https://gocon.live/

প্রযুক্তি

চামড়ায় সরাসরি ছাপা হবে বায়োমেট্রিক সেন্সর

চামড়ায় সরাসরি ছাপা হবে বায়োমেট্রিক সেন্সর চামড়ায় সরাসরি ছাপা হবে বায়োমেট্রিক সেন্সর
 

চামড়ায় সরাসরি ছাপা হবে বায়োমেট্রিক সেন্সর


বায়োমেট্রিক সেন্সর আসলে কী?


বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ছবি ধারণ করে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা, পরীক্ষা করা ও সত্যায়ন করার প্রয়োজনে বিশেষায়িত হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয়। বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির সেন্সর তৈরি করা হয় ঠিক এই কাজ সম্পাদনের জন্যই। ফেস বায়োমেট্রিক ক্যাপচার করার হাইডেফিনিশন ক্যামেরাই হোক, কিংবা ইরিস (মানুষের চোখের গোলাকার রঙিন অংশ) স্ক্যান করার ইনফ্রারেড ক্যামেরাই হোক, একটি ফিঙ্গারপ্রিন্টের বিভিন্ন স্তরের ছবি তোলার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইসই হোক অথবা হাতের তালু ও আঙুলের রগের মানচিত্র তৈরি করার সাব-ডারমাল ইমেজিং ডিভাইসই হোক এসব ক্ষেত্রে সেন্সর ও ডিটেক্টর হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ বায়োমেট্রিক সিস্টেমের অপরিহার্য অংশ।


সেন্সর হচ্ছে বায়োমেট্রিক সমাধানের একটি অংশ। এর ব্যবহারকারী এর সাথে ইন্টারেক্ট বা মিথষ্ক্রিয়া করে। এটি হতে পারে এমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করার জন্য নিজের ফোনের হোম বাটনে স্পর্শ করলেই চলে। কিংবা ইরিসিস-প্রটেক্টেড বর্ডার কন্ট্রোলের জন্য একটি আয়নার দিকে তাকানো। কীভাবে ছবি ধারণ করা হলো সে ব্যাপারে ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে শুধু একটি সেন্সর ও এর ব্যবহারকারী।


কোথায় পাওয়া যায় বায়োমেট্রিক সেন্সর?


কারিগরিভাবে আপনি যেকোনো স্থানেই পাবেন বায়োমেট্রিক টেকনোলজি এবং পাবেন একটি সেন্সরও। বায়োমেট্রিক সফটওয়্যারের নয়া অগ্রগতি ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্যামেরা ও মোবাইল ডিভাইসের মাইক্রোফোনের দ্রুত বিস্তার যুক্ত হয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে এমনকি একটি স্মার্টফোনের মৌলিক উপাদানকেও একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করা যাবে সেন্সর হিসেবে। ক্রমবর্ধমান হারে নতুন নতুন সুযোগ আসছে। শিগগিরই দেখতে পাবেন আপনার স্মার্টফোনে রয়েছে একটি বিশেষায়িত ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। এটি এমবেডেড থাকবে এর ভেতরে অথবা এটি সমন্বিত থাকবে এর হোম বাটনে।


ইরিস স্ক্যানের ক্যামেরা বিশ্বব্যাপী পাওয়া যায় ভৌত প্রবেশস্থলে এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাহিনীর কাছে। ফিঙ্গার ভেইন সেন্সর পাওয়া যায় অনলাইন করপোরেট ব্যাংকিং সিনারিওতে, যেখানে সত্যতা যাচাই তথা অথেন্টিকেশন মুখ্য বিষয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্বাস্থ্য সেবাদাতা ও ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা প্রতিষ্ঠানে। এমনকি স্মার্ট কার্ডের নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার। এর ফলে ক্রয় ও আর্থিক লেনদেনে অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ মিলবে।


বায়োমেট্রিক সেন্সর কী পরিবর্তন আনছে?


ধন্যবাদ জানাতে হয় ‘উইন্ডোজ ১০’এর বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি প্ল্যাটফরম ‘উইন্ডোজ হেলো’-কে। এর ব্যবহারকারীরা ও ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের মেশিনে বায়োমেট্রিক সেন্সর সংযোজন করতে পারেন। ‘প্লাগ অ্যান্ড প্লে ইউএসবি সেন্সরগুলো’ এখনই পাওয়া যাচ্ছে এ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য। যারা তাদের পাসওয়ার্ড প্রতিস্থাপিত করতে চান শক্তিশালী অথেন্টিকেশন দিয়ে, তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।


ভারতে উচ্চাভিলাষী জাতীয় পরিচয়পত্র কর্মসূচি ‘আধার’-এর ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ক্যাপচার করা হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করে।


চামড়ার ওপর ছাপা বায়োমেট্রিক সেন্সর


আগামী দিনে আমরা দেখতে পাব মানুষের শরীরের চামড়ার ওপর সরাসরি ছাপা বায়োমেট্রিক সেন্সর। প্রচলিত পরিধানযোগ্য টেক সেন্সরের তুলনায় আরো বেশি আরামদায়ক ও নির্ভুল হবে এসব স্কিন সেন্সর। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের গবেষকেরা একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় মানুষের চামড়ার ওপর সরাসরি বায়োমেট্রিক সেন্সর ছাপানোর। এই প্রক্রিয়াটি কাজ করে স্পন্সর বন্ডের ধাতব উপাদানের একটি স্তর সরাসরি চামড়ার ওপর ছাপার মাধ্যমে। পরিধানযোগ্য সেন্সরগুলো বিকাশ লাভ করছে ঘড়ি ও হাতে বেঁধে রাখার উপযোগী ব্যান্ড ডিভাইস থেকে। এগুলো আমাদের আরো সঠিক বায়োমেট্রিক পরিমাপ জানিয়ে দেয়। তা ছাড়া এগুলোর ব্যবহারও আরামদায়ক।


এর আগে গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছিলেন পরিধানযোগ্য সেন্সরে ব্যবহারের জন্য নমনীয় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড। কিন্তু সেন্সরে ধাতব উপাদানের বন্ডিং প্রক্রিয়াটি ব্যাহত করেছিল চামড়ায় সরাসরি এটি ছাপার কাজটিকে। সিন্টারিং নামের এই প্রক্রিয়ায় সিলভার ন্যানোপার্টিকলগুলোর মধ্যে একত্রে বন্ধন গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ৫৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তথা ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। মানুষের চামড়া এত বেশি তাপমাত্রায় স্বাভাবিক থাকে না। এর ফলে এই প্রতিবন্ধকতা এড়াতে গবেষকেরা ব্যবহার করেন একটি সিন্টারিং এইড লেয়ারের। এই লেয়ার বা স্তর চামড়ার কোনো ক্ষতি করবে না এবং এটি সহায়তা করবে আরো কম তাপমাত্রায় মেটাল সিন্টারিংয়ের কাজে। একটি ন্যানোপার্টিকল যোগ করে সিলভার পার্টিকলগুলো সিনিস্টার করা হয় আরো কম অর্থাৎ ২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।


জানিয়ে রাখি সিন্টারিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তাপমাত্রা প্রয়োগ করে কোনো পদার্থকে এমনভাবে গলিয়ে একসাথে মেশানো হয়, অথচ এই পদার্থ গলে তরলে পরিণত হয় না। প্রাকৃ তিকভাবে এই সিন্টারিং ঘটে খনিজ পদার্থের মজুদে। এটি ব্যবহার হয় বৃহদাকার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পদার্থ, সিরামিক, প্লাস্টিক ও অন্যান্য পদার্থ একসাথে মেশানোর সময়।


একটি ন্যানোপার্টিকল যোগ করে সিলভার পার্টিকলগুলো সিনিস্টার করা হয় আরো কম অর্থাৎ ২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে কাপড় কিংবা কাগজের ওপর সেন্সর প্রিন্ট করার সময়। তবে এই তাপমাত্রা চামড়ায় সেন্সর প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে এখনো অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। তাদের মতে, ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ই চামড়া পুড়ে যায়। পরে গবেষকেরা এইড লেয়ারের ফর্মুলা পরিবর্তন করেন, পরিবর্তন করেন প্রিন্টিং ম্যাটেরিয়াল। তখন দেখা গেল তারা সেন্সর প্রিন্ট করতে পারছেন স্বাভাবিক তাপমাত্রায়। এই স্বাভাবিক তাপমাত্রার সিন্টারিং এইড লেয়ারে থাকে পলিনাইল অ্যালকোহল প্লাস্ট (যা খুলে নেয়ার উপযোগী ফেস মাস্কের প্রধান উপাদান) এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেট (যা আছে ডিমের খোসায়)। এই লেয়ার মুদ্রণতলের খসখসে ভাব দূর করে এবং সুযোগ করে দেয় এর ওপর পদার্থের অতি পাতলা স্তর স্থাপনে। এর ইলেকট্রোমেকানিক্যাল সক্ষমতা বজায় রেখেই এটি বাঁকানো বা মোচড়ানো যাবে। যখন সেন্সরটি প্রিন্ট করা হয়, তখন গবেষকেরা ঠান্ডা রাখার জন্য হেয়ার ড্রায়ারের মতো ব্যবহার করেন একটি এয়ার ব্লোয়ার বা বায়ু প্রবাহক। গবেষকেরা বলেছেন, এতে তারা অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন।


হেলথ মনিটরিংয়ের অন-বডি সেন্সর


এসব সেন্সর অত্যন্ত সঠিক ও অব্যাহতভাবে শরীরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ইত্যাদি জানিয়ে দিতে সক্ষম। গবেষকেরা অনবডি সেন্সরগুলোকে তারবিহীন সঞ্চালনে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করার কাজটিও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব। কুসুম গরম পানিতেও এই সেন্সর বেশ কিছুদিন টিকে থাকতে পারে। তবে এর ওপর গরম পানি ঢেলে সহজেই তুলে ফেলা যায়। এই সেন্সর রিমুভ করলেও এর ডিভাইস রিমুভ হয় না। তাই এই সেন্সর রিসাইকল করা যায়। তা ছাড়া সেন্সর রিমুভের ফলে চামড়ার কোনো ক্ষতি হয় না। এই ডিভাইস ব্যবহারকারীর জন্য এটি অতিরিক্ত কোনো বোঝা চাপায় না।


এখন গবেষকেরা পরিকল্পনা করছেন এই প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আনতে, যাতে এটি প্রয়োজনীয় অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। যেমন কভিডের ক্ষেত্রে যাতে এটি কাজে লাগানো যায়








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।