বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য আইটি অবকাঠামো এবং সাইবার নিরাপত্তা একটি মৌলিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে। তথ্য চুরি, সাইবার হামলা, ম্যালওয়্যার ও র্যানসমওয়্যারের মতো হুমকি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে, কোনো একটি গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে নিচের দিকনির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো সুরক্ষা
প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শক্তিশালী ফায়ারওয়াল ও অনুপ্রবেশ শনাক্তকারী ব্যবস্থা স্থাপন করা উচিত। দূরবর্তী প্রবেশাধিকার সীমিত রাখার জন্য নিরাপদ সংযোগব্যবস্থা ব্যবহার করা উচিত। একাধিক নেটওয়ার্ক ভাগ করে ঝুঁকি কমানো এবং অপ্রয়োজনীয় সংযোগের পথ বন্ধ রাখা অপরিহার্য।
ব্যবহারকারী প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ
প্রতিটি কর্মীর জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নীতিমালা প্রয়োগ করতে হবে। দ্বিস্তর প্রমাণীকরণ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যার যা দায়িত্ব, কেবল সে অনুযায়ী প্রবেশাধিকার নির্ধারণ করাই নিরাপত্তার ভিত্তি। বহুবার ভুল পাসওয়ার্ড দিলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সচেতনতা ও নীতিমালা
সাইবার নিরাপত্তা শুধু প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি ব্যবহারকারীর আচরণের সঙ্গেও জড়িত। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি এবং তা সকলের মধ্যে প্রচার করা জরুরি। নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং সাইবার হামলার অনুকরণে সচেতনতা পরীক্ষা চালানো যেতে পারে।
সফটওয়্যার হালনাগাদ
সার্ভার, অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য সফটওয়্যারসমূহ নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। পুরনো ও অপ্রচলিত সিস্টেম ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ এবং তা পরিত্যাগ করা উচিত।
তথ্যসংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা
প্রতিদিন বা সাপ্তাহিকভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্যের অনুলিপি সংরক্ষণ করতে হবে। সেই অনুলিপি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেটি সরাসরি সংযুক্ত নয়, যাতে সাইবার হামলার শিকার হলেও তথ্য নিরাপদ থাকে। দুর্যোগকালীন পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রস্তুত ও পরীক্ষিত থাকা উচিত।
পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা
সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের লগ সংরক্ষণ ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সন্দেহজনক প্রবেশের চেষ্টাগুলি দ্রুত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
দুর্বলতা নিরীক্ষণ ও অনুশীলন
প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত নিরাপত্তা দুর্বলতা পরীক্ষা ও অনুপ্রবেশ অনুশীলন চালানো উচিত। বছরে অন্তত একবার বাইরের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দিয়ে নিরাপত্তা পর্যালোচনা করানো বাঞ্ছনীয়।
শারীরিক নিরাপত্তা
সার্ভার কক্ষ ও আইটি যন্ত্রপাতির প্রবেশাধিকার সীমিত রাখা উচিত। নজরদারি ক্যামেরা ও আধুনিক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে কেবল অনুমোদিত ব্যক্তি যেন প্রবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
নথিপত্র ও রেকর্ড সংরক্ষণ
প্রতিষ্ঠানের সব যন্ত্রপাতি, নেটওয়ার্ক মানচিত্র, ব্যবহারকারীর তথ্য এবং পরিবর্তনের ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত। যেকোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় করণীয় নির্ধারণ করে তা ডকুমেন্ট আকারে থাকা জরুরি।
তৃতীয় পক্ষ ব্যবস্থাপনা
বাহ্যিক সেবা প্রদানকারী বা অংশীদারদের নিরাপত্তা যাচাই করতে হবে। গোপনীয়তা রক্ষা এবং তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি বাধ্যতামূলক করা উচিত।
উপসংহার:
প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে একটি প্রতিষ্ঠানের আইটি নিরাপত্তা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, কৌশলগত দায়িত্বও বটে। এই নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করলে প্রতিষ্ঠান অনেকাংশেই নিরাপদ থাকতে পারবে সাইবার ঝুঁকি থেকে।
০ টি মন্তব্য