বিগত সরকারের মতো মেটার কাছ থেকে কোন ব্যক্তির পোস্ট ডিলিট করা কিংবা নাগরিক হয়রানির কোনো তথ্য চায় না সরকার। কেবল ক্রিপ্টো কারেন্সি কিংবা আর্থিক জালিয়াতের ক্ষেত্রে তথ্য চাওয়া হয়। এছাড়াও নাগরিক আপত্তির প্রতি সম্মান জানিয়ে বেশ কিছু বিষয় সংশোধিত হয়েছে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে। তবে যে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। তাই সময় ও চাহিদা অনুযায়ী এটি সংশোধন করতে হবে বলে জানিয়েছেন জানিয়েছেন আইসিটি ও টেলিকম বিভাগের নীতি উপদেষ্টা ফয়েজ আহমেদ তাইয়েব। তার এই বক্তব্যকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে বিটিআরসি মহপারিচালক খলিলুর রহমান এবং আইআইজিবি প্রেসিডেন্ট মনে করেন, কেবল আইন নয়, ইন্টারনেটকে সার্বজনীন করতে একটি টেকসই গাইড লাইন জরুরী।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস ডিপার্টমেন্টের কনফারেন্স হলে বহুপক্ষীয় ডিজিটাল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ নিয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহা. রাকিবুল হক এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু।
বিআইজিএফ চেয়ারপার্সন আমিনুল হাকিম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ খলিলুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ডিএসএ এর মহাপরিচালক আবু সাঈদ মোঃ কামরুজ্জামান এবং ব্র্যাক এনজিও এর মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামের ম্যানেজার অদ্রিকা এষণা পূর্বাশা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘আইন নয়; গাইড লাইন ও সচেতনতা বাড়িয়ে ইন্টারনেটে সুরক্ষা সম্ভব’ বলে মন্তব্য করেন বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন রিসোর্স ব্যবহার করে পুরো পৃথিবী আমাদের চেয়ে ভালো আছে। এই জায়গা থেকে উত্তরণ খুব খুব জরুরী। এজন্য ইন্টারনেটকে কখনোই বন্ধ করা যাবে না। কারণ এটা এখন মৌলিক মানবাধিকার। তাই এর যৌক্তিক ব্যবহার বাড়াতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইন্টারনেট এর অধিকার ও পরিচালনা নিয়ে আমাদের দেশের তরুণ, আমলা ও রাজনীতিকদের আগ্রহ কম। আমাদের এদিকটায় একটু নজর দিতে হবে। এছাড়াও দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে সেখানে জীবনমান উন্নয়নেও আমাদের ভূমিকার রাখতে হবে। বিটিআরসি এ জন্য কাজ করবে।
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব আরো বলেন, সাইবার বুলিং ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ায় সেটি রোহিত করে আমরা যৌন নির্যাতনকে শাস্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আর্থিক প্রতারণা ও জালিয়াতিকে অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। তবে আগেরে চেয়ে অপরাধের শাস্তি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিচারককে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ক্রিটিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর সঙ্গে যারা আছে তাদের মধ্যে যারা হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার প্রযোজ্য হবে না।
আবু সাঈদ মোঃ কামরুজ্জামান জানান, শিগগিরই সাইবার সুরক্ষায় ব্যবহৃত টোল ফ্রি নম্বর ১৩২১৯ টোল ফ্রি নম্বরটি চালুর চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা ফোন করে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারবেন।
ব্র্যাক এনজিও'র মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামের ম্যানেজার অদ্রিকা এষণা পূর্বাশা বলেন, সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষ করে মেয়েদেরকে যত্নবান এবং সচেতন হতে হবে। কারণ তারাই বেশি সাইবার বুলিং এবং সাইবার হয়রানি শিকার হচ্ছে। এছাড়াও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কাউকে ব্লক করে দেয়ার আগে কন্টেন্টের স্ন্যাপশট রেখে আইনি সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেন অদ্রিকা এষণা পূর্বাশা।
সভাপতির বক্তব্যে আমিনুল হাকিম বলেন, আইন নয় সচেতনতা দিয়ে এই গ্লোবাল ভিলেজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তরুণদেরকেই ইন্টারনেটে করনীয় সম্পর্কে জানতে হবে। ইন্টারনেট কোন প্রযুক্তি নয়। সাইবার স্পেস আমাদের ডিজিটাল অধিকার। ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে তরুণদেরকেই।
এর আগে ইন্টারনেট গভর্নেন্স সাইবার আইন নিয়ে আলোচনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাইমা ইসলাম প্রমুখ। বক্তব্যে জাইমা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছিলো সম্পূর্ণ ব্যর্থ একটি আইন। আর সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে অপরাধের ক্ষেত্রে জামিনযোগ্যতার সুযোগ রাখা হয়েছে। কিছু প্যানাল্টি কমে গেছে। কিন্তু ধারা প্রায় সবই এক। মনে রাখতে হবে আইন যা-ই হোক তার ভালো-মন্দ ব্যবহার নির্ভর করে কর্তৃপক্ষের ওপর। কেননা একটা সময় সরকার দেখেছে, আইন দিয়ে বিচার করা গেলেও কন্টেন্ট ব্লক করা যায়নি। মেটা ও গুগল এর ওপর বিটিআরসি’র কোনো ক্ষমতা নেই। তাই তারা ডেটা লোকালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মাধ্যমে সরকার যে কোরো তথ্যে প্রবেশের অধিকার পায়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এটার অপব্যবহার করেছে। এখনো ডেটা সুরক্ষার আইন সংশোধন হয়নি। তাই আইন কিভাবে কখন হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের জানা উচিত। একইসঙ্গে এ নিয়ে সচেতন থাকা উচিত। আগামীতে ইন্টারনেট স্পেস কিভাবে পরিচালিত হবে এই সচেতনতার ওপরে তা নির্ভর করবে।
০ টি মন্তব্য