https://gocon.live/

প্রযুক্তি

কেমন যাবে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বিশ্ব

কেমন যাবে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বিশ্ব কেমন যাবে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বিশ্ব
 

কেমন যাবে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বিশ্ব


প্রযুক্তিবিশ্বে ‘ডিজিটাল ফিউচার ইনিশিয়েটিভ’ নামে অধিক সমাদৃত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় গুগলের ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ। সার্চইঞ্জিন প্রতিষ্ঠান ‘গুগল’র সিইও সুন্দর পিচাই ১৫ নভেম্বর ২০২১ সালে ঘোষণা দেন, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল সাইন্স এজেন্সির সাথে পার্টনারশিপ ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়াতে আগামী পাঁচ বছরে এই অর্থ বিনিয়োগ করবেন। গুগলের বিনিয়োগকৃত অর্থ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে তাদের প্রথম রিসার্চ ল্যাব, ক্লাউড কমপিউটিং প্রাধান্য দিয়ে ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে। এক অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য দিয়ে গুগল জানিয়েছে, এই বিনিয়োগের ফলে সরাসরি ৬ হাজারের অধিক নতুন চাকরির সুযোগ অস্ট্রেলিয়া জুড়ে হবে। গুগলের ল্যাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম কমপিউটিং সব ক্ষেত্রেই গবেষণা করা হবে। ইতিমধ্যে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন তথ্যপ্রযুক্তির গবেষণাতে অধিক গুরুত্ব দিতে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ই-কমার্স জায়ান্ট ‘অ্যামাজন’র রিসার্চ ল্যাব, এবং ‘ওরাকল’ ও ‘আইবিএম’র মধ্যে তাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ল্যাব অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে প্রতিষ্ঠা করেছে। 


এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা ও কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান ‘গার্টনার’র ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতে ব্যয় ৫.৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। তাদের গবেষণায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেবা, যোগাযোগ পরিষেবা, এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার, ডিভাইস এবং ডেটা সেন্টার সিস্টেম অধিক প্রাধান্য পায়। ২৬ এপ্রিল, ২০২১ সাল ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল’র প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা। আগামী পাঁচ বছরের জন্যে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ও ২০ হাজার নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরির কথা বলে যেটা ২০১৮ সালে তারা নির্ধারণ করে। তাদের নয়টি রাজ্যে ৫জি উদ্ভাবনে ডেভেলপমেন্টে তাদের চেষ্টা। এছাড়া ৫০টি রাজ্যে উদ্ভাবন ও উৎপাদনে এই বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য বলে জানান ‘অ্যাপল’ কোম্পানির সিইও টিম কুক। ডেভেলপার চাকুরি, উৎপাদক এবং সাপ্লায়ারদের মাধ্যমে ২.৭ মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘অ্যাপল’ আমেরিকার ক্যারোলিনাতে একটি ক্যাম্পাস ও প্রকৌশল হাব তৈরির প্রচেষ্টা করছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে। ধারণা করা হচ্ছে এই বিনিয়োগের ফলে মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তিখাতে কমপক্ষে ৩ হাজার নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। পাশাপাশি ‘অ্যাপল’ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফান্ড প্রতিষ্ঠা করবে যেটা স্কুল এবং কমিউনিটিগুলোর প্রযুক্তি উদ্যোগে সাপোর্ট করবে।   


আফ্রিকা মহাদেশে স্টার্টআপ বিনিয়োগে ২০২০ সালে সর্বোচ্চ অবস্থানে ৩১ ভাগ অবস্থা নিয়ে ফিনটেকভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল। অপরদিকে, ‘অ্যালফাবেট’ ও ‘গুগল’র সিইও সুন্দর পিচাই ২০২১ সালের অক্টোবরে আফ্রিকা মহাদেশে প্রযুক্তিখাতে গুগলের ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। আগামী ৫ বছরে বিভিন্ন পরিসরে এই অর্থ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে 


ডিজিটাল ব্যবস্থায় আনা, বিভিন্ন প্রযুক্তি স্টার্টআপ, নেটওয়ার্ক, দক্ষতা উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনে প্রদান করা হবে। আর এই বিনিয়োগে প্রাথমিক অবস্থানে থাকবে আফ্রিকা মহাদেশের নাইজেরিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা এবং ঘানার মতো দেশগুলো। গুগলের এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আফ্রিকার ৩০০ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার মধ্যে আগামী বছরের মধ্যে আসবে। গুগল ২০১৭ সালে আফ্রিকা মহাদেশের ১০ মিলিয়ন মানুষকে ডিজিটাল স্কিলে দক্ষ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল যা তাদের ব্যবসা এবং ক্যারিয়ারে ভ‚মিকা রাখবে। ইতিমধ্যে ৬ মিলিয়ন মানুষকে প্রশিক্ষিত এবং ৮০টির বেশি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড তুলতে সহায়তা করে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ৮০ হাজারের বেশি ডেভেলপার তৈরিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে এবং আফ্রিকার ২ লাখ কিলোমিটার পথ এখন গুগল ম্যাপের অধীনে যুক্ত আছে।      


একইভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ দেশ ভারত নিজেদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও স¤প্রাসারণে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে এই সময়ে ভারতের জিডিপিতে তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরের অবদান ১.২ ভাগ থেকে বেড়ে ১০ ভাগ হয়েছে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের অ্যাসোসিয়েশন ‘ন্যাসকম’র তথ্য হিসেবে ২০১৯ সালে প্রযুক্তিখাতে ১৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়, এবং এই প্রযুক্তিখাতে ভারতজুড়ে ৪.৩৬ মিলিয়ন মানুষ ২০২০ সালে কাজ করেন। ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ‘টাটা’ ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট উৎপাদনের কার্যক্রম তামিনাড়ু রাজ্যে নিয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ভারত প্রযুক্তিসেবা ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০০-৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার প্রত্যাশা করছে। কিন্তু ভারতকে এই অগ্রগতি অর্জন করতে হলে ক্লাউড কমপিউটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই), সাইবার সিকুয়েরিটি, আইওটির মতো সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিখাতগুলোতে কার্যকরভাবে সফল হতে হবে।    


বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকার আইওটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, বøকচেইন, ডেটা নিরাপত্তা এবং ডেটা সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করেছে। ডেটা নিরাপত্তা এবং সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে পৃথিবীর ৭ম বৃহত্তম ডেটা সেন্টার প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্লাউড কমপিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তিতে ২০১৯ সালে ‘টিয়ার ফোর-আইভি’ মানের ‘জাতীয় ডেটা সেন্টার’ নির্মাণ করে। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জাতি ও কর্মসংস্থান গড়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ৩৯টি হাইটেক সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক সম্পন্নের কাজ করছে। শুধুমাত্র যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ২০ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া সব সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ সম্পন্ন হলে দেশে নতুন ৩ লাখ তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দেশের প্রথম হাইটেক পার্ক ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’তে দেশি-বিদেশি ৭০টি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ১২০.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ বিনিয়োগের পরিমাণ ১২৬৪.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হবার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। গাজীপুরের চন্দ্রায় বেসরকারি পর্যায়ে দেশের প্রথম কমপিউটার হার্ডওয়্যার কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য। আশা করা যাচ্ছে বাংলাদেশে 


২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপিতে আইসিটি এবং সফটওয়্যার খাতের অবদান ৫ ভাগে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে সফটওয়্যার রপ্তানি করে। সরকার বøকচেইন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, রোবটিক্স, আইওটির মতো অগ্রসরমান প্রযুক্তির সাথে সবাই পরিচিত হতে পারে সেজন্যে ৩০০ স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠা করছে।   


বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শুধু ২০২২ সাল নয়, বরং আগামী ১ দশক এবং এর পরবর্তী সময়ে যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কার্যক্রমগুলো বেশি আলোচনাতে থাকবে এবং অধিক কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখবে সেরকম অগ্রসরমান কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তির কথা উল্লেখ করা হলো       


ওয়েব৩.০ 


ওয়েব৩.০ হচ্ছে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশনের জন্যে তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সার্ভিস বা পরিষেবা, যাতে মেশিনভিত্তিক ডেটা নির্ভরতা এবং স্যামেন্টিক ওয়েব প্রাধান্য পাবে। আরও বেশি তীক্ষ বুদ্ধিসম্পন্ন, যোগাযোগসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট কাঠামো নির্মাণ মূল উদ্দেশ্য। ওয়েব৩.০ বিষয়টি ১৯৯৯ সালে কমপিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নাসলি’র ‘সিমেন্টিক ওয়েব’ ধারণাটির মাধ্যমে সর্বপ্রথম আলোচনাতে আসে। তিনি উল্লেখ করেন ‘সিমেন্টিক ওয়েব’র কথা, যা ইন্টারনেটে ডেটা পর্যবেক্ষণ এবং মানুষের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া মেশিনের সহায়তায় কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। ২০০৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের মাধ্যমে জন মার্কঅফ তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা হিসেবে শ্রেণীকরণ করে সর্বপ্রথম ‘ওয়েব৩.০’ নামটির সাথে সবাইকে পরিচিত করান যাকে ‘দ্য ইন্টিলিজেন্ট ওয়েব’ বলা যেতে পারে। মূল ওয়েব১.০ থেকে ওয়েব২.০ কাঠামোতে যেতে ১০ বছরের বেশি সময় লেগেছে, তেমন ওয়েব৩.০ তৈরিতে লাগতে পারে; যদিও টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে অনেকাংশে এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্মার্টহোম যন্ত্রপাতি ও আইওটির ব্যবহার ওয়েব৩.০-এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। 


ওয়েব১.০ স্ট্যাটিক তথ্য প্রোভাইডার যেখানে মানুষ অনলাইনে ওয়েবসাইট পড়ে কিন্তু কদাচিৎ সেটার সাথে মিথস্ক্রিয়া বা ইন্টারেক্ট করে। অপরদিকে, ওয়েব২.০ ইন্টারেক্টিভ এবং সোশ্যাল ওয়েবভিত্তিক কাঠামো যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে। ধারণা করা যায়, ওয়েব৩.০ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করে ওয়েব দুনিয়াতে নতুনত্ব আনবে। সিমেন্টিক ওয়েব, ইউবিকিউইটিআস কমপিউটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের (এআই) সহায়তায় ওয়েব ৩.০-এর পথ চলা হবে, এর উদ্দেশ্য হলো কত দ্রুত এবং প্রাসঙ্গিক ডেটা বা তথ্য ব্যবহারকারীকে সরবরাহ করা যায়। সোশ্যাল বুকমার্কিং সার্চইঞ্জিন হিসেবে এ ব্যাপারে গুগলের থেকেও ভালো রেজাল্ট প্রদান করতে পারবে যেহেতু ব্যবহারকারী দ্বারা পছন্দ করার সুবিধা থাকে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এই ব্যাপারে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ে ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি সিমেন্টিক ওয়েব তথ্য সংরক্ষণ এবং ধরন অনুযায়ী ডেটা ক্যাটাগরি ভাগ করবে, যা সিস্টেমকে নির্দিষ্ট ডেটা বুঝতে সাহায্য করবে। সহজ করে বললে, ওয়েবসাইটের সার্চ কোয়েরিতে কোনো শব্দ বা কিওয়ার্ড রাখলে ওয়েবসাইট বুঝতে পারবে এবং ভালো কনটেন্ট পেতে সহায়তা করবে। এই সিস্টেম বা পদ্ধতিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করবে। যেখানে সিমেন্টিক ওয়েব কমপিউটারকে বুঝতে সহায়তা করবে ডেটা বা তথ্যটি কী এবং অপরদিকে ‘এআই’ তথ্যটি গ্রহণ করে ব্যবহার করবে। 


‘ইউবিকিউটিয়াস কমপিউটিং’ প্রাত্যহিক জীবনের বিষয়বস্তুর নিবন্ধিত প্রক্রিয়া, যা ইউজার এনভায়রনমেন্ট বা পরিবেশে ডিভাইসসমূহের আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন করে। এটিও ওয়েব৩.০-এর একটি উপাদান, যেটা ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) মতো। এই ওয়েব৩.০ প্রযুক্তিতে ডেটা মাইনিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ সার্চ এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিষয়বস্তু, পিয়ার টু পিয়ার প্রযুক্তি যেমনÑ বøকচেইন এবং এপিআইএস, ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ওয়েব৩.০ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপে ব্যবহার হবে। আর ভবিষ্যতে এডজ কমপিউটিং ও ৫জি প্রযুক্তির ক্রমাগতভাবে উন্নয়নে ওয়েব৩.০ ব্যবহার বেগবান হবে।                  


সাইবার সিকিউরিটি ম্যাশ আর্কিটেকচার


সাইবার ডিফেন্স কৌশল এটি, যা স্বাধীনভাবে নিজের পরিধি অনুযায়ী প্রত্যেক ডিভাইসকে নিরাপদ রাখে, যেমন ফায়ারওয়াল, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা টুলসমূহ। সাইবার সিকিউরিটি ম্যাশ আর্কিটেকচারের (সিএসএমএ) কাজ হচ্ছে, আপনার ডেটা বা তথ্য কোথায় অবস্থিত সেটা বিষয় নয়, বরং সেই ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই মূল কাজ। গার্টনারের পূর্বাভাস বলে, ২০২৫ সালে অর্ধেকের বেশি ‘আইএএম’ (আইডেন্টিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস ম্যানেজমেন্ট) রিকুয়েস্ট অর্থাৎ পলিসি, প্রোসেস এবং টেকনোলজি ফেমওয়ার্ক, যা কিনা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল পরিচয় এবং ব্যবহারকারীর প্রবেশ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেই বিষয়াদি সাইবার সিকিউরিটি ম্যাশ সাপোর্ট করবে। অপরদিকে, পুরাতন সাইবার সিকিউরিটি মডেল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ডিভাইসের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক প্রবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো। ম্যানেজেড সিকিউরিটি সার্ভিস প্রোভাইডারস (এমএসএসপিএস) কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পনা, উন্নয়ন, এবং বিস্তৃত পরিসরে ‘আইএএম’ (আইডেন্টিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস ম্যানেজমেন্ট) সলিউশনগুলো বাস্তবায়নে গুণগত মানসম্পন্ন রিসোর্স এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করবে। 


গার্টনারের বিবৃতিতে, ২০২৩ সালের মধ্যেই ৪০ ভাগ আইএএম অ্যাপ্লিকেশন প্রাথমিকভাবে ‘এমএসএসপিএস’ দ্বারা পরিচালিত হবে, যেখানে একীভ‚ত লক্ষ্য নিয়ে সবচেয়ে ভালো সলিউশন বা পরিষেবা প্রদান করা হবে এবং এই প্রক্রিয়া প্রোডাক্ট ভেন্ডর থেকে সার্ভিস পার্টনারদের মাঝে কাজ করবে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ কিংবা দূর থেকে কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে বেশি পরিচালিত শুরু হওয়ায় সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুর প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়ছে। গার্টনারের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪ সাল নাগাদ ৩০ ভাগ বড় প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নতুন আইডেন্টিটি প্রফিং টুল ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করবে।     


কেন্দ্রভ‚ত ডেটা বা তথ্য নিরাপদে দূরবর্তী জায়গায় সরবরাহ করা কঠিন, কিন্তু সে ডেটা যদি বিভিন্ন জায়গায় থাকে এবং ম্যাশ মডেল ও বøকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে সেটা নিরাপত্তা রক্ষা করা যায় তাহলে যারা রিকুয়েস্ট করবে তারা ডেটা বা তথ্যে সহজে প্রবেশ করতে পারবে। ২০২৪ সাল নাগাদ ব্যবসা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সাইবার ম্যাশ নিরাপত্তা প্রযুক্তি বাজারে ব্যাপকমাত্রায় আলোচনায় আসবে।  


অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি 


জার্মান রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ‘স্ট্যাটিস্টা’র পূর্বাভাস বলে, বিশ্বজুড়ে ২০২৪ সাল নাগাদ অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বাজার ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছে পৌঁছাবে। ই-কমার্স খাতে যুক্তরাষ্ট্রে অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রায় ১৭ ভাগ ক্রেতা ২০২২ সালে ব্যবহার করবেন। ‘ভাইব্রেন্ট মিডিয়া’র তথ্যানুযায়ী, এআর বিজ্ঞাপন কাস্টমারদের খুব কাছে প্রোডাক্ট ও ব্র্যান্ডকে নিয়ে আসতে পারে এবং বিক্রি ভালো করে, এজন্য ৬৭ ভাগ বিজ্ঞাপন এজেন্সি অগমেন্টেড রিয়েলিটির ব্যবহারে প্রাধান্য দেয়। এক্ষেত্রে ভ্রমণ, বিনোদন, অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ক্যাম্পেইন বিশাল পরিসরে লাভ আনতে পারে। ভার্চুয়াল স্টোর প্রোডাক্ট কেনাকাটাতে মানুষের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন আনা শুরু করেছে। ভার্চুয়াল শোরুমে ক্রেতা মোবাইল ভিআর গøাসের মাধ্যমে নিজের পছন্দের প্রোডাক্ট বাসায় কোথায় রাখলে ভালো লাগবে, কিংবা নিজে কোন জামা পরলে নিজেকে কেমন ভালো লাগবে সেটা ফিজিক্যাল স্টোর বা দোকানে না গিয়ে ঘরে বসে বুঝে নিতে পারবেন; অর্থাৎ, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। যেমনÑ ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান ওকঊঅ তাদের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অগমেন্টেড রিয়েলিটির মাধ্যমে তাদের ফার্নিচার কেনার আগে সেই ফার্নিচার ছবি মোবাইলে ধরে নিজের ঘরের কোন জায়গার দিকে ধরলে সেখানে ফার্নিচারটি কেমন মানাবে সেটার একটি ত্রিমাত্রিক বাস্তব অবস্থা আপনি দেখতে পারবেন। অপরদিকে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আর্টিফিশিয়াল একটা জগতে আপনি নিজেকে হেডসেট বা স্মার্টগøাসের মাধ্যমে নিজেকে আবিষ্কার করতে এবং ভার্চুয়াল জগতের প্রোডাক্ট কিংবা বিষয়বস্তুর সাথে ইন্টারেক্ট বা মিথস্ক্রিয়া করতে পারবেন।     


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টার্টআপ সহযোগিতা ও ফান্ডিং প্রতিষ্ঠান ‘আঞ্জেললিস্ট’র অগমেন্টেড রিয়েলিটি ক্যাটাগরিতে ২,৮২৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। ২০২২ সালের শেষভাগে কিংবা ২০২৩ সালের শুরুতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল’ তাদের মিক্সড রিয়েলিটির অর্থাৎ, অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সমন্বয়ে গঠিত ‘অ্যাপল গøাস’ বাজারে আনার সম্ভাবনা আছে বলে ‘অ্যাপল’র বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা মিং-চি কিউ বলেছেন। ‘অ্যাপল’র স্মার্ট গøাসটি রিয়েলিটি অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত হবে, এতে ‘আল্ট্রা অ্যাডভান্সড’ মাইক্রো ওএলইডি ডিসপ্লে থাকবে। ‘অ্যাপল গøাস’ আপনার ফোন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেটা ইমেইল, টেক্সট, ম্যাপ আপনার গ্লাসে প্রদর্শন করবে। 


২০১৮ সালের ১ মার্চ গুগল এআরকোর (অজঈড়ৎব) প্রাথমিক পর্যায়ে রিলিজ দেয়, যেটা অগমেন্টেড রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা নেয়ার গুগলের প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন এপিআই ব্যবহার করে ‘এআরকোর’ আপনার ফোন বিশ্বে পরিবেশ ও তথ্যের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবে। তিনটি ভিত্তির ওপর ‘এআরকোর’ কাজ করে, ভার্চুয়াল কনটেন্টকে আপনার ফোন ক্যামেরার সহায়তা নিয়ে এটি রিয়েল ওয়ার্ল্ডের সাথে একীভ‚ত করবে। স্ট্যাটিস্টা’র হিসেবে, মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের নামে ১০ হাজারের বেশি ভিআর/এআর প্যাটেন্ট নিবন্ধিত করা আছে। 


এডজ কমপিউটিং 


যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান হিউল্যাট প্যাকার্ড এন্টারপ্রাইজ (এইচপিই) ২০১৮ সালে ঘোষণা দেয়, এডজ কমপিউটিং প্রযুক্তির ওপর আগামী ৪ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে, যেটা ইন্টিলিজেন্স এডজ প্রযুক্তির উন্নয়ন, যেমনÑ লোকেশন বেজড সার্ভিস, ওয়্যারলেস ল্যান নেটওয়ার্ক, ক্যাম্পাস সুইচিং, ডেটা পর্যবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও রিসার্চে ব্যয় করা হবে। অপরদিকে, টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ২০১৮ সালে পরবর্তী ৪ বছরের জন্যে আইওটি এবং এডজ কমপিউটিংয়ের ওপর ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা ঘোষণা দেয়। এদিকে ২০২০ সালে ‘অ্যাপল’ সিয়াটলভিত্তিক ঢহড়ৎ.ধর স্টার্টআপ কোম্পানি ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় যার মূল কার্যক্রম এডজ প্রযুক্তিনির্ভর আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে কাজ। ২০২২ সালে এনার্জি ও রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে চাহিদার কারণে স্থায়িত্ব পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে এডজ এবং আইওটি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ‘ফরেস্টার’র হিসেবে, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। ফরেস্টার’র মতে, ৪০ ভাগ বিনিয়োগ চীন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা স্মার্ট কাঠামো তৈরি ব্যয় হবে, যাতে এডজ ও আইওটি ডিভাইসের ব্যবহার থাকবে। 


মোবাইল এডজ কমপিউটিং প্রযুক্তি ল্যাটেন্সি বা বিলম্বতা কমিয়ে স্বল্প সময়ে অ্যাপ্লিকেশন ডেটা বা তথ্য মোবাইল ডিভাইস থেকে মোবাইল এডজ নেটওয়ার্ক ডিভাইসে সংরক্ষিত থাকে এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে ইন্টারনেটের মধ্য দিয়ে রিমোর্ট এরিয়া বা দ‚রবর্তী জায়গার অ্যাপ্লিকেশন সার্ভারে যায়। শিকাগোতে ‘অ্যামাজন ওয়েভল্যান্থ’ সাথে ভেরিজন তাদের ৫জি নেটওয়ার্ক এডজ কমপিউটিং নিয়ে কাজ করা শুরু করেছে, যা মোবাইলের এবং ডিভাইসের মাধ্যমে ভেরিজনের ৫জি আল্ট্রা ওয়াইডব্যান্ড নেটওয়ার্ক কাঠামোতে সংযোগকৃত থাকবে। ‘এডব্লিউএস ওয়েভল্যান্থ’ ডেভেলপারদের অ্যাপ্লিকেশন সন্নিবেশ করার দক্ষতা প্রদান করে যাতে ৫জি মোবাইল ডিভাইসে আল্ট্রা-লো ল্যাটেন্সি বা বিলম্বের প্রয়োজন পরে। ভেরিজন ৫জি এডজ মোবাইল এডজ কমপিউটিং এবং ব্যবহারকারী, ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে উচ্চগতির নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে, যেমনÑ মাত্র ২০ মিলিসেকেন্ডেরও চেয়ে অল্প সময়ে গেম স্ট্রিমিং দরকার পড়ে। 


মার্কেটএন্ডমার্কেটস’র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালে বিশ্বব্যাপী এডজ কমপিউটিং প্রযুক্তির বাজার ৮৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওরাকল, গুগল, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস, আইবিএমের মতো কোম্পানিগুলো এডজ কমপিউটিং সেবা প্রদানে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত। ‘গুগল’ তাদের হোম প্রোডাক্টের জন্য এডজ কমপিউটিং সেবা দেয়, তারা এডজ ডেটা নিয়ন্ত্রণে ক্লাউড কমপিউটিং সেবা ‘ক্লাউড আইওটি কোর সার্ভিস’র মাধ্যমে প্রদান করে। মার্কেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ‘আইডিসি’র পূর্বাভাস বলে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের সেরা ২ হাজার খুচরা বিক্রেতার ৯০ ভাগ তাদের ডেটা বা তথ্য সুরক্ষা করে কর্মোউদ্দম ও কাস্টমার ডেটা অপটিমাইজ করে সেবা ভালো করতে এডজ কমপিউটিং ব্যবহার করবে, যা তাদের ২০ ভাগ অর্থ সাশ্রয় এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা সহজ করবে। গার্টনারের পূর্বাভাসে, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ৭৫ ভাগ ডেটা বা তথ্য কেন্দ্রীয় ডেটা সেন্টারের বাইরে তৈরি হবে। জার্মানির বিখ্যাত ‘অডি’ গাড়ি কোম্পানি প্রতিদিন একটি প্ল্যান্টে ১ হাজারের বেশি গাড়ি উৎপাদন করে যার প্রতি গাড়িতে ৫ হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ থাকে। এত হাজার হাজার গাড়ির তথ্যাদি প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা সহজ নয়। এজন্য সেন্সর দিয়ে প্রতিটি যন্ত্রাংশের ডেটা বা তথ্য সরাসরি মুহূর্তের মধ্যে এডজ কমপিউটিং ডিভাইসের মাধ্যমে গাড়ির চালককে জানতে সহায়তা করে।                   


আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স 


যখন সার্চইঞ্জিন গুগলে আপনি কোনো শব্দ বা কিওয়ার্ড টাইপ করে সার্চ করা শুরু করেন, তখন অনেকগুলো শব্দ সেই মূল শব্দের সাথে লং কিওয়ার্ড হিসেবে পর্যায়ক্রমিকভাবে আপনাকে সার্চবারে সাজেশন আকারে প্রদান করে, আর এটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের (এআই) একটি কার্যক্রম। সম্ভাব্য এই সার্চের জন্য সাজেশনকৃত কিওয়ার্ডগুলো গুগল আপনার এলাকা, বয়স, আপনার সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সার্চইঞ্জিনের মাধ্যমে প্রদর্শন করে। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই’র মতে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রযুক্তি ইন্টারনেট, ইলেকট্রিসিটি এবং আগুন থেকেও মানবজীবনের উন্নয়নে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। অ্যামাজন এবং অন্য ই-কমার্স শপগুলো ‘এআই’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতার পছন্দ ও প্রোডাক্টের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সেইরকম প্রোডাক্ট তাদের ওয়েবসাইটে সাজেশন হিসেবে প্রদর্শন করে। একইভাবে মিউজিক স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান ‘স্পোটিফাই’ আপনার গান শোনার অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে পুরনো এবং নতুন গান সাজেশন করে। অপরদিকে, ‘গুগলপ্লে’ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ ও দিনের সময়ের ওপর ভিত্তিতে গান অফার করে। ঘরের বাইরে যাবেন? গুগলম্যাপে ‘এআই’র সহায়তা নিয়ে গন্তব্য স্থানে যেতে জ্যামে পড়বেন কিনা সেটার ভিত্তিতে আরও কত দ্রæত সময়ে যাওয়া যায় সেটার তথ্য বের করতে পারবেন।


আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিনকে মানুষের মতো চিন্তা করার ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রযুক্তিনির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স’ শব্দটির সাথে ১৯৫৬ সালে প্রথম ডার্টমাউথ কলেজে ওয়ার্কশপে জন ম্যাককার্থি পরিচয় করান। আপনার প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার সাপোর্টের জন্য ওয়েবসাইটে যে চ্যাটবট ব্যবহার করছেন সেটাও ‘এআই’ প্রযুক্তির ফল। আপনার কাস্টমারের প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী সেটা পর্যবেক্ষণ করে উত্তর প্রদান করে। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি ল্যাবে জোসেফ উইজেনবন সর্বপ্রথম ‘এআই’ভিত্তিক চ্যাটবট আবিষ্কার করেন। আর বর্তমানে অ্যামাজনের ‘আলেক্সা’র মতো ‘এআই’ অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছে, যা পরবর্তীতে কী প্রোডাক্ট পছন্দ করে কিনবেন সেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনাকে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করতে পারে। গার্টনারের পূর্বাভাস বলে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ‘এআই’ভিত্তিক সফটওয়্যার বাজার ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে।    


বোয়িং-৭৭৭ বিমানের পাইলটদের ওপর ২০১৫ সালে করা এক জরিপে দেখা যায়, বিমান উড্ডয়নের প্রথম ৭ মিনিট ম্যানুয়ালি পরিচালনা করার পর বেশিরভাগ সময় আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিমান আকাশে ওড়ান। মার্কিন গাড়ি প্রস্তুত প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’ ইতিমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে তাদের স্বয়ংক্রিয় চালকবিহীন গাড়ি প্রস্তুত করেছে। কখন গাড়ি থামতে হবে, ম্যাপ অনুযায়ী গাড়ি নিজে থেকে ঘুরে পরিচালিত হয়। ফরচুন বিজনেস ইনসাইটের মতে, ২০২৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের বাজার ৩৬০.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।        


ইন্টারনেট অব থিংস


বিশ্বব্যাপী ২০২২ সালে ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) বাজার ৫৬১.০৪ বিলিয়ন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জার্মান রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ‘স্ট্যাটিস্টা’র তথ্য হিসেবে, ২০২২ সালে আইওটি প্রযুক্তির অধীনে ৪৩ বিলিয়ন ডিভাইস আসবে এবং অ্যাপ্লিকেশন, ইলেকট্রনিক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল উৎপাদন, অটোমোবাইল ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বেশি হবে। আইওটি ইকোসিস্টেম ওয়েবের সাথে একীভ‚ত হয়ে স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে ডেটা বা তথ্য আদান-প্রদান করে, যেখানে প্রসেসর, সেন্সর এবং যোগাযোগ রক্ষাকারী হার্ডওয়্যার থাকে। আইওটি ডিভাইস সেন্সর ডেটা শেয়ার করে, যা আইওটি গেটওয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় অথবা অন্য এডজ ডিভাইস যেখানে ডেটা যেটা ক্লাউডে প্রেরণ করা হয় তথ্য বা ডেটা লোকালি পর্যবেক্ষণ করার। আর এসব কার্যক্রম মানুষের কোনো রকম ইন্টারেক্ট বা মিথস্ক্রিয়া ছাড়াই সম্পন্ন হয়, আপনাকে শুধু আইওটি প্রযুক্তি সেটআপ চালু রাখতে হবে। আইওটির এই কার্যক্রমে মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের ব্যবহার হয় ডেটা সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়া সহজ গতিশীল করতে।


আইওটি প্রযুক্তি চিকিৎসা, কৃষি, খনিজ পদার্থ উত্তোলনসহ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে স্বয়ংক্রিয় কাজ পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করে, যেমনÑ একজন কৃষক বৃষ্টিপাত, তাপমত্রা, আর্দ্রতা এবং মাটির গুণাগুণ নির্ণয় করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদনে সফল কাজ পরিচালনা করতে পারেন। এছাড়া কাস্টমার ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে আইওটি কাস্টমারের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে ভালো কাস্টমার এনগেজমেন্টে ভ‚মিকা রাখে। অপরদিকে, স্মার্ট সিটির বাস্তবায়নে আইওটি এবং এডজ কমপিউটিংয়ের বিরাট প্রভাব বিরজমান, যেমনÑ শহরে রাস্তায় কখন ট্রাফিক বেশি এবং কখন কোথায় গাড়ি বেশি সেটার ডেটা পর্যবেক্ষণ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ; এবং সুন্দর পরিবেশের জন্য বাতাসের গুণগত মান কেমন হওয়া দরকার ও কতমাত্রায় দূষণ রোধ করা যায় তা নিরূপণ করার মতো বিষয়গুলো ডিজিটালাইজ সিস্টেমে নিয়ে আসা স্মার্ট সিটির মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে। ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান ইনোভিশন পার্টনারশিপ ফর স্মার্ট সিটিস অ্যান্ড কমিউনিটিজ (ইআইপি-এসসিসি) ৩০০ স্মার্টসিটি ইউরোপে নির্মাণে ১.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে। ফিটনেস ট্র্যাকার ও স্মার্টওয়াচ কোম্পানি ‘ফিটবিট’ ২০১৯ সালে গুগল ২.১ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। স্মার্ট হোম প্রোডাক্ট যেমনÑ স্মার্ট স্পিকার, স্মার্ট ডিসপ্লে, স্ট্রিমিং, সিকিউরিটি সিস্টেম ইত্যাদি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘নেস্ট’কে ৩.২ বিলিয়ন ডলারে ‘গুগল’ ২০১৪ সালে ক্রয় করে। অর্থাৎ, প্রযুক্তিখাতে আইওটির ব্যাপকতা সামনের দিনগুলোতে আরও প্রসারিত হবে, সেজন্য আইওটিনির্ভর সেবা চালু কিংবা সেই ধরনের কোম্পানিগুলো কিনতে গুগলের মতো টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত সজাগ। কারণ, ‘স্ট্যাটিস্টা’র রিপোর্ট বলে, ২০২৫ সালে আইওটির মার্কেট বিশ্বজুড়ে ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উত্তীর্ণ হবে। 


বিগ ডেটা ও ডেটা ফেব্রিক 


অনলাইন দুনিয়াতে প্রতি মিনিটে ১.৪ মিলিয়ন ভিডিও এবং ভয়েস কল, ১৫০,০০০ মেসেজ ফেসবুকে শেয়ার এবং ৪০৪,০০০ ঘণ্টার সমপরিমাণ ভিডিও নেটফ্লিক্সে স্ট্রিমিং করা হয়; অর্থাৎ, ইন্টারনেট বিশ্বে এরকম বহু ক্ষেত্র রয়েছে যেগুলোতে বিশাল পরিমাণ ডেটা বা তথ্য তৈরি হয় যা বিগ ডেটার অন্তর্ভুক্ত। বিগ ডেটা হচ্ছে একটি সিস্টেম যেখানে বিশাল পরিমাণ ডেটা বা তথ্য কোনো উৎস থেকে নিয়ে সেটা পর্যবেক্ষণ করে সেটার ডেটার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ব্যবসায়িক সাফল্য তৈরি করা। মার্কেটওয়াচ বলে, শুধুমাত্র বিগ ডেটার নিরাপত্তা ইস্যুর বাজার ২০২২ সালে ২৬.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে এবং ‘এক্সপার্ট মার্কেট সার্চ’র তথ্য বিগ ডেটার বাজার ২০২৬ সালে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। 


ডেটা ফেব্রিক আরও সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ, বিভিন্ন ধরনের ডেটা বা তথ্যের শ্রেণীবদ্ধকরণ স্তর ডেটা ফেব্রিক বা বিন্যস্ত আকারে ডেটা ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যার মূল লক্ষ্য একসাথে বিভিন্ন ধরনের ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ, পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা টুলগুলোর মাধ্যমে সামগ্রিক পর্যায়ে ডেটা ম্যানেজমেন্টকে সাপোর্ট প্রদান করা। ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটির মাধ্যমে কখন ডেটা নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য দরকার সেটা নিশ্চিতকরণ করে। ডেটা ফেব্রিক একই সাথে বৃহৎ পরিসরে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দ্রæত ডেটা নিয়ন্ত্রণ ও পুনরুদ্ধারে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি এবং সহজে ডেটা ব্যবহার করা যায়। বিগ ডেটার সঠিক প্রয়োগ ও দরকারি ডেটা শনাক্তকরণে ক্লাউড সিস্টেম এবং কনফিগারেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে ডেটা ফেব্রিক গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে। ডেটা ফেব্রিক রিয়েলটাইমে পর্যবেক্ষণ ও অ্যাপ্লিকেশনে পুরো ডেটা কাঠামো অপটিমাইজ করে সরবরাহ করে মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রযুক্তিকে দক্ষতার সাথে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। ‘ফরেস্টার’র নতুন প্রযুক্তির ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব ২০২০’র রিপোর্ট অনুযায়ী, ডেটা ফেব্রিক কাঠামো ৪৫৯ ভাগ ইনভেস্ট রিটার্ন বৃদ্ধি করে, গড়ে ৫.৮ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় লাভ হয় এবং ৬০ গুণ বেশি ডেটা প্রেরণের সময় ত্বরান্বিত করে। 


আইবিএম ক্লাউড প্যাক, ওরাকল, নেটঅ্যাপ, ইনফোরম্যাটিকা’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ডেটা ফেব্রিক সফটওয়্যার সলিউশনে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে আছে। এলিয়েড মার্কেট রিসার্চের রিপোর্ট বলে, ২০২৬ সালে ডেটা ফেব্রিক মার্কেট ৪,৫৪৬.৯ মিলিয়ন ডলারে উত্তীর্ণ হবে।  


ব্লকচেইন 


ডিজিটাল অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ভিসা’ ২০১৬ সালে তাদের কোম্পানিতে বøকচেইন প্রযুক্তি ‘বিজনেস টু বিজনেস’ পরিষেবাতে নিয়ে আসে। ‘ডেলওয়েট’র ২০২১ সালের ‘গেøাবাল বøকচেইন ডেভেলপমেন্ট’ সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৭৬ ভাগ এক্সিকিউটিভ তাদের মতামতে বলেন, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে ডিজিটাল অ্যাসেট বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী মুদ্রায় পরিণত হবে। অতএব, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে লেনদেন, ডেটা নিয়ন্ত্রণ ও পরিষেবা বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালে উত্তর আমেরিকার স্বাস্থ্যখাতে ব্লকচেইন প্রযুক্তির মার্কেট ধরন ২৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে এবং ২০২৮ সাল নাগাদ এটি ৬৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে। ফরচুন বিজনেস ইনসাইটস’র তথ্য হিসেবে, ২০২৮ সালে বিশ্বে ১০৪.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্লকচেইনের মার্কেট হবে।    


ব্লকচেইন আসলে কী? ব্লকচেইন হলো রেকর্ডসমূহের লিস্ট যা সময়নাক্রমিক ও পাবলিকলি ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ করে। ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে ডেটাকে এনক্রিপ্ট বা কোডে পরিণত করা, যাতে সকলে চাইলেই ডেটাতে প্রবেশ করতে না পারে এবং ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এতে ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত ও পরিবর্তিত হবে না। কেন্দ্রীয় অথরিটি দ্বারা বøকচেইন নেটওয়ার্কের তথ্য নিয়ন্ত্রণ হবে না, বিস্তৃত পরিসরে নিয়ন্ত্রিত হবে অর্থাৎ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, এবং ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রণকারী লেনদেন অনুমোদন করবে যা ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। বøকচেইন তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়, যেমনÑ ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী, পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক এবং ডিজিটাল লিডজার। আর ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী দুই ধরনের, একটি প্রাইভেট কী এবং অপরটি পাবলিক কী। প্রত্যেকটি পৃথকভাবে ডিজিটাল সিগনেচার তৈরিতে ব্যবহার হয়। ‘পিয়ার টু পিয়ার’ নেটওয়ার্কতে ম্যাথম্যাটিকাল ভেরিফিকেশন লেনদেনে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এসব প্রকার লেনদেন একটি কাঠামোতে সংরক্ষিত হয়, যেটা ডিজিটাল লিডজার নামে পরিচিত। মোটকথা, বøকচেইন প্রযুক্তি সমগ্র নেটওয়ার্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ভালোর পাশাপাশি কাজ দ্রæত করে। ডিজিটাল ক্যাশের জনক ডেভিড চম ১৯৮২ সালে প্রথম বøকচেইন প্রটোকলের কথা উল্লেখ করেন এবং ২০০৮ সালে সাতশি নাকামোটো’র মাধ্যমে বøকচেইন জনপ্রিয়তা পায়। ক্রিপটোকারেন্সি ম‚লত বøকচেইনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যেমন বিটকয়েন। জার্মান রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ‘স্ট্যাটিস্টা’র হিসেবে ২০২১ সাল নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব মার্কেটে ৬ হাজারের ওপর ক্রিপটোকারেন্সি বিদ্যমান।  


২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের এইচএসবিসি ব্যাংক প্রথম ‘ক্রস বর্ডার বøকচেইন লেটার অব ক্রেডিট’ লেনদেন কার্যক্রম শুরু করে। এতে এলসি প্রক্রিয়ার সময় ৫-১০ দিন থেকে নেমে এসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। ‘ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড’ এইচএসবিসির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে ২০ হাজার টন জ্বালানি তাদের পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য আনে। আর এই লেনদেন ‘আরথ্রি কর্ডা বøকচেইন’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘কনট্যুর প্ল্যাটফর্ম’র অধীনে সম্পন্ন হয়। আর ২০২১ সালের আলোচিত বøকচেইন প্রোজেক্ট হচ্ছে, বোয়িং কোম্পানির ‘স্কাইগ্রিড’, যেটা বøকচেইন নির্ভর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম যা ড্রোনের মাধ্যমে ট্র্যাকিং ও যোগাযোগে ব্যবহার হয়। আর ‘আইবিএম কর্পোরেশন’ ২০২১ সালে নিয়ে এসেছে ডিজিটাল হেলথ পাস অ্যাপ্লিকেশন’ যেটা হাইপার লেডজার ফেব্রিক ও বøকচেইন নির্ভর, যার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান কভিড-১৯ টেস্ট ভেরিফাই এবং তাপমাত্রা রেজাল্ট নির্ধারণ করতে পারে। 


মেশিন লার্নিং 


২০১৭ সালে সাবস্ক্রিপশন স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান ‘নেটফ্লিক্স’ মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় করে। মেশিন লার্নিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের একটি সাব-সেট যেখানে কমপিউটার অ্যালগরিদম স্বয়ংক্রিয় উপায়ে গুণগত মানসম্পন্ন তথ্য বা ডেটা গ্রহণ করে প্রক্রিয়া দ্রæত এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে খরচ স্বল্প করে। রেফিনিটিভের মতে, ৬৫ ভাগ কোম্পানি যারা মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাচ্ছে তারা মনে করে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে এবং ৭৪ ভাগ মনে করেন মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স জব এবং ইন্ডাস্ট্রি খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। মেশিন লার্নিং একটি কমপিউটার প্রোগ্রামিং, যা মানুষের স্পর্শ ব্যতীত ডেটা বা তথ্য বুঝতে ও কাজে লাগাতে পারে। এটি ডেটা পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাব্য ধারণা প্রদান করে। আইওটি, ক্লাউড সেবা, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, সাইবার সিকিউরিটি, ই-কমার্স এবং শিক্ষা ও গবেষণা খাতে মেশিন লার্নিং ব্যবহারের ভালো সুযোগ আছে। 


ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘অ্যামাজন’ স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ওয়্যারহাউজে প্রোডাক্ট পিক এবং প্যাকেজিং লজিস্টিক সেটিংসে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করাতে গড়ে ২২৫ ভাগ ‘ক্লিক টু শিপিং’র সময় সাশ্রয় হয়ে ৬০-৭৫ মিনিটের কাজ ১৫ মিনিটে করা সম্ভব হচ্ছে। ২০১৬ সালে সার্চইঞ্জিন ‘গুগল’ মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মন্ট্রিল ইনস্টিটিউট ফর লার্নিং অ্যালগরিদম’ রিসার্চ ল্যাবে ৪.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে। আর্থার স্যামুয়েল ১৯৫২ সালে প্রথম কমপিউটার লার্নিং প্রোগ্রাম লেখেন আইবিএমের প্রথম বাণিজ্যিক কমপিউটারে চেকার প্রোগ্রাম তৈরি করে। ১৯৫৯ সালে মেশিন লার্নিংয়ের সাথে সকলকে পরিচিত করান। মেশিন লার্নিংয়ের ৭টি ধাপ রয়েছে, যেমনÑ তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ করা, সেটা প্রস্তুত করা, মডেল নির্ধারণ, প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন, ভালো ফলাফল আনা এবং সম্ভাব্য পূর্বাভাস দেয়া। অর্থাৎ, ডেটা গ্রহণের সব স্তর সম্পন্ন করে ব্যবসায়িকরা কিংবা প্রতিষ্ঠান কী হতে পারে ডেটা রেজাল্টে সেটা জানতে পারে। মেশিন লার্নিংয়ে সুপারভাইসড, আনসুপারভাইসড এবং রিইনফোর্সমেন্ট নামে ৩টি সাব-ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রথমটি ডেটা লেবেল সেট করে যা মডেলটিকে জানতে ও সুনির্দিষ্ট সময় ধরে প্রক্রিয়া চালু রাখে। দ্বিতীয়টি, প্রোগ্রাম আনলেভেল ডেটার ধরন খেয়াল করে এবং তৃতীয়টি ট্রায়াল ও এরর উপায়ে সবচেয়ে ভালো কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং কোন সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার সেটা নির্ধারণ করে।   


৫জি 


এশিয়ার ৬৪১টি শহরসহ বিশ্বের ৬৫টির বেশি দেশের ১৬৬২টি শহরে বাণিজ্যিকভাবে ৫জি প্রযুক্তি বর্তমানে চালু আছে। ১২ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘টেলিটক’ দেশের ৬টি জায়গায় পরীক্ষামূলক ৫জি পরিষেবা চালু করে। ২০ গুণ দ্রæত ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে আইওটিভিত্তিক কৃষি, চিকিৎসাসহ অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং স্মার্ট সিটির মতো বিভিন্ন সুবিধা বাস্তবায়নে আরও একধাপ বাংলাদেশ ৫জি প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে গেল। ১ মিলিয়ন ডিভাইসকে সহজে ১ বর্গকিলোমিটার জায়গাতে ৫জি প্রযুক্তির নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যায়। ৫০ এমবিপিএস ডেটা আপলোড এবং ১০০ জিবিপিএস ডাউনলোড স্পিডে স্বাভাবিক সময়ে দ্রæত ডেটা শেয়ার করা সম্ভব। চীন মোবাইলের মাধ্যমে হাইড্রোইলেকট্রিসিটি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক বন্যার পর্যবেক্ষণে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সনির্ভর ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট মনিটর’ প্ল্যাটফর্মের সেন্সর ও বিগ ডেটা ব্যবহার করে কাজ করে। ২০২০ সালে শুধু উত্তর আমেরিকাতে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ জিডিপিতে অবদান রাখে ৫জি প্রযুক্তি। গেøাবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) হিসেবে, ২০৩৪ সালে ৫জি প্রযুক্তিভিত্তিক সেবাগুলোর মধ্যে উৎপাদন ব্যবস্থাতে ৩৪ ভাগ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ২৮ ভাগ, পাবলিক সার্ভিসে ১৬ ভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় ১৫ ভাগ এবং কৃষি ও খনি খাতে ৭ ভাগ অবদান থাকবে।        


২০১৯ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিকভাবে ৫জি পরিষেবা চালু হয়। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ২০২১ ইভেন্টে গেøাবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) তাদের ‘জিএসএমএ মোবাইল ইকোনমি ২০২১’ রিপোর্টে প্রকাশ করে, বিশ্বে ‘৫জি’ প্রযুক্তির মোবাইল কানেকশন ২০২৫ সালের মধ্যে ১.৮ বিলিয়ন হবে, ২০২১ সালের শেষে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ নিজেদের ৫জি প্রযুক্তির সাথে যুক্ত করবে এবং এশিয়া-প্যাসিফিক ও উত্তর আমেরিকাতে যথাক্রমে ৫৩ শতাংশ ও ৫১ শতাংশ করে ২০২৫ সালের মধ্যে ‘৫জি’ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। লো-ব্যান্ড, মিড-ব্যান্ড এবং হাই-ব্যান্ড মাইক্রোওয়েভ এই তিন ধরনের ৫জি প্রযুক্তি কাঠামোর মাধ্যমে আল্ট্রা লো লেটেন্সি, নিরাপদ উচ্চ ব্যান্ডউইথ ধারণক্ষমতার ও সহজলভ্যের মাধ্যমে ৫জি নেটওয়ার্ক গতি নিশ্চিত করা হয়। রেডিও তরঙ্গ ব্যবহারে ৫জি ২০ জিবিপিএস পর্যন্ত গতিতে কাজ করে। অপরদিকে, ৪জি প্রযুক্তি ১ জিবিপিএস পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। ৫জি ক্লাউডের ব্যবহার আরও সহজ করছে এবং ডেটা সরবরাহ দ্রæত করছে বিশেষ করে আইওটি, স্মার্ট সিটি বাস্তবায়নে ৫জি অত্যাবশ্যকীয়। কারণ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, স্বয়ংক্রিয় যান চলাচল দ্রæত সহজ হবে। প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ১০০ এমবিপিএস ডেটা বা তথ্য প্রেরণ করতে পারে ৫জি। দুটি তরঙ্গ বা স্পেকট্রাম অর্থাৎ, এমএমওয়েভ এবং সাব-৬-এর মাধ্যমে স্বল্প, মধ্য এবং বৃহৎ দূরত্বের জন্য গতি নিয়ে ৫জি কাজ করে। 


২০২২ সালে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ‘অপারেটর ক্লাউড’ পদ্ধতির মাধ্যমে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপর আয় করবে; যাতে সাবস্ক্রিপশন, প্ল্যাটফর্ম বিজনেস, প্যাকেজ বান্ডেল এবং পে এস ইউ ইউজ’র মতো ব্যবসায়িক মডেল ৫জি প্রযুক্তি কাঠামোতে আনা শুরু করেছে। ২০২২ সালে একজন স্মার্টফোন গ্রাহক গড়ে ১১ জিবি ডেটা প্রতি মাসে ব্যবহার করবেন। আর কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন), ডেটা স্টোরেজ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ৫জি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল পরিমাণ অর্থ আয় করে। ধারণা করা হচ্ছে, চীন ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৫০ মিলিয়ন ৫জি প্রযুক্তির মোবাইল ব্যবহারকারীর মাধ্যমে একক দেশ হিসেবে সবার উপরে অবস্থান করবে। এদিকে ৫জি প্রযুক্তির সম্ভাবনার কারণে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় গত ১০ আগস্ট ২০২১ তারিখে ৫জি প্রযুক্তি ও গ্রামপর্যায়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘টেলিটক’র মাধ্যমে ২ হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।


প্রযুক্তির এই পরিষেবার অনেকগুলোই আপনি ইতিমধ্যে গ্রহণ করা শুরু করছেন, আবার কিছু প্রযুক্তি এখনো সেভাবে বিশ্বজুড়ে ভালো পরিসরে যাত্রা শুরু করেনি। আপনি সেবা নেন কিংবা প্রযুক্তিতে নিজেকে যদি প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে প্রযুক্তিগুলোতে নিজেকে দক্ষ করতে এখনই কাজ করতে হবে কিংবা তার সাথে নিজেকে একজন ব্যবহারকারী হিসেবে পরিচিতি ঘটাতে হবে। এখন আপনি কোন দলে? প্রযুক্তি ব্যবহারকারী, নাকি প্রযুক্তিতে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জগতে।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।