইডথ বনাম পরিমাণ
আমাদের দেশে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মাঝে একটি বড় ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে : গ্রাফিক্স র্যাম বেশি থাকলে গেমিং পারফরমেন্স বাড়বে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কেননা, গ্রাফিক্স র্যামের ব্যান্ডউইডথ সরাসরি গেমিং পারফরমেন্সকে প্রভাবিত করতে পারে। পক্ষান্তরে র্যায়মের পরিমাণ কখনো প্রভাবিত করতে পারে না যে, কত দ্রুত গ্রাফিক্স কার্ড পারফরম করবে। তবে কখনো কখনো র্যামের পরিমাণ পরোক্ষভাবে গেমিং পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলে।
গ্রাফিক্স কার্ডের র্যামের ব্যান্ডউইডথ প্রভাবিত হয় দু’টি মূল ফ্যাক্টরের মাধ্যমে, যার একটি হলো ক্লক রেট এবং অপরটি হলো ইন্টারফেস উইডথ। ক্লক রেট পরিমাপ করা হয় হার্টজে সিপিইউয়ের মতো করে। ইন্টারফেসের উইডথ পরিমাপ করা হয় বিটে। যেমন ১২৮৯ বিট প্রশস্ত। খুব বেশি বিস্তৃত আলোচনা না করে প্রথমেই দেখে নেয়া যাক, ২০০ মে.হা. মেমরির ব্যান্ডউইডথ যাতে ১০০ মে.হা.-এর দ্বিগুণ মে.হা. মেমরি ব্যান্ডউইডথ দেয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা। অনুরূপভাবে ১২৮ বিট মেমরি বাস যাতে ৬৪ বিট বাসের দ্বিগুণ ব্যান্ডউইডথ দেয়া, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত।
বিষয়টি একটু জটিল, কেননা এখানে আলোচনা করা হয়েছে দু’টি ভিন্ন ভেরিয়েবল ক্লক রেট ও ব্যান্ডউইডথ সম্পর্কে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০ মে.হা. ৬৪ বিট মেমরির উচিত আনুমানিকভাবে একই ব্যান্ডউইডথ। যেমন ১০০ মে.হা., ২০০ বিট মেমরি হওয়া উচিত। এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে, যেমন- মেমরি ল্যাটেনসি। প্রযুক্তি সবসময় কিছু নিয়ম মেনে চলে। যেমন- GDDR5 অফার করে DDR-এর দ্বিগুণ থ্রোপুট যা GDDR4-এর প্রদত্ত ক্লকস্পিডের মাধ্যমে আসে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা উচিত, অধিকতর ব্যান্ডউইডথ গেমিং পারফরমেন্সে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
গ্রাফিক্স কার্ড র্যামের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় মেগাবাইট ও গিগাবাইট দিয়ে। ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে র্যামের পরিমাণ, যা গ্রাফিক্স কার্ড সদ্ব্যবহার করে তা সরাসরি গেমিং পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলে না। তবে এটি পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে পারে। গ্রাফিক্স কার্ড র্যাম শুধু তখন বিপরীত ধরনের পারফরম করে যদি সেই নির্দিষ্ট গেমের চাহিদা অনুযায়ী রিকোয়ারমেন্ট না থাকে। এতে বোঝা যাচ্ছে, গেমিং পারফরমেন্সের জন্য অন্যান্য বিষয়ও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
গ্রাফিক্স র্যাম কতটুকু দরকার হবে, তা নির্ভর করছে তিনটি মূল বিষয়ের ওপর : রেজ্যুলেশন, ভিজ্যুয়াল কোয়ালিটি ডিটেইল সেটিং এবং এএ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫২১ মে.বা. র্যাম পর্যাপ্ত মনে হতে পারে। এ বিষয়গুলো কোনো একটিকে সীমিত করতে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি এই বিষয়গুলোর মধ্য থেকে দু’টি বিষয়কে এক সাথে মোকাবেলা করতে পারে। তবে আপনি যদি পরিকল্পনা করেন, এ তিনটি বিষয়কে সর্বোচ্চ রেজ্যুলেশন, ভিজ্যুয়াল কোয়ালিটি সেটিং এবং এএ-এ সেট করতে, তাহলে ৫১২ মে.বা.-এর চেয়ে বেশি ভিডিও র্যাম দরকার হবে।
প্রাথমিক বিবেচনায় রেজ্যুলেশনের বিষয়টি আসা উচিত। কেননা এটি মূলত হার্ডওয়্যারের সীমাবদ্ধতা। যেমন- ২০ ইঞ্চি বা তুলনামূলকভাবে ছোট মনিটরের জন্য ১৬৮০x১০৫০ রেজ্যুলেশন দরকার। সুতরাং এ জন্য বাড়তি ১ গি.বা. গ্রাফিক্স র্যামও তুচ্ছ মনে হতে পারে। পক্ষান্তরে যদি আপনার মনিটর ২১ ইঞ্চি বা আরো বেশি বড় হয় যার রেজ্যুলেশন ১৯২০x১২০০, সেক্ষেত্রে ১ গি.বা. গ্রাফিক্স কার্ড র্যাম ভালো কাজ দিতে পারে।
০ টি মন্তব্য