https://gocon.live/

ইন্টারনেট

ব্যাংকিং সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশ

ব্যাংকিং সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশ ব্যাংকিং সেবায় তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশ
 

বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি হলো তথ্যপ্রযুক্তি। মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরকে সহজ ও সাবলীল করতে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। আর তথ্যপ্রযুক্তির এই আশীর্বাদকে কাজে লাগিয়ে যেসব সেবা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িকভাবে সফলতা অর্জন করেছে ব্যাংক তার মধ্যে অন্যতম।


সামান্য কিছু আইটিসমৃদ্ধ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ১৯৮৩ সালে এদেশে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই ব্যাংকগুলো শুরু করে কমপিউটারাইজড সেবা। কিছু ছোট ছোট সফটওয়্যার টুল ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে এ যাত্রা শুরু। এগুলো ছিল ডাটাবেজ নিয়ন্ত্রণ করার মতো ছোট ছোট টুল, যার বেশিরভাগই ছিল এক্সেল বা এক্সেস দিয়ে তৈরি। এগুলো প্রধানত নতুন নতুন হিসাব খুললে তার তালিকা তৈরিতে ব্যবহার হতো আর ব্যবহার হতো ডেবিট/ক্রেডিট অর্থাৎ ব্যালেন্সের সাথে যোগ বা বিয়োগ করার কাজে। ক্রমেই কমপিউটার হার্ডওয়্যারের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন হতে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে ওই সব হার্ডওয়্যার ও সংশি­ষ্ট সফটওয়্যার চালনা করার ক্ষমতা। উইন্ডোজভিত্তিক সফটওয়্যারগুলো বাজারে আসার সাথে সাথে গ্রাফিক্যাল ইউজার মোডে সেগুলো ব্যবহার করার সুবিধা প্রসারিত হতে থাকে। ফলে ব্যাংকিংয়ে কমপিউটারাইজড সেবা দেয়ার নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হতে থাকে। ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত লোকবল সহজেই কমপিউটার চালনায় দক্ষ হয়ে ওঠে। সেই সাথে ব্যাংকগুলো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে থাকে। মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়ে দাঁড়ায় অন্যতম কর্মকান্ডে। ব্যাংকগুলোর মানবসম্পদ বিভাগগুলো দ্রুত মনোযোগী হয়ে ওঠে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে। প্রয়োজনে ব্যাংকগুলো আইটি বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে লোকবল পাঠাতেও দ্বিধা করে না। আইটি প্রশিক্ষণের পেছনে এত মনোযোগী হওয়া ও অর্থলগ্নী করার পেছনে যে কারণগুলো সব সময়ই প্রধান ছিল সেগুলো হলো :


০১. ব্যাংকে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা।

০২. গ্রাহকসেবার মান উন্নত করা।

০৩. গ্রাহকসেবায় গতি আনা।

০৪. প্রয়োজনে দ্রুত বিভিন্ন ধরনের এমআইএস পাঠানো।

০৫. দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এমআইএস তৈরি করা।

০৬. দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক মুনাফা ধরে রাখা।

০৭. প্রতিযোগিতায় সরকারি ব্যাংকগুলোকে টপকে যাওয়া।

০৮. সর্বোপরি গ্রাহকসেবা উন্নত করে গ্রাহক আকৃষ্ট করা।


ফলে কিছু দিনের মধ্যেই গড়ে ওঠে ব্যাংকিং সফটওয়্যার তৈরি ও বাজারজাত করার জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যান্ড স্ট্যান্ড অ্যালোন অপারেশনের জন্য যে সফটওয়্যারগুলো তৈরি করে সেগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে রেমিটেন্স সফটওয়্যার, ক্ল্যাসিফিকেশন সফটওয়্যার, ট্রেজারি মডিউল, অ্যাকাউন্টস সফটওয়্যার ইত্যাদি। এগুলো প্লাটফরম হিসেবে স্ট্যান্ড অ্যালোন কমপিউটারে ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা হয়।


কিন্তু স্ট্যান্ড অ্যালোন অপারেশনে যে সমস্যাগুলো হতো সেগুলো হলো :


০১. রিসোর্স শেয়ার করা সম্ভব ছিল না।

০২. দ্রুত গ্রাহকসেবা দেয়া কঠিন ছিল।

০৩. সার্বিক হিসাবের প্রেক্ষিতে এমআইএস পাওয়া অসম্ভব ছিল।

০৪. বেশি সংখ্যায় কমপিউটার ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল।

০৫. বেশি লোকবল প্রয়োজন ছিল, যা ছিল ব্যয়বহুল।


এখানে উল্লেখ্য, নিজেদের এ ধরনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য অনেক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজস্ব আইটি জ্ঞানসমৃদ্ধ লোকবল নিয়োগ করে। এই বিশেষ শ্রেণীর লোকবল কোনো কোনো ব্যাংকে নিজস্ব সফটওয়্যার পর্যন্ত তৈরি করতে সমর্থ হয়, যা তাদের সার্বিক পরিচালনা খরচ কমাতে ও মুনাফার প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে। সার্বিকভাবে দেখলে এই নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহারের চেষ্টা ব্যাংকগুলোকে যেভাবে আর্থিক খরচ সঙ্কোচনে ও মুনাফা অর্জনে সহায়তা করে তা হলো :


০১. সফটওয়্যারের জন্য মূলধন খরচ কমে যায়।

০২. সফটওয়্যারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমে যায়। কারণ, নিজস্ব লোকবল দিয়ে তা করা সম্ভব।

০৩. রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিজেদের হাতে থাকার কারণে System downtime কমে যায় ও গ্রাহকসেবা দ্রুততর করা যায়।

০৪. গ্রাহকতুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে সার্বিক ব্যবসায় অর্জন করা সম্ভব।

০৫. ব্যাংকের নিজস্ব আইটি বিশেষজ্ঞ গড়ে ওঠে, যারা সফটওয়্যার লাইনে ব্যাংকের নিজস্ব প্রয়োজনে যেকোনো জরুরি কাজে হাত দিতে পারে, যা ব্যাংকের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন।

০৬. পরনির্ভরশীলতা কমে যায় ও ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রমে গতি আসে।


এসব সফটওয়্যার মডিউল ক্রমেই ব্যাংকের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে রিভিশন হতে থাকে ও নেটওয়ার্ক পরিবেশে ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে। ফলে ব্যাংকগুলো LAN স্থাপনের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা দেয়ার কথা ভাবতে থাকে ও ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শাখাগুলোতে তা ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য অবশ্য শাখাগুলোতে পেয়ার-টু-পেয়ার নেটওয়ার্কও স্থাপন করতে দেখা যায়। পেয়ার-টু-পেয়ার নেটওয়ার্ক কাজের যে সুবিধাগুলো দেয় তাহলো :


০১ কোনো বিশেষ ধরনের নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার প্রয়োজন হয় না। ফলে তার জন্য লাইসেন্স কেনার প্রয়োজন হয় না।

০২. সাধারণ অপারেটিং সিস্টেম (উইন্ডোজ ৯৭, এক্সপি, ভিস্তা ইত্যাদি), যা কোনো স্ট্যান্ড অ্যালোন কমপিউটারে ব্যবহার করা হয় তা হলেই চলে।

০৩. সব কমপিউটার একই স্ট্যাটাসে হওয়ায় কারো কোনো প্রাধান্য থাকে না এবং রিসোর্স শেয়ারিংয়ে অসুবিধা হয় না।

০৪. কেন্দ্রীয়ভাবে রিসোর্স কন্ট্রোল করার প্রয়োজন হয় না।

০৫. সঠিকভাবে সাশ্রয়ী হয় ও দ্রুত স্থাপন করা যায়।


এই পেয়ার-টু-পেয়ার স্থাপন নেটওয়ার্ক করে কাজ করার ক্ষেত্রে ও নেটওয়ার্কের সার্বিক সুবিধা না পাওয়ার কারণে ব্যবহার হয় ক্লায়েন্ট-সার্ভিস নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে রিসোর্স শেয়ারিংয়ের সর্বোত্তম ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে যেকোনো রিসোর্স শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে একটি সার্ভার প্রয়োজন হয়, যাতে থাকে একটি নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার (যেমন ২০০০ সার্ভার, ইউনিক্স, লিনআক্স ইত্যাদি) যা কেনার জন্য ব্যাংকে মোটামুটি ভালো অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হয়। এতে একই সাথে অনেকেই অনেক সুবিধা পায়। এই নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ভিন্ন ভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার জন্য ভিন্ন ভিন্ন লেভেলের সুবিধাসম্বলিত পাসওয়ার্ড দেয়া সম্ভব হয়। সবার সব ডাটাবেজ বা তথ্যভান্ডারে অ্যাকসেস থাকে না। ফলে সিস্টেম পরিচালনা করা সহজ হয় ও সাবলীল হয়। মৌলিক যে সুবিধাগুলো ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যাংকিং ডাটাবেজ পরিচালনা করলে পাওয়া যায় তাহলো :


০১. একই সাথে একই ডাটাবেজ অনেকে শেয়ার করে ব্যবহার করতে পারে।

০২. ডাটাবেজে অ্যাক্সস নিয়ন্ত্রণ করা সুবিধা হয়।

০৩. বিভিন্ন ক্লায়েন্ট এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিভিন্নজনকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী পাসওয়ার্ড দিতে পারেন।

০৪. একজন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পুরো সিস্টেমকে তদারক করতে পারেন।

০৫. গ্রাহকসেবা দ্রুততর ও উন্নত হয়।


ব্যাংকের শাখাগুলোতে LAN স্থাপনের মাধ্যমে সেবা দেয়ার সুবিধাটি কাজে লাগিয়ে ব্যাংকগুলো আরেকটি সেবা চালু করার ব্যবস্থা করে যার সাধারণ প্রচলিত নাম Any Branch Banking (ABB)। এই ব্যবহার মাধ্যমে একজন গ্রাহক যেকোনো শাখাতে টাকা জমা দেয়া ও টাকা তুলতে পারেন। এক্ষেত্রে এক শাখার একটি ল্যান কমপিউটারের মাধ্যমে অন্য একটি শাখার সার্ভারে ঢুকে সেই শাখার নির্দিষ্ট কোনো হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেক করা যায় ও তা ডেভিট/ক্রেডিট করা যায় অর্থাৎ টাকা তোলা যায় বা টাকা জমা করা যায়। তবে সাথে সাথে হিসাব আপডেট হয় না। নির্দিষ্ট সময় পর পর ডাটা আপডেট হয়। অর্থাৎ রিয়েলটাইমে এই সিস্টেম কাজ না করার কারণে আসেত্ম আসেত্ম অনেক অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। ফলে সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে রিয়েলটাইম অনলাইন ব্যাংকিংয়ের কথা চিন্তা করতে থাকে ব্যাংকগুলো। বিশ্বের নামীদামী সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো এদেশের বাজারে তাদের পদচারণা শুরু করে ও এর সুফল সম্পর্কে ব্যাংকগুলোকে ধারণা দিতে থাকে। এই সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম কতগুলো Flexcub, Finacle, T024, Misys ইত্যাদি। এগুলো সবই পৃথিবীর অন্যতম দামী ও নামকরা সফটওয়্যার কোম্পানি এবং পরবর্তী সময়ে এদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ক্রমান্বয়ে এসব সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করে। এই রিয়েলটাইম অনলাইন ব্যাংকিং সফটওয়্যারগুলোর মৌলিক সুবিধাগুলো হলো :


০১. ব্যাংকের প্রয়োজনীয় যাবতীয় সলিউশন এর মধ্যে থাকে।

০২. এগুলো সাধারণত Parameterized থাকে ও প্রয়োজন অনুযায়ী কন্ট্রোল করা যায়।

০৩. এগুলো সাধারণত : মড্যুলার হয়ে থাকে। ফলে যেকোন পরিমাপ সার্ভিস ব্যাংকগুলো কিনতে পারে।

০৪. এগুলো শক্তিশালী ডাটাবেজ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে ও প্রয়োজনীয় রিপোর্ট বা এমআইএস সহজেই পাওয়া যায়।

০৫. এই সফটওয়্যারগুলো দীর্ঘমেয়াদী সলিউশন দিয়ে থাকে।


তবে এখন পর্যন্ত অনেক ব্যাংকই আমাদের দেশে তৈরি সফটওয়্যার দিয়ে বেশ কার্যকরভাবেই অনলাইন ব্যাংকিং সার্ভিস চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী হিসাবে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করা আসলেই আমাদের জন্য ভালো।


এ মুহূর্তে আমাদের দেশের ব্যাংক সেবা অনেক উন্নত ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। আমরা আশা করব, এই সুবিধার প্রতিফলন আমাদের জাতীয় জীবনে পড়বে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে ব্যাপকভাবে এবং এর প্রভাব পড়বে আমাদের জাতীয় জীবনে, আমাদের অর্থনীতিতে। আমরা সেই দিন চাই।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।