https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

ডিজিটাল পাবলিক গুডস ও কমিউনিটি রেডিও: এক অপরিহার্য সংযোগ

ডিজিটাল পাবলিক গুডস ও কমিউনিটি রেডিও: এক অপরিহার্য সংযোগ ডিজিটাল পাবলিক গুডস ও কমিউনিটি রেডিও: এক অপরিহার্য সংযোগ
 

দ্রুত অগ্রসরমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল পাবলিক গুডস (DPG) ধারণাটি বিশ্বব্যাপী যথাযথ স্বীকৃতি পাচ্ছে। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, DPG হলো ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, উন্মুক্ত তথ্য, ওপেন AI মডেল, ওপেন স্ট্যান্ডার্ড ও ওপেন কনটেন্ট—যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) অর্জনে সহায়ক। এই সম্পদগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করে।

তবে অনেক আলোচনায় উপেক্ষিত থেকে যায় কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের বিষয়বস্তু, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে। এই অঞ্চলটি এখনও ডিজিটাল বিভাজন, সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এই প্রেক্ষাপটে কমিউনিটি রেডিওর কনটেন্টকে DPG হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ।

কমিউনিটি রেডিও কনটেন্টকে ডিজিটাল পাবলিক গুডস  হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল অন্তর্ভুক্তি নয়—এটি ন্যায়বিচারের পথ। এটি স্থানীয় জ্ঞান, স্বর ও উদ্ভাবনের স্বীকৃতি।

দক্ষিণ এশিয়ায় কমিউনিটি রেডিওর গঠনমূলক ভূমিকা

দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো তথ্য আদান-প্রদান, শিক্ষা প্রচার ও তৃণমূল অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এগুলো সাধারণত স্থানীয় জনগণের দ্বারা পরিচালিত ও তৈরি হয়, ফলে সেগুলো স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও বাস্তবতাকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করে—যা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রায়শই অনুপস্থিত।

এই রেডিও স্টেশনগুলো গ্রামীণ উন্নয়ন, দুর্যোগ প্রস্তুতি, নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য সচেতনতা, কৃষি উন্নয়ন, সাক্ষরতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবদান রাখে।

কমিউনিটি রেডিও কেন একটি মূল্যবান ডিজিটাল পাবলিক গুড

১. উন্মুক্ত কনটেন্ট এবং প্রবেশযোগ্যতা

কমিউনিটি রেডিওর কনটেন্ট জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যে। এটি লাভভিত্তিক গণমাধ্যমের বিপরীতে একটি সমাজকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে। কপিরাইটের বদলে কপিলেফট মডেল অনুসরণ করে এটি জ্ঞানের বিনিময়কে উৎসাহিত করে।

২. স্থানীয়করণ ও অন্তর্ভুক্তি

দক্ষিণ এশিয়ার হাজারো ভাষা ও উপভাষার মধ্যে কমিউনিটি রেডিও স্থানীয় ভাষায় তথ্য সরবরাহ করে, যা অন্য কোন প্ল্যাটফর্মে প্রায়ই উপেক্ষিত। এটি WSIS এর তথ্য অ্যাক্সেস ও জ্ঞানের প্রচারের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৩. ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণ

যদিও মোবাইল ফোনের ব্যবহার ব্যাপক, অনেক নারী, আদিবাসী ও বয়স্ক মানুষ এখনও ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করতে পারেন না। কমিউনিটি রেডিও এই বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে একটি সেতু হিসেবে কাজ করে।

৪. SDG-এর সাথে সামঞ্জস্য

কমিউনিটি রেডিওর অনেক প্রোগ্রাম টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (SDG) সাথে সরাসরি যুক্ত, যেমন:

মানসম্মত শিক্ষা (SDG 4)

লিঙ্গ সমতা (SDG 5)

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা (SDG 13)

বৈষম্য হ্রাস (SDG 10)

৫. ডিজিটাল আর্কাইভিং ও পুনঃব্যবহারযোগ্যতা

কমিউনিটি রেডিও আর্কাইভগুলো ডিজিটাইজ করে ওপেন নলেজ প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করা যায়। সেগুলো শিক্ষা, গবেষণা এবং নীতিনির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। Creative Commons-এর মতো লাইসেন্সে রূপান্তর হলে এগুলো ডিজিটাল পাবলিক গুডস হিসেবে প্রযুক্তিগত ও আইনগত মানদণ্ড পূরণ করতে পারে।

স্বীকৃতির পথে যাত্রা

১. নীতিগত স্বীকৃতি

সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কমিউনিটি রেডিওর কনটেন্টকে DPG হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। এটি জাতীয় ডিজিটাল কৌশল, ওপেন ডেটা নীতিমালা ও DPG রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। UNESCO ও ITU এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

২. ওপেন লাইসেন্সিং ফ্রেমওয়ার্ক

Creative Commons-এর মতো ওপেন স্ট্যান্ডার্ডে কমিউনিটি রেডিওর কনটেন্ট লাইসেন্স করতে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

৩. সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন

দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলোর জন্য ডিজিটাল সরঞ্জাম, আর্কাইভিং সুবিধা ও ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ জরুরি।

৪. দেশ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে আর্কাইভ তৈরির উদ্যোগ

"South Asian Community Media Archive" প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হলে আঞ্চলিক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি হবে।

৫. ওপেন সোর্স ও AI কমিউনিটিকে সম্পৃক্তকরণ

ডিজিটাল ও ট্যাগকৃত কনটেন্ট দক্ষিণ এশিয়ার ভাষায় ভয়েস মডেল ট্রেইনিং, স্পিচ রিকগনিশন ও অনুবাদ টুল উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

ডেটা সার্বভৌমত্ব: কনটেন্টের মালিকানা অবশ্যই কমিউনিটির হাতেই থাকতে হবে।

ভাষা ও ফরম্যাট স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন: কার্যকর মেটাডেটা ট্যাগিং ও শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজন।

টেকসই অর্থায়ন: পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে আর্থিক নিশ্চয়তা অর্জন করতে হবে।

কমিউনিটি রেডিও কনটেন্টকে ডিজিটাল পাবলিক গুডস  হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল অন্তর্ভুক্তি নয়—এটি ন্যায়বিচারের পথ। এটি স্থানীয় জ্ঞান, স্বর ও উদ্ভাবনের স্বীকৃতি।

উপকারিতা:

কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন: তাদের কণ্ঠ পৌঁছে যাবে বিশ্বমঞ্চে।

তথ্য প্রবেশাধিকারে সহায়তা: নীতিনির্ধারক, শিক্ষক ও উদ্ভাবকদের জন্য একটি অনন্য সম্পদ হবে।

সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ: গণতন্ত্র ও দায়িত্বশীলতা আরও জোরদার হবে।

উপসংহার

দক্ষিণ এশিয়া এখন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা চাইলে ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।

কমিউনিটি রেডিও কনটেন্টকে ডিজিটাল পাবলিক গুড হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তা একটি স্থানীয়ভিত্তিক, ন্যায়সঙ্গত ডিজিটাল উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করবে।

এ. এইচ. এম. বজলুর রহমান | ডিজিটাল গণতন্ত্র উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি), এবং বাংলাদেশে দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাষ্ট্রদূত, নীতি গবেষণা ফেলো, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে গণমাধ্যম, তথ্যের অখণ্ডতা ও সমাজ গঠনের ভবিষ্যৎ রূপায়ণে নিয়োজিত! [email protected]








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।