এই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেন মানুষের মন থেকে মুছে না যায় সেজন্য মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত একটি অনলাইন তথ্যভান্ডার তৈরির উদ্যোগ নেন সাবির হোসেন, শিহাব খান ও জাহিদ খান নামের তিন যুবক। এটারই বর্তমান রূপ হলো মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ। আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে গুরুত্বপূর্ণ ছবি, বই, অডিও, ভিডিও, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নথিপত্র।
ই-আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে। তখন এর নাম ছিল ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র’। ২০১৪ সালের ৪ মে মাসে এটি ডিজিটাল আর্কাইভ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং জনসাধারণের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যেকোনো ইন্টারনেট ব্রাউজারের ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ’ লিখে সার্চ দিলে প্রথমেই চলে আসবে আর্কাইভটি।
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সাব্বির হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের আর্কাইভে উপাত্তের পরিমাণ ১৮ টেরাবাইট। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইপত্রের সংখ্যা চার হাজার, রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক (আমেরিকায় প্রকাশিত) ২৯ হাজার প্রতিবেদন এবং আরও আছে ১৯৭২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকা’।
এই বিশাল তথ্যভান্ডার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজেই খুঁজে বের করার জন্য আর্কাইভকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগ ট্যাব আকারে ই-আর্কাইভে স্থান পেয়েছে, যাতে সহজেই পছন্দের বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যায়। ‘বই-দলিলপত্র-প্রবন্ধ’ ট্যাবে ক্লিক করলে পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দলিল, নথি ও বইপত্র।
এতে আছে ফারুক ই আজম বীর প্রতীকের লেখা ‘কমান্ডো অভিযানের স্মৃতিকথা’, আছে রমা চৌধুরীর ‘একাত্তরের জননী’, আরও আছে আহমদ ছফা রচনাসমগ্র। ‘অডিও-ভিডিও’ ট্যাব এ পাওয়া যাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন অডিও ও ভিডিওচিত্র। এখানে পাওয়া যাবে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত বিখ্যাত সংগীতানুষ্ঠান ‘দা কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।
ভারতের সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্কর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বের জনমত গড়ে তোলার জন্য ‘বিটলস’–এর জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে এই কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন। ’৭১-এর জেনোসাইড ও নির্যাতন আর্কাইভ’ থেকে জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতার ইতিহাস। এতে রয়েছে গ্যারি জে বেস এর ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’, আছে সুসান ব্রাউন মিলারের লেখা ‘এগেইনস্ট আওয়ার উইল: ম্যান, উইম্যান অ্যান্ড রেইপড এবং আরও রয়েছে একাত্তরের নির্যাতনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র।
‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা’ থেকে পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম। বিশেষ করে, ভারতের হিসেবে কারা মুক্তিযোদ্ধা এখানে সেই তালিকা রয়েছে। ই-আর্কাইভ এ আরও রয়েছে ‘বাংলাদেশের নিউজ পেপার আর্কাইভ’। ১৯৭০–এর দশকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বাংলা’ ও ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় কি ধরনের সংবাদ ছাপা হতো, তা জানা যাবে এখানে।
সম্প্রতি ‘সাপ্তাহিক বিচিত্র’ পত্রিকা (১৯৭২ থেকে ১৯৯৫) যুক্ত করার কাজ চলছে আর্কাইভে। সাব্বির রহমান বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ নাগরিক উদ্যোগে তৈরি একটি আর্কাইভ। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ এখানে নেই। আর্কাইভের কাজ যদিও আমাদের উদ্যোগে তৈরি, তবে এখানে সবচেয়ে বড় অবদান হলো তাঁদের, যাঁরা তথ্য দিয়ে আর্কাইভকে সমৃদ্ধ করেছেন।
অনেকেই দীর্ঘদিনের সংগ্রহকৃত বই, পত্র-পত্রিকা ও দলিল বিনা মূল্যে আর্কাইভে দান করেছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মানুষের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ। বর্তমানে আর্কাইভের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি’ পাওয়া যাচ্ছে, যা গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে বিনা মূল্যে।
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ডিজিটাল লাইব্রেরি
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ডিজিটাল লাইব্রেরি
আরও পড়ুন
মতামত দিন আপনার ইমেল প্রকাশিত হবে না।
আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন।
যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।
রিভিউ ( ০ / ৫ )
আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন।
যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।








০ টি মন্তব্য