https://gocon.live/

প্রযুক্তি

ইন্টারনেট কল প্রযুক্তির উদ্ভাবক সেই কালো মেয়েটি

ইন্টারনেট কল প্রযুক্তির উদ্ভাবক সেই কালো মেয়েটি ইন্টারনেট কল প্রযুক্তির উদ্ভাবক সেই কালো মেয়েটি
 

ইন্টারনেট কল প্রযুক্তির উদ্ভাবক সেই কালো মেয়েটি


জুম কল কীভাবে কাজ করে, সে ব্যাপারে যদি আপনার আগ্রহ থাকে তবে আপনাকে সে প্রশ্নটি করতে হবে ম্যারিয়ান ক্রোক (Marian Croak) নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর কাছে। তিনি গুগলের প্রকৌশল শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্র ইউটিউবের সাইট রিলায়েবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই সেই মহিলা, যিনি উদ্ভাবন করেন ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সুবাদেই পুরো লকডাউন সময়ে শ্রমিক সমাজের সবাই তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার সুযোগ পান। তা ছাড়া এরা এই সময়ে আরো অনেক অপরিহার্য কর্ম সম্পাদন করেন এই ভিওআইপির সহায়তা নিয়ে।


বলা হয় এটি একটি লাইফলাইন টেকনোলজি। এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয় ১৯৯০-এর দশকে। সে সময়ে কোন শক্তির জোরে তিনি এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে পেরেছিলেন, তা জানাতে গিয়ে ম্যারিয়ান ক্রোক বলেন : ‘অনেকেই এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। সে সময়ে তারা ঠিকই ছিলেন। কিন্তু প্রচুর কাজ আর পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে শেষ পর্যন্ত আমরা তা সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছি।’


২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘পাইওনিয়ার্স অব চেঞ্জ সামিট’। ম্য্যারিয়ান ক্রোকের সাথে এই সামিটে অংশ নিয়েছিলেন ‘আফ্রিকা টিন গিকস’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও শ্চুয়াব ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা লিন্ডিউই মাতলালি (Lindiwe Matlali)। তারা দুজনেই জানিয়েছেন এই উদ্ভাবনের পেছনের অজানা নানা কথা। ম্যারিয়ন ক্রোক শ্চুয়াব ফাউন্ডেশন পুরস্কার বিজয়ী লিন্ডিউই একসাথে অংশ নেন মডারেটর এনিওলা ম্যাফের সাথে, যিনি ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর ‘ভিশন ২০৩০’-এর প্রধান। এরা এই মডারেটরের সাথে কথা বলেছেন ‘পাইওনিয়ার্স অব চেঞ্জ’ সামিটে। এ সময় এরা এই উদ্ভাবনের পাথেয় নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেন।


সবচেয়ে খারাপ সময়টাই কি উদ্ভাবনের জন্য সর্বোত্তম সময়?


এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ক্রোক ইতিহাস টেনে কথা বলেন্। তিনি তুলে ধরেন উদ্ভাবনের কথা, যেসব উদ্ভাবন সম্পন্ন হয়েছে কঠিন কঠিন সময়ে। তিনি বলেন, ‘এমনসব বৈজ্ঞানিক বিপ্লব রয়েছে, যেখানে মানুষ পরিবর্তনের দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণমালা সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটে ‘গ্রেট টারময়েল’ তথা বড় ধরনের গন্ডগোলের সময়ে। তখন সবাই নতুন কিছু প্রত্যাশা করে এবং চায় এমন কিছু যা কলহ আরো বাড়িয়ে তোলে। আমার নিজের ব্যক্তিগত জীবনে অন্যদের ওপর প্রভাব সৃষ্টিকর যতকিছু করেছি, এর সবই করেছি বিশেষত পীড়নের সময়ে অর্থাৎ কঠিন সময়ে। আমি মনে করি, আমরা উপকৃত হই ইতিহাসের ভয়াল সময়ে।’


প্রথমবার সফল না হলে এরপর কী করেন?


উভয় মহিলাই বললেন, তখন এরা দৃঢ়তা নিয়ে আরো কঠোর পরিশ্রম করেন। মাতলালি বলেন, ‘আপনি-আমি সব সময় ‘অ্যারাইভাল’-এর ওপর নজর দিই, কিন্তু ‘জার্নিটাও’ কিন্তু সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দুয়ার উন্মুক্ত করার একটি মাত্র উপায় হচ্ছে, আপনাকে হতে হবে ছাপ ফেলার মতো ব্যক্তিত্ব, এবং যা করতে হবে তা হচ্ছে কঠোর কাজ, যা আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন না।’


অপরদিকে ক্রোক মনে করেন, প্রথমবার সফল না হলে দ্বিতীয়বার যেটি করতে হবে, তা হলো মনস্থির করা। এরপর আস্থা রাখতে হবে এই ব্যর্থতা থেকে আপনি উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘আপনি সমস্যার শিকার হবেন না। তবেই আপনি সমস্যা পায়ে মাড়িয়ে সমাধানে পৌঁছুতে পারবেন; সমস্যা সমাধানের অভিযানে সাফল্য আসবে। এই অভিযানে যেসব বিষয় বেরিয়ে আসবে, সেগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। এগুলোকে সম্পূর্ণতা দান করুন।’


তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিকে মনে হতে পারে এক ধরনের স্ট্যাসিস। অর্থাৎ এই সময়টাকে মনে হতে পারে একটি নিষ্ক্রিয়তা কিংবা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার সময়। কিন্তু বিশ্বাস রাখুন এ পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে এবং পাল্টাবেই। কারণ, মানুষের কাছে ভিন্ন চিত্র কল্পনা করার শক্তি রয়েছে। উদ্ভাবকেরাও মানুষ। যেকোনো জনের মধ্যে উদ্ভাবনী ধারণা থাকতে পারে। আমাদেরকে এসব ধারণা পরস্পরের মধ্যে বিনিময় করতে হবে। একে অন্যকে সহযোগিতা করতে হবে, যাতে এসব উদ্ভাবনী ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেয়া যায়।’


মডারেটরের প্রশ্ন ছিল, আপনি কী করে টেক টেবিলে বসেন?


অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যসূচক বিনয়ের সাথে ম্যারিয়ান ক্রোক স্বীকার করেন, ‘অন্যের জন্য ভেতরে আসার পথ খোলা রাখাটা’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এও জানান, বাইরের কারো সাথে সময় কাটানোয় আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’


মাতলালির জন্য প্রযুক্তি জগতের বর্ণাঢ্য সাফল্যের অধিকারী মহিলা ম্যারিয়ান ক্রোকের উদাহরণ ছিল উল্লেখযোগ্য। আমাকে সব সময় মানিয়ে চলতে হয়েছে। আপনি যদি কৃষ্ণাঙ্গ হন, এবং হন একজন নারী, তাহলে কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে, আপনি উপযুক্ত। সামনে অগ্রসর হলে আমরা পরিবর্তনের অনেক পথ পাব। ম্যারিয়ানের মতো লোকেরা তা নিশ্চিত করছেন। আমার মতো নারীর জন্য তা সহজ করে তুলছেন।’


প্রযুক্তির উদ্ভাবকদের শিশুরা কী শেখাতে পারে?


ক্রোক বলেন, ‘বিস্ময় (ওউন্ডার) ও নাইভিটি (ছলাকলাহীনতা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। শিশুদের রয়েছে সমৃদ্ধ কল্পনাশক্তি যা কাজ করে উদ্ভাবনের জ্বালানি শক্তি হিসেবে। তাই আপনাকে শিশু হওয়ার প্রয়োজন আছে।’


তিনি আরো বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে মাতলালির কাজ তাকে সরাসরি সে জগতেই নিয়ে গেছে, যেখানে তিনি দেখতে পেয়েছেন ‘শিশুরা আগ্রহপ্রবণ, কিন্তু ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী। তাদের কাছে সবকিছুই সম্ভব। আমরা চাই শিশুদের মাঝে স্বপ্ন ও প্রবল আগ্রহ থাকুক, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।’


ক্রোক আরো বলেন, ২০২১ সালের জন্য তার মটিভেশন বা প্রণোদনা তার মধ্যে শিশুর মতো অনুসন্ধিৎসু কাজ করে। তিনি ভুলে যান ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, নজর দেন সুনির্দিষ্ট সমস্যার প্রতি।’


অতীত মহামারী থেকে পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় সুযোগ কোনটি?


এ প্রশ্নের জবাবে ক্রোক বিশ্বের প্রযুক্তি সমাজের প্রতি আহ্বান জানান বিশ্বটা সত্যিকার অর্থে কী, সে বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে, দেখতে হবে ফাঁকটা কোথায়। সমাধান টানতে হবে ব্যাপক ধরনের বৈষম্যের। সেটাই হবে পেনডেমিকের পুরস্কার বা সুযোগ।’


মাতলালি আফ্রিকায় কাজ করেন শিক্ষা নিয়ে। সেখানে শিক্ষায় আছে একটি বিভেদ। তিনি বলেন, ‘আমি কতটুকু অবদান রাখতে পারলাম, সেটা জেনে কোনো লাভ নেই। বরং জানা দরকার, এটি ভিন্ন কিছু তৈরি করছে। এমনকি যদি একটি শিশুকে আমাদের হাতে থাকা সব সুযোগে অংশ নেয়ায় সহায়তা করে থাকে তবে সেটাই আমার পাওয়া আর এটি আসে শিক্ষার মাধ্যমে। আর আমার জন্য সেটাই হচ্ছে তা, যা নিশ্চিত করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। কাজটি হচ্ছে যত বেশিসংখ্যক শিশুকে দারিদ্র্যবৃত্ত থেকে বের করে আনা যায়।’


২০১২ সালে প্রযুক্তি জগতের তরুণ নারীদের উদ্দেশে তাদের প্রণোদনা দিতে হাফিংটনপোস্টে একটি চিঠি প্রকাশ করেন। তখন তাকে অভিষিক্ত করা হয়েছিল ‘উইমেন ইন টেকনোলজি হল অব ফেম ২০১৩’ অভিধায়। তা ছাড়া নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রযুক্তি উন্নয়ন সংগঠন এটিআইএস (অ্যালায়েন্স ফর টেলিকমিউনিকেশনস ইন্ডাস্ট্রি সল্যুশনস)- এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকে ২০১৪ সালে ওয়াশিংটনে আয়োজিত ‘সায়েন্স টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাথমেথিকস (স্টেম) ’-এর ২৮তম বার্ষিক সম্মেলনে দেয়া হয় বর্ষসেরা ‘ব্ল্যাক ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাওয়ার্ড’। একই বছরে তাকে তালিকাভুক্ত করা হয় ‘ফায়ার্স ওয়্যারলেস’-এর ‘মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল উইমেন ইন ওয়্যারলেস’ তালিকায়। এ ছাড়া ২০১৪ সালে তাকে সম্মানিত করা হয় ‘কালচালাল শিফটিং : অ্যা উইকেন্ড অব ইনোভেশন’-এ। ২০১৮ সালে তিনি এটিঅ্যান্ডটি ছেড়ে গুগলে যোগ দেন। এই কালো মেয়েটি প্রযুক্তির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার কাজের মধ্য দিয়ে








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।