https://gocon.live/

প্রযুক্তি

বিশ্বের প্রথম এনালগ কমপিউটার

বিশ্বের প্রথম এনালগ কমপিউটার বিশ্বের প্রথম এনালগ কমপিউটার
 

বিশ্বের প্রথম এনালগ কমপিউটার


পঞ্জ। সমুদ্রের পানিতে বসবাসকারী সরলদেহী এক প্রাণী। কেউ কেউ ভুল করে মনে করেন এগুলো প্রাণী নয়, উদ্ভিদ। এই ভুল ধারণার কারণ, সমুদ্রের একদম তলদেশে থাকা এই স্পঞ্জ উদ্ভিদের মতো কখনই স্থান পরিবর্তন করে না, একই স্থানে অবস্থান করে। লবণাক্ত কিংবা লবণমুক্ত উভয় ধরনের পানিতেই এগুলো বেঁচে থাকে। প্রাকৃতিক এই স্পঞ্জ মানুষ নানাভাবে নানা কাজে ব্যবহার করেন। ডুবুরিরা এই স্পঞ্জ সংগ্রহ করে থাকেন।


১৯০০ সালে গ্রিক স্পঞ্জ ডুবুরিরা গ্রিসের অ্যান্টিকিথেরা দ্বীপের উপক‚লে সমুদ্রের তলদেশে প্রাচীন রোমান যুগের একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। এই ধ্বংসাবশেষ থেকে এরা অন্য অনেক কিছুর সাথে অনেকটা মরচেপড়া ভগ্নাবস্থায় একটি প্রাচীন কারিগরি যন্ত্র তথা মেকানিক্যাল ডিভাইস খুঁজে পান। এরা সেদিন যন্ত্রটির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ভগ্নাংশ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ওই দ্বীপের নামানুসারে এর নাম দেয়া হয় Antikythera mechanism। এর সবচেয়ে বড় খন্ডাংশটি এথেন্সের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এটি ২০০০ বছরের পুরনো একটি মেকানিক্যাল ডিভাইস। ধারণা করা হয়, এটি বিশ্বের প্রথম এনালগ কমপিউটার। বলা হচ্ছে, নানা গিয়ারে পরিপূর্ণ হস্তচালিত এই যন্ত্রটি ব্যবহার হতো জাগতিক বস্তু পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য, তারা ইত্যাদির চলাচল ও অবস্থান সম্পর্কে আগাম তথ্য জানার কাজে। তবে এসব বস্তুর এই চলাচল ও অবস্থান নির্ণীত হতো পৃথিবীর কেন্দ্র বিবেচনা করে। ধরে নেয়া হতো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে সবকিছুই ঘুরে। এই যন্ত্রের হস্তচালিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উন্নতমানের গিয়ার বক্স যথার্থভাবে প্রাচীনকালে গ্রিকদের জানা পাঁচটি গ্রহের চলাচল ও অবস্থান সম্পর্কে আগাম তথ্য দিতে সক্ষম ছিল। সেই সাথে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রকলার ইত্যাদির সময় পর্যন্ত জানাতে পারত।  


শুরু হয় এ নিয়ে নানা গবেষণা। এই গবেষণা সূত্রে বিজ্ঞানীরা হয়তো এরই মধ্যে জানতে পেরেছেন ২০০০ বছরের পুরনো এই মেকানিক্যাল ডিভাইসটির পরিপূর্ণ ডিজিটাল মডেল সম্পর্কে। দশকের পর দশক ধরে চলা কষ্টসাধ্য গবেষণা ও বিতর্কের পরও বিজ্ঞানীরা এই মেকানিক্যাল ডিভাইসটির ম্যাকানিজম জানতে এখনো পুরোপুরি সক্ষম হননি। জানতে পারেননি কী করে হিসাব-নিকাশ ব্যবহার হতো এই যন্ত্রে। 


কিন্তু এখন ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের (ইউসিএল) গবেষকেরা বলছেনÑ এরা এই ডিভাইসটির ডিজাইন পরিপূর্ণভাবে রিক্রিয়েট তথা পুনঃসৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা প্রাচীন সময়ে ব্যবহৃত ক্যালকুলেশন থেকে এর ডিজাইন পুনঃসৃষ্টি করেছেন। এখন এরা এদের নিজস্ব কন্ট্রাপশন (অদ্ভুত চেহারার যন্ত্র) দেখানোর জন্য তৈরি হচ্ছেন। এরা দেখাতে চান : হ্যাঁ, এটি ঠিকঠাক মতো কাজ করছে।


গবেষকেরা গত ১২ মার্চে একটি উন্মুক্ত প্রবেশযোগ্য জার্নাল ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ লিখে জানিয়েছেন : ‘আমাদের গবেষণাকর্ম অ্যান্টিকিথেরাকে তুলে ধরেছে একটি সুন্দও ধারণা হিসেবে। এটি একটি চমৎকার প্রকৌশলকে রূপান্তর করেছে একটি জিনিয়াস ডিভাইসে। এটি চ্যালেঞ্জ করেছে এই প্রাচীন গ্রিকদের প্রাযুক্তিক জ্ঞান সম্পর্কে আমাদের সব পূর্বধারণাকে।’


কেনো অ্যান্টিকিথেরার পুনঃসৃষ্টি?


গবেষকেরা এই ডিভাইসটি রিক্রিয়েট তথা পুনঃসৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন একে ঘিরে নানা রহস্যেও কারণে। তারা চেয়েছিলেন এভাবে নানা প্রশ্নের গভীরে পৌঁছুতে। তাছাড়া আজ পর্যন্ত আর কেউই তথাকথিত এই কসমসের মডেল তৈরি করেননি, যার মাধ্যমে সব ভৌত সাক্ষ্য-প্রমাণকে একসাথে মিলানো যায়। ইউসিএল-এর বস্তুবিজ্ঞানী সহ-লেখক অ্যাডাম উজচিক ‘লাইভসায়েন্স’-কে বলেছেন : এই ডিভাইসের জটিলতা ও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যকার দূরত্ব একই সাথে সীমিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। খোলাখুলি বলতে গেলে বলতে হয়, এর মতো দ্বিতীয় আর একটিও পাওয়া যায়নি। এটি এই জগতের বাইরের।’


দুর্বোধ্য সব গিয়ার দিয়ে এই অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম তৈরি করা হয়েছিল। যেমনটি গিয়ার থাকে দাদার আমলের ঘড়িগুলোতে। কিন্তু সেই সময়ে অন্য যেসব গিয়ার আবিষ্কার হয়েছিল, সেগুলো ছিল আরো বড় আকারের, যেগুলো ব্যবহার হতো মিলিটারি যন্ত্র ব্যালিস্তা, তীর  ছোঁড়ার ধনুক কিংবা পাথর ছুঁড়ে মারার গুলতিতে।


এগুলোর উন্নত ধরনের তৈরি করার বিষয়টি এর গঠন-প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি করে। এটি যেমনি দুর্বোধ্য, তেমনি প্রশ্ন জাগে এ ধরনের দ্বিতীয় আরেকটি যন্ত্র কেনো আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল না?


অ্যাডাম উজচিকের প্রশ্ন : ‘জাহাজে এটি দিয়ে কী করা হচ্ছিল? আমরা পেলাম যন্ত্রটির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ গেল কোথায়? বাকি অংশ কী ক্ষয় হতে হতে নিঃশেষ হয়ে গেছে? আর এই যন্ত্রটি কি কখনো ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা? তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের জবাব সত্যিকার অর্থে আমরা দিতে পারি শুধু প্রতœতাত্তি¡ক পরীক্ষার মাধ্যমে। এর জবাব এমনÑ যেভাবে জবাব পাওয়া গিয়েছিল স্টোনহেঞ্জ কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল প্রশ্নটির। চলুন আমরা ২০০ মানুষের হাতে কিছু দড়ি দিই এবং দিই একটি বড় পাথর। এমন চেষ্টা করি ওই পাথরকে স্যালিসবারি প্ল্যানের ওপর দিয়ে টেনে তুলতে। অনেকটা এর মতো করেই আমরা অ্যান্টিকিথেরা নিয়ে কাজ করছি।’


কমপিউটার জেনারেটেড অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম


প্রথম কমপিউটার তৈরি করা মডেলটি সৃষ্টি করতে গবেষকেরা অতীতের সব ডিভাইসের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। এমনকি কাজে লাগান মাইক লরিটের অভিজ্ঞতাও, যিনি লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামের সাবেক কিউরেটর। তিনি এর আগে পুনর্গঠন করেন একটি ওয়ার্কিং রেপ্লিকা। অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজমে পাওয়া লিপি এবং ব্যবহার করে গ্রহগুলোর প্রদক্ষিণ পদ্ধতির গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক Parmenides সক্ষম হয়েছিলেন এই ওভারল্যাপিং গিয়ারসমৃদ্ধ মেকানিজমের কমপিউটার মডেল তৈরি করতে। এই মডেল বসানো হয় কম্পার্টমেন্টের ঠিক ১ ইঞ্চি গভীরে।


এই মডেলে প্রতিটি গিয়ার ও রটেটিং ডায়াল রিক্রিয়েট/পুনর্গঠন করা হয়েছে, কী করে গ্রহগুলো, সূর্য ও চাঁদ জুডায়িকে (তারার প্রাচীন মানচিত্রে) চলাচল করে এর পেছনে গ্রহণ সৃষ্টি করে, তা  দেখানোর জন্য। প্রাচীন গ্রিকরা মনে করতেন : মহাবিশ্বে সবকিছু ঘুরে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে। এই রেপ্লিকা প্রদর্শন করে আজকের দিনে বাতিল করে দেয়া হয় গ্রিকদের এই অনুমান। এখন গবেষকেরা যে কমপিউটার মডেলটি তৈরি করেছেন, তারা চাইছেন এর মাধ্যমে প্রথম আধুনিক কৌশল ব্যবহারের একটি ভৌত সংস্করণ তৈরি করতে, যাতে তারা এই ডিভাইসটিকে কার্যকর করে তুলতে পারেন। এরপর তারা এই যন্ত্রে সেই কৌশল কাজে লাগাবেন, যা প্রাচীন গ্রিকরা ব্যবহার করে থাকতে পারেন।


উজচিক বলেন, ‘এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, প্রাচীন গ্রিকেরা এর মতো কিছু নির্মাণে সক্ষম ছিলেন। এটি আসলে একটি রহস্যময় ব্যাপার। পরীক্ষা চালানোর একমাত্র উপায় এরা কি জানতেনÑ এরা কি এটি নির্মাণ করতে পারতেন শুধু প্রাচীন গ্রিক উপায়ে? তাছাড়া প্রচুর বিতর্ক আছে : এর পেছনে কারা ছিলেন আর কারা এটি তৈরি করেছিলেন। অনেকেই বলেন, এর পেছনে ছিলেন আর্কিমিডিস। তিনি এর নির্মাণের কাছাকাছি সময়টাতেই বেঁচেছিলেন। তখন তার মতো দ্বিতীয় আর কেউ ছিলেন না, যার প্রকৌশল সক্ষমতা তার মতো ছিল, যিনি এমন একটি যন্ত্র তৈরি করতে পারেন। আর যে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষে এটি পাওয়া গেছে, সেটি ছিল একটি রোমান জাহাজ। আর্কিমিডিস নিহত হন রোমানদের হাতে, সিরাকাস দখলের সময়। তিনি যে অস্ত্র উদ্ভাবন করেছিলেন, তা দিয়ে তাদের নগরকে দখল করা থেকে রক্ষা করা যায়নি। আরো রহস্যের ব্যাপার হলো, অন্য যন্ত্র তৈরি করতে গ্রিকেরা কি একই ধরনের টেকনিক বা কৌশল ব্যবহার করেছিলেন কিনা? এখনো উদঘাটন হয়নি, আরো ডিভাইস ও অ্যান্টিকিথেরার মেকানিজমের আরো কিছু কপি কি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে কিনা।’








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।