ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (IGF) ২০তম বার্ষিক সভা আজ নরওয়ের লিলেস্ট্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ (UN DESA) ও নরওয়েজিয়ান সরকারের সহযোগিতায় এই বহুপক্ষীয় সভাটি ২৩ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) ও বৈশ্বিক ডিজিটাল গভর্নেন্স নিয়ে আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। দেশগুলো এখন গত সেপ্টেম্বর মাসে গৃহীত গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট (GDC) বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে এবং বিশ্ব তথ্য সমাজ শীর্ষ সম্মেলনের (WSIS+20) বিশ বছরের অগ্রগতি মূল্যায়ন করছে। লিলেস্ট্রমে এই উদ্বোধন বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল গভর্নেন্সে দুই দশকের অগ্রযাত্রা চিহ্নিত করে এবং একটি উন্মুক্ত, নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানব মর্যাদা ও অধিকারকেন্দ্রিক ইন্টারনেটের প্রতি আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনঃনিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি করে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভিডিও বার্তায় IGF-এর ২০তম বার্ষিকী ও ইন্টারনেটের উপর অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিনির্ধারণে ফোরামের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধরে ফোরাম দেখিয়েছে কীভাবে বিভিন্ন খাত, অঞ্চল ও প্রজন্মের মধ্যে সংলাপ ইন্টারনেটকে মর্যাদা, সুযোগ ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।”

“একসাথে ডিজিটাল গভর্নেন্স গড়ে তোলা” এই মূল প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত IGF ২০২৫ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী ৮,০০০-এরও বেশি অংশগ্রহণকারী একত্রিত হয়েছেন—সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, প্রযুক্তিগত সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি—উভয়ই সরাসরি ও ভার্চুয়ালি। এই ফোরামকে ডিজিটাল নীতিনির্ধারণ নিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল লি জুনহুয়া বলেন, “লিলেস্ট্রমে IGF ২০২৫ হোক সেই মুহূর্ত, যখন আমরা আরও এগিয়ে যাব—একটি এমন ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে, যার ভিত্তি হবে বিশ্বাস, ন্যায়বিচার ও মানব মর্যাদা।”

পাঁচ দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা এমন ডিজিটাল পরিসর গঠনের উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন, যা নিরাপদ, স্বচ্ছ ও অধিকার-সম্মত—যা গণতান্ত্রিক সমাজ ও মুক্ত অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক। আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে চারটি থিম:

• ডিজিটাল আস্থা ও স্থিতিস্থাপকতা

• টেকসই ও দায়িত্বশীল উদ্ভাবন

• সর্বজনীন প্রবেশাধিকার ও ডিজিটাল অধিকার

• ডিজিটাল সহযোগিতা

এই আলোচনাগুলোর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবর্তিত সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ও ভুল/বিকৃত তথ্যের হুমকির সময়ে অভিযোজনের উপায় খোঁজা হবে।

ফোরামটি ডিজিটাল বিভাজন কমানো এবং অনলাইন মানবাধিকারের—গোপনীয়তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার—রক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা নিয়ে কাজ করবে, যাতে সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। এটি একটি অংশগ্রহণমূলক ডিজিটাল গভর্নেন্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ও পটভূমি থেকে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথ, তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা যুক্ত হন।

ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (IGF) সম্পর্কে

ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (IGF) জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে প্রতিষ্ঠিত একটি বৈশ্বিক বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ডিজিটাল পাবলিক নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রতি বছর এই ফোরাম হাজার হাজার অংশগ্রহণকারীকে একত্র করে সবচেয়ে জরুরি ডিজিটাল গভর্নেন্স ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় ও সমাধান খোঁজার সুযোগ দেয়।

IGF-এর আলোচনার মাধ্যমে ডিজিটাল গভর্নেন্সের মূল উপাদান—নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন ও কার্যকারিতা—নিয়ে তথ্য, নীতি ও সেরা অনুশীলন ভাগ করে নেওয়া হয়।

চলতি বছর, ২৩ থেকে ২৭ জুন অনুষ্ঠিত এই IGF-এ ১৬০টিরও বেশি দেশ থেকে ৮,০০০-এর বেশি নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকবেন। “একসাথে ডিজিটাল গভর্নেন্স গড়ে তোলা” প্রতিপাদ্য নিয়ে তারা বৈশ্বিক ডিজিটাল ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণে একত্র হচ্ছেন।