https://powerinai.com/

প্রযুক্তি

লন্ড্রি রোবট

লন্ড্রি রোবট লন্ড্রি রোবট
 

লন্ড্রি রোবট


আমাদের অনেকেরই একটি ভালো গুণ হচ্ছে নিজের কাজ যথাসম্ভব নিজ হাতে সেরে নেয়া। তারা হয়তো চাইবেন না, কোনো ডিভাইস এসে তার কাপড় ধুয়ে ইস্ত্রি করে দিক। এর পরও তারা অবাক হবেন এ কথা জেনে যে, তাদের এ কাজ করার জন্য রয়েছে লন্ড্রি-ফোল্ডিং রোবট। সর্বাধিক পরিচিত এ ধরনের কাপড় ফোল্ডিং বা ভাঁজ করার রোবট সংস্করণ হচ্ছে জাপানের Laundroid। এ ক্ষেত্রে এটি বিশ্বের প্রথম রোবট। সম্প্রতি উদ্ভাবিত এর আরেকটি সংস্করণও রয়েছে, যেটির সফটওয়্যার ডিজাইন করেছে বার্কেলির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া। আর হার্ডওয়্যার ডিজাইন করেছে ‘রিথিঙ্ক রোবটিকস’।


কিন্তু এ নিয়ে অতিমাত্রায় উৎসাহিত না হওয়ারও ব্যাপার রয়েছে। এসব রোবটের হাতের কাজ করে দেয়ার প্রশংসনীয় যোগ্যতা থাকলেও এগুলো এখনো কাজ করে অতিমাত্রায় ধীরগতিতে। উল্লিখিত ‘লন্ড্রয়েড’ রোবটটি একটি কাপড় ভাঁজ করতে সময় নেয় ৪ মিনিট। আর রিথিঙ্ক রোবটের এ কাজটি করতে সময় লাগে ১৫ মিনিট। অথচ আমরা অবচেতন মনেও তা করে ফেলতে পারি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে। ফলে লন্ড্রি রোবটের এই সময়ের ব্যাপারটি অনেকের কাছেই হবে বিরক্তিকর। তারা চাইবে এই সময় গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে হবে। ফলে এসব রোবট আরো উন্নত পর্যায়ে নিয়ে আসার আগে সম্ভবত বাজারে আসছে না, আর এলেও হয়তো আশানুরূপ ক্রেতা পাবে না।


আজকের দিনের উদ্ভাবিত রোবট শুধু লন্ড্রির কাজেই আমাদের সহায়তা করবে না। এ নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের বুঝতে হবে, কৃ ত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা আর্টিফিসিয়াল টেকনোলজির সাধারণ সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। লন্ড্রি- ফোল্ডিং রোবটের সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে গবেষকেরা এই শিক্ষাকে প্রয়োগ করতে পারবেন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতেও যেমন জরুরি কাজে সাড়া দেয়া, দুর্যোগের সময়ে উদ্ধারকাজ ও সাংসারিক কাজে অনেক কিছু বহনে সহায়তা করার ক্ষেত্রে।


একটি তোয়ালে ভাঁজ করতে লন্ড্রি রোবটের ১৫ মিনিট সময় লাগলেও এই প্রযুক্তির গুরুত্ব লন্ড্রির কাজ ছাপিয়ে আরো অনেক বেশি।


আমরা এই যে হাতে যে কাজটি করতে পারছি কয়েক সেকেন্ডে, উল্লিখিত রোবটের তা করতে লাগছে ১৫ মিনিট। এর কারণ ঘর- গেরস্থালির কাজের প্রকৃতি আমাদের ভাবনার চেয়েও আরো জটিল। যে কাজটি হাতে করা খুবই সহজ, সে কাজটি একটি অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে করা তত সহজ নয়। কাজের ধরনটি বুঝে তা বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করা তার চেয়ে আরো বেশি কঠিন।


এই বিষয়টিকে একটি ও প্যারাডক্স’ তথা  ও আপাতত সত্যবিরোধী হলেও অসত্য নয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন লন্ডনের ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম’-এর ও দ্য ফিউচার স্টার্টস হিয়ার’ প্রদর্শনীর কো-কিউরেটর মারিয়ানা পেস্তানা। উল্লেখ্য, এই প্রদর্শনীতেই এই রোবটের ফিচার বা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়। কিন্তু এতে প্রকাশ পায় এর ধীরগতির বিষয়টিও। যেখানে আমাদের জন্য কাজটি করতে লাগে কয়েক সেকেন্ড, সেখানে লন্ড্রি-ফোল্ডিং রোবটের লাগে ১৫ মিনিট।


মোটামুটি দেখা যায়, ঘর-গেরস্থালির কাজের পরি্িস্থতি অব্যাহতভাবে পরিবর্তনশীল। একজন শিশু যে অপরিহার্যভাবে রোবটের ভেতরের কাজ সম্পর্কে না-ও জানতে-বুঝতে পারে, তাকে এই রোবট নিতে পারে প্রতিদিনের একটি নতুন সমস্যা হিসেবে। যেমন অ্যাপলের ‘সিরি’ রোবটের কাছে অনুরোধগুলো রাখার কথা এ ক্ষেত্রে আমরা ভাবতে পারি।


বার্কেলিতে স্টাফ সায়েন্টিস্ট থাকার সময় সিদ্ধার্থ শ্রীবাস্তব সহায়তা করেছিলেন এই রোবটটি তৈরির কাজে। তিনি বলেন,  এই সেটিংয়ে ভালো কাজ করার মতো একটি অটোনোমাস অ্যাসিস্ট্যান্টকে হতে হবে পরিবেশ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভার্সেটাইল (বহুমুখী) ও রোবাস্ট (প্রবল তেজি)। হতে হবে সব ক্ষেত্রে সহজে কাজ করার উপযোগী।’


শ্রীবাস্তব ও তার টিম একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। কাজটি হচ্ছে রোবটটিকে উচ্চ-পর্যায়ের কাজ বুঝতে সক্ষম করে তোলা। এ ধরনের কাজ এই রোবটের হিউম্যান মাস্টার করতে বলতে পারে। শ্রীবাস্তব বলেন, ‘যারা এই টিমে কাজ করেছেন, তারা জানেন একটি অ্যাসিস্ট্যান্ট খুব একটা সহায়ক হয় না, যদি তার দরকার হয় প্রতি মিনিটের সমস্যার জন্য নির্দেশনা।’


রোবটের অবশ্য কোনো সহজাত জ্ঞান নেই। আমরা কোনো সময় হয়তো আমাদের অ্যাসিস্টিভ রোবটকে বলতে পারি ‘‘do the laundry’। কিন্তু এ কাজ সম্পাদন করার জন্য রোবটের প্রয়োজন হবে আরো অনেক ইনফরমেশন : রোবটের প্রতিটি সংযোগস্থল বা জয়েন্ট কীভাবে চালাতে হবে, কোথায় থাকতে হবে কারণ রোবটটিকে এসব কাজও করতে হবে। একই সাথে রোবটটিকে জানতে হবে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এর ক্যামেরা ও সেন্সরগুলো। জটিলতা আরো বেড়ে যায়, আমরা যদি একটি রোবটকে লন্ড্রির কাজের চেয়ে আরো কিছু বেশি কাজ করতে বলি। মোটের ওপর, ঘরের ভেতরের কাজ করার জন্য একটি ওয়ানটাস্ক রোবট শুধু সীমিত উপকারেই আসবে।


‘আমাদের এমন অ্যালগরিদম তৈরি করা দরকার, যা রোবটকে কমপিউট তথা গণনা বা হিসাব-নিকাশ করার সক্ষমতা দেবে। প্রদত্ত কাজ সম্পাদন করার জন্য রোবটের এটি প্রয়োজন’ বললেন শ্রীবাস্তব। অতএব সত্যিকারের উপকারী রোবটের জন্য প্রয়োজন এর ব্যবহারকারীর কাছ থেকে কাজ গ্রহণ ও তা সম্পাদন করা। স্পষ্টত, আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা কোনো রোবট দিয়ে একটি বাড়ির সব কাজ করা সম্ভব নয়। শ্রীবাস্তব তাই বলেন, এর পরিবর্তে আমাদের হায়ারারকিক্যাল প্ল্যানিং, পারসেপশন ও রিজোনিংয়ের জন্য প্রয়োজন অ্যালগরিদম ডেভেলপ করা। এই অ্যালগরিদম রোবটকে কমপিউট করায় সক্ষম করে তুলবে, যা প্রদত্ত কাজ সম্পাদনের জন্য দরকার।’ একা জটিল সমাধান করতে আমাদের যেতে হবে আরো অনেক দূরে। আর এটিই হচ্ছে গবেষণার সক্রিয় ক্ষেত্র। অনেক গবেষক দল এর সমাধান তৈরি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।


শ্রীবাস্তব কী অনুমান করতে পারছেন, কখনো ডোমেস্টিক অ্যাসিস্টিভ রোবট সবখানে পাওয়া যাবে? তার মতে, এই পরিবর্তন চলবে ধীরে ধীরে। যেমনটি ঘটবে অন্যান্য অটেনোমাস এআই তথা আর্টিফিসিয়াল অ্যাপ্লিকেশনের বেলায়, যেমন চরকবিহীন গাড়ির বেলায়। ভ্যাকুয়াম রোবট ক্লিনার ইতোমধ্যেই আমরা পেয়ে গেছি। তেমনি আছে ‘আলেক্সা’র মতো ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টও, যেটি তাত্তি¡কভাবে মৌলিক সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। যদিও অভিজ্ঞা থেকে জানা যায় এটি মাঝেমধ্যে সব উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারে না।


কিন্তু সম্প্রসারিত সময়পরিধিতে রেজোনিং ও প্ল্যানিংয়ের কমপিউটিশনাল জটিলতা আরো অনেক বেশি। তা ছাড়া এর সাথে আছে অতিরিক্ত সমস্যা, যা বিদ্যমান প্রয়োগের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অ্যাসিস্টিভ রোবট হওয়া দরকার সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং ব্যবহারকারীর দক্ষতার সাথে মানানসই। গবেষকেরা এখন সে ব্যাপারেই কাজ করে চলেছেন। এ ধরনের রোবটের যাবতীয় দুর্বলতা কাটাতে এক দিন এরা সফল হবেন, সে বিশ্বাস নিয়েই তাদের এ কর্মসাধনা








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।