ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা আমদানি-রফতানিকে একটি নীতিমালার অধীনে আনতে দেশে প্রথমবারের মতো ক্রস বর্ডার ডিজিটাল বাণিজ্য নীতিমালা হচ্ছে। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীতিমালাটির একটি খসড়া জনমতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এই নীতিমালার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির বিপরীতে আর্থিক লেনদেন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ নিয়ে ই-ক্যাব’র সদ্য সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, নীতিমালাটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ সহজতর করতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে ডিজিটাল লেনদেনের কর আদায় প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে, যা রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমার মতে, এই নীতির উল্লেখযোগ্য একটি দিক হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নিবন্ধন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এটি ভোক্তা অধিকার রক্ষা এবং মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এছাড়া, লজিস্টিক ও ওয়ারহাউজিং অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং অনলাইন ব্যবসায়ের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
এলসি ছাড়াই আমদানি-রফতানির সুযোগ রেখে ১৫ পৃষ্ঠার এই খসড়ায় মোট ১৮টি অধ্যায় রয়েছে। নীতিমালায় ডিজিটাল কমার্স ফ্রেমওয়ার্কে প্রতিফলিত ৮টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে ক্রসবর্ডারের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ; উন্নত ইলেকট্রিক ডাটার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা; পণ্য-সেবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা; আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, ডাটা সংগ্রহ, পরিমাপ, বিশ্লেষণ; জনসচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অংশীদারিত্বের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া নীতিমালার পটভূমিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯–এর পর থেকে ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্র বাড়ছে এবং ডিজিটাল বাণিজ্য এখন আর নিজ দেশের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সম্ভাবনার পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জও দেখা দিচ্ছে এ খাতে। বাংলাদেশ একটি দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। ক্রসবর্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে এ দেশের হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।
তবে ক্রসবর্ডার ডিজিটাল বাণিজ্যের মাধ্যমে নকল বা ভেজাল পণ্য এবং কল্পিত বা ধারণাগত পণ্য কেনাবেচা করা যাবে না। একই সঙ্গে বাংলাদেশে স্থাপিত কোনো কোম্পানি ছাড়া বিদেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। তবে বিদেশি ডিজিটাল বাণিজ্য কোম্পানি দেশের অভ্যন্তরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে। একইসঙ্গে অনলাইন লটারি, জুয়া, বেটিং, গেমিং ইত্যাদি আয়োজন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো গিফট কার্ড, গিফট ভাউচার বা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, এমন কোনো কার্ড বা ডিজিটাল নম্বর বা মাধ্যম কেনাবেচা করতে পারবে না।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, ডিজিটাল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে অনলাইনে খুচরা পণ্য বা সেবা বিক্রির ক্ষেত্রে বিদেশি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে ডিবিআইডি নিতে হবে। আর দেশের ভেতরে পণ্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে পণ্যের বাল্ক আমদানি করা যাবে। ডিজিটাল বাণিজ্যের মাধ্যমে আমদানি করে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে ব্যবহার করলে ইপিজেডের মতো সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে আমদানি করা পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর ও ভ্যাট দিতে হবে।
ডিজিটাল বাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশীয় লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিবহন ও সরবরাহ কোম্পানিগুলোর সংযোগ ও সমন্বয় করা হবে। পণ্য ও সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল লজিস্টিকস ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম (সিএলটিপি) চালু করা হবে। এই প্ল্যাটফর্ম সব লেনদেন পদ্ধতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে বিজনেস-টু-কনজ্যুমার (বিটুসি) এবং কনজ্যুমার-টু-কনজ্যুমার (সিটুসি) সীমান্ত বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে। বিশ্ববাণিজ্যের পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বাংলাদেশকেও এ ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ৭৮ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ৬৩ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার।
নীতিমালাটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে কার্যকর হবে।
০ টি মন্তব্য