বাংলাদেশের যুবসমাজকে বর্তমানে ফ্রিল্যান্স কী, কেন বা এই ধারার প্রশ্নগুলো তেমন কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয় না বিশেষ করে যারা অনলাইনমুখী। কারণ গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারদের যে আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে তা আমাদের সবারই জানাশোনার মধ্যেই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। ভিন্নতা বলতে সেই বিষয়গুলো, যেগুলো বা যারা চোখের সামনে ভালো-মন্দগুলো দেখা ও বিচার করতে পারে না আসলেই তার কী করা উচিত।
প্রিয় পাঠক! আমার টিউনটির শিরোনাম দেখে অনেকেই ভাবছেন আমি হয়তো অন্যদেরকে অবমূল্যায়ন করছি। আমি মূলত টিউন লিখছি তাদের জন্য যারা তাদের চোখের সামনে ভালো কিছু দেখেও সেগুলোকে নিজের করে নিতে পারেন না বা বুঝে উঠতে পারেন না আসলেই কীভাবে তারা নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
কিছু কিছু বিষয় যা আপনি খেয়াল করতে পারলেই আপনার ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্নপূরণে অনেক সহায়তা করবে। কারণ হিসেবে আমি এখানে যে বিষয়গুলো নেগেটিভলি উল্লেখ করব সেগুলোকে আপনি বেশি কিছু না শুধু নিজের সাথে মিলিয়ে দেখেন এবং পারলে সেই বিষয়গুলোকে পজিটিভ করে নিন নিজের জন্য নিজের মতো করে। তাহলে হয়তো আর পিছে ফিরে দেখতে হবে না। যে কারণগুলোর জন্য আপনি কখনই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন না তা হলো
১. অধ্যবসায়হীনতা
ফ্রিল্যান্সার হওয়ার মূলমন্ত্র! এই গুণটি আপনার মাঝে নেই। আপনি অধ্যবসায়ী হতে পারেননি বা চেষ্টাও করেননি কখনও। আপনি হয়তো অন্যসব সফল ফ্রিল্যান্সারকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে দেখে ভাবেন ‘আমিও সফল হব’ অথবা ‘আমি ওই ভাইয়ের মতো এইটা হব, ওইটা হব’। দেখুন, চাইলেই অনেক কিছু পাওয়া যায়, এ কথাটি অনেক ক্ষেত্রে সত্যি। তবে শুধু কি চাইলেই হবে কারণ এই কথাটি বলে আপনি যতই চেঁচামেচি করেন না কেন কোনো লাভ হবে না। আপনার সফলতা কখনই আসবে না। কারণ আপনি যে ভাইয়ের মতো হতে চাচ্ছেন সেই ভাই অনেক সাধনা করেই ওইটা হয়েছে, আপনি কী করছেন? সফলতা চাইতে হলে বা সফল হতে হলে আপনাকে বেশি কিছু করার দরকার হবে না! শুধু দরকার আপনার পছন্দের বিষয়ে তীব্র ‘অধ্যবসায়’ একবার অধ্যবসায় শুরু করুন। দেখবেন আপনার সফলতা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে!
২. সময়জ্ঞানহীনতা
যারা অধ্যবসায়ী নন তারা কখনও সময়ের মূল্যায়ন করতে পারেন না। কারণ আপনি অধ্যবসায় শুরু করলেই আপনাকে সময় সম্পর্কে অনেক চিন্তাভাবনা করে চলতে হবে। এমন অনেককেই দেখা যায়, যারা ‘টাকা আকাশে ওড়ে’ শুধু এই চিন্তা নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করতে আসেন। একবার ফ্রিল্যান্স সাইটগুলোতে দেখেন, প্রতিদিন কত কোটি ডলারের কাজ টিউন হয়। যার মধ্যে খুব বেশি হলে ৫০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয় আর বাকিগুলো কর্মীর অভাবে বাতিল হয়ে যায়। আপনি কখনও এ কথায় বিশ্বাসই করবেন না, কারণ আপনার সময়ই নেই এসব সাইটে ভিজিট করে দেখবার। কারণ আপনি সময়জ্ঞানহীনতা নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকেন হয়তো।
৩. অপ্রত্যাশিতভাবে টাকার পেছনে ছোটা
আবার আসি ‘টাকা আকাশে ওড়ে’ নিয়ে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে এমন কিছু ফ্রিল্যান্সার আছেন, যারা আসলেই ‘ফ্রিল্যান্স’ বা ‘ফ্রিল্যাসিং’ কথাটির অর্থই জানেন না। তাদের জন্য সংক্ষেপে কিছু বলা
আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং কী?
আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বিশেষ করে যুবসমাজের কাছে যারা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের পকেট খরচটা চালাতে চান। একটা সময় দেখা যায় এই পেশায় তারা এমনভাবে জড়িয়ে পড়েন, যা কিনা তাদের ভবিষ্যতের আয় উন্নতির স্থায়ী পথ হয়ে যায়।
আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং শব্দ দুটি আমরা একই জিনিস বুঝলেও অর্থগত দিক থেকে এদের পার্থক্য আছে বটে, সংক্ষিপ্তভাবে বলছি এদের অর্থগত পার্থক্য।
আউটসোর্সিং মানে বাইরের মাধ্যম থেকে কোনো কাজ বা তথ্য নিজের কাছে নিয়ে আসা বা নিজের কাজ বা তথ্য অন্যের কাছে পাঠিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে শুধু ফ্রিল্যান্সিংকে এককভাবে আউটসোর্সিং বলা চলে না। যেকোনো বিষয় এর সাথে যুক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয়/নিজ দেশের কাজকে কিন্তু আউটসোর্সিং বলা চলে না।
আর ফ্রিল্যান্সিং বলতে মুক্ত বা স্বাধীনভাবে কাজ করার মাধ্যমকে বুঝায়। এক্ষেত্রে বলা চলে ফ্রিল্যান্সাররা কিন্তু কারো কাছে কুক্ষিগত নয়, এবং কখনও হতেও পারে না। ফ্রিল্যান্সাররা দেশ-বিদেশের সবার সাথে কাজ করে সম্পূর্ণ নিজের স্বাধীনতায়। কেউ তাকে বাধা বা কাজে বিঘ্নিত করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে কেউ যদি নিজের চেষ্টায় না করে অন্য কোনো ফ্রিল্যান্স দল/গ্রুপ আর আওতায় থেকে কাজ করে তবে তাকে মুক্ত বা স্বাধীন ফ্রিল্যান্সার বলা যাবে না। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ফ্রিল্যান্স কি সম্পূর্ণ ফ্রি নিবন্ধনের আওতায় পড়ে এবং বায়ারের কাজগুলো ফ্রিল্যান্স কোম্পানি থেকে নিতে নগণ্য পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়।
আপনি কাজ জানেন, আপনার কাছে কাজ আসবে এটা কিন্তু ঠিক। তবে আপনি যদি চুপ করে বসে থাকেন তাহলে কি কেউ আপনাকে জানবে? আপনাকে কাজ দিবে? টাকা কামাতে চাইলে আপনাকে আপনার কোয়ালিটি জানাতে হবে। প্রমাণ করতে হবে যে, আপনি কাজের জন্য বেস্ট, আর এভাবে না চলতে পারলে শুধু টাকার পিছনে ছোটাই হবে, ফ্রিল্যান্স করে টাকা কামানোর শখ কোনোদিন পূরণ হবে না।
৪. কাজ শেখার অমনোযোগিতা
এই বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি অমনোযোগী নতুনরা। অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন, ‘ভাই সবচেয়ে সহজ কাজ কোনটি? যেটাতে তেমন কিছু শিখতে হবে না।’ এমন কথা যারা বলেন তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং নয়! কারণ, আপনি যদি সাধারণ মানের লেখালেখির কাজ করেও আয় করতে চান, তবে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে লিখলে আপনাকে বায়ার কাজ দেবে বা লেখায় কতটা সৌন্দর্য দিতে পারলে বায়ার আপনাকে বেছে নেবে সবার মধ্য থেকে! অনেকে বলেন, ভাই আমি গ্রাফিক্স বা ওয়েব ডিজাইন শিখতে চাই কিন্তু কোথায় শিখব, কার কাছে শিখব জানি না। তাদের জন্য বলি, আপনি তো অন্তত নেট ব্রাউজ/চালাতে পারেন। তাহলে গুগল করুন না আপনি যে বিষয়টি খুঁজছেন। যদি ওয়েব ডিজাইন টিউটোরিয়াল খুঁজেন তাহলে কীওয়ার্ড লিখুন Free Web Design Tutorials অথবা Free Web Design Video Tutorials। আমি ১০০ শতাংশ বলতে পারি আপনি আপনার কাক্সিক্ষত বস্তুটি পেয়ে যাবেন। একটি কথা মনে রাখবেন, আপনি এখন ২০২২ সালে এসে যে জিনিসগুলো বাংলায় খুঁজে পাচ্ছেন সেগুলো কিন্তু কিছু বছর আগেও বাংলা ছিল না। আজ যারা সফল তারা কিন্তু একটা সময় আপনার মতোই ছিলেন। তারা ইন্টারনেটের এই বিশাল ময়দান থেকে অনেক যুদ্ধ করে আজকের সফল ব্যক্তিত্ব হয়েছেন। আপনি তাদের মতো হন বা না হন, নিজে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা তো করবেন? এক্ষেত্রে নিজের চিন্তা এবং মেধাশক্তিকে কাজে লাগান। না হলে একটা সময় কোনো কিছুই খুঁজে পাবেন না নিজের মাঝে থেকে।
৫. ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা কী, তা হয়তো এই সময়ে আর বলে দিতে হবে না। ওপরে লেখা ‘আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং কী?’ এই বিষয়টি ভালো করে বুঝতে পারলে আপনাকে কেউ ভ্রান্ত করতে পারবে না। তারপরও বলি, ধরুন, আপনি যাদেরকে ফ্রিল্যাসিংয়ে সফল হতে দেখে নিজেও ফ্রিল্যান্সিং করতে আসলেন; কিন্তু আপনি ভালো করে জেনে নিলেন না আসলেই আপনার ওই ভাই বা বোনটি কি কাজ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হয়েছেন। আর আপনার এই না জানার কারণেই বর্তমান সমাজে কিছু লোক সুযোগ নেবে আপনার মূল্যবান সময়, শ্রম, অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য। বাস্তবিক ভাবে দেখেছি, কেউ কেউ নিজের সম্পত্তি বিক্রি করেও টাকা ইনভেস্ট করে সেসব মূল্যহীন কাজে। একবার ভেবে বা খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনি আপনার পাশের যে ভাই বা বোনটির সফলতা দেখে ফ্রিল্যান্সিং করতে নামলেন তিনি কাজ পেতে নিজের সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। এমনটা হতে পারে, তিনি কাজ শেখার জন্য টাকা ইনভেস্ট করেছেন কিন্তু কাজ পেতে নয়।
আরটিক্যালটির মূল আলোচনার ওপরের পাঁচটি কারণের যেকোনো একটি আপনার মাঝে থাকলে আপনি কখনই সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন না। আপনি কি ওপরের কোনোটির সাথে আপনার মিল খুঁজে পান? যদি মিল খুঁজে পেয়ে থাকেন আর স্বপ্ন দেখেন সফল হওয়ার, তাহলে আপনি ভুল পথে হাঁটছেন।
১ টি মন্তব্য
Md Shamim Miah
২০২২-১১-০৮ ১৭:২৫:১২Bujlam