https://gocon.live/

প্রযুক্তি

কোয়ান্টাম কমপিউটিং প্রযুক্তি পাল্টে দেবে দুনিয়া

কোয়ান্টাম কমপিউটিং প্রযুক্তি পাল্টে দেবে  দুনিয়া কোয়ান্টাম কমপিউটিং প্রযুক্তি পাল্টে দেবে দুনিয়া
 

কোয়ান্টাম কমপিউটিং প্রযুক্তি পাল্টে দেবে  দুনিয়া


গুগলের এআই কোয়ান্টাম দল কোয়ান্টাম কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে। গুগলের সিকামোর প্রসেসর সাড়ে তিন মিনিট সময়ে এমন এক হিসাব করতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রচলিত সবচেয়ে শক্তিশালী কমপিউটারের করতে লাগে ১০ হাজার বছর। যদিও এটা নিয়ে খানিক তর্কবির্তক রয়েছে, তবে বলা হচ্ছে কোয়ান্টাম কমপিউটিং বদলে দিচ্ছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দুনিয়া।


যেভাবে একদিন কমপিউটার বা ইলেকট্রনিক প্রসেসর আমাদের সভ্যতাই বদলে দিয়েছিল, সেভাবে আবারও প্রযুক্তি দুনিয়া ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে আসছে কোয়ান্টাম কমপিউটিং। সেটি কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝে ওঠা খুবই দুষ্কর; কিন্তু তা কিভাবে সব বদলে দেবে তা আন্দাজ করা খুব কঠিনও নয়।


কম্পিউটিংয়ের কারবার


কমপিউটার মানেই কিন্তু সিলিকন প্রসেসর, র‌্যাম এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার নয়। তথ্যের ওপর নানা অপারেশন চালিয়ে নতুন তথ্য তৈরি করাকেই বলা হয়ে থাকে ‘কমপিউটিং’। যেমন-একাধিক তথ্য একত্র করা বা তথ্যের মধ্যে মিল বা তফাত খুঁজে বের করা এবং অপারেশনের ফলাফল ব্যবহারকারীকে জানাতে বা আউটপুট করতে পারে, সেটাই হচ্ছে কমপিউটার। এই মডেলটি প্রথম তৈরি করেন অয়ালান টুরিং, যার নামে এ ধরনের মেশিনকে ‘টুরিং মেশিন’ও বলা হয়ে থাকে। বাস্তবিক কমপিউটার অবশ্য পুরোপুরি টুরিং মেশিন নয়। কারণ টুরিং মেশিনের কোনো তথ্য ইনপুট ও অপারেশনগত সীমাবদ্ধতা নেই; কিন্তু বাস্তব যন্ত্রে তা রয়েছে।


বর্তমান সময়ে তথ্য বাইনারি সংখ্যায় পরিণত করে তা কমপিউটারে সংরক্ষণ করে থাকি। কমপিউটারে থাকা র‌্যামের ট্রানজিস্টরগুলো অন বা অফ, দুটি অবস্থানে থাকতে পারে। অন ট্রানজিস্টরগুলোকে ধরা হয় বাইনারি ১, আর অফগুলোকে বাইনারি ০। র‌্যামের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকে প্রসেসর, যার মধ্যে একই সঙ্গে প্রবেশ করানো হয় তথ্য এবং তথ্যগুলো নিয়ে কী করা হবে সে অপারেশন অ্যালগরিদম। প্রসেসরের আউটপুটে প্রসেস করা তথ্য বেরিয়ে এসে আবারও র‌্যামে জমা হয়। প্রসেসর কী কী অপারেশন করতে পারবে সেটা তার ইনস্ট্রাকশন সেটের ওপর নির্ভর করে, আর সেগুলো ব্যবহার করেই তৈরি হয় একটি অ্যালগরিদম। খুবই সংক্ষেপ এবং সহজ ভাষায় কমপিউটারের কাজ মূলত এটাই।


বাইনারি সিলিকন কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং


বর্তমান কমপিউটারগুলোর গতি হার্জে কিংবা মিপসেও মাপা হয়। একটি প্রসেসর প্রতি সেকেন্ডে কয়টি অপারেশন করতে পারে, তারই একক এটি। অর্থাৎ কোনো জটিল প্রসেস যদি করতে হয়, তাহলে প্রগ্রামারদের সেটি ভেঙে ছোট ছোট ধাপ বা অপারেশনে পরিণত করে তারপর সেগুলো একত্র করে একটি চেইন বা অ্যালগরিদমে পরিণত করতে হয়। এ ছাড়া স্টোরেজ থেকে তথ্য র‌্যামে রেখে তারপর সেটি অল্প অল্প করে প্রসেসরের ক্যাশে নিয়ে তার ওপর অপারেশন করে সেটি আবারও র‌্যামে নিয়ে আসা লাগে। পুরো সিস্টেম সেকেন্ডে যত অপারেশন (তথ্য সাপ্লাই থেকে আউটপুট পর্যন্ত) করতে পারে, সেটাই তার গতি।


কোয়ান্টাম কমপিউটার এমন নয়। কিছু বিশেষ বস্তুর কোয়ান্টাম অবস্থানের মাধ্যমে তথ্য সেখানে সংরক্ষণ করা হয়, সেটি বাইনারি হতে হবে তারও কথা নেই। কোয়ান্টাম অবস্থানের সুপারপজিশনের মাধ্যমে তথ্যের একক মাপা হয়, আবার সুপারপজিশন বদলের মাধ্যমে করা হয় তার প্রসেস। আর একেকটি তথ্যের ইউনিটকে বলা হয় ‘কিউবিট’। এই কিউবিট এক ধাক্কায় একাধিক বাইটের সমান তথ্য রাখতে পারে, করতে পারে একাধিক অপারেশন। এখানে প্রয়োজন নেই তথ্য একখানে রেখে তা আরেকখানে নিয়ে গিয়ে প্রসেস করার। কিউবিটগুলো একই সঙ্গে র‌্যাম, প্রসেসর ও আউটপুট। আর একেকটি কিউবিট একাধিক সিলিকন কমপিউটারের সমান কাজ করতে পারে এক অপারেশনেই। ফলে এই প্রযুক্তির কমপিউটার শুরু থেকেই সিলিকন কমপিউটারের চেয়ে শত শত গুণ দ্রুত কাজ করতে সক্ষম।


কোয়ান্টাম কমপিউটারের সীমাবদ্ধতা


কোয়ান্টাম দুনিয়া আমাদের চেনাজানা দুনিয়ার মতো কাজ করে না। সেটা কী রকম, তার আলোচনা এ পরিসরে সম্ভব নয়। তাই শুধু মনে রাখতে হবে, আমরা সরাসরি কিউবিটগুলো তৈরি করতে এবং সরাসরি রিড-রাইটও করতে পারি না। এমনকি তথ্য ও অ্যালগরিদম প্রবেশ এবং আউটপুটও সরাসরি দেখা যায় না। ফলে কোয়ান্টাম কমপিউটার তৈরি ও ব্যবহার এখনো কষ্টসাধ্য। এর ওপর আছে কোয়ান্টাম ফিজিকসের সীমাবদ্ধতা। যার ফলে সব ধরনের প্রসেসিং কোয়ান্টাম কমপিউটারের মাধ্যমে করাও সম্ভব নয়। এখনো পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোয়ান্টাম কমপিউটার শুধু বিশেষায়িত কিছু অঙ্কের সমস্যা সমাধান ছাড়া আর কোনো কাজেই সিলিকন কমপিউটারকে টেক্কা দিতে পারবে না।


কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি


বর্তমানে প্রতিটি ব্যাংক, সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্মার্টফোন প্ল্যাটফর্ম-সবাই তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করে আসছে ক্রিপ্টোগ্রাফি। এই বিশেষায়িত অ্যালগরিদমগুলো তথ্য নিয়ে সেগুলোকে একটি পাসওয়ার্ড বা কি ব্যবহার করে তালাবদ্ধ করে দেয়। ফলে ব্যবহারকারী ছাড়া আর কেউ সেগুলো পড়তে বা ব্যবহার করতে পারে না। পাসওয়ার্ড কতটা জটিল ও লম্বা, কী ধরনের এনক্রিপশন অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই বলা যায়, সে তথ্য কতটা নিরাপদ। যদি না এনক্রিপশন কি বা পাসওয়ার্ড কেউ চুরি করতে পারে, তাহলে তথ্য হাতিয়ে নিলেও লাভ নেই। অনেকটা তালাবদ্ধ সিন্দুক চুরির মতো।


তালা-চাবির উপমা ব্যবহার করে অবশ্য কোয়ান্টাম কমপিউটারের ক্ষমতা বোঝা কিছুটা সহজ। একটি তালা কেমন দেখতে, তার ভেতরের কলকবজা যদি কারো জানা থাকে, তাহলে চাবি কেমন হতে পারে সেটিও অনুমান করা সম্ভব। ঠিক তেমনই এনক্রিপশন অ্যালগরিদম পরীক্ষা করে তার চাবি কেমন হতে পারে তা আন্দাজ করা যায়। এরপর বাকি রইল যতগুলো কি বা চাবি তৈরি সম্ভব। সেগুলো একে একে পরীক্ষা করে দেখা তালা খোলা বা ডিক্রিপশন করা যায় কি না।


বর্তমানের কমপিউটারগুলো এভাবে ডিক্রিপশন কি অনুমান করে তথ্য ডিক্রিপ্ট করতে সময় নিয়ে থাকে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার বছর। অতএব বলে দেওয়া যায়, তথ্য আসলে ডিক্রিপ্ট করা অসম্ভব। কারণ কয়েক শতাব্দী ধরে তা নিয়ে পড়ে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার সহজেই এই ডিক্রিপশন কি কয়েক শ সেকেন্ডে বের করে দিতে পারবে।


একটি কাজে সিলিকন কমপিউটারের চেয়ে কোয়ান্টাম কমপিউটার যদি এগিয়ে থাকে, আর সে কাজ করতে পারার মতো কোয়ান্টাম কমপিউটার যদি কারো কাছে থাকে, তাহলে তাকে বলা হয় কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি। সে ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে দুনিয়ার সব তালাই অকেজো, কোনো গোপনীয় তথ্যই আর গোপন নয়। আর ঠিক এ কাজটিই করতে পেরেছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছে গুগল। যদিও আইবিএম এবং অন্যান্য সংস্থা তাদের দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন দুনিয়ার সব ক্রিপ্টোগ্রাফারের আবার নতুন করে গোড়া থেকে সব নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।


ভবিষ্যৎ


শুধু ক্রিপ্টোগ্রাফি নয়, জটিল সব পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং অন্যান্য তথ্যভিত্তিক মডেলগুলো সহজেই কোয়ান্টাম কমপিউটারে করা যাবে। এর ফলে দুনিয়া এভাবে বদলে যাবে, যা এখনো কল্পনা করা যায় না।


ভ্রূণের ডিএনএ নিয়ে তা পরীক্ষা করে বলে দেওয়া যাবে তার চেহারা কেমন হবে, তার বুদ্ধিবৃত্তি কেমন হবে, মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় কখন। বিশাল পরিমাণ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতিবিদরা ১০০ বছরে বিশ্বের অর্থনীতি কিভাবে পরিবর্তন হবে, তা আন্দাজ করতে পারবেন। এমন বিপুল পরিমাণ চিন্তাশক্তিসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা যাবে, যা মানুষের সমপর্যায়ের চেতনা হয়তো বহন করতে পারে।


আসলে কোনো কিছুই আপাতত আমরা সঠিকভাবে আন্দাজ করতে পারব না। শুধু এটুকুই বলা যাবে, কোয়ান্টাম যুগ আসছে এবং আমাদের চেনা বিশ্বের অনেক কিছুই বদলে যাবে।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।