গুগল ও ক্লাউড কমপিউটিং
ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে যে কয়েকটি কোম্পানি কাজ করছে, তাদের মধ্যে গুগল সম্ভবত সবচেয়ে এগিয়ে। কেননা, এই নতুন প্রযুক্তিকে গুগল খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা করছে এরা। ইতোমধ্যেই গুগল ক্লাউড কমপিউটিংয়ের বেশ কিছু সেবা দিচ্ছে এবং এই লেখা যখন প্রকাশিত হবে ততদিনে হয়ত ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম অবমুক্ত হবে। উল্লেখ্য, ক্রোম ওএস হবে পুরোপুরি ক্লাউডনির্ভর।
ক্লাউড কমপিউটিংকে গুগলএতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে, ইতোমধ্যে এক্ষেত্রে গুগল ১০ লাখ সার্ভার ব্যবহার করছে। এর বিপরীতে ইন্টেল কোম্পানির রয়েছে মাত্র এক লাখ। ফেসবুকের রয়েছে মাত্র ৩০ হাজার সার্ভার। গুগল প্রতিবছরই নতুন নতুন সার্ভার সংগ্রহের পেছনে টাকা খরচ করে যাবে এবং আগামী দশ বছর পরে তাদের সার্ভারের সংখ্যা হবে প্রায় এক কোটির মতো। বর্তমানে এর বিপরীতে মাইক্রোসফট, ইয়াহু, আইবিএম বা আমাজনের মতো বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির সার্ভারের সংখ্যা সঠিক জানা না গেলেও এ সংখ্যা অনেক- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। এ ব্যাপারে বিশদ তথ্য পাবেন : http://gizmodo.com/ 5517041/googles-insane-number-of-servers-visualized সাইটে।
সুবিধা
গুগলের ক্লাউড সেবার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে বোধহয় গুগল অ্যাপস হচ্ছে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ। গুগলের ক্লাউড প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর অনেক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপকৃত হচ্ছেন এবং এরা একে অন্যের সাথে সহযোগিতা করতে পারছেন দ্রুততার সাথে। গুগলের মূল ব্যবসায় ইন্টারনেটকেন্দ্রিক। তাই গুগল নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করে আসছে। মূলত ইন্টারনেটকেন্দ্রিক যেকোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা কমপিউটার বা ল্যাপটপটি ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকায় তা সহজে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক অংশে বেড়ে যায়।
নিরাপত্তা ও নির্ভরতা দুই দিক থেকেই গুগলের সুনাম আছে। গত প্রায় দেড় দশক ধরে সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে গুগল খুব ভালো সেবা দিয়ে আসছে। গুগলের ক্লাউড কমপিউটিং প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর জন্য ব্যবহারকারীদের তুলনামূলকভাবে কম টাকা খরচ করতে হয়, অনেক সময় বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এ ব্যাপারে আরো তথ্য পাবেন
http://googlesmb.blogspot.com/2010/10/top-tips-on-cloud-computing.html
ক্রোম ওএস
ক্লাউড কমপিউটিংয়ের জন্য সেরা অপারেটিং সিস্টেম গুগল ক্রোম ১৯ নভেম্বর ২০১০ মুক্তি পেতে পারে। এটি লিনআক্সনির্ভর ওপেনসোর্স ওএস। মূলত ক্লাউড কমপিউটিংয়ের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করা হয়েছে। যারা সারাদিন বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেটে কাটান, তাদের জন্য এটি হবে একটি আদর্শ ওএস। তবে প্রথমে সস্তা নেটবুকের জন্য গুগল এই ওএস ছাড়ে। এই ওএস বুট হতে পারে মাত্র ৩-৭ সেকেন্ডের মধ্যে। ফলে এর গতি খুব দ্রুত হবে। ব্যবহারকারীর সব প্রোগ্রাম ও তথ্য ইন্টারনেট বা ক্লাউডে থাকবে। হার্ডডিস্ক না থাকলেও সমস্যা নেই। এভাবে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের অপারেটিং সিস্টেমের বাজারে গুগল প্রথম থেকেই এগিয়ে থাকছে, একথা বলা যায়। যারা গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করেছেন, তাদের জন্য ক্রোম ওএস নতুন কিছু বলে মনে হবে না।
ক্লাউড প্রিন্টিং
ক্রোম ওএসের সবচেয়ে ভালো দিক হলো গুগল ক্লাউড প্রিন্টিং। প্রিন্টার নিয়ে আমাদের অনেক সময় যে সমস্যায় পড়তে হয় তাহলো, ড্রাইভারজনিত দুর্ভোগ। আপনি হয়তো অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড করেছেন এবং তারপর দেখা গেল প্রিন্টার কাজ করছে না বা আপনি বন্ধুর বাসায় গিয়ে দেখতে পেলেন তার কমপিউটারে প্রিন্টার ড্রাইভার ইনস্টল করা নেই। এমন দুর্ভোগে আমাদের প্রায়ই পড়তে হয়। ক্রোম ওএসে গুগল ক্লাউড প্রিন্টিং সুবিধা থাকায় যেকোনো প্রিন্টারে নিশ্চিন্তে প্রিন্ট করতে পারবেন।
http://code.google.com/apis/cloudprint/docs/overview.html
সব ফাইল সবসময়
কমপিউটার ব্যবহারকারীরা আরেকটি বড় ধরনের সমস্যায় ভোগেন ফাইল ওপেন করা নিয়ে। আপনি মাইক্রোসফট অফিস ২০১০-এর ওয়ার্ড ২০১০ দিয়ে কোনো ফাইল পেনড্রাইভে করে নিয়ে গেলেন অন্য কোনো জায়গায় প্রিন্ট করার জন্য, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলেন তারা এখনো অফিস এক্সপি ভার্সন ব্যবহার করছে। ফলে আপনার ফাইল ওপেন হচ্ছে না। অথবা আপনি বাসা থেকে ফটোশপে কোনো ফাইল নিয়ে অফিসে গিয়ে দেখলেন সেখানে ফটোশপ সফটওয়্যারটি নেই। ফলে আপনার ফাইল ওপেন হচ্ছে না। গুগলের দাবি, ক্রোম ওএসে এ ধরনের কোনো সমস্যা থাকবে না। ক্রোম ওএস ইন্টারনেট থেকে কোনো অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করে ফেলবে। যদি সত্যিই ক্রোম ওএস এটি করতে পারে, তবে নেটবুক ব্যবহারকারীদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে।
ক্রোম ওএস ঠিক কবে ডেস্কটপ পিসিতে ব্যবহার করা যাবে, এটা এখনো জানা যায়নি। এই অপারেটিং সিস্টেমটি নেটবুকের দাম আরো কমিয়ে আনবে। কেননা, গুগল এই অপারেটিং সিস্টেমটি বিনামূল্যে দিচ্ছে। ফলে নেটবুক নির্মাতাদের ওএসের জন্য বাড়তি কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।
ক্রোম ওএসের সাফল্য নিয়ে অবশ্য অনেকে সন্দিহান। তবে গুগলের কর্তাব্যক্তিরা তেমন চিন্তিত নন, কেননা তারা জানেন ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীরা গুগলের অনেক সেবা গ্রহণ করবেন এবং এর ফলে পরোক্ষভাবে গুগলের আয় আরো বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, ক্রোম ওএস দিয়ে গুগল ক্লাউড কমপিউটিংয়ের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে। যারাই ক্লাউড কমপিউটিংয়ের কথা চিন্তা করে কোনো অ্যাপ্লিকেশন বানাবে তাদের অবশ্যই ক্রোম ওএসের কথা মাথায় রাখতে হবে।
জি-মেইল
ক্লাউড কমপিউটিংয়ের সবচেয়ে সফল উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে জি-মেইল। জি-মেইল আসার আগে ইয়াহু ই-মেইলের ছয় মেগাবাইট আর হটমেইলের চার মেগাবাইট স্টোরেজ নিয়ে আমরা অনেকেই ত্যক্তবিরক্তি ছিলাম। জি-মেইল প্রথম থেকে এক গিগাবাইট অফার নিয়ে আসে। জি-মেইল ক্লাউড কমপিউটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। কেননা, এ জন্য ব্যবহারকারীকে কোনো কিছুই ইনস্টল করতে হয় না এবং শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই এটি ব্যবহার করা যায়।
জি-মেইল শুধু একটি ই-মেইল সেবা নয়, বরং এর মাধ্যমে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা যায়। জি-মেইলের সাথে গুগল ডকসের ভালমতো সমন্বয় সাধনের ফলে আপনি যে ডকুমেন্টের কাজ করছেন, তা সহজেই আপনার সহকর্মী বা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। তারাও বিনা ঝামেলাতেই আপনার ডকুমেন্ট এডিট করতে পারবেন।
তবে জি-মেইল পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত নয়। গত এক বছরে বেশ কয়েকবার জি-মেইলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে জি-মেইল ব্যবহারকারীদের একটি ছোট অংশ হয়তো কয়েক ঘণ্টা এমনকি চবিবশ ঘণ্টার জন্য তাদের অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস পায়নি। ফলে অনেকেই ক্লাউডের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন- এই ধরনের সমস্যা যদি ভবিষ্যতে হয় তবে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের অগ্রযাত্রা হয়ত হোঁচট খাবে।
গুগল অ্যাপস : আপনার অফিস যখন ক্লাউডে
গুগল অ্যাপস ২০০৬ সালে তৈরি করা হয় এবং ২০১০ সালে এর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। এটি ব্যবহার করার জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটি ডোমেইন থাকতে হবে (যেমন www.comjagat.com)। গুগল অ্যাপস সম্পর্কে বাংলা ভাষায় কাজের একটি লেখা পাবেন এখানে :
http://www.somewhereinblog.net/blog/devdas0102/28996072
গুগল অ্যাপসের কয়টি এডিশন
মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের কথা মাথায় রেখে গুগল অ্যাপসের প্রিমিয়ার ও স্ট্যান্ডার্ড এডিশন তৈরি করা হয়। স্ট্যান্ডার্ড এডিশনের জন্য কোনো টাকা খরচ করতে হয় না এবং একটি ডোমেইনের অধীনে ৫০টির বেশি অ্যাকাউন্ট পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ আপনার কোম্পানির ৫০ জনের বেশি লোককে এটি দিতে পারবেন না।
এডিশনের এই সীমাবদ্ধতা প্রিমিয়ার এডিশনে নেই। তবে প্রিমিয়ার এডিশনের জন্য প্রত্যেক ইউজারের জন্য আপনাকে দেশভেদে বার্ষিক ৫০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। আরো তথ্য পাবেন ।
গুগল অ্যাপসের এডুকেশন এডিশন
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রয়েছে গুগল অ্যাপসের এডুকেশন এডিশন এবং এর অধীনে ১ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক গুগল অ্যাপসের সব সুযোগসুবিধা বিনামূল্যে ভোগ করছে।
গুগল অ্যাপসের এডুকেশন এডিশন সম্পূর্ণ ফ্রি এবং যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহার করতে পারে। একটি হাইস্কুলের কথাই ধরা যেতে পারে। স্কুলটি গুগল অ্যাপস ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব ই-মেইল এবং স্কুল ক্যালেন্ডার তৈরি করতে পারে। স্কুলের ছাত্ররা গুগল ডকস ব্যবহার করে তাদের হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করে শিক্ষককে দিতে পারে। অপরদিকে শিক্ষকও চাইলে তার লেকচার ছাত্রদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। একইভাবে স্কুল প্রশাসনও এটি ব্যবহার করতে পারে এবং এর সবকিছুই গুগল ফ্রি দিয়ে থাকে।
গুগল এডুকেশন এডিশনে যেসব অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায়
জি-মেইল :
জি-মেইলে ৭ গিগাবাইট তথ্য ধারণক্ষমতা আছে। একই সাথে জি-মেইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি চ্যাট এবং ইন্টারনেট সার্চ করতে পারবেন। জি-মেইল আইম্যাপ সুবিধা দিয়ে থাকে। Gmail IMAP বা Internet Message Access Protocol ব্যবহার করে আপনি মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ থেকে সহজেই জি-মেইল অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবেন। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই আপনি জি-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন। একই সাথে জি-মেইলে স্প্যাম মেইলের ঝামেলা নেই।
গুগল টক :
গুগল টক হলো একটি মেসেঞ্জার। আমরা যেমন ইন্টারনেটে চ্যাট করার ইয়াহু মেসেঞ্জার এবং উইন্ডোজ মেসেঞ্জার ব্যবহার করে থাকি গুগল টকও সেই রকম একটি মেসেঞ্জার। এটি ইনস্টল করা খুবই সহজ এবং অন্যান্য মেসেঞ্জারে আপনি যেসব সুবিধা পেয়ে থাকেন এখানেও সেসব সুবিধা পাবেন। যেমন- ফাইল ট্রান্সফার, ভয়েস কলিং ইত্যাদি।
গুগল ক্যালেন্ডার :
গুগল ক্যালেন্ডার অনেকটা ডায়েরির মতো, যেটি ব্যবহার করে আপনার প্রতিদিনের কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করতে পারবেন। আপনাকে লগ ইন করার জন্য কোনো কিছুই করতে হবে না। আপনার জি-মেইল অ্যাকাউন্টের আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েই গুগল ক্যালেন্ডারে ঢুকতে পারবেন। যেকোনো জায়গা থেকে গুগল ক্যালেন্ডারে ঢুকে আপনার কাজ সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন এবং অন্যদের সাথেও আপনার ক্যালেন্ডার শেয়ার করতে পারবেন। যেমন- একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গুগল ক্যালেন্ডার ছাত্রদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতে তিনি কোন কোন দিন তার অফিসে উপস্থিত থাকবেন, তা উল্লেখ করা থাকবে এবং ছাত্ররা সেই দিন তার সাথে দেখা করে কথা বলবে।
গুগল ডকস :
গুগল ডকস হচ্ছে মাইক্রোসফট অফিসের মতোই একটি প্রোগ্রাম, তবে এটা ব্যবহার করতে হলে ইন্টারনেট লাগবে। এটি ব্যবহার করে ছাত্ররা তাদের হোমওয়ার্ক টাইপ করতে পারবে এমএস ওয়ার্ডের মতো এবং গুগল অ্যাকাউন্টেই সংরক্ষণ করতে পারবে। প্রয়োজন হলে তারা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ অ্যাকাউন্ট থেকে ডাউনলোড করে তাদের কমপিউটারে রাখতে পারে। তারা তাদের কাজ সহপাঠীদের সাথেও শেয়ার করতে পারবে। গুগল ডকসে স্প্রেডশিট এবং পাওয়ারপয়েন্টে তৈরির সুবিধাও আছে।
গুগল সাইটস :
এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করতে পারবেন। এর জন্য কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানা লাগবে না। ধরা যাক, একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট। এটিকে প্রায়ই আপডেট করতে হয়। গুগল সাইট ব্যবহার করে উক্ত ইউনিভার্সিটির প্রশাসন সহজেই এ কাজটি করতে পারবে।
গুগল ভিডিও :
গুগল ভিডিও ব্যবহার করে একজন শিক্ষক তার লেকচার আপলোড করে দিতে পারেন যাতে ছাত্ররা সেটা দেখতে পায়। তাই কোনো ছাত্র ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলেও সে জানতে পারবে ওই ক্লাসে কী কী পড়ানো হয়েছিল। অথবা একজন শিক্ষক ঢাকায় থেকেও চট্টগ্রামের কোনো স্কুলের ছাত্রদের পাঠদান করতে পারবেন। গুগল ভিডিওতে সর্বোচ্চ ১০ গিগাবাইট ভিডিও আপলোড করা যায়।
এক্সটেনসিবল এপিআই :
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নতুন একটি প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন চালু করলে অনেক পুরনো প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না, ফলে স্কুল বা কলেজকে নতুন আরেকটা প্রোগ্রাম কিনতে হয় এবং এভাবে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এই এপিআই এ ধরনের অসুবিধাগুলো সহজেই দূর করতে পারে।
গুগল ও গভর্নমেন্ট ক্লাউড
২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে কমপিউটার ওয়ার্ল্ড ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই রিপোর্টে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে গুগল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ক্লাউড সার্ভিস দেবে। ওয়েবসাইটটি আরও একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বলা হয় ক্লাউড কমপিউটিংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকের মনে অনেক সংশয় থাকায় অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের বর্তমান প্রযুক্তির সাথে ক্লাউডপ্রযুক্তি একীভূত করতে তেমন উৎসাহবোধ করছে না। কিন্তু তারপরেও বেশ কয়েকটি ফেডারাল এজেন্সি গভর্নমেন্ট ক্লাউড কমপিউটিংপ্রযুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে। গুগল এখন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে।
মাইক্রোসফটের তুলনায় গভর্নমেন্ট ক্লাউড কমপিউটিংয়ে গুগল কিছুটা হলেও এগিয়ে আছে। কারণ, গুগল প্রথম Federal Information Security Management Act (FISMA) সার্টিফিকেট পেয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন বিশাল তথ্য নিয়ে কাজ করে থাকে, আর এসব তথ্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কোনোভাবে যাতে এ তথ্য বাইরে চলে না যায় গুগল তাই আলাদা সার্ভার তৈরি করেছে, যাতে শুধু সরকারি তথ্যই জমা থাকবে। এভাবে গুগল সরকারকে ক্লাউড কমপিউটিংয়ে তথ্যের নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে চেষ্টা করছে।
গুগলের এই কার্যক্রম থেকেই প্রতীয়মান হয়, প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ ভবিষ্যতে গভর্নমেন্ট ক্লাউড একটি বিশাল বাজারে পরিণত হতে চলেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বার্ষিক আইটি বাজেট হলো ৭৬ বিলিয়ন ডলার এবং এর পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
গুগল ক্লাউড ও বাংলাদেশ
স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশের কমপিউটার ব্যবহারকারীরা কিভাবে গুগলের ক্লাউড কমপিউটিংপ্রযুক্তি থেকে সুবিধা পেতে পারেন। বাংলাদেশে যেহেতু ইন্টারনেটের গতি কম, তাই অনায়াসে বলা চলে, গুগল ক্রোম ব্রাউজারের খুব একটা সুবিধা আমাদের দেশে পাওয়া সম্ভব হবে না। যারা উচ্চগতির ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করছেন বা ডেডিকেটেড ব্যান্ডউইডথসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাদের একটা ছোট অংশ গুগল ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমের সুফল পেলেও পেতে পারেন। কিন্তু বাকিরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। তাই বলে হতাশ হবার কিছু নেই। কেননা, গুগল অ্যাপসের বেশ বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গুগল অ্যাপস খুব বড় ধরনের সুফল বয়ে আনতে পারে। প্রথমত বেশিরভাগ কোম্পানিরই নিজস্ব কোনো ই-মেইল নেই এবং এরা সাধারণত ইয়াহু, হটমেইল বা জি-মেইলের ফ্রি ভার্সন ব্যবহার করে থাকে, যেখানে তাদের কোম্পানির নাম থাকে না (যেমন: [email protected])। অন্যদিকে যদি গুগল অ্যাপস ব্যবহার করা হয়, তাহলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মচারীদের জন্য নিজস্ব কোম্পানির নামভিত্তিক ডোমেইন ব্যবহার করতে পারবে। ৫০ জন পর্যন্ত ব্যবহারকারী স্ট্যান্ডার্ড বা বিনামূল্যের সংস্করণটি ব্যবহার করতে পারবে। এতে করে একদিকে যেমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি একটি কোম্পানি ডোমেইন নামটি ব্যবহার করতে পারবে (যেমন: liton:comjagat.com), আবার অন্যদিকে বিনামূল্যে জি-মেইলে সব সুযোগসুবিধা পাবে।
ইন্টারনেটে যাদের নিয়মিত কাজ করতে হয় এমন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ হচ্ছে গুগল ডকস (http://docs.google.com/)-এর সহযোগিতা। এর মাধ্যমে ধরা যাক, আপনি মিরপুরে বসে আপনার কোম্পানির জন্য একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করছেন এবং আপনার সহকারী চট্টগ্রামে রয়েছেন। খুব সহজেই গুগল ডকস সুবিধা ব্যবহার করে একেবারে রিয়েল টাইমে দুজনে মিলে যেকোনো প্রেজেন্টেশনই ঠিকমতো এডিট করতে পারবেন এবং তা দুজনেই দেখতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকাল ৪-৫ জন মিলে গ্রুপওয়ার্ক বা গ্রুপ প্রজেক্ট করতে হয়। সেখানেও গুগল ডকস খুব কাজে দেবে। সবচেয়ে বড় কথা, গুগল এই সুবিধা দিচ্ছে একেবারে বিনামূল্যে। তাই বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য আশাহত হবার কিছু নেই এবং আশা করা যায়, হয়ত আজ থেকে কয়েক বছর পরে যখন আমাদের ইন্টারনেটের গতি আরও বাড়বে, তখন আমরা ক্রোম ওএসের সব ফিচার ব্যবহার করতে পারব।
০ টি মন্তব্য