ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে জাদুকরি ডিভাইস
ট্যা বলেট ও আইপ্যাড ব্যবহারকারীরা শেষ পর্যন্ত তাদের ইন্টারনেটের গতি ব্যাপক বাড়িয়ে তুলতে একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন। আর তারা তা পুরোদমে উপভোগ করতে পারবেন, সম্ভাব্য সস্তাতর খরচে।
আপনি কি কখনো লক্ষ করেছেন, প্রতিদিন পিক আওয়ারে আপনার ইন্টারনেটের গতি কতটা কমে যায়? এটি এখন স্পষ্ট, আইএসপিগুলো (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারেরা) উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিক আওয়ারে ইন্টারনেটের সার্ভিস কমিয়ে দেয়ার কাজটি জেনেশুনেই করে থাকে। এরা তাদের বেস্ট-পেয়িং কাস্টমারদের অধিকতর উন্নততর সেবা দেয়ার জন্য আপনার-আমার মতো ছোটখাটো ইন্টারনেট ইউজারদের ব্যান্ডউইডথ অন্যদের দিয়ে দিচ্ছে। আপনার ইন্টারনেট পরিকল্পনা যদি সস্তাতর পরিকল্পনাগুলোর একটি হয়, তবে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে আপনি পিক আওয়ারে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স ও স্কাইপি ব্যবহারে ভালো সেবা উপভোগ করতে পারবেন না। এমনটি কারো কাছেই ভালো
ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্টের বৈশিষ্ট্য
- যেকোনো ইন্টারনেট রাউটার বা ব্র্যান্ডে এটি কাজ করে।
- এটি ব্যবহার করে ২.৪ গিগাহার্টজ ফ্রিকুয়েন্সি।
- ট্রান্সপার রেট ৩০০ এমপিবিএস পর্যন্ত।
- সব LAN RJ45 কানেকশনে অ্যাপ্লিকেশনের উপযোগী।
- সহজেই সেটআপ দেয়া যায়।
- জ্বালানি-সাশ্রয়ী ও এতে বিকিরণবাধা কম।
- ইনস্টল করতে আলাদা কিছুর প্রয়োজন নেই।
- সবার ব্যবহারের উপযোগী। লাগার কথা নয়।
সৌভাগ্যের কথা, শেষ পর্যন্ত এ সমস্যার একটি সমাধান পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সমস্যার আরও অনেক বিরক্তিকর সমাধান পাওয়া যাবে। সাবেক এক প্রকৌশলী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন জার্মানির সবচেয়ে বড় মাপের একটি ইন্টারনেট প্রোভাইডারের সাথে। তার কাজ ছিল, ইন্টারনেটের বিরক্তিকর এই সমস্যার একটা ইতি টানার ব্যবস্থা করা। একপর্যায়ে তিনি একটি ধারণাও নিয়ে এলেন। তিনি সব সময় জানতেন, ইন্টারনেট সার্ভিসের জন্য মানুষ পুরো দামই দেয়। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তারা তাদের ন্যায্য পাওনা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। আর ইন্টারনেট অপারেটরেরা ওই প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে।
ওই প্রকৌশলী তাদের সাথে কাজ করে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি নিজেকে এ অপরাধের অংশীদার ভাবতেন। উপায় খুঁজতে লাগলেন এর একটি সমাধান টানার। এবং সে সমাধানের পথও পেয়ে গেলেন। তার সমাধানটি ছিল এমন একটি ডিভাইস তৈরি করা, যা আইএসপিগুলোর এই স্পিড থ্রটলিং অর্থাৎ ইন্টারনেটের গতির টুঁটি চেপে ধরা এড়িয়ে চলা যায় : আপনার বাড়ির চারপাশের ওয়াই-ফাইয়ের মাত্রা ও গতি বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে। তিনি চেয়েছিলেন এই কাজটিকে যথাসাধ্য সহজ-সরল রাখতে। যাতে একজন সাধারণ প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষও তা ব্যবহার করতে পারেন। দিনের পর দিন চেষ্টাসাধ্যি করে শেষ পর্যন্ত তিনি এর সমাধানও পেলেন। তার এই সমাধানের নাম : : Wifi UltraBoost, হাতের তালুর আকারের ছোট্ট একটি ডিভাইস।
ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট যেভাবে কাজ করে
এর ব্যাখ্যা আসলে খুব সহজেই দেয়া যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রধান সমস্যা হচ্ছে সস্তা ওয়াই-ফাই রাউটার বক্স। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার তথা আইএসপিগুলো এসব রাউটার বক্স বিক্রি করে। আমাদের বাড়িঘরের ভারী দেয়াল তাতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই পরিপূর্ণ গতি নিয়ে চারপাশে সবল সিগন্যাল ছড়িয়ে পড়া বাধাগ্রস্ত হয়। সিগন্যাল দুর্বল হয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য, তখন একাধিক ডিভাইসের সাথে এই ইন্টারনেটের সংযোগ গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনার কাছে আসা দুর্বল ওয়াই-ফাই সিগন্যালই আপনার হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় আপনার বাড়ির চারপাশে অনেক ‘ডেড স্পট’ আবির্ভূত হয়।
‘ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট’ এ সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। শুধু এটিকে কোনো সকেটে প্লাগ-ইন করতে হয়। এ কথা শুনে আপনার কাছে অনেকটা মিরাকলের মতোই মনে হবে দুটি কাটিং-এজ ওয়াই-ফাই রাউটার ও একটি শক্তিশালী এমপ্লিফায়ার রয়েছে ছোট আকারের এই ডিভাইসে।
ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট আপনার বিদ্যমান সিগন্যালের বৈশিষ্ট্যগুলোর উন্নতি সাধন করে। এরপর পথের যাবতীয় বাধা দূর করে ট্রান্সমিট করে এমপ্লিফাইড ওয়াইফাই। এই বাধা কংক্রিটের দেয়াল কিংবা কয়েকটি মেঝে হতে পারে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট সমাধান করে আমাদের প্রধান সমস্যা। আর এই প্রধান সমস্যাটি হচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের উদ্দেশ্যমূলক ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে এরা প্রথমত আইএসপি থেকে ডাটা ব্যবহারের রিপোর্ট আসায় বাধা সৃষ্টি করে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট ইন্টারনেটে গতির টুঁটি চেপে ধরাকে অসম্ভব করে তোলে।
সারকথা হচ্ছে : ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট আপনাকে সুযোগ করে দেবে আরও সবল ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকশন পেতে। এই সুযোগ আপনার জন্য অবারিত যেকোনো সময় ও আপনার ঘরের যেকোনো স্থানের জন্য। এর জন্য আপনার বাড়তি কোনো খরচ নেই। ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট প্লাগ-ইন করার সাথে সাথে এর উল্লেখযোগ্য উপকারটা সহজেই লক্ষ করা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে এর দাম ৯৯.৯৯ ডলারের বদলে ছাড়দামে মাত্র ৪৯ ডলার। বাংলাদেশ থেকেও এখন অর্ডার নেয়া হচ্ছে।
আল্ট্রাবোস্ট যে সমস্যার সমাধান দেয়
- ইন্টারনেট কানেকশনের ধীরগতি সমস্যা।
- কক্ষের বাইরে গেলে দুর্বল ওয়াইফাই সিগন্যাল সমস্যা।
- ভিডিও কলের বাজে মান সমস্যা।
- বাড়ির চারপাশে ওয়াই-ফাই ‘ডেড- স্পট’ সৃষ্টির সমস্যা।
- অন্তহীন বাফিং সমস্যা।
- ভারী দেয়ালের কারণে সিগন্যালের দুর্বল হওয়ার সমস্যা।
- ডাউনলোড ও আপলোডে সময় বেশি লাগার সমস্যা।
ফলাফল
বিভিন্ন এক্সপার্ট ম্যাগাজিন ওয়াইফাই আল্ট্রাবোস্টকে ইতিবাচক স্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা এর সম্পর্ক বলেছে : the best reception on we have ever tried’। ম্যাগাজিনগুলোর মূল্যায়নে আরও বলা হয়েছে : এটি শুধু ধীরগতির ইন্টারনেট কানেকশনকে দ্রুতগতির কানেকশনেই পরিণত করে না, সেই সাথে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সার্ভিসেরও উন্নতি সাধন করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি দেয়ালের ওপারে ওয়াই-ফাই কানেকশনের মাধ্যমে ২৪ মেগাবিট ইন্টারনেট পাওয়া যেত। এই কানেকশনে কয়েকটি ডিভাইস দিয়ে একসাথে হাই-ডেফিনিশন ভিডিও এবং ইউটিউব ভিডিও উপভেগ করা সম্ভব। কিন্তু ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট ব্যবহার করে এর গতি ৮৪.৬ মেগাবিট পর্যন্ত বেড়ে যায়। এর ফলে কমপক্ষে ১০টি ডিভাইস দিয়ে একই ভিডিওগুলো ফোর-কে মানে উপভোগ করা যায়। ওয়াই-ফাই আল্ট্রাবোস্ট নামের ছোট্ট এই ডিভাইস দিয়ে এই উন্নয়ন সাধন সম্ভব হয়েছে। এর ব্যবহার খুবই সহজ। প্রয়োজন শুধু একটি ওয়াল সকেটে ডিভাইসটি প্লাগইন করা। প্লাগ-ইনের সাথে সাথে এর কাজ শুরু হয়ে যাবে
০ টি মন্তব্য