https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

“মিডিয়া ও গণতন্ত্র: স্বচ্ছ ও স্বায়ত্তশাসিত ডিজিটাল অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা”

“মিডিয়া ও গণতন্ত্র: স্বচ্ছ ও স্বায়ত্তশাসিত ডিজিটাল অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা” “মিডিয়া ও গণতন্ত্র: স্বচ্ছ ও স্বায়ত্তশাসিত ডিজিটাল অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা”
 

গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি হলো মুক্ত ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম। গণতান্ত্রিক সমাজে মিডিয়া শুধু তথ্য পরিবেশনের মাধ্যম নয়—এটি জনগণের কণ্ঠস্বর, জবাবদিহিতার প্রহরী, এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষাকারী এক অদৃশ্য শক্তি। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে এই শক্তির কাঠামো আজ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ডিজিটাল যুগের আগমন যেমন তথ্যপ্রবাহকে সহজ করেছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার নতুন ধরনের ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন সৃষ্টি করেছে, যা গণতন্ত্রের জন্য এক দ্বিমুখী বাস্তবতা।

আজ ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার) ও টিকটক বাংলাদেশের নাগরিক জীবনে গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। মানুষ খবর পড়ছে, মতামত দিচ্ছে, এমনকি রাজনৈতিক অবস্থানও গড়ে তুলছে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে। ফলে, গণতান্ত্রিক আলোচনা আর সংবাদপত্রের পাতায় বা টেলিভিশনের পর্দায় সীমাবদ্ধ নয়—বরং তা এখন ডিজিটাল অ্যালগরিদমের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এক ভার্চুয়াল বাস্তবতায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রবাহের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে—তেমনি নেতিবাচক দিকও স্পষ্ট: বিভ্রান্তিকর প্রচারণা, ভুয়া খবর, এবং তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার আশঙ্কা বেড়েছে।

বিশ্বব্যাপী ইলন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এটি প্রমাণ করেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেবল যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম নয়—বরং এটি এখন মতামত নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও রাজনৈতিক আখ্যান নির্মাণের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো স্থানীয় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপরও প্রভাব ফেলছে। কারণ, তথ্য পরিবেশনের কাঠামো এখন আন্তর্জাতিক কর্পোরেট অ্যালগরিদমের ওপর নির্ভরশীল, যা স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

একসময় ইন্টারনেটকে মুক্ত, বিকেন্দ্রীভূত এবং গণতান্ত্রিক যোগাযোগের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি প্রযুক্তি জায়ান্ট—গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন ও অ্যাপল—বিশ্বের অধিকাংশ তথ্য অবকাঠামো নিয়ন্ত্রণ করছে। এর ফলে ইন্টারনেটও এখন কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার আরেক রূপে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে তথ্য অবকাঠামো ও নীতিমালা এখনও আমদানি-নির্ভর, সেখানে এর প্রভাব আরও গভীর।

তবুও একটি মাধ্যম এখনো তুলনামূলকভাবে স্বাধীন—তা হলো ইমেইল। ইমেইল বিকেন্দ্রীভূত কাঠামোয় কাজ করতে পারে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়—গুগল, মাইক্রোসফট ও ইয়াহু প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইমেইল পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর অর্থ, নাগরিকদের তথ্য বিনিময়ের এই ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমটিও কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক যোগাযোগ ও নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাই, তবে আমাদের নিজস্ব, স্বচ্ছ, গোপনীয়তা-নির্ভর ও স্বায়ত্তশাসিত ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য। এটি শুধু প্রযুক্তিগত প্রয়োজন নয়—এটি নাগরিক অধিকার রক্ষার ভিত্তি। দেশীয় সার্ভার, ওপেন-সোর্স যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এবং স্থানীয় ডেটা সুরক্ষা কাঠামো তৈরি করলে নাগরিকরা আরও নিরাপদ, স্বাধীন ও গণতান্ত্রিকভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারবেন।

অতএব, মিডিয়া ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমাদের ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ওপর। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাধীন মিডিয়াকে সুরক্ষা প্রদান, এবং দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে প্রাধান্য দেওয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ একটি তথ্যনির্ভর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে—যেখানে তথ্য হবে জনগণের অধিকার, আর মিডিয়া হবে গণতন্ত্রের অগ্রদূত। 

এ. এইচ. এম. বজলুর রহমান | ডিজিটাল গণতন্ত্র উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি), এবং বাংলাদেশে দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাষ্ট্রদূত, নীতি গবেষণা ফেলো, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে গণমাধ্যম, তথ্যের অখণ্ডতা ও সমাজ | [email protected] 








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।