https://gocon.live/

প্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেখানে ভবিষ্যৎ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেখানে ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেখানে ভবিষ্যৎ
 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেখানে ভবিষ্যৎ


মানুষ নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? প্রযুক্তি মানুষকে এমন এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে যেখানে ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করবে কে, সে প্রশ্ন উঠছে। ভবিষ্যতে মানুষের বুদ্ধিকে হয়তো ছাপিয়ে গিয়ে কৃ ত্রিম বুদ্ধিমানের নিয়ন্ত্রণ করবে বিশ্ব। যন্ত্রের সাথে যন্ত্রের যোগাযোগ, মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ, মেশিন লার্নিং, ভার্চুয়াল মুদ্রার মতো বিষয়গুলো নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সেদিন বেশিদূরে নয়। মার্কিন প্রকৌশলী ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষক রে কার্জউইল যেমন বলেছেন, ২০২৯ সালের মধ্যেই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির পর্যায়ে চলে আসবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র। এ সময়ের মধ্যে রোবট বা কমপিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রগুলো মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে, ভালো-মন্দের সিদ্ধান্ত নিতেও সক্ষম হবে।


রে কার্জউইল জানিয়েছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রযুক্তি এতটাই অগ্রসর হবে যে, মানুষ শরীরের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে আয়ু বাড়িয়ে নিতে পারবে। শরীরের ভেতর ন্যানো রোবট বসিয়ে কোনো স্থান আক্রান্ত হলে তা সারিয়ে তোলাও সম্ভব হবে।


কী এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে এমন এক কমপিউটার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার কাজে লাগানো যায়। মানুষের ক্ষেত্রে আবেগ শনাক্ত করাটা বুদ্ধিমত্তার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তিক যন্ত্রের মধ্যেও এ বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন যাতে মানুষের সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমানেরা। আবেগ বুঝতে পারলে এসব যন্ত্র ভাষা বুঝতে পারবে আর ভাষা বুঝতে পারলেই জ্ঞানে ঋদ্ধ হবে রোবট। বর্তমানে কৃত্রিম গবেষণায় উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে চলছে। আইবিএমের তৈরি ওয়াটসন কমপিউটার এখন ধাঁধা গেম খেলতে পারে। এছাড়া তৈরি হয়েছে স্বয়ংক্রিয় বা চালকবিহীন গাড়ি। এখন মুঠোফোনেও চলে এসেছে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ব্যবহার। মুঠোফোনে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায়, কারণ মুঠোফোনে সিরি বা গুগল নাউয়ের মতো সফটওয়্যার যুক্ত হয়েছে। কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার মডেল ব্যবহার করে এখন বুদ্ধিবৃত্তিক যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব।


একটু ভিন্ন দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। চীনা প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার দাঁড়াবে ৩৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই এন্টারপ্রাইজ মার্কেট থেকে। আগামী দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফলতা শিল্প খাতে প্রয়োগের ওপর নির্ভর করবে।


তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শদাতা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেন্সি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট বলছে এ খাতের দারুণ সম্ভাবনার কথা। তাদের পূর্বাভাস বলছে, শুধু বাজারজাতকরণ, বিপণন ও সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে আগামী দুই দশকে মুনাফা, দক্ষতাসহ অর্থনৈতিক মূল্য ২৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যেতে পারে।


বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার বলছে, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ভার্চুয়াল জগতে সহকারী হিসেবে কাজের চাহিদা বাড়ছে। ২০২১ সাল নাগাদ ডিজিটাল খাতের কর্মীদের শতকরা ২৫ ভাগ দৈনিক ভিত্তিতে ভার্চুয়াল সহকারীর সাথে কাজ করবে। বর্তমানে ২ শতাংশের কমে ভার্চুয়াল সহকারী ব্যবহার হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নানা ধরনের ভার্চুয়াল সহকারীর দেখা মিলছে। এর মধ্যে ভার্চুয়াল প্রাইভেট অ্যাসিস্ট্যান্ট (ভিপিএ), ভার্চুয়াল কাস্টমার অ্যাসিস্ট্যান্ট (ভিসিএ) ও ভার্চুয়াল এমপ্লয়ি অ্যাসিস্ট্যান্ট (ভিইএ)।


গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সাল নাগাদ কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ ডিজিটাল কর্মী ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার শুরু করবেন। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সহকারী টেক্সটভিত্তিক। তবে শিগগিরই এআইভিত্তিক ভয়েস টু টেক্সট ও টেক্সট টু ভয়েস প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠছে। অ্যামাজন ইকো, অ্যাপল হোমপড, গুগল হোমের মতো পণ্য ব্যবসায়ের কাজে লাগানোর চাপ বাড়বে।


সম্ভাবনার পিঠে আশঙ্কা


একদিকে যেমন সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে আশঙ্কার কথাও বাদ যাচ্ছে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্র মানুষের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে বলে অনেকে ভয় পাচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উঠে আসায় সবচেয়ে শঙ্কায় আছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকেরা। কমপিউটার প্রোগ্রামচালিত বুদ্ধিমান রোবট তাদের চাকরির জায়গা দখল করে নেবে বলে তারা ভয় পাচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞেরা অভয় দিচ্ছেন। তারা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহায়তাকারী বা বন্ধু হতে পারে।


ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলির গবেষক কেন গোল্ডবার্গ ও ভারতের টাটা কমিউনিকেশনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিনোদ কুমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তারা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উঠে আসায় ভয়ের কারণ নেই। তারা একে সাধারণ কর্মীদের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তাদের প্রতিবেদনে বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই কাজের সন্তুষ্টি বাড়বে। একঘেয়ে কাজের বদলে মানুষ আরও সৃজনশীল কাজে উৎসাহী হবে।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা


আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রাথমিক খসড়া তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন এবং ফাইভজি নিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছরে প্রমোট করার কথা বলেছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রাইডসিস আইটি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার ইকবাল বলেন, দেশের সর্বক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া দেশের বৃহৎ গার্মেন্টস ইআরপি সলিউশন দেন তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সেবা দিতে দেশ ও দেশের বাইরে কাজ করছে তার প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের তরুণেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে আগ্রহী, তরুণদের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দেশের অগ্রগতির জন্য ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তিনি প্রাইডসিস আইটি নিয়ে সে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার প্রতিষ্ঠান গার্মেন্টস ইআরপি ছাড়া এআই, ব্লকচেইনের মতো নানা সেবা দিচ্ছে।


প্রয়োজন নৈতিকতা


ত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে এ খাতের নীতি ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি নিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, জাতিসংঘের প্রয়াত মহাসচিব কফি আনান অনেক আগেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান সম্পর্কে আমাদের হুশিয়ার করেছিলেন। বর্তমান সময়ের আলোচিত প্রযুক্তিবিদ ইলন মাস্ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নকে ‘দৈত্যকে ডেকে আনার শামিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর হুমকি এমনকি এটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, এ প্রযুক্তি একসময় মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, নিজেই একটি সত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একটি চ্যাটবটের প্রকল্প ঠিক একই কারণে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। তবে মানুষ প্রযুক্তি সৃষ্টি করে তার পরিশ্রম লাঘবের জন্য। মানুষের সাথে যন্ত্রের পার্থক্যই এখানে। যন্ত্র যদি ক্রমে মানবীয় গুণাবলী অর্জন করতে শুরু করে, মানুষ এবং যন্ত্রের বিরোধটা শুরু হবে এখান থেকেই। অনেকের ধারণা আগামী দিনে মানুষের কাজের পরিধি কমে গিয়ে মানুষ হয়ে পড়বে ক্রমশ কর্মশূন্য। বুদ্ধিমান যন্ত্রের মাধ্যমে যে বিপুল সম্পদ উপার্জিত হবে, তার ওপর কর ধার্য করে এবং সেই অর্থ মানবজাতির ভেতর বণ্টন করে মানবসভ্যতায় সমন্বয় করা হবে। কর্মহীন যে জীবনের আশঙ্কা আমাদের দিকে উঁকি দিচ্ছে, তা একেবারে অমূলক নয়। সেই কর্মহীন জীবন কতটা সুখকর হবে অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি আমরা কতটা মানবকল্যাণে কাজে লাগাতে পারব, সেটিই আসল চিন্তার বিষয়। তবে ভয়কে সবসময় জয় করে এসেছে মানুষ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পোষ মানানো গেলে তা অপকারের চেয়ে উপকার করবে বেশি








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।