‘মেড ইন বাংলাদেশ’ মোবাইল ফোন
দেশে মোবাইল ফোনের বাজারের সম্প্রসারণ ঘটছে। এর ফলে মোবাইল ফোন আমদানি কমছে। সরকার পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে উৎপাদন ও সংযোজনের জন্য বিভিন্ন উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়। ঘোষণাটি আসার পর থেকেই কিছু প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন সংযোজন করতে শুরু করে। গত বছর থেকে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট সংযোজনের পর এখন স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি, টেকনো এবং ফাইভ স্টার ব্র্যান্ড। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত উৎপাদন হিসাবে দেখা গেছে ২ঃ১ অনুপাতে স্মার্ট ও ফিচার ফোন উৎপাদন করে এখন রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে ওয়ালটন। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এখন স্মার্টফোন আমদানি ১৭ শতাংশ কমেছে। এছাড়া কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাংয়ের জে সিরিজসহ কয়েকটি স্মার্টফোন নরসিংদীতে তৈরি করছে ফেয়ার ইলেকট্রনিকস।
গাজীপুরের চন্দ্রায় নিজস্ব কারখানায় মোবাইল ফোন উৎপাদন করছে ওয়ালটন। নরসিংদীতে সর্বাধুনিক কারখানায় স্যামসাং ব্র্যান্ডের ফোন সংযোজন ও উৎপাদন শুরু করেছে ফেয়ার ইলেক্ট্রনিকস। এরপর সাভারের কারখানা সংযোজন শুরু করে সিম্ফনি ব্র্যান্ডের এডিসন। সবশেষ টেকনো ব্র্যান্ডের মূল কোম্পানি ট্রানশান হোল্ডিংস এবং ফাইভ স্টার ব্র্যান্ডের কারখানাও উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়া কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে কারখানা করতে জমি কিনেছে কয়েকটি চীনা ব্র্যান্ড। জানা গেছে, বছরের প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত শুধু ওয়ালটন দেশে হ্যান্ডসেট তৈরি শুরু করে। মে মাসের পর এই ব্র্যান্ডের আর কোনো হ্যান্ডসেট আমদানি করেনি। এর স্মার্টফোন সর্বশেষ আমদানি করেছিল গত এপ্রিলে। চলতি বছরের শুরুতে স্মার্টফোন সংযোজন দিয়ে উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এপ্রিল মাস থেকে ফিচার ফোন উৎপাদন করছে ওয়ালটন। প্রতিমাসে গড়ে ১ লাখ হ্যান্ডসেট তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করছে ওয়ালটন।
উল্লেখ্য, গত বছর বাজেটে স্থানীয় উৎপাদনের ওপর যে সুবিধা দেয়া হয়, তা দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। আগামী দিনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন না করলে বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর টিকে থাকা কঠিন হবে বলে অনেকেই মনে করেন। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করছে। আমাদের তরুণেরা এসব কারখানায় দক্ষতার সাথে কাজ করছে। আমাদের এই যে অবস্থান তৈরি হয়েছে, তাতে আশা করা যায়, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এ ক্ষেত্রে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারব। আমাদের এখন অপেক্ষা পৃথিবীর বড় বড় ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানিগুলো কখন বাংলাদেশে আসে। শোনা যাচ্ছে, চীনের বিখ্যাত কোম্পানি হুয়াওয়ে বাংলাদেশে তাদের কারখানা করবে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে হাইটেক পার্কে সাত একর জমি কিনেছে। এরা এদেশে শুধু ফোনই নয় ল্যাপটপও তৈরি করবে।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিএমএ) সূত্র মতে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সর্বোচ্চসংখ্যক মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে। ওই মাসে প্রায় ৩০ লাখ হ্যান্ডসেট আমদানি হয়। পরবর্তী ৪ মাসের কোনো মাসেই এই সংখ্যা অতিক্রম করা হয়নি। ফোরজি অভিষেকের মাস ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে কম হ্যান্ডসেট আমদানি হয়েছে। এই মাসে আমদানি হয়েছে ১৪ শতাংশ হ্যান্ডসেট। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আমদানি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ হ্যান্ডসেট। আমদানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের মে মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ, অর্থাৎ ২৯.৮০ শতাংশ হ্যান্ডসেট আমদানি হয়েছে।
বছরের প্রথমার্ধে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি দামের হ্যান্ডসেট আমদানি হয়, স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে ৪২ লাখ পিস। ফিচার ফোন ও স্মার্ট ফোনের গড় অনুপাত ৭৫ঃ২৫। অর্থাৎ ৩ঃ১। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছরে ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা চালু হলেও ফিচার ফোনের বাজার খুব একটা কমেনি। এই বাজারে আধিপাত্য বিস্তার করে আছে সিম্ফনি। বাজারের ৪৫ শতাংশই তাদের দখলে। আবার গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ হাজার কোটি টাকার মোবাইল ফোন বাজারের ৩০ শতাংশ অবৈধ হ্যান্ডসেটের দখলে। বৈধ আমদানিকারক ও স্থানীয় উৎপাদনকারী দুই পক্ষই এজন্য তদারকি সংস্থাগুলোর অপর্যাপ্ত নজরদারিকে দায়ী করছে।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ফোন যেভাবে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে এটুকু নিশ্চিত, উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আমরা মোবাইল ফোন শিল্পে তো বটেই, গোটা আইসিটি শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারব অচিরেই। আমরা সে দিনটির অপেক্ষায় আছি।
০ টি মন্তব্য