প্রযুক্তি এবং পরিবেশ সুরক্ষার সমন্বয়ে চীন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক আন্ডারওয়াটার বা পানির নিচের ডেটা সেন্টার চালু করেছে, যা ডেটা সংরক্ষণের প্রচলিত ধারণাকেই বদলে দিতে চলেছে। ভারতের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম গ্যাজেটস ৩৬০ (Gadgets 360) জানিয়েছে, চীনের হাইনান দ্বীপের উপকূলে স্থাপিত এই প্রকল্পটি প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
স্থলভাগে অবস্থিত প্রচলিত ডেটা সেন্টারগুলোতে হাজার হাজার সার্ভারকে ঠান্ডা রাখার জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ এবং পানি খরচ হয়, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যার এক অভিনব সমাধান নিয়ে এসেছে চীনের এই প্রকল্পটি। এখানে ডেটা সেন্টারের সার্ভারগুলোকে একটি বিশাল, বায়ুরোধী ক্যাপসুলের মধ্যে রেখে সমুদ্রের গভীরে স্থাপন করা হয়েছে। এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো:
প্রাকৃতিক শীতলীকরণ: সমুদ্রের গভীরের ঠান্ডা পানি প্রাকৃতিকভাবেই সার্ভারগুলোকে ঠান্ডা রাখে। এর ফলে প্রচলিত এয়ার কন্ডিশনিং বা কুলিং সিস্টেমের 거의 কোনো প্রয়োজন হয় না।
বিপুল শক্তি সাশ্রয়: নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হাইল্যাডার (Highlander) জানিয়েছে, এই পদ্ধতিতে প্রচলিত ডেটা সেন্টারের তুলনায় প্রায় ৩০% থেকে ৯০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
পরিবেশ সুরক্ষা: বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি এই প্রকল্পে ശുദ്ധ জলের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে এবং কার্বন নিঃসরণও বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
জমির সাশ্রয়: বড় আকারের ডেটা সেন্টারের জন্য এখন আর মূল্যবান জমির প্রয়োজন হবে না।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা মোটেও সহজ ছিল না। সমুদ্রের লবণাক্ত পানির ক্ষয়কারী প্রভাব থেকে সার্ভারগুলোকে রক্ষা করা এবং পানির নিচের প্রচণ্ড চাপ সহ্য করার মতো ক্যাপসুল তৈরি করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধারণাটি অবশ্য নতুন নয়। এর আগে মাইক্রোসফট তাদের ‘প্রজেক্ট ন্যাটিক’-এর অধীনে স্কটল্যান্ডের উপকূলে পরীক্ষামূলকভাবে একটি আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার স্থাপন করেছিল, যা সফলও হয়েছিল। তবে চীনই প্রথম এটিকে বাণিজ্যিক রূপ দিল।
গ্যাজেটস ৩৬০ জানাচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর চাহিদা যে হারে বাড়ছে, তাতে বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারের সংখ্যা এবং তাদের শক্তি ব্যবহারের পরিমাণও বাড়ছে। চীনের এই উদ্ভাবনী প্রকল্পটি যদি সফলভাবে চলতে থাকে, তবে এটি কেবল ডেটা সংরক্ষণের খরচই কমাবে না, বরং পরিবেশ সুরক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং ভবিষ্যতে হয়তো বিশ্বের অন্যান্য দেশও এই পথ অনুসরণ করবে।
০ টি মন্তব্য