মোবাইল শুধু কথা বলার যন্ত্র নয় ডিজিটাল সেবাদানের হাতিয়ারও
মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবাশিল্প অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন
ধরনের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে ডিজিটাল সেবায় প্রবেশাধিকার
ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অন্যতম দুটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র।
ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য, উপাত্ত, সেবা ও সেবাপণ্য খুব দ্রুতগতিতে অসংখ্য
মানুষের কাছে দূর-দূরামেত্ম পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তির
কল্যাণে সারাবিশে^ নতুন ধরনের বিজনেস মডেল দাঁড় করানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ডিজিটাল
প্রযুক্তি যথাযথ ব্যবহারের ভেতর দিয়ে নতুন বিজনেস মডেল বিভিন্ন খাতে অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধি অর্জন ও জীবনের মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক সুফল সৃষ্টি করছে।
দৈনন্দিন যোগাযোগ রক্ষা এবং প্রয়োজন মতো তথ্য-উপাত্ত সন্ধান ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে
বর্তমানে মোবাইল ফোন সবচেয়ে সহজলভ্য স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ মাধ্যম। মোবাইল ফোন এখন
শুধু প্রয়োজনীয় মৌখিক আলাপ সারার একটি যন্ত্র নয়। মোবাইল ফোন একাধারে ব্যবসায়ের
ক্ষেত্রে যোগাযোগ রক্ষার একটি উপযুক্ত মাধ্যম; একটি বার্তবাহী এবং ইন্টারনেট ও এফএম
রেডিও’র সুবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার, সবশেষ সংবাদ জানার ও মনোজ্ঞ বিনোদনের
উৎকৃষ্ট একটি মাধ্যম।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারা বেগবান করে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার
২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা করে। অর্থনৈতিক ও
সামাজিক কর্মকা--র সব পর্যায়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে
উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা বেগবান করে তোলা ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।
মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরেরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে
ফলপ্রদ অবদান রাখতে বিশেষভাবে সচেষ্ট। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত টেলিযোগাযোগ সেবা
পৌঁছে দেয়ার লক্ষে্য মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরেরা সারাদেশে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে,
যা আমাদের দেশে বড়মাপের প্রয়োজনীয় একটি অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে।
নেটওয়ার্কের বিসত্মৃতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের ১০০ শতাংশ মানুষ নেটওয়ার্কের আওতার
মধ্যে চলে এসেছে।
মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবাশিল্প অসংখ্য মানুষের জন্য জীবনের সার্বিক মান উন্নয়ন ও
কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করছে, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প খাতের অবদান বহুমুখী। বাংলাদেশের
নিমণ-মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে উত্তরণের কৃতিত্বের পেছনে মোবাইল টেলিযোগাযোগ
সেবা-শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান
আমাদের দেশে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবাশিল্পের উন্নয়ন ও জাতীয় অর্থনীতিতে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০১৫ সালে মোবাইল প্রযুক্তি ও সেবাখাত বাংলাদেশের মোট
জিডিপির ৬.২ শতাংশ উৎপন্ন করেছে। মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পখাত বাংলাদেশ সরকারের
রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস; দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণকারী সবচেয়ে বড়
খাত এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী অন্যতম খাত।
রাজস্ব : বাংলাদেশের সেবাখাতগুলোর মধ্যে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবাখাত সরকারি
কোষাগারে সবচেয়ে বেশি অর্থ জোগান দিয়ে থাকে। সরকার বর্তমানে মোবাইল টেলিযোগাযোগ
খাত থেকে সার্বিকভাবে কম-বেশি ১০ শতাংশ রাজস্ব লাভ করছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক
অপারেটরেরা তাদের লভ্যাংশের বেশিরভাগ ভ্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের কর সরকারি কোষাগারে
জমা করছে। অপারেটরেরা তাদের অর্জিত লভ্যাংশের বড় একটি অংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক),
আমদানি কর, হ্যান্ডসেট রয়্যালটি ইত্যাদি বিভিন্ন কর পরিশোধ বাবদ খরচ করে থাকে।
মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পখাতে নিযুক্ত কর্মচারীরা যে বেতন লাভ করেন, তা সেখান থেকে
কর পরিশোধিত হয়। যে লভ্যাংশ অন্যান্য খাত অভিমুখে প্রবাহিত হয়, সেখান থেকেও রাজস্ব
লাভ হয়ে থাকে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ : বাংলাদেশে মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পখাত সর্বাধিক পরিমাণ
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বড় ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগ জাতীয়
অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়নের নিশ্চয়তা দেয়। আমাদের দেশে মোবাইল টেলিযোগাযোগ
সেবাশিল্পের উন্নয়নের সাথে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্পর্ক সুগভীর। বিগত ২০১৩-১৪
অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ৩০.৩৫ শতাংশ লগ্নি হয়েছে টেলিযোগাযোগ
শিল্পে, যার মোট পরিমাণ ৫২৫.২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কর্মসংস্থান : মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পখাত চারটি স্তরে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি
করেছে। প্রথমত, প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান; অর্থাৎ টেলিযোগাযোগ শিল্পে সরাসরি নিয়োজিত
এবং এ শিল্পসংশিস্নষ্ট বিভিন্ন সরবরাহ, জোগান ইত্যাদি কাজের সাথে সম্পৃক্ত মানুষ
এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৃষ্ট কর্মসংস্থান। দ্বিতীয়ত, সংশিস্নষ্ট কর্মসংস্থান;
অর্থাৎ যেসব কাজ বাইরে থেকে করানো হয়, সেসব কাজের সূত্র ধরে এবং টেলিযোগাযোগ খাত
থেকে পাওয়া রাজস্ব সরকার যখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাবদ কার্যক্রমে ব্যয় করে সেসব
কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষেতে সৃষ্ট কর্মসংস্থান। তৃতীয়ত, পরোক্ষ কর্মসংস্থান; অর্থাৎ
লভ্যাংশ থেকে নির্বাহিত বিবিধ খরচ, ঘুরে ফিরে যা কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপলক্ষ হয়ে
থাকে। চতুর্থত, বর্ধিত কর্মসংস্থান; অর্থাৎ এ সেবাশিল্পে নিযুক্ত কর্মচারীরা ও
সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিজেদের আয় থেকে খরচ নির্বাহ করার ফলে যে কর্মসংস্থান
সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরেরা এ যাবত ১৬ লাখের বেশি প্রত্যক্ষ
ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি
বাংলাদেশে ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল আর্থিক সেবা চালু হওয়ার পর থেকে খুব
দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করেছে। মোবাইল আর্থিক সেবাখাতের দ্রুত উন্নয়নের সাক্ষ্য
পাওয়া যায় মোবাইল আর্থিক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এবং মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী
এজেন্টের সংখ্যা বাড়ার হার থেকে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) আর্থিক
প্রবেশাধিকার জরিপ থেকে জানা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোবাইল আর্থিক
অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৫ লাখ থেকে বেড়ে ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। মোবাইল আর্থিক
সেবাদানকারী এজেন্টের সংখ্যা ২০১৪ সালের মে মাসে ছিল ৪ লাখের কম, ২০১৬ সালের
এপ্রিল মাসে যা বেড়ে দাঁড়ায় আনুমানিক ৫,৭৭,৫৮৮।
মোবাইল আর্থিক সেবা অর্থ প্রেরণ ও গ্রহণের অভিনব সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা ব্যাংক
সেবা ও আর্থিক সেবা থেকে বঞ্চিত দরিদ্র মানুষের জন্য আর্থিক সেবায় প্রবেশাধিকারের
উপায় করে দিয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষ,
বিশেষ করে গ্রামের গরিব মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিচ্ছে।
ইন্টারনেট সেবা
ইন্টারনেট একটি বিসত্মীর্ণ তথ্য অবকাঠামো, যা অর্থ উপার্জন ও জীবনের মান উন্নয়নের
একটি সহায়ক মাধ্যম। সম্প্রতি ইন্টারনেট সারাবিশে^ ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগের
ক্ষেত্রে, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এবং শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন
এনেছে, যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতি সার্বিকভাবে বেগবান করে তুলতে সহায়ক অবদান
রাখছে। সেই সাথে উল্লেখ্য, মোবাইল ফোন সারাবিশে^ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জনপ্রিয়
প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে।
আমাদের দেশে প্রায় ৯৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট
সংযোগ নিয়ে থাকে, যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এক কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। বিগত
২০১৩ সালে থ্রিজি সেবা চালু হওয়ার পর থেকে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সময়ের মধ্যে
ইন্টারনেটের ব্যবহার ২২ শতাংশ বিস্তার লাভ করে। বিটিআরসি প্রদত্ত সেপ্টেম্বর ২০১৬
পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬ কোটি ৬৮ লাখ সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী
রয়েছেন। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দ্রুত বিস্তারের ক্ষেত্রে থ্রিজি অবকাঠামো গড়ে
তোলার জন্য উল্লেখযোগ্য পুঁজি বিনিয়োগ করে মোবাইল টেলিফোন কোম্পানিগুলো অগ্রণী
ভূমিকা পালন করেছে।
উদ্ভাবনী সেবা
মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প সম্প্রতি বেশ কিছু উদ্ভাবনী সেবা প্রবর্তন করেছে, যা
গ্রাহক সাধারণের জীবন ও জীবিকায় ইতিবাচক অবদান রাখছে। মানুষ এখন মোবাইল ফোনের
মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারছে; ট্রেনের টিকেট ক্রয় ও গাড়ি
রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিতে পারছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।
বর্তমানে সার্বজনীন পরীক্ষার ফলাফল এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ছাত্রছাত্রীরা এসএমএসের সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তালিকাভুক্ত হতে পারছে। চাকরি
বাজারের চাহিদার দিক বিবেচনা করে বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিযোগাযোগ
খাতের ওপর বিশেষ কোর্স চালু করা হয়েছে।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আবহাওয়া ও ফলন বিষয়ে তৎক্ষণাৎ তথ্য সহজে পেয়ে যাওয়ায় কৃষকের
জীবন ও জীবিকার মান উন্নত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মানুষ এখন শুধু একটি
শর্ট-কোডে ডায়াল করে মুহূর্তের মধ্যে একজন দক্ষ চিকিৎসকের সাথে কথা বলে যথাযথ
পরামর্শ নিতে পারছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে
তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা ক্রমান্বয়ে বাড়তে দেখা গেছে। তথ্য ও শিক্ষা উপকরণে
প্রবেশাধিকার বাড়ানোর ক্ষেত্রে, খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি ও বিতরণ প্রণালী উন্নয়নের
ক্ষেত্রে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা সম্পর্কে আগাম সঙ্কেত দেয়ার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
মোবাইল প্রযুক্তির প্রায় সার্বজনীন বিস্তারের ফলে ইতোমধ্যে সেবাবঞ্চিত মানুষের
কাছে অনেক ধরনের সেবা পৌঁছে দেয়া আগের চেয়ে সহজতর হয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ও
ইন্টারনেট প্রযুক্তি গ্রাহক সাধারণের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীবনের সার্বিক মান উন্নয়নের
ক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে।
তথ্যপ্রযুক্তির সাথে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবা-শিল্পের সমন্বয়ের ফলশ্রুতিতে এখন
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ আরও সুগম হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে
ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সামাজিক পরিসরে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার
অনেকগুলো লক্ষে্যর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত।
ডিজিটাল সেবা পেতে স্মার্টফোন
বাংলাদেশে বর্তমানে মাত্র ৩০ শতাংশ গ্রাহক স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন।
ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ গ্রাহক এখনও ফিচার ফোন ব্যবহার করছেন।
স্মার্টফোনের মাধ্যমে যেসব ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করা যায়, তা ফিচার ফোনের মাধ্যমে
গ্রহণ করা যায় না। সরকার একদিকে সর্বসাধারণের কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেয়ার
অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে, অপরদিকে স্মার্টফোনের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করে রেখেছে।
ফলে স্মার্টফোন গ্রাহক-সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়ে যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য
নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার অনুযায়ী সব শ্রেণির নাগরিকের দ্বারপ্রামেত্ম
ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে হলে স্মার্টফোনের ওপর আরোপিত কর অচিরে হ্রাস করা প্রয়োজন।
প্রতিবন্ধকতা অপসারণ
মোবাইল শিল্প কম খরচে টেলিযোগাযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের
অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে টেকসই
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথ অনেকটা সুগম করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরেরা বিশে^র মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে সেবা প্রদান
করছে। বাংলাদেশে মোবাইল সেবা বাবদ গ্রাহকপিছু আয় সবচেয়ে কম। আমাদের পাশ^র্বর্তী
দেশগুলো মোবাইল সেবার মূল্য বাড়িয়েছে, কিন্তু আমরা এখনও খুব অল্পমূল্যে সেবা
প্রদান করে যাচ্ছি। পরিহাসের বিষয়, সবচেয়ে কম মূল্যে সেবা দিয়েও বাংলাদেশে মোবাইল
শিল্প সবচেয়ে উচ্চ হারে কর প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রণোদনার অভাব ও প্রতিকূল করনীতি : মোবাইল ফোন বর্তমানে ডিজিটাল সেবা দেয়ার
অন্যতম মাধ্যম। মোবাইল সেবাশিল্প আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করছে এবং দেশের রাজস্ব আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তথাপি মোবাইল
সেবাশিল্পের বিনিময়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রণোদনা পাচ্ছে না। পাচ্ছে না
কর রেয়াত/অবকাশের মতো কোনো সুবিধা।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উৎসাহিত করার লক্ষে্য সরকার কর মওকুফসহ নানা ধরনের প্রণোদনা
দিয়ে থাকে। মোবাইল শিল্পকে ডিজিটাল সেবা দেয়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি
দিয়ে মোবাইল সেবার টেকসই উন্নয়নের লক্ষে্য উপযুক্ত প্রণোদনা দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ
একান্ত কাম্য।
সাবস্ক্রাইবার অ্যাকুইজেশন থেকে শুরু করে কর্পোরেট ট্যাক্স পর্যন্ত প্রতিটি
পর্যায়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ওপর নানারকম কর ও মূসক আরোপিত রয়েছে।
প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার অনুপস্থিতি : লাইসেন্স গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবার জন্য
পৃথক পৃথক লাইসেন্স দেয়ার বিধি প্রবর্তিত রয়েছে, যা মোবাইল সেবাশিল্পের উন্নয়নের
পথে প্রতিবন্ধক। টুজির ক্ষেত্রে এককভাবে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, থ্রিজির
ক্ষেত্রে আরেকভাবে। যার ফলে গ্রাহককে সমন্বিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিকূল বিধি : মোবাইল আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আরোপিত বৈষম্যমূলক
বিধি অনুযায়ী মোবাইল আর্থিক সেবা পরিচালনার অনুমোদন লাভ করতে পারবে শুধু ব্যাংক।
মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর শুধু গৌণ অংশীদার হতে পারবে। অথচ সারাবিশে^ ৭০ শতাংশ
মোবাইল আর্থিক সেবা মোবাইল কোম্পানিগুলো দিচ্ছে। মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল আর্থিক
সেবা ব্যাংক দিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়,
মোবাইল কোম্পানি পরিচালিত মোবাইল আর্থিক সেবা বেশি সাফল্য অর্জন করেছে।
উপযুক্ত রোডম্যাপ : ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনের
স্বার্থে উপযুক্ত রোডম্যাপ প্রণয়ন ও অনুসরণের মধ্য দিয়ে মোবাইল টেলিযোগাযোগ
শিল্পখাতের উন্নয়নের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা বর্তমানে সরকারের সামনে
গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব।
সংশিস্নষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সাথে অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে ডিজিটাল
বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রতিবন্ধক সব করনীতি এবং বিধিমালা পুনর্বিবেচনা
করা একান্ত জরুরি। মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পখাতকে ডিজিটাল সেবা সরবরাহের অন্যতম
মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করে একীভূত লাইসেন্স দেয়ার বিধি নির্ধারণ করা দরকার। মোবাইল
সেবাশিল্পের কাঙিক্ষত মান উন্নয়নের স্বার্থে সহায়ক প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হলে তা বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে উন্নীত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
অর্জনের পথে অগ্রগতির জন্য তা হবে প্রকৃত গঠনমূলক পদক্ষেপ
০ টি মন্তব্য