ইন্টারনেট অব বডিজ যেভাবে পাল্টে দিচ্ছে দুনিয়া
ইন্টারনেট অব বডিজ কী?
- মানবদেহ ও ডাটার নেটওয়ার্কই ইন্টারনেট অব বডিজ
- আইওবি ডিভাইসের জন্য চাই প্রশাসনিক কর্মকৌশল
- আইওবি প্রযুক্তি যেমনি উপকারী তেমনি অপকারী
- মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল ডিভাইসের মধ্যে আছে পার্থক্য
- আইওবি ডিভাইস শারীরিক ঝুঁকি সৃষ্টি করে
- সার্ভিল্যান্সে আজকাল ব্যবহার হচ্ছে আইওবি প্রযুক্তি
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে ইন্টারনেট অব বডিজ আসলে কী? আর কীভাবেই এটি পাল্টে দিচ্ছে আমাদের চারপাশের জগৎটাকে? কীভাবে এটি আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছে, আর কীভাবে মানবদেহ হয়ে উঠছে এর গুরুত্বপূর্ণ এক প্ল্যাটফরম? কি ‘ইন্টারনেট অব বডিজ’ কথাটি এর আগে কখনো শুনেছেন? সংক্ষেপে একে বলা হচ্ছে আইওবি। হয়তো এ কথাটি শুনে মাথায় ভাবনা আসতে পারে এ নিয়ে আর ভাববার কী আছে? এর উত্তরে বলব হ্যাঁ, ভাববার আছে। কারণ, আইওবি আপনার প্রায় পুরো দেহটিকে আজকের দিনে ডাটা প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। এর এই ব্যবহার সময়ের সাথে বাড়ছে। প্রথমত, মনে হবে ধারণাটি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে আমাদের অনুগ্রহ পাওয়ার আশায়। কিন্তু এরপর যখন জানবেন এটি অসীম এক সম্ভাবনার জগৎ সৃষ্টি করছে, তখন এটি আপনার কাছে অবাক ঠেকবে। এ লেখায় আমরা জানব আইওবির পরিচয়, আইওবি ব্যবহারের কিছু উদাহরণ, আইওবির চ্যালেঞ্জ, এর উপকার ও অপকারসহ আরো কিছু বিষয়। তবে, আসুন সবার আগে জেনে নিই ‘ইন্টারনেট অব বডিজ’ আসলে কী?
ইন্টারনেট অব বডিজের পরিচয়
যখন ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) মানবদেহের সাথে সংযুক্ত করা হয়, তখন এর ফলে আমরা যা পাই তাই হচ্ছে ইন্টারনেট অব বডিজ। ইন্টারনেট অব বডিজ আসলে ইন্টারনেট অব থিংসের একটি সম্প্রসারণ। মূলত এটি মানবদেহকে ডিভাইসের মাধ্যমে একটি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে। আর এই ডিভাইস গিলে খাওয়ানো (ইনজেস্ট) হয়, প্রোথিত (ইমপ্ল্যান্ট) করা হয়, অথবা দেহের সাথে সংযুক্ত (কানেক্ট) করা হয় কোনো না কোনো উপায়ে। একবার সংযুক্ত হয়ে গেলে এই ডিভাইস থেকে ডাটা বিনিময় চলতে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট মানবদেহ ও আইওবি ডিভাইস দূর থেকে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আইওবির রয়েছে তিনটি জেনারেশন। এগুলো হচ্ছে : বডি এক্সটার্নাল, বডি ইন্টার্নাল ও বডি এমবেডেড। বডি এক্সটার্নালগুলো হচ্ছে ওয়্যারেবল ডিভাইস। যেমন : অ্যাপল ওয়াচ অথবা ফিটবিট এগুলো আমাদের হেলথ মনিটর করে, অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখে। বডি ইন্টার্নাল প্রজন্মের আইওবির মধ্যে আছে : পেসমেকার, কোচলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ও ডিজিটাল ইমপ্ল্যান্ট এগুলো আমাদের দেহের ভেতরে ঢুকে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত নানা বিষয়ের ওপর নজর রাখে ও নিয়ন্ত্রণ করে। অপরদিকে, বডি এমবেডেড নামের তৃতীয় প্রজন্মের আইওবির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও মানবদেহকে একসাথে মিলিয়ে দেয়া হয় এবং এর রিয়েল-টাইম কানেকশন থাকে দূরবর্তী একটি যন্ত্রের সাথে। ওয়্যারলেস কানেকটিভিটি, ম্যাটেরিয়ালস ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সুযোগ সৃষ্টি করছে ইমপ্ল্যান্টেবল মেডিক্যাল ডিভাইসের (আইএমডি) জন্য। এবং এগুলো অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগের উপযোগী।
০১ : আইওবি ডিভাইসের উদাহরণ
ইন্টারনেট অব বডিজের সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত উদাহরণ হচ্ছে ডিফাইব্রিলেটর বা পেসমেকার। এটি ছোট্ট একটি ডিভাইস, যা স্থাপন করা হয় উদরে বা বুকে। এটি ইলেকট্রনিক ইম্পালসের সাহায্যে রোগীর অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি তার ওয়াই-ফাই কানেকটেড ডিফাইব্রিলেটর প্রতিস্থাপন করেন একটি ওয়াই-ফাইবিহীন ডিভাইস দিয়ে। স্মার্ট পিল হচ্ছে আরেকটি আইওবি ডিভাইস। এগুলো গিলে খাওয়ার উপযোগী ইলেকট্রনিক সেন্সর। এগুলোর ভেতরে রয়েছে কমপিউটার চিপ। একবার গিলে খাওয়া হলে এসব ডিজিটাল পিল (বড়ি) আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে ডাটা সংগ্রহ করতে পারে। এরপর সংগৃহীত ডাটা পাঠিয়ে দিতে পারে ইন্টারনেটে সংযুক্ত দূরবর্তী কোনো ডিভাইসে। প্রথম ডিজিটাল কেমোথেরাপি পিল এখন ব্যবহার হচ্ছে। এটি কেমোথেরাপি ড্রাগ ও সেন্সরকে একসাথে করে, যা রোগীর সম্মতিতে তথ্য রেকর্ড ও শেয়ার করে স্বাস্থ্যসেবা জোগানদাতাদের সাথে। এতে তথ্য থাকে ওষুধের মাত্রা ও সেবনের সময় সম্পর্কে। সাথে থাকে বিশ্রাম, চলাফেরা, হৃদস্পন্দন ও আরো অন্যান্য তথ্য। আইওবি ডিভাইস হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে ‘স্মার্ট কন্ট্যাক্ট লেন্স’। এটি সেন্সর ও চিপের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলে। চোখ ও চোখের তরল প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে এটি হেলথ ডায়াগনস্টিকসের ওপর নজর রাখতে পারে। আরেকটি স্মার্ট কন্ট্যাক্ট লেন্স তৈরির পথে আছে। এটি তৈরি করার লক্ষ্য হচ্ছে গøুকোজের মাত্রার ওপর নজর রাখা। আশা করা হচ্ছে এটি ডায়াবেটিক রোগীদের সুযোগ করে দেবে বারবার দেহে সূচের আঘাত না করেই তাদের রক্তে গøুকোজের মাত্রা জেনে নিতে। এ ক্ষেত্রে আরেকটি অগ্রগতি হচ্ছে ‘ব্রেইন কমপিউটার ইন্টারফেস’ (বিসিআই)। এ ক্ষেত্রে একজন মানুষের মস্তিষ্ক কার্যত সংযুক্ত হয়ে পড়ে একটি এক্সটার্নাল ডিভাইসের সাথে, তার ওপর রিয়েল টাইমে নজর রাখা ও তাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনে। চ‚ড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে চলাচলে অক্ষম কোনো ব্যক্তিকে প্রচলিত নিউরোমাসকুলার উপায়ের বদলে ব্রেইন সিগন্যালের মাধ্যমে চলাফেরায় সক্রিয় করে তোলা। কিন্তু সব আইওবি স্বাস্থ্যসেবার কাজে ব্যবহার হয় না। বায়োইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ‘বায়োহ্যাক্স’ চার হাজারেরও বেশি লেকের দেহে চিপ এমবেডেড করেছে; তাদের প্রতিদিনের কাজকে সহজতর করে তোলার জন্য। বহুল প্রচারিত একটি উদাহরণ হচ্ছে, থ্রি স্কয়ার মার্কেটের ৫০ জন চাকরিজীবী সম্মত হয়েছে একটি বড় চালের আকারের আরএফআইডি মাইক্রোচিপ ব্যবহার করতে। এই মাইক্রোচিপের চেয়ে কিছুটা বড় চিপ এমবেডেড করা হয় পোষা প্রাণীর দেহে, যাতে হারিয়ে গেলে এগুলোর অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। এই চিপ উল্লিখিত চাকরিজীবীদের সুযোগ করে দেয় চাবি ছাড়াই তাদের ভবনে প্রবেশের। ভেন্ডিং মেশিনের সামনে হাত নাড়িয়ে কেনা বস্তুর দাম পরিশোধ করা যায়। এই অর্থ সাথে সাথে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে কাটা হয়ে যায়। এজন্য তাদের অর্থ সরাসরি ব্যবহার কিংবা কমপিউটারে লগঅন করতে হয় না।
০২ : আইওবি প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ
নরাপত্তার কারণে ডিক চেনির ডিফাইব্রিলেটরের সাথে ওয়াই-ফাই কানেকশন না দেয়ার ঘটনা থেকে সহজেই অনুমেয় নিরাপত্তার বিষয়টি হচ্ছে আইওবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আইওবি ডিভাইস যেসব তথ্য সংগ্রহ করে ও সঞ্চালন করে, সেগুলো কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়, এবং ডিভাইসটিও কী করে নিরাপদ রাখা যায়, সেটা একটি প্রশ্ন। প্রায় ৫ লাখ পেসমেকার ইউজারকে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য-ওষুধ প্রশাসন ডেকে আনে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কারণে। এদেরকে ফার্মওয়্যার আপডেট করতে হয়েছে। আইওবি প্রযুক্তির সামনে যে নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে ইন্টারনেট অব থিংসের বেলায়ও। কিন্তু আইওবি ডিভাইসের বিষয়টি একটি জীবনমরণ প্রশ্ন। এটি যে সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জ আজ আমাদের সামনে এনে হাজির করেছে এর একটা সুরাহা হওয়া জরুরি। হ্যাকারদেও হামলা থেকে আইওবি ডিভাইসগুলো সুরক্ষা দিতে হবে। প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা দেয়াও এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ডিভাইসের তথ্যে কার প্রবেশ থাকবে আর কার থাকবে না, তা নির্ধারণ করা জরুরি। যেমন : যে ডিভাইসটি দিয়ে হেলথ মনিটর করা হয়, এতে স্বাস্থ্যবহিভর্‚ত তথ্যও থাকতে পারে। যখন গ্রাহকের আচরণ সম্পর্কে ডিভাইস খারাপ রিপোর্ট দেয়, তার ওপর ভিত্তি করে বীমা কোম্পানি কি তার পাওনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না, সে ধরনের প্রশ্নেরও সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।
প্রযুক্তিক প্ল্যাটফরম হিসেবে মানবদেহ
মানবদেহের ভেতরে সংযোজিত মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল ওয়্যারেবল এবং মানবদেহের বাইরে ব্যবহৃত বডিপ্রক্সিমিটি (দেহসান্নিধ্য) টেকনোলজি মানবদেহকে একটি টেকনোলজি প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করে। কানে শোনা কিংবা দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর সহায়ক ডিভাইস, ভাইটাল (যেমন : গøুকোজ) মনিটরিং সিস্টেম, পরিধানযোগ্য পার্টিশনিয়্যাল ডায়ালাইসিস ডিভাইস, ডিজিটাল পিল (বড়ি), কৃত্রিম পাকস্থলী ও অঙ্গ, স্মার্ট প্রসথেসিস, মস্তিষ্কে সংযোজিত প্রোথিত ডিভাইস, বিভিন্ন হোম, অফিস ও অন্যান্য স্থানে দ্রুত যোগাযোগের চিপ, অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার, স্মার্টওয়াচ, স্মার্ট পেশাক, ব্রেনওয়্যার নিউরোটেকনোলজি অগমেন্টেড রিয়েলিটি ওয়্যারেবল ও অন্যান্য বডিপ্রক্সিমিটি পণ্য হচ্ছে ইন্টারনেট অব বডিজের কিছু উদাহরণ, যেগুলো মানবদেহকে ব্যবহার করছে একটি টেকনোলজি প্ল্্যাটফরম হিসেবে। ইনভেসিভ টেকনোলজির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ডিজিটাল পিল। এটি সাম্প্রতিক এক ড্রাগ-ডিভাইস কম্বিনেশন। এটি তৈরি করা হয়েছে ্এনক্যাপসুলেটেড মেডিসিন সরবরাহের জন্য এবং মেডিসিনের প্রাসঙ্গিকতা মনিটর করার জন্য। এটি নির্ভরশীল গিলে ফেলার উপযোগী মিনি-সেন্সরের ওপর কাজ করে, যা সক্রিয় করে তোলা যায় রোগীর পাকস্থলীতে। এরপর এটি ডাটা সঞ্চালন করে রোগীর স্মার্টফোনে বা অন্যান্য ডাটা পোর্টালে। মানবদেহে সংযোজনযোগ্য অন্যান্য স্মার্ট মেডিক্যাল ডিভাইসের মধ্যে রয়েছে : ইন্টারনেট-কানেকটেড কৃত্রিম পাকস্থলী ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন ডেলিভারি সিস্টেম; রোবটিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দৈহিকভাবে চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিদের চলাচলে সক্ষম করে তোলায় এটি ব্যবহার হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশি থেকে বেশিসংখ্যক লোক দেহের চামড়ার নিচে চিপ সংযোজন করছে শুধু চিকিৎসার প্রয়োজনে নয়, বরং তাদের প্রতিদিনের নিয়মিত কাজে গতি আনার জন্য এবং সহজে বাড়ির সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজনে। বায়োহেকিং চর্চার অংশ হিসেবে অনেকে তাদের দেহকে জোরালো করে তুলছে ইমপ্লেন্টেড টেকনোলজির সাহায্যে। এরা দেহে প্রোথিত বা ইমপ্ল্যান্ট করছে চুম্বক থেকে শুরু করে আরএফআইডি চিপ অতি ক্ষুদ্র হার্ডড্রাইভ ও ওয়্যারলেস রাউটার পর্যন্ত। লেস ইনভেসিভ টেকনোলজিগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ডিভাইস এখনো মানবদেহের বাইরেই রয়ে গেছে এগুলোকেই বলা হয় ওয়্যারেবল। ওয়্যারেবল টেকনোলজি দ্রুত প্রসারমান একটি ক্ষেত্র। ২০১৫ সালে এর বাজারের আয়তন ছিল ১৫.৭৪ বিলিয়ন ডলারের। অনুমিত হিসেবে এর আয়তন ২০২২ সালে পৌঁছুবে ৫১.৬০ বিলিয়ন ডলারে। শ্বাসকষ্টের রোগীদের ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা, তাপমাত্রা, ঘাম ও চলাচলের ওপর নজর রাখার জন্য মেডিক্যাল ওয়্যারেবল হিসেবে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ইলেকট্রনিক স্কিন প্যাচ। শুধু এর বাজারের পরিমাণ ২০১৮ সালে পৌঁছে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারে। নন-ইনভেসিভ ওয়্যারেবলও একটি গতিশীল ক্ষেত্র। ব্যক্তিগত ফিটনেস ট্র্যাকার ও স্মার্টওয়াচ থেকে শুরু করে এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। এগুলোর মধ্যে আছে : স্মার্টগ্লাস ও লোকেশন ট্র্যাকিং, সেফটি মনিটরিং ও কর্মসফলতা বাড়ানোর জন্য এমপ্লয়মেন্ট সেটিংয়ে হেলমেট, অগমেন্টেড ও বিনোদনের ভিআর ডিভাইস। ইমপ্ল্যান্টেবল ও ওয়্যারেবল টেকনোলজির বাইরে ক্রমবর্ধমান হারে স্মার্ট সেন্সর আবিভর্‚ত হচ্ছে সাধারণ কনজ্যুমার প্রোডাক্ট হিসেবে। যেমন : চিরুনি, র্যাজার, টুথব্রাশ, চামড়াসংশ্লিষ্ট পণ্য, জাজিম, তোষক ও এ ধরনের নানা পণ্য। যদিও এগুলো মানবদেহের সাথে সবসময় জুড়ে থাকে না, তবুও এসব পণ্য মানবদেহের সান্নিধ্যে থেকে নিয়মিত সংগ্রহ করে ব্যবহারকারীর জৈবিক ও আচরণগত ডাটা। বর্তমানে মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল আইওবি ডিভাইসের ওপর সরকারের নজর রয়েছে। এগুলোর জন্য আছে আলাদা বিধিবিধান। যেমন : যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দেখাশোনা করে মেডিক্যাল ডিভাইসগুলো বাজার-পূর্ব অনুমোদন ও বাজার-উত্তর দেখাশোনার ব্যাপারটি। নন- মেডিক্যাল ডিভাইসের বিষয়টি দেখাশোনা করে ফেডারেল ট্রেড কমিশন। এরপরও এগুলোর ব্যবহারচিত্র সাপেক্ষে মেডিক্যাল, নন-মেডিক্যাল ও কনজ্যুমার শ্রেণীতে ডিভাইস বিভাজনের বিষয়টি রয়ে গেছে দুর্বোধ্য। অ্যাপল ও ফিটবিটের মতো কনজ্যুমার ওয়্যারেবল প্রস্তুতকারক চায় তাদের পণ্য সার্টিফাইড হেলথ-মনিটরিং ডিভাইস হিসাবে সম্প্রসারণ ঘটাতে। এবং এরা চায় স্বাস্থ্য বীমাকারী ও এন্টারপ্রাইজগুলো হোক তাদের গ্রাহক। অপরদিকে প্রচলিত মেডিক্যাল ডিভাইস প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তৈরি করছে এর বাইরের ডিভাইসও। আইওবি ডিভাইসগুলো ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহার হচ্ছে মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল ক্ষেত্রে। যেমন : স্মার্ট এক্সোস্কেলেটন ব্যবহার হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেটিংয়ে মানুষের কর্মসাফল্য বাড়ানোর জন্য। সেই সাথে তা ব্যবহার হচ্ছে মানুষের চলাচলে ও পুনর্বাসনের সহায়তায়ও। যুক্তরাষ্ট্রে ভেলেনসেল নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে একটি সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, কনজ্যুমার ওয়্যারেবল ও পার্সোনাল হেলথ/মেডিক্যাল ডিভাইসের মধ্যে একীভূত হয়ে যাওয়ার কাজটি ত্বরান্বিত হচ্ছে। এর ফলে আইওবি গভর্ন্যান্সে মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল ডিভাইস নিয়ে পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
উপকারের পাশাপশি আছে নানা ঝুঁকি
ইন্টারনেট অব বডিজ এভাবে ক্রমবর্ধমান হারে জড়িয়ে পড়ছে মানবদেহের সাথে। এই আইওবি হচ্ছে সংযুক্ত সেন্সরের মাধ্যমে মানবদেহ ও ডাটার নেটওয়ার্ক। আইওবির এই আবির্ভাব ও দ্রুত সম্প্রসারণ আমাদের জন্য বয়ে আনছে সামাজিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অপরিমেয় উপকার। সেই সাথে সৃষ্টি করেছে টেকনোলজি গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। মানবদেহের ভেতরে ও বাইরে অভূতপূর্বসংখ্যক সেন্সর সংযুক্ত করা হচ্ছে এই দেহঘড়ির ওপর নজর রাখা ও বিশ্লেষণ করার জন্য; এমনকি মানবদেহের আচরণে পরিবর্তন আনার জন্যও। কিন্তু এর নৈতিক ও আইনি দিকটি বিবেচনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের জরুরি পদক্ষেপের গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে করোনা মহামারীর আবির্ভাবের কারণে। কারণ, করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করা এবং এ ব্যাপারে নজরদারি লক্ষ্যে ব্যাপকহারে আইওবি টেকনোলজি ব্যবহার হচ্ছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আইওবির ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। দুটি অংশে বিভক্ত এই শ্বেতপত্রের প্রথম অংশে আইওবি টেকনোলজির পর্যালোচনার পাশাপাশি এর উপকার ও ঝুঁকির বিষয়টির ওপর আলোকপাত রয়েছে। এই ইকোসিস্টেমের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে এই প্রযুক্তি শুধু চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হচ্ছে না, বরং ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন খাতে। ফিটনেস ও হেলথ ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে এমপ্লয়মেন্ট সেটিং ও এন্টারটেইনমেন্টেও। ক্রমবর্ধমান কনজ্যুমার ডিভাইস ও হেলথ/মেডিক্যাল ডিভাইসের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল ডিভাইসের মধ্যে একটি বিভেদরেখা গড়ে উঠছে। এর ফলে প্রয়োজন দেখা দিয়েছে আইওবি ডিভাইসের জন্য নতুন গভর্ন্যান্স স্ট্র্যাটেজি বা প্রশাসনিক কর্মকৌশল অবলম্বনের। ঐতিহ্যগতভাবে এই দায়িত্বটি পড়ে শাসকশ্রেণী ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ওপর। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই শ্বেতপত্রে গেমিং ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিভাইস সম্পর্কে কোনো পর্যালোচনা করা হয়নি। কারণ, ধরে নেয়া হয়েছে এসব ডিভাইস প্রচলিত ফিটনেস ও হেলথ ডিভাইস থেকে আলাদা বিষয়। শ্বেতপত্রটির দ্বিতীয় অংশে পর্যালেচনা করা হয়েছে আইওবি ডাটা গভর্ন্যান্সের বিষয়টি। সেখানে বিশেষত আলোকপাত রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রেগুলেশন প্রেক্ষাপটের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের রেগুলেটরি চিত্রটির তুলনা। এ অংশে পর্যালোচনা রয়েছে আইওবি ডাটাসম্পর্কিত রেগুলেটরি পদক্ষেপ এবং সেই সাথে এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ইকোসিস্টেম সূত্রে আবিভর্‚ত চ্যালেঞ্জের বিষয়টি বিশেষ করে বিগডাটা অ্যালগরিদমের ব্যাপক অ্যাডপশন নিয়ে। আইওবি টেকনোলজির অন্যান্য সমস্যাও আছে : ব্যবহারকারীর ওপর আইওবি ডিভাইসের প্রভাব ও শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি। তবে এই শ্বেতপত্রে আলোকপাত করা হয়েছে আইওবি-সৃষ্ট ডাটা গভর্ন্যান্স বিষয়ে, বিশেষত হেলথ ও ওয়েলনেস ডিভাইসের ক্ষেত্রে। এ লেখায় আলোকপাত সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে শ্বেতপত্রটির প্রথম অংশের ওপর, অর্থাৎ আইওবির উপকার ও এর সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি বিষয়টি নিয়ে।
আইওবির সামাজিক উপকার
আইওবির মাধ্যমে সংগৃহীত বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ ডাটা পরিবর্তন আনছে স্বাস্থ্য-গবেষণা ও স্বাস্থ্য শিল্পখাতে। বিশেষ করে পরিবর্তন আসছে ‘ডাইরেক্ট-টু-কনজ্যুমার’ ডিজিটাল হেলথ মার্কেটে। আইওবি উচ্চ-ঝুঁকি পরিস্থিতিতেও অ্যাডপ্ট বা গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে নিরাপদ কাজকে জোরালো করে তোলার জন্য। এর চারটি উল্লেখযোগ্য উপকারের কথা নিচে উপস্থাপিত হলো।
এক.
রিমোট পেশেন্ট ট্র্যাকিং ও ক্রস ইনফেকশন কমানো : আইওবি টেকনোলজি সেন্সরের মাধ্যমে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো অব্যাহতভাবে মনিটর করা আরো সহজতর হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাদাতারা রোগীর পরিস্থিতির ওপর উন্নততর উপায়ে নজর রাখতে পারছেন। রক্তচাপ, অক্সিজেনের মাত্রা, গøুকোজের মাত্রা ও হৃদস্পন্দনের হার থেকে শুরু করে রোগীর ঘুম, হাঁটাচলা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখা যাচ্ছে; সহজে ও সার্বক্ষণিকভাবে। স্বাস্থ্য বিষয়ে অব্যাহত মনিটরিং ইতিবাচক হিসেবে সব মহলে স্বীকৃত। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য বয়স্ক লোক ও রোগীর কাছে এর চাহিদা প্রবল। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে যারা নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতে ভুগছেন, তাদের জন্য আইওবি টেকনোলজি এক অনন্য আশীর্বাদ। সম্প্রতি রিমোট মনিটরিং ডিভাইসের ব্যবহার বেড়ে গেছে করোনা ভাইরাসবিরোধী নানা পদক্ষেপে। যেমন ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কানেকটেড হেলথ স্টার্টআপ ঠরাধখঘক আলিবাবার সাথে মিলে ডিজাইন করেছে একটি মাল্টিপেশেন্ট রিমোট মনিটরিং সল্যুশন। এটি নিরাপদে রোগীর তাপমাত্রা, ইসিজি (ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম), হৃদস্পন্দনের হার, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ও রোগীর গতিবিধি জানিয়ে দেয়। এর ফলে এটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সুযোগ করে দেয় ক্রসইনফেকশনের সম্ভাবনা কমিয়ে আনায়।
দুই.
ইরোগীর সংশ্লিষ্টতা ও হেলথ লাইফস্টাইলের উন্নয়ন : আইওবি টেকনোলজি সুযোগ করে দেয় স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের। তা ছাড়া প্রচলিত মেডিক্যাল আর্কিটেকচারের বাইরে গিয়ে রোগীর সংশ্লিষ্টতার উন্নয়নেও এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর একটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে একটি ভার্চ্যুয়াল রিহেব প্রোগ্রাম। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ২০১৯ সালে ‘কায়সার পারমামেন্টি’ এই প্রোগ্রাম চালু করে। এই প্রোগ্রামের আওতায় চিকিৎসা-পেশাজীবীরা দূরবর্তী স্থান থেকে নিবন্ধিত এমন সব রোগীদের ব্যায়াম ও ওষুধ সেবনের ব্যাপারে খেয়াল রাখে, যারা নানা ধরনের হৃদরোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পথে। এ ক্ষেত্রে রোগীদের পরতে হয় একটি স্মার্ট ওয়াচ। এর মাধ্যমে রোগীরা নিজে নিজেই তাদের সেবাদাতাদের সাথে শেয়ার করতে পারে তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিষয়ক ডাটাসহ কর্মকান্ড বা আচরণগত ডাটা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাদাতাদের সাথে রোগীদের নিয়মিত ইন্টারেকশন বা মিথষ্ক্রিয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবাদাতা ও রোগীদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে রোগীদের পুনর্বাসন কর্মসূচি ৫০ শতাংশ থেকে ৮৭ শতাংশ বেশি গতিশীল করে তোলা যায়। এর ফলে কার্যকরভাবে কমে আসে রোগীদের রিঅ্যাডমিশন রেট এবং সেই সাথে কমে চিকিৎসা-খরচ।
তিন.
প্রতিষেধক ব্যবস্থা ও যথাযথ ওষুধ সেবনের উন্নীতকরণ : আইওবি টেকনোলজি ব্যবহার করে পাওয়া ডাটাসূত্রে চিকিৎসকেরা আগেভাগে রোগ চিহ্নিত করার সুযোগ পান। এর ফলে তারা প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিতে পারেন। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিপুল ডাটা যথাযথ ওষুধ উদ্ভাবনের গবেষণায় সহায়ক হতে পারে। এসব গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ব্যক্তিবিশেষের জীবনাচরণ বা লাইফস্টাইলের এবং পরিবেশগত ডাটার সাথে জিন ও জৈবিক ডাটার। কনজ্যুমারদের পরিধানযোগ্য ডিভাইসগুলো থেকে পাওয়া যায় নতুন ধরনের ডাটা। এসব ডাটা বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসাবিষয়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কাজে লাগানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকাশিত ৫ শতাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে ফিটবিট ডিভাইসের ব্যবহার বিভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় ডাটা ব্যবহার আরো সহজতর হয়েছে। প্রচলিত ক্লিনিক্যাল ডাটার চেয়ে আইওবি সূত্রের ডাটা জটিলতর গবেষণার কাজকে আরো সম্প্রসারিত করেছে। এর ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অধিক হারে চিকিৎসা পাওয়া ও সমতা সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
চার.
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার হওয়া : স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রয়োগের বাইরে আইওবি টেকনোলজি প্রয়োগ করা হচ্ছে বিপজ্জনক কর্মক্ষেত্রে যেমন : নির্মাণ এলাকা, খনি ও কারখানায় শ্রমিকদের অবস্থান চিহ্নিত করার কাজে, পরিবেশগত ঝুঁকির ওপর নজর রাখা, দূর থেকে তথ্য দিয়ে বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলা ইত্যাদি। উঁচুমানের রিয়েল-টাইম সেন্সর ডাটা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয় জটিল দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থায়। সেই সাথে উন্নতি ঘটায় নিরাপত্তাসংক্রান্ত নজরদারিতে। নিউরোটেকনোলজির অগ্রগতির ফলে আমরা পেয়েছি ব্রেনওয়্যার ডিভাইস, যেগুলো পরিমাপ করে বিমানের পাইলটদের ও গাড়িচালকদের সতর্কাবস্থা, যাতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটে। টুপি ও অন্তর্বাস থেকে শুরু করে হাতের ব্যান্ড ও চশমায় পর্যন্ত ব্যবহৃত বায়োমেট্রিক সেন্সর ক্রমেই আরো হালকা ও সস্তা হয়ে উঠছে। এগুলো পরিমাপ করতে পারে ড্রাইভারের অবসাদের মাত্রা এবং তাদের ঘুমঘুম অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করে দিতে পারে এবং পরামর্শ দিতে পারে গাড়ি চালানো বন্ধ রাখার জন্য।
আইওবি-সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি
সামাজিক উপকারের পাশাপাশি আইওবি থেকে পাওয়া ডাটাসংশ্লিষ্ট উদ্ভাবনা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও আচরণগত ডাটার অপব্যবহারসূত্রে সৃষ্টি করছে নতুন নতুন ঝুঁকি। স্বীকার করতেই হবে, আইওবি প্রযুক্তির সাথে জড়িয়ে আছে ইন্টারনেট অব থিংসের মতো নানা উদ্বেগ। যেমন : কনজ্যুমার ট্রাস্ট, সেফটি, সিকিউরিটি ও ইন্টারঅপারেবিলিটি। এসব উদ্বেগের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি নিচে আলোচিত হলো।
এক : ইন্টারঅপারেবিলিটি ও ডাটা অ্যাকুরেসি
ডাটা স্ট্যান্ডারডাইজেশন ও প্রযুক্তিসমূহের ইন্টারঅপারেবিলিটি সামনে নিয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাধা। এ বাধাগুলো আসে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের ডাটা সন্নিবেশিত করে চিকিৎসাসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে রোগীদের উপকার সাধন ও গবেষণাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। মানবদেহ মনিটর করার জন্য লাখ লাখ ডিভাইস স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে এসব আইওবি ডিভাইস। এগুলো অনেকের দেহের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এগুলোতে রয়েছে মালিকানার প্রাধান্য। এই প্রাধান্য ও আবদ্ধ যোগাযোগ ব্যবস্থার ফল হচ্ছে ভেন্ডর লক-ইন। এবং এর ফলে প্ল্যাটফরম ও টেকনিক্যাল পর্যায়ে এসব ডিভাইসের মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটির একটা অভাব রয়েছে। বিভিন্ন ডিভাইস থেকে অব্যাহত ডাটা প্রবাহ আনার ক্ষেত্রে প্রমিত প্ল্যাটফরমের অভাবে বাধা সৃষ্টি হয় এসব ডাটা ব্যবহারে। এসব ডাটা থেকে আমরা পেতে পারতাম ভেতরের মূল্যবান তথ্য, যদি আমাদের থাকত ইন্টারঅপারেবল ডিভাইস। ক্রমবর্ধমান হারে আমরা দেখছি, ওয়্যারেবল ও কনজ্যুমার প্ল্যাটফরমের মধ্যকার ইন্টারঅপারেবিলিটি। উদাহরণত, মেডিক্যাল রেকর্ড থেকে পাওয়া ডাটার সন্নিবেশ ঘটানো নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি আরেকটি সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘হেলথ ইন্স্যুরেন্স পোর্টেবিলিটি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট’ (এইচআইপিএএ) সমর্থন করে মেডিক্যাল রেকর্ডের মতো হেলথ ইনফরমেশনের পোর্টেবিলিটি। কিন্তু, যেহেতু ওয়্যারেবল ডিভাইস যে ডাটা সংগ্রহ করে তার জন্য এইচআইপিএএ-এর আওতায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোনো অর্থ দেয়া হয় না, সেখানে ওয়্যারেবল উৎপাদকের ওপর কোনো দায়িত্ব বর্তায় না তাদের সিস্টেমে সে পর্যায়ের ইন্টারঅপারেবিলিটি অথবা ডাটার পোর্টেবিলিটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে। তা ছাড়া ইন্টারঅপারেবিলিটি, ডাটা অ্যাকুরেসিও আরেকটি উদ্বেগের বিষয়; বিশেষত এই উদ্বেগ কনজ্যুমার ফিটনেস ডিভাইস নিয়ে। বর্তমানে মেডিক্যাল ও নন-মেডিক্যাল ডিভাইস অনেকের বিধিবিধানের আওতাধীন। সেই সাথে আছে বাজারে যাওয়ার মানগত পূর্বানুমোদনের বিষয়ও। তা সত্তে¡ও যেহেতু কনজ্যুমার ট্র্যাকিং ডিভাইস স্বাস্থ্যসেবায় ক্রমবর্ধমান হারে সমন্বিত হচ্ছে, তাই প্রশ্ন হচ্ছে এগুলোর পরিমাপ চিকিৎসাসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য পর্যয়ের কি-না, তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। মেডিক্যাল গ্রেডের ডিভাইসের স্থানে কনজ্যুমার ডিভাইসের প্রতিস্থাপন মিসডায়াগনোসিসের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন : আসতে পারে ভুল সতর্কাভাস ও ওভারট্রিটমেন্ট। দেখা গেছে, ভোক্তারা এফডিএ ও মেডিক্যাল পর্যালোচনা, এমনকি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই তাদের স্বাস্থ্য-পরিস্থিতি নিজে নিজের পর্যবেক্ষণের জন্য ক্রমবর্ধমান হারে ওয়্যারেবল থেকে পাওয়া ডাটার ওপর নির্ভর করছে।
দুই : সাইবার সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি
ক্রমবর্ধমান হারে সচেতনতা বাড়ছে ওয়্যারেবল ডিভাইস ও মেডিক্যাল ডিভাইসের হ্যাকিং ও সাইবার হামলার ব্যাপারে। এ ধরনের হ্যাকিং ও সাইবার হামলার কারণে রোগীর জীবনের ওপর যেমনি ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি ঝুঁকি বাড়ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়েও। বিশ্বে ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া ৭৫০টি হ্যাকিং ও সাইবার হামলার ২৫ শতাংশই ছিল স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা। এই হার আর যেকোনো শিল্পখাতের তুলনায় বেশি। এই সমস্যা এর চেয়ে কম খারাপ ছিল না কনজ্যুমার ডিভাইসের ক্ষেত্রে। গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, ভয়াবহ নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে শিশুদের স্মার্ট ওয়াচের বেলায়। এসব ঘটনায় হ্যাকারেরা শিশুর অবস্থান চিহ্নিত করতে, অডিও সিস্টেমে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের ফোন করতে পেরেছে। ভোক্তাদের আস্থা অর্জন নিশ্চিত করায় প্রাইভেসি সুরক্ষা না দিতে পারা একটি বড় সমস্যা। এর কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আইওবি ডিভাইস অ্যাডপশনের ওপর। প্রচলিত মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটির বাইরে আইওবি ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান অ্যাডপশনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি নিয়ে নতুন নতুন উদ্বেগের। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কারিগরি মান প্রমিতকরণ ও নীতিমালা এখনো নির্ধারণের অপেক্ষায়। মোটামুটিভাবে এগুলো খুবই স্পর্শকাতর তথ্য। এমনকি পার্সোন্যাল আইডেন্টিফায়ারের প্রকাশিত ডাটা থেকে তথ্য সরিয়ে ফেলার পরও বিবরণ পাওয়া যায় সামরিক চলাচলের। ভোক্তা পর্যায়ে ওয়্যারেবল ডিভাইস থেকে পাওয়া জিওলোকেশন ডাটা নির্দেশ করতে পারে কমিউটিং প্যাটার্ন এবং তা ভুল ব্যক্তিদের মাধ্যমে ব্যবহার হতে পারে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার মাঝেও করোনাভাইরাসের ট্র্যাকিংয়ের ডাটা যুক্তরাষ্ট্রে ও অন্যান্য দেশে গোপনীয়তা ভঙ্গ করায় মারাত্মক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ডাটা প্রাইভেসি ও স্বচ্ছতার মধ্যকার ভারসাম্যহীনতার কারণে অনেক দেশে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
যেমন : স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নজরদারির জন্য স্মার্ট থার্মোমিটারের ডাটার ব্যবহার হয় যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ ওয়েদার ম্যাপে। এর ব্যবহারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রশ্নে মারাত্মক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কিছু থার্মোমিটার কোম্পানি এই পার্সোন্যাল ইনফরমেশন বাজারজাত করছে এবং তা বিক্রি করছে তৃতীয় কোনো কোম্পানির কাছে। ওয়্যারেবল সম্পর্কিত এই সমস্যা সমাধানে এগুলোকে স্ট্যান্ডাডাইজ করায় বিশ্বব্যাপী উৎপাদকদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই)’ এবং এর ‘স্ট্যান্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’ কাজ করে আসছে এফডিএ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পখাতের সাথে মিলে। রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব উদ্যোগের মাধ্যমে আইইইই এবং এর কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করেছে টিআইপিপিএসএস (ট্রাস্ট, আইডেন্টিটি, প্রাইভেসি, প্রটেকশন, সেফটি অ্যন্ড সিকিউরিটি)।
তিন : ডাটা অ্যানালাইটিকসে বৈষম্য ও ন্যায্যতার ঝুঁকি
আইওবি ডিভাইস থেকে পাওয়া ডাটা পরিচালনা করা সম্পর্কিত উদ্ভত চর্চা থেকে উদ্বেগজনক ইঙ্গিত মিলছে বৈষম্য সৃষ্টির এবং তা ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের। ব্যবহারকারীর সৃষ্ট জৈবিক ডাটা অনেক সময় অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া ডাটার সাথে একীভ‚ত করা হয়। যেমন : রিটেইল স্টোর, ভোগ্যপণ্য উৎপাদক, সেবাদাতা কোম্পানি, আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ডাটার সাথে এসব ডাটা একীভ‚ত করা হয় ডাটা অ্যানালাইটিকের জন্য। তখন এ ডাটার অপব্যবহার চলতে পারে। অ্যালগরিদমগত অ্যানালাইটিক ব্যবহার করা যেতে পারে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, সমাজসেবা ও অন্যান্য ধরনের সমাজকর্মের বেলায় যেমন : বীমা, কর্মসংস্থান, অর্থায়ন, শিক্ষা, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, সমাজসেবা ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ক্ষেত্রে। এসবের ভিত্তি হবে আইওবি সূত্র থেকে পাওয়া ডাটা। অযথার্থ ও অসম্পূর্ণ ডাটা, প্রক্সি ডাটা, স্পর্শকাতর বিষয়ে অনুমিত ডাটার ওপর ভিত্তি করে প্রোফাইলিং ও গ্রুপিং করার ফলে পক্ষপাতদুষ্ট নীতি অবলম্বন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়, গোটা জনগোষ্ঠীর ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে এমনকি ডাটা প্রক্রিয়াকারী ও নীতিনির্ধারকেরাও এর ক্ষতিকর দিক কিংবা পক্ষপাতদুষ্টতা সম্পর্কে অবহিত নাও থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন
এক. বৈষম্যমূলক বীমানীতি : যেমন ব্যক্তিবিশেষের বীমার ক্ষেত্রে আইওবির পক্ষপাতদুষ্ট স্বাস্থ্যবিষয়ক ও আচরণগত জীবনাচার সম্পর্কিত ডাটা ব্যবহার হতে পারে। আইওবি টেকনোলজির মাধ্যমে পাওয়া ডাটায় অনেক সময় একজনের ব্যক্তিজীবনের পুরো বিবরণ থাকে। তার শারীরিক থেকে শুরু করে মানসিক ডাটাও এতে থাকে। এসব ডাটা অপব্যবহার করে বৈষম্যমূলক বীমানীতি চলতে পারে। এর ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নানা ধরনের বীমা-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
দুই. চাকরিতে বৈষম্য ও পক্ষপাত : চাকরিরতদের মাঝে ওয়্যারেবল ও এদের কল্যাণ কর্মসূচিতে ও চাকরি পরিস্থিতি জানার জন্য আইওবি টেকনোলজি ব্যবহার চালু হলে চাকরিরতদের গোপনীয়তা ও কর্মক্ষেত্রে নজরদারির ব্যাপারে সৃষ্টি হয় নতুন নতুন উদ্বেগ। চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের চলাচল, যোগাযোগ ও আচরণের ধরনের ওপর নজর রাখা ও তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়ার লক্ষ্যে তাদের যেসব ওয়্যারেবল ও অ্যালগরিদম ব্যবহার করতে দেয়া হয়, সেগুলো তুলনামূলকভাবে বিধিবিধানগত ও আইনগত সুরক্ষাকে দুর্বল করে ফেলে। এর ফলে চাকরিজীবীদের-কর্মীদের ডাটা ও ব্ল্যাকবক্স অ্যালগরিদমের অপব্যবহারের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। সেই সাথে কর্মী ভাড়া করা ও পদোন্নতি দানে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। যেমন : অ্যালগরিদম ও প্রিডিকটিভ টেকনোলজি ভাড়া করায় দেখা গেছে প্রাতিষ্ঠানিক ও ঐতিহাসিক পক্ষপাতদুষ্টতা। কিন্তু এসব পক্ষপাতদুষ্টতা সহজে ধরা পড়ে না অ্যালগরিদমের স্বচ্ছতার অভাবে এবং এসব অ্যালগরিদম প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত সূত্র ডাটার মানের অভাবে। গোপনীয়তায় অনধিকার প্রবেশ ও অন্যায্যতার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই প্রতিবাদ এসেছে কর্মী, ইউনিয়ন ও মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে। ২০১৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার শিক্ষকেরা একটি ওয়ার্কপ্লেস ওয়েলনেস প্রোগ্রাম বাতিলের দাবিতে ধর্মঘট পালন করেন। এর বিরুদ্ধে সমালোচনা ছিল বায়োমেট্রিক পরিমাপের স্কোরের ওপর নির্ভর করে কাউকে দন্ডিত করার বিষয়ে। ইউপিএস, ম্যাকডোনাল্ড ও অ্যামাজনের ওয়ার্কপ্লেসের কর্মীরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক ডাটা কালেকটিং ট্র্যাকার দিয়ে ব্যবস্থাপকদের আরোপিত অতিমাত্রিক কর্মপীড়ন ও আশঙ্কা সৃষ্টির ব্যাপারে। এরা অনুরোধ জানিয়েছেন চাকরিরতদের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ব্যবহৃত ডাটা ট্র্যাকার ব্যবহারে নতুন বিধান জারির জন্য।
বৈষম্য সৃষ্টিকরণ কিংবা জোরালো করে তোলার সরকারি নীতি : নীতি-নির্ধারকেরা সরকারি নীতিমালা প্রণয়নে ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহার করছে নতুন নতুন ডাটা উৎস ও ডাটা অ্যানালাইটিক।
যেমন : এর ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হচ্ছে স্বাস্থ্য, দুর্যোগ মোকাবেলা, শহুরে নকশা, জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রের নীতি-অবস্থান। এ ধরনের ডাটার মান ও অ্যালগরিদমে রয়েছে ঐচ্ছিক কিংবা অনৈচ্ছিক প্রবল পক্ষপাতদুষ্টতা, যা কার্যত সামাজিক বৈষম্যকেই জোরালো করে তোলে। এর সমাজের সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো অংশ স্বাস্থ্যসেবা কিংবা অন্যান্য সরকারি উৎসে প্রবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। উদাহরণ টেনে বলা যায় মোবাইল ফোন ও আইওবি ডিভাইস সূত্রে পাওয়া ডাটার নতুন নতুন উৎস ব্যবহার হচ্ছে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব চিহ্নিত করা ও আগাম পূর্বাভাস পেতে ব্যবহার হচ্ছে। এর পরও সম্ভাব্য ডাটা ও অ্যালগরিদম সংশ্লিষ্ট পক্ষপাতদুষ্টতার প্রতি মনোযোগ না দিয়ে এগুলো যখন ব্যবহার হয়, তখন এই ডাটা ও অ্যালগরিদম ঝুঁকি সৃষ্ট করতে পারে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের মহামারীর। বিশেষ করে তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর জীবনের ওপর। উদাহরণত, ২০১৪ সালের এবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় আফ্রিকায় সক্রিয় অনেক মানবিক সংগঠন বিভিন্ন দেশের সরকার, দাতব্য ফাউন্ডেশন, প্রযুক্তি কোম্পানি ও মোবাইল নেটওয়ার্কগুলোকে উৎসাহিত করেছিল ডাটা শেয়ারের ব্যাপারে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা যায় তাদের ছিল না ডাটা মডেলিংয়ের সক্ষমতা, পেশাভিত্তিক প্রযুক্তি বাস্তবায়নে কোনো আদর্শ মান ও জনগণের স্বার্থরক্ষা ও সুরক্ষা সংজ্ঞায়নের সক্ষমতাও। এর ফলে সে সময়ে উপদ্রুত এলাকায় বৈষম্যের পার্থক্য আরো বেশি বেড়ে যায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ডাটা অ্যানালাইটিকের ব্যবহার চালু করার জন্য প্রয়োজন অভ‚তপূর্ব পরিমাণ ও বিভিন্নধর্মী ডাটার। এগুলোর মধ্যে আইওবি টেকনোলজি সূত্রে পাওয়া ডাটা ও অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া এ ধরনের আরো ডাটার প্রয়োজন ক্রস-রেফারেন্সর জন্য। এর অর্থ দাঁড়ায় আইওবি ডাটার সংগ্রহ ব্যবহার প্রায়শই স্বাস্থ্য খাতের গন্ডি ছাড়িয়ে যায়। এবং অপরদিকে এই ডাটা শুধু স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত নয়। সামাজিক মাধ্যমের ডাটাও ব্যবহার করা যাবে ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীবিশেষের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত অ্যানালাইটিক জেনারেট করতে। এই নতুন আবিভর্‚ত অনুশীলন ও সম্ভাব্য ঝুঁকি আইওবি ডাটা প্রশাসন ও আইওবি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে একটি চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যেই বিষয়টি জটিল আকার নিয়েছে ডাটা অধিকার সংরক্ষণে। তা ছাড়া বিষয়টি এই ডাটার যুগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বচ্ছতা বিধান ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে। অধিকন্তু, এ ক্ষেত্রে আইওবি প্রযুক্তিসৃষ্ট সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একে বিতর্কের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
আলোচনা চলতে হবে এসব বিষয়ে : সাধারণভাবে কঠোরভাবে বিধিবিধানের আওতাভুক্ত চিকিৎসাবিষয়ক ডাটা, স্বাস্থ্যভিত্তিক জীবনাচার সম্পর্কিত ডাটার প্রশাসন ও অন্যান্য চিকিৎসাবহিভর্‚ত ডাটা, যেগুলো বিভিন্ন খাতের বিভিন্ন বিধিবিধানের আওতার্ভুক্ত। পরামর্শ আছে আইওবি সূত্রে মেডিক্যাল ডাটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বিধানে এবং বৈষম্য রোধে খুই অপর্যাপ্ত
০ টি মন্তব্য