পুরনো পিসি যেভাবে ব্যবহার করা যায়
তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের দ্রুত উন্নয়নের ফলে ব্যবহারকারীকে প্রায় ২-৩ বছর পর নতুন পিসি কেনার জন্য ব্যস্ত হতে দেখা যায় তার বর্তমান চাহিদা পূরণ করার জন্য৷ এ ব্যাপারটি এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারি পিসির গড় আয়ু মাত্র ২-৩ বছর, যা আমাদের পোষা কুকুর বা বেড়ালের গড় আয়ুর চেয়েও অনেক কম৷ আর এ কারণেই ২-৩ বছর পর পর পিসি বদলাতে হয় বা আপগ্রেড করতে হয় আর গুনতে হয় পকেটের পয়সা৷ কিংবা ২-৩ বছরের ব্যবহৃত পিসিকে বাতিল পণ্য হিসেবে স্টোরে রাখতে হয় বা ময়লা স্তুপে ফেলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হয়৷ অথচ এই পিসিগুলো বাতিল পণ্য হিসেবে গণ্য না করে নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য বরাদ্দ করে একদিকে যেমন সামাজিক দায়িত্ব পালন করা যায় তেমনি পারা যায় আমাদের চারপাশে কিছু অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত কাজে সেগুলো ব্যবহার করা৷
পুরনো পিসি কী কাজে ব্যবহার করা যাবে?
এই পুরনো পিসিতে মোটামুটিভাবে অনেক কাজই করতে পারবেন, তবে তা তুলনামূলকভাবে অনেক ধীরগতিতে৷ এই পুরনো পিসির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধাটি হলো এটি অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ অর্থাৎ পুরনো এই পিসিগুলোর বিদ্যুত ব্যবহার ইদানীংকার পিসির প্রায় অর্ধেক হওয়ায় বিদ্যুৎ খরচ অনেক কম হবে৷ পুরনো পিসিগুলো অবিরতভাবে সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টায় ব্যবহার করা যায় বলে শ্রেয়তর মনে করেন অনেকেই, যেহেতু এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়৷ এ লেখায় ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে বেশ কিছু সাজেশন উপস্থাপন করা হয়েছে যা প্রয়োগ করে পুরনো পিসিকে অবলীলাক্রমে ব্যবহার করা যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই ৷
পুরনো পিসিকে যেসব কাজে ব্যবহার করা যাবে
প্রক্সি সার্ভার :
পুরনো পিসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো পিসিকে প্রক্সি সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা৷ প্রক্সি সার্ভার সফটওয়্যার শুধু নেট কানেকশন শেয়ার করে না বরং ব্যান্ডউইডথ সেভ করার জন্য ফাইল ক্যাশ করে, ফায়ারওয়াল হিসেবে কাজ করে এবং কনটেন্টে নিষেধাজ্ঞা বা বাধানিষেধ আরোপ করাসহ আরো অনেক কাজ করা যায় এই পুরনো পিসিতে৷ তবে বেশ ধীরগতিতে এ কাজগুলো সম্পন্ন হয়৷ যেহেতু ক্যাশিং ব্যান্ডউইডথ সেভ করে তাই ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্সের গতিও বেড়ে যায়৷ উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য ফ্রি প্রক্সি পাওয়া যাবে www.handcraftedftsoware.org সাইট থেকে৷ আর যারা পুরনো পিসিতে লিনআক্স রান করাতে চান, তারা ব্যবহার করতে পারেন স্কুইড যা পাওয়া যাবে www.squid-cache.org সাইটে৷ এক্ষেত্রে পিসি কত পুরনো তা বিবেচ্য বিষয় নয়৷ কেননা হার্ডড্রাইভ থেকে ডাটা রিড ও ডাটা প্রেরণ করা নেট কানেকশনের চেয়ে সবসময় দ্রুততর৷ সুতরাং প্রক্সি সার্ভারের নিয়মকানুন প্লে করার জন্য পুরনো পিসি হলো যথার্থ সমাধান৷
ফাইল সার্ভার :
পুরনো পিসিকে ফাইল সার্ভার হিসেবেও ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ বাসায় বা ছোটখাটো অফিসে এটি ভালোভাবে কাজ করতে পারে৷ বিশেষ করে যেখানে আপনাকে এক সেট ফাইল এবং মাল্টিপল ইউজার নিয়ে কাজ করতে হয় সেখানে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি এবং আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্য একত্রে অ্যাকাউন্টিং ও ট্যাক্স সংক্রান্ত কাজ করছেন৷ সেক্ষেত্রে আপনাদেরকে একই ফাইলে যুগপত্ভাবে কাজ করতে হতে পারে৷ এমন অবস্থায় সবচেয়ে ভালো হবে পুরনো পিসিকে নেটওয়ার্ক ফাইল সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা৷ এক্ষেত্রে কে বাসায় আছেন বা কোন ল্যাপটপ/পিসির সুইচ অন আছে তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার কোনো কারণ নেই৷ কেননা যেকেউ যখন-তখন চাইলেই গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে সহজেই এক্সেস করতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে আপনাকে লক্ষ রাখতে হবে পুরনো পিসিতে উইন্ডোজ ইনস্টল করা আছে কি-না৷ সেই সাথে লক্ষ রাখতে হবে ফাইল ও প্রিন্টার এনাবলড কি-না৷ তাছাড়া শেয়ার করা ডকুমেন্টগুলো শেয়ার্ড ফোল্ডারে স্টোর করা হয়েছে কি-না সে ব্যাপারেও লক্ষ রাখতে হবে৷
যেহেতু নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভাইরাস খুব সহজেই বিস্তৃত হতে পারে তাই ডকুমেন্টের সিস্টেমের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই ভালো এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইনস্টল করতে হবে৷ এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামটি রিয়েল টাইম স্ক্যানার সম্বলিত হতে হবে যাতে করে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত সবাই ভাইরাসমুক্ত থাকেন৷
আপনি উইন্ডোজের পরিবর্তে ইউনিক্সভিত্তিক সিস্টেমে অভ্যস্ত হন, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন ফ্রিএনএএস যা www.freenas.org সাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন৷ ফ্রিবিএসডিভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে ফাইল সার্ভার হিসেবে তৈরি করা যায়৷ এটি রেইড সাপোর্ট করে এবং ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ এটি ইনস্টল করার পর মনিটরিংয়ের দরকার হয় না৷ ফ্রিএনএএস-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি সিডি ড্রাইভকে মেমরিতে লোড করে নেয় এবং একইভাবে হার্ডডিস্ককে স্টোরেজ ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করে৷ অল্প সিস্টেম রিকোয়ারমেন্টের কারণে এটি পুরনো কমপিউটারের জন্য একটি চমত্কার অপশন হতে পারে৷
এমপি থ্রি :
এমপি থ্রি প্লেয়ার হিসেবে পুরনো পিসির ব্যবহার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়৷ অবশ্য এর জন্য দরকার ভালো মানের স্পিকারসহ সাউন্ড কার্ড৷ আপনি পছন্দের সব গান হার্ডডিস্কে স্টোর করে রাখতে পারেন৷ অন্য কমপিউটার হতে আপনার কমপিউটারে যুক্ত হবার জন্য রিমোট ডেস্কটপ ব্যবহার করতে পারেন এবং মিউজিক প্লে করতে পারেন যদি মনিটর রাখতে না চান৷
অডিওর জন্য সেরা স্ট্রিমিং সলিউশন হলো ল্যান৷ তেমনিভাবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে লজিটেকের স্লিম সার্ভার৷ ওয়েবসাইট http://slimdevice.com/pi-features.html. এই ওপেনসোর্স সফটওয়্যারটি মূলত তৈরি করা হয়েছে স্লিমবক্স ডিভাইস কন্ট্রোল করার জন্য৷ তবে এটি সফটওয়্যার প্লেয়ার যেমন উইনঅ্যাম্প, ডবিউএমপি, আইটিউন দিয়ে স্ট্রিমিং মিউজিকও শোনা যায়৷ এজন্য পুরনো পিসিতে এ ধরনের সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে৷ এজন্য ব্রাউজারে http://127.0.0.1:9000/ নেভিগেট করে কনফিগার করুন৷ এর ব্যবহারবিধি খুব সহজ৷ শুধু নিশ্চিত হয়ে অনলাইন ইনস্টলেশন গাইড অনুসরণ করে চলুন৷ স্লিম সার্ভারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হলো- আপনি অফিসের বাইরে থেকেও মিউজিক শুনতে পারবেন৷ কেননা স্ট্রিম হয় নেটের মাধ্যমেও৷ তাছাড়া একাধিক ব্যক্তি সার্ভারে যুক্ত হতে পারে এবং সবাই নিজেদের পছন্দমতো মিউজিক শোনতে পারবে৷
স্লিম সার্ভার ইনস্টল করার পর Server Settings>Security-তে গিয়ে স্ট্রিমে এক্সেস করার জন্য ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড সেট করুন৷ আপনাকে অবশ্যই পুরনো পিসির নেটের আইপি জানতে হবে যা দিয়ে দূর হতে এর সাথে যুক্ত হতে পারবেন৷
মুভি উপভোগের ক্ষেত্রে পুরনো পিসির ব্যবহার : ল্যানের মাধ্যমে ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের প্রশ্নে ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ারের সমপর্যায়ে কোনো সফটওয়্যার নেই৷ ল্যান রেডিওর মতো ভিডিও স্ট্রিমিং সহজে অর্জন করা যায় না৷ কারণ ফাইল সাইজ ও স্ট্রিমিং বিট রেটের মধ্যে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে৷ যেমন এমপিথ্রিকে ৩২০ কেবিপিএস থেকে ১২৮ কেবিপিএস-এ রূপান্তর করা যায়৷ পুরনো পিসিতে ভিডিও উপভোগ করতে চাইলে ফাইল সার্ভারে বন্দোবস্ত করা দরকার৷ যদি সত্যি সত্যি ল্যানজুড়ে মাল্টিপল পয়েন্টে মুভি বা ভিডিওকে স্ট্রিমিং করতে চান, তাহলে আপনাকে স্ট্রিমিং সেটআপ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে ভিএলসি উইজার্ড৷ এ কাজটি খুব সহজেই করতে পারবেন File>Wizard সিলেক্ট করে Stream to network অপশন সিলেক্ট করার মাধ্যমে৷ এরপর যে ফাইল বা ডিস্ক স্ট্রিম করতে চান তা সিলেক্ট করুন৷ স্ট্রিম হবার জন্য প্রটোকল সিলেক্ট করুন৷ উইজার্ড শেষে আপনার ফাইল স্ট্রিমিং শুরু হবে৷ স্ট্রিমে এক্সেসের জন্য যে টিপস আবির্ভূত হবে তা লক্ষ করুন৷ উদাহরণস্বরূপ যদি HTTP প্রটোকল বেছে নেন, তাহলে আপনার স্ট্রিমগুলো পাবেন http://:8080-তে৷ ভিডিও দেখার জন্য আপনাকে এখানেই মিডিয়া প্লেয়ারকে নির্দিষ্ট করতে হবে৷ এছাড়াও আরো কিছু সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো অনলাইনে ভিডিও স্ট্রিম করতে পারে৷ মাল্টিপল পিসিতে মাল্টিপল ভিডিও প্রদান করার জন্য দরকার ভালো কনফিগারেশনের সার্ভার৷
উপরে উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে পুরনো পিসি বেশ ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে৷ অবশ্য এর জন্য কমপিউটারের গতি কিছু কমে যাবে৷
০ টি মন্তব্য