হাইব্রিড ক্লাউড
মার্কেট রিসার্চ ফিউচারের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী হাইব্রিড ক্লাউডের মার্কেট ২০২১ সালে ৫৩.৩ বিলিয়ন ডলার হবে এবং ২০১৯-২০২৫ সালে প্রতি বছর ২২.২৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৩.৩৩ বিলিয়ন ডলারের মার্কেটে উন্নীত হবে। বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম যত সম্প্রসারিত হচ্ছে তত ডাটা বা তথ্যের নিরাপত্তা ও তথ্য দ্রæত পাওয়ার বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে, এ জন্য হাইব্রিড ক্লাউড মডেল এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাবলিক ক্লাউডের মতো সহজে তথ্য পাওয়া এবং প্রাইভেট ক্লাউডের মতো নিরাপত্তা ও গতির সমন্বয়ের মেলবন্ধন। এ জন্য ৭৮ ভাগ প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালে এই পরিষেবা গ্রহণ করবে। ডেল টেকনোলজির সূত্রে, ৬৭ ভাগ প্রতিষ্ঠান পাবলিক ক্লাউডের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে সচেতন, এ জন্য তারা হাইব্রিড মডেলে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনাতে আগ্রহী এবং ৪৬ ভাগ প্রাইভেট ক্লাউড ব্যবহারকারী পরিচালন ব্যয় স্বল্প করতে হাইব্রিড মডেল বেছে নিচ্ছে।
হাইব্রিড ক্লাউড কী
হাইব্রিড ক্লাউড সম্মিলিত একটি ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা, যাতে প্রাইভেট ক্লাউড এক বা একাধিক পাবলিক ক্লাউডের সাথে মিলে ইন্টারনেট প্রোটোকল ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লাউড সেবা প্রদান করে। হাইব্রিড ক্লাউড কৌশলগতভাবে অনেক ডাটা বা তথ্যের প্রেরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনেক সহজ করে। ব্যক্তিগত ডাটার বিষয়ে হাইব্রিড ক্লাউড প্রক্রিয়া শক্তিশালীভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। একটি প্রতিষ্ঠান অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রাইভেট ক্লাউডে অথবা লোকাল ডাটা সেন্টারে এবং সার্বজনীনভাবে পাবলিক ক্লাউডে সংরক্ষণ করে একটি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে।
হাইব্রিড ক্লাউড এমন একটি প্রযুক্তিগত অবকাঠামো, যাতে কাজের পরিমাণ ও নিয়ন্ত্রণ সার্বিকভাবে কয়েকটি ক্লাউড আবহের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা। এখানে নূন্যতমপক্ষে একটি প্রাইভেট ক্লাউড এবং একটি পাবলিক ক্লাউড নিয়ে হাইব্রিড ক্লাউড গড়ে ওঠতে পারে। আবার দুইটি কিংবা তার অধিক প্রাইভেট ক্লাউড পদ্ধতি থাকতে পারে, অথবা দুইটি পাবলিক ক্লাউড অবস্থা। একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অসংখ্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রযুক্তির রিসোর্সগুলোকে একীভ‚ত করে। কাজের পরিধিগুলো বিভিন্ন ক্লাউডে আদান-প্রদান করে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে একটি মাত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করে।
হাইব্রিড ক্লাউড কাঠামো কেমন
মার্কেট রিসার্চ ফিউচারের তথ্য হিসাবে ২০২২ সালে ৯০ ভাগের বেশি প্রতিষ্ঠান হাইব্রিড ক্লাউড অবকাঠামোর ওপর আস্থা রাখবে। হাইব্রিড ক্লাউড সাধারণত পাবলিক ওহভৎধংঃৎঁপঃঁৎব ধং ধ ংবৎারপব (ওধধঝ) প্ল্যাটফর্মের অন্তর্ভুক্ত, যাতে প্রাইভেট ক্লাউড অথবা ডাটা সেন্টার এবং নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা আছে। অনেক হাইব্রিড মডেল লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (খঅঘ) এবং ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (ডঅঘ)-এর মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করে এবং পুরো প্রক্রিয়া লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওধধঝ সলিউশনের মাধ্যমে হাইব্রিড কৌশল অবলম্বন করে তাদের কাজ শুরু করে। হাইব্রিড কৌশল সুষ্ঠুভাবে সন্নিবেশ করতে পাবলিক ও প্রাইভেট ক্লাউডের সমন্বয় থাকতে হবে, তাহলে সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাইভেট ক্লাউডকে পাবলিক সলিউশনের কথা চিন্তা করে গঠন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যামাজন, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতন ওধধঝ প্রোভাইডারগুলো পাবলিক ক্লাউডের সলিউশনের জন্যে লোকাল রিসোর্স সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবসাকে আরও সহজতর করেছে। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সেবাগুলোর মাঝে আন্তঃব্যবহার উপযোগিতার উন্নতি করেছে। হাইব্রিড ক্লাউড একটি হাইপারবিসর লেয়ার বা স্তর শ্রেণিবদ্ধ করে ভার্চুয়াল মেশিন তৈরি করে, এতে পাবলিক ক্লাউডের সাথে সফটওয়্যার লেয়ারের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে। প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস হিসেবে ব্যবহারে হাইব্রিড ক্লাউডের দ্রæত ক্রমবিকাশ ঘটছে। উধঃধ ধং ধ ঝবৎারপব (উঅঅঝ) হাইব্রিড ক্লাউডে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে, এর সকল কিছুই চাহিদা এবং তথ্যের সরবরাহের ওপর নির্ভর করে।
অনেক প্রতিষ্ঠানের ডাটা সেন্টার অন্য জায়গায় কিংবা দেশে অবস্থান করে, নিকটবর্তী স্থানের ডাটা সেন্টারের অবস্থানের পাশাপাশি। অনেক প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) অথবা ভার্চুয়াল প্রাইভেট ক্লাউড (ভিপিসি) অথবা ডেডিকেটেড কাঠামো ভাড়া নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানগত কার্যক্রম সম্পাদন করে।
আধুনিক হাইব্রিড ক্লাউড কাঠামো প্রাইভেট ও পাবলিক ক্লাউড এবং ক্লাউড প্রোভাইডার ক্লাউড-নেটিভ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এবং বিস্তৃতিতে সাপোর্ট করে। একই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম পুরো প্রক্রিয়াতে কাজ করে। একটি কন্টেইনার সমন্বয় প্ল্যাটফর্ম যা কুবেরনেটস (কঁনবৎহবঃবং) নামে পরিচিত, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লাউড পরিবেশের অ্যাপ্লিকেশনে বিস্তৃতি সাধন করে। ‘কুবেরনেটস’ একটি ওপেনসোর্স কন্টেইনার সমন্বয়কারী প্ল্যাটফর্ম যা আপ্লিকেশন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও বিস্তৃতি নিজে থেকে করে। অপরদিকে কন্টেইনার হচ্ছে সফটওয়্যারের কাজ সম্পন্ন করার ইউনিট যাতে অ্যাপ্লিকেশন কোড প্যাকেজ অবস্থায় থাকে। এতে ডেক্সটপ, ক্লাউড কিংবা প্রযুক্তিগত যে কোনো জায়গায় তা নির্ভরতার সাথে পরিচালিত হতে পারে।
কেনো হাইব্রিড ক্লাউড প্রয়োজন
বিশ্ব করোনা অনেক প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক প্রযুক্তির সক্ষমতা গ্রহণ করতে বাধ্য করছে, প্রযুক্তিনির্ভর ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠান নিজেদের আধুনিকায়নে মনোযোগ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে হাইব্রিড ক্লাউড নিরাপত্তা এবং গতি দুটোই পরিষেবা স্বল্প খরচে প্রদান করতে পারবে। কারণ, ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম যে দেশে অবস্থান করছে সেখান থেকে সম্পাদন করতে হয়, আর পাবলিক ক্লাউডে নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি চিন্তার বিষয়। দ্রæত প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্ত, ভিপিএন, এনক্রিপশন, ডাটা ব্যবহার এবং দূরবর্তী কার্যক্রমের জন্যে কৌশলগত কারণে প্রযুক্তিবিদরা প্রাইভেট এবং পাবলিক ক্লাউডের সমন্বিত ব্যবস্থা হাইব্রিড ক্লাউড অধিক পছন্দ করেন। ২০১৯ সালে ২৬৫০ জন প্রযুক্তিবিদের ওপর করা জরিপে ৮৫ ভাগ ব্যবসার জন্যে হাইব্রিড ক্লাউডকে আদর্শ অপারেটিং মডেল হিসেবে বিবেচনা করেন এবং ৬৪ ভাগের নিকট প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল পরিবেশে রূপান্তর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। ডাটা সংরক্ষণ, কাজের গতি, কাস্টমার সাপোর্ট আরও উন্নত এবং সহজীকরণে হাইব্রিড ক্লাউড অত্যাবশ্যকীয়।
হাইব্রিড ক্লাউড কীভাবে কাজ করে
দুই ধরনের হাইব্রিড ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম আছে, একটি মনোক্লাউড এবং অপরটি মাল্টিক্লাউড। হাইব্রিড মনোক্লাউড কোনো স্থানে একটি ক্লাউড প্রোভাইডার সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার নিয়ে স্থাপিত হয় এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী ক্লাউড সেবা প্রদান করে। অপরদিকে, হাইব্রিড মাল্টিক্লাউড ওপেনসোর্সভিত্তিক ডাটা নিয়ে কাজ করে, এটি একটি নেটওয়ার্ক কাঠামো ব্যবহার করে বিভিন্ন স্টোরেজ সার্ভিস অনেকগুলো ক্লাউড পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানি থেকে প্রাইভেট ক্লাউড সুবিধাসহ গ্রহণ করে। পাবলিক-প্রাইভেট ক্লাউডের সম্মিলনে ডাটা দ্রæত প্রেরণ, সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ এতে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হয়। বেশি গুরুত্বপূর্ণ ডাটা বা ফাইল প্রাইভেট ক্লাউডে এবং অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্য দরকারি ডাটা পাবলিক ক্লাউডে সংরক্ষণ করা হয়। পাবলিক ক্লাউড সেবা ব্যবহারকারীদের বিদ্যমান অ্যাপসে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স সুযোগ বৃদ্ধি করে।
হাইব্রিড স্টোরেজ থেকে ডাটা গ্রাহকের নিকট সহজে প্রেরণ হয়। একাধিক জায়গায় ফাইল কিংবা ডাটা অপটিমাইজ অবস্থায় সংরক্ষণ থাকে এবং দ্রুত ও নিরাপদে একাধিক জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় ক্লাউড স্টোরেজে প্রেরণ করে। তথ্য শেয়ার করে সকল ডাটা রিসোর্সের একাধিক কপি রাখে। ক্লাউড স্টোরেজ রিসোর্স লোকাল ডাটা স্টোরেজের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার হয়। হাইব্রিড স্টোরেজ পদ্ধতি পলিসি ইঞ্জিন ব্যবহার করে সাইটের অ্যাকটিভ ডাটা নিয়ন্ত্রণ এবং মাঝে মাঝে ব্যবহৃত ডাটা ক্লাউড স্টোরেজে প্রবেশ করায়। আর এই ডাটা স্টোরেজ ব্যবহার করে অনলাইন কেনাকাটাতে প্রোডাক্ট বিক্রয়ের ডাটা রাখা এবং তার পর্যবেক্ষণ, ঠিক একইভাবে স্বাস্থ্যখাতে রোগীর তথ্য গ্রহণ করে সে অনুযায়ী পরবর্তীতে রোগীর সেবা প্রদান এবং আইন আদালতে জরুরি তথ্য নিরাপদে রাখা ক্লাউড সহজ করে।
হাইব্রিড ক্লাউড ব্যবহারের সুবিধা
হাইব্রিড ক্লাউডে সাশ্রয়ী, স্কেলেবিলিটি, নিরাপত্তা, ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা, বিগ ডাটা প্রোসেসিং, রিকভারির ওপর নির্ভর করে এর সুবিধা কেমন
স্কেলেবিলিটি : প্রতিষ্ঠানের চাহিদা, জায়গা, স্টোরেজ এবং গতির দরকার হিসেবে হাইব্রিড ক্লাউড প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন মেটাতে পারে। প্রতিষ্ঠান একই সময়ে পাবলিক ক্লাউডের থেকে সুবিধা গ্রহণ করতে পারে, যেমন ঠিক প্রাইভেট ক্লাউডের থেকে চাহিদা স্বল্প করে নিতে পারে।
নিরাপত্তা : প্রাইভেট ক্লাউডে ডাটা বা তথ্য সংরক্ষণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনা শুধু, একইসাথে ডাটা প্রোটেকশন রিগুলেশন বা নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের তথ্য একটি সন্নিবেশিত অবস্থায় সংরক্ষণ করে।
গ্রহণযোগ্যতা : পাবলিক ক্লাউড নাকি প্রাইভেট ক্লাউড কোনটি সবচেয়ে দরকার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান সেটি বেছে নিতে পারে। প্রযুক্তিবিদরা দ্রæত ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খুলে ডেস্কটপ ফোল্ডারের মাধ্যমে একই সময়ে অনেক ডাটা ক্লাউডে রাখতে পারবেন। ইমেইলের মাধ্যমে ফাইল না পাঠিয়ে ওয়েব লিংকের প্রদানের মাধ্যমে বিপুল ডাটা বা তথ্য প্রতিষ্ঠানের অন্য ব্যক্তির কাছে প্রেরণ করতে পারেন।
বিগ ডাটা প্রসেসিং: অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিপুলসংখ্যক ডাটা নিয়ে কাজ করা কঠিন, তাদের জন্য মেশিন লার্নিং, বিগ ডাটা পর্যবেক্ষণ, ডাটা মডেলিংয়ের সুবিধা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্লাউডের সহায়তায় দ্রæত নেয়।
রিকভারি বা পুনরুদ্ধার : হাইব্রিড ক্লাউডের সবচেয়ে বড় দিক ডাটা রিকভারি ব্যাকআপ। প্রাইভেট ক্লাউডে পুরো ডাটা পরিচালিত করছেন, কিন্তু পাবলিক ক্লাউডে পুরো অ্যাকটিভ। ব্যবসা পরিচালনার জন্যে পাবলিক ক্লাউড ব্যবহার, পরিচালনার সময় কাঠামো এবং অ্যাপ্লিকেশনে সমস্যা হতে পারে, এক্ষেত্রে রিকভারি প্রোটোকলে হাইব্রিড ক্লাউডে তাৎক্ষণিকভাবে ডাটা সংরক্ষণ করে।
দূর থেকে ব্যবহার উপযোগী : প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা যে একই দেশে থেকে কাজ করবে তেমন নয়, আগে যেখানে তথ্য ছিল সেখানেই কাজ করতে এসে সবাই কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে এখন হাইব্রিড ক্লাউডের কল্যাণে যেকোনো দেশে থেকে এই সেবা নিতে ও ব্যবহার করতে পারছেন।
সাশ্রয়ী : হাইব্রিড ক্লাউড ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত এবং অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্টজনিত খরচ কমে, এটি প্রারম্ভিক অবস্থায় বিনিয়োগে যথেষ্ট স্বস্তি আনে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানের বছরে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবসায়ে কাজের পরিধি বেশি, তাদের জন্যে ভালো সুযোগ হাইব্রিড ক্লাউড।
হাইব্রিড ক্লাউডে অসুবিধা
হাইব্রিড ক্লাউড ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া; এতে নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ, নেটওয়ার্ড সিস্টেম ঠিক মতন পরিচালনা করতে না পারলে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু অসুবিধা উল্লেখিত। যেমনÑ
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা : হাইব্রিড ক্লাউড পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ জটিল, পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ভালো পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় এবং সময় অসময়ে বিভিন্ন আইনকানুন ব্যবস্থাপনার ওপর আরোপিত হতে পারে।
বিনিয়োগ : পরিচালনা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একটি ক্লাউড কার্যক্রম প্রতিষ্ঠান করতে এবং পরিষেবার প্রদান করতে ভালো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন পরে। হাইব্রিড ক্লাউড শুধুমাত্র পাবলিক ক্লাউডের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনা, এতে প্রাইভেট ক্লাউডের সেবাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হয়। প্রাইভেট ক্লাউডের জন্য দক্ষ প্রযুক্তির লোকবল এবং ভালো কাঠামোগত সেটআপ নিশ্চিত করতে হয়।
সামঞ্জস্যতা : হাইব্রিড ক্লাউডে অন্যতম বড় ইস্যু এর পরিবেশ। কাঠামোগত অবস্থান এবং সেবার মান নিশ্চিত এখানে চ্যালেঞ্জের বিষয়। ‘মার্কেট রিসার্চ ফিউচার’র জরিপ মতে, ৫১ ভাগ প্রতিষ্ঠান অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাউডে তথ্য রাখা কঠিন মনে করে। অনেক সময় অরজিনাল ফোল্ডার থেকে আপনার ডাটা ক্লাউডে প্রেরণ করতে হলে কপি পেস্ট করে ডাটা রাখা দরকার, তা না হলে ক্লাউডে স্টোরেজে সংরক্ষণে অসুবিধা হতে পারে।
ডাটা নিরাপত্তা : বেশিরভাগ ডাটা বিভিন্ন জায়গা থেকে একটি জায়গায় প্রেরিত হয়। ডাটা নিরাপত্তা যেহেতু বেশিরভাগ সময়ে ব্যবহারকারীর ওপর নির্ভর করে, এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য যেন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে না পরে সেটা হাইব্রিড ক্লাউডে খুব গুরুত্ব বহন করে। অপরদিকে, অনেক সময়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ডাটার সাথে আপনার ডাটা একসাথে সমস্যা হতে পারে, যেটা আপনার ডাটা বা তথ্যের নিরাপত্তার কারণ হতে পারে।
নেটওয়ার্কিং: যখন ডাটা পাবলিক এবং প্রাইভেট ক্লাউড মডেলের একটি থেকে আরেকটিতে প্রেরণ করা হয় তখন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় বাধার সৃষ্টি হতে পারে। পাবলিক ক্লাউডের ডাটা পাবলিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রেরিত হয়, যেটা অনেক ধীরগতিসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত। এতে ভালো কার্যক্রমে প্রভাব পরে, বিশেষ করে অ্যাপের মতো কাজে দ্রুত পরিচালনা দরকার পরে।
ব্যান্ডউইডথ : বেশিরভাগ ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসের সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যান্ডউইডথ বণ্টিত থাকে, যদি আপনি সেই নির্ধারিত পরিমাণ ব্যান্ডউইথ অতিক্রম করে ফেলেন তাহলে অতিরিক্ত চার্জ প্রদান করতে হবে। এজন্যে আগে থেকে হাইব্রিড ক্লাউডের স্টোরেজ প্রোভাইডার কি সুবিধা দিচ্ছে তা খেয়াল করতে হবে।
কোন প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো হাইব্রিড ক্লাউড পরিষেবা প্রদান করছে
পাবলিক ক্লাউড অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং রেকস্পেসের মতো অনেক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হাইব্রিড ক্লাউড পরিষেবা দেয়া শুরু করেছে। ‘অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস আউটপোস্টস’ পরিষেবা ২০১৮ সালে পুনরায় অডঝ-তে আবার নতুন করে পরিচিত হয়। সেবা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একইরকম এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) এবং টুল ব্যবহার করে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস কার্যক্রম বিস্তৃতের সুবিধা দিয়েছে। এতে করে জায়গা পরিবর্তন না করেও ডেভেলপারদের একই জায়গাতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। মাইক্রোসফটের ‘আজ্যুয়র স্ট্যাক’ একইরকমভাবে পাবলিক আজ্যুয়র ক্লাউডের মাধ্যমে নিকটবর্তী জায়গার ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। ২০১৮ সালে আইবিএম ৩৪ বিলিয়ন ডলারে ‘রেডহ্যাট’ প্রতিষ্ঠানকে কিনে, যা ভবিষ্যতে হাইব্রিড ক্লাউডের সম্ভাবনাকে আরও সুদৃঢ় করে।
যেসব সেক্টরে হাইব্রিড ক্লাউডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার
শিক্ষা, স্বয়ংচালিত, প্রোডাকশন, স্বাস্থ্য চিকিৎসা, ব্যবসা-অর্থনীতি এবং সরকারি কাজে অধিক হাইব্রিড ক্লাউড ব্যবহার করা সম্ভব।
শিক্ষা খাতে : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি ও শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণের আদান-প্রদান, ডিজিটাল ক্লাস এবং নিজেদের মধ্যে শিক্ষার মান উন্নয়নে ক্লাউড নির্ভর ব্যবস্থা অনেক বেশি কার্যকর। পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষকদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নিরাপদে সংরক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বিভাগের লোকেরা ক্লাউডের মাধ্যমে করতে পারেন।
স্বয়ংক্রিয়চালিত : অটোমেটিক ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযুক্তিগত বিষয় সবসময় আপডেট রাখতে হয়। হাইব্রিড ক্লাউডের ব্যবহার করে তথ্য গ্রহণ এবং পর্যবেক্ষণ করে স্মার্ট গাড়িগুলো পরিচালিত হয়।
স্বাস্থ্য চিকিৎসাখাত : রোগীর ডাটা বা তথ্য ক্লাউডের মাধ্যমে রেখে নিয়মিত সঠিক চিকিৎসার জন্যে অনেক ডাক্তার ক্লাউডের সাহায্য নেন। এতে রোগীর বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্যগত অবস্থান পর্যবেক্ষণ করার সুবিধা দ্রæত বুঝতে পারেন।
সরকারি কার্যক্রম : সরকারের অনেক তথ্য জনগণের জানার প্রয়োজন, আবার অনেক তথ্য শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে রাখার দরকার পরে। এসব ক্ষেত্রে হাইব্রিড ক্লাউড অনলাইনে দ্রæত সেবার জন্যে স্বল্পমূল্যের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য।
ব্যবসা-অর্থনীতি : ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক সেক্টরে লেনদেন অনলাইনে প্রাইভেট ক্লাউডের মাধ্যমে সম্পন্ন করে এবং পাবলিক ক্লাউডের মাধ্যমে সেই ব্যবসায়িক কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্তের পর্যবেক্ষণ সবার কাছে লাইভ বা সরাসরি উপস্থাপন করে। আর তথ্য নিরাপদে ডাটা সেন্টারে সুরক্ষিত থাকে।
হাইব্রিড ক্লাউড সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ক্লাউড মডেল ব্যবস্থা। ডাটা নিরাপত্তা, সংরক্ষণ এবং কার্যক্রম দ্রæত হওয়াতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আস্থা তৈরি করতে পারে।
০ টি মন্তব্য