https://gocon.live/

প্রযুক্তি

বায়োনিক হার্ট

বায়োনিক হার্ট বায়োনিক হার্ট
 

বায়োনিক হার্ট


ভিএডি



পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় আগে একজন চিকিৎসক একজন রোগীর দেহে সংযোজন করেছিলেন বিশ্বের প্রথম মেকানিক্যাল হার্ট পাম্প। সেই হার্ট পাম্পটি পরিচিত ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস ভিএডি (VAD) নামেও। এটি সংযোজন করা হয়েছিল রোগীর বুকে। কারণ, এই রোগীর হার্ট নিজ থেকে রক্ত পাম্প করতে পারত না। সেই থেকে এই ডিভাইস প্রাণ বাঁচিয়েছে এ ধরনের অসংখ্য রোগীর। এদের মধ্যে আছেন ইসমাইল তুরসুনভ। চব্বিশ বছরের এই যুবক হার্ট ফেইলিউরের একদম শেষ পর্যায়ে ছিলেন। তখন গত বছর ডিসেম্বরে কাজাকস্তানের এক চিকিৎসক এই ভিএডি নামের বায়োনিক হার্ট বাল্ব তার দেহে সংযোজন করেন। তবে ইসমাইল তুরসুনভের বুকে সংযোজিত এই হার্ট বাল্ব আগের অন্যান্য বাল্বের চেয়ে ছিল একটু আলাদা। এটি দেহের ভেতরে থাকলেও বাইরে থেকে তারবিহীনভাবে চার্জ করা যায়। এর ফলে এই হার্ট বাল্ব ফেইল করার সবচেয়ে বড় সমস্যাটির অবসান ঘটে। এটি চার্জ না থাকার কারণে আর কখনোই অকেজো হবে না।



সাধারণত একটি ভিএডি চার্জ করা হয় পাওয়ার কর্ডের মাধ্যমে। এজন্য ডিভাইসটি থেকে একটি তার রোগীর উদর বা অ্যাবডোমেন অংশ দিয়ে একটি ছিদ্রপথে বের করে এনে একটি পাওয়ার আউটলেটে কিংবা এক্সটার্নাল ব্যাটারিতে জুড়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমেই হার্টে বাল্বটির চার্জ সম্পন্ন করা হয়। সে জন্য যেসব রোগী প্রচলিত ধরনের হার্ট বাল্ব ব্যবহার করেন, তাদের সাথে সব সময় ব্যাকআপ ব্যাটারি রাখতে হয়, নয়তো চার্জ শেষ হয়ে গেলেই তাদের ব্যবহৃত হার্ট বাল্ব কাজ বন্ধ করে দিতে পারে। হার্ট পাম্প বন্ধ হওয়ার আগে এটি বদলানোর জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় পাওয়া যায়। যে ছিদ্র দিয়ে পাওয়ার কর্ড বের করে আনা হয়, সে স্থানটিও সংক্রমিত হওয়ার জন্য একটি হটস্পট হিসেবে বিবেচিত। সে জন্য আগাম পূর্বাভাসের ব্যাপারে রোগীকে খুবই সচেতন থাকতে হয়। কিন্তু তুরসুনভের ভিএডি চার্জ করতে এ ধরনের পাওয়ার কর্ড বা বিদ্যুতের তারের প্রয়োজন হয় না। ইসরাইলি প্রযুক্তি কোম্পানি লেভিটিকাস কার্ডিও এই ভিএডি উদ্ভাবন করে। এই ভিএডি সিস্টেমের রয়েছে একটি রিসিভার ইনডাকটিভ কয়েল, একটি ব্যাটারি এবং একটি ইন্টারনাল কন্ট্রোলার এ সবই বসানো হয়েছে তুরসুনভের বুকে। একবার চার্জ করলে ডিভাইসটি আট ঘণ্টা চলে। যখন তুরসুনভের এটি আবার চার্জ করার প্রয়োজন হয়, তখন তার গেঞ্জিতে লাগানো থাকা একটি এক্সটার্নাল কয়েলের ওপর হাত বুলিয়ে দিলেই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক্যালি চার্জ হয়ে যাবে এর ইনার কয়েলটি।


হাতের কব্জিতে থাকা একট রিস্ট মনিটর তুরসুনভকে সহায়তা করবে ভিএডির ওপর নজর রাখতে। এর মাধ্যমে সে জানতে পারবে ব্যাটারির চার্জ কমে গেল কি না। কিংবা এই ডিভাইস যদি আরো কোনো ধরনের অকার্যকারিতা প্রদর্শন করে, তাও জানা যাবে এই মনিটরের মাধ্যমে। এই তারবিহীন চার্জ ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তুরসুনভ সুযোগ পাবেন তারযুক্ত চার্জ করার সুযোগও। কিন্তু এই ভিএডি ব্যবহারের পর থেকে আজ পর্যন্ত তাকে তা করতে হয়নি।


নির ইউরিড। তিনি ভিএডি সিস্টেম বিশেষজ্ঞ এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হার্ট ফেইলিউর, ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অ্যান্ড মেকানিক্যাল সার্কুলেটরি সাপোর্ট’-এর ডিরেক্টর। তিনি লেভিটিকাসের ভিএডি সৃষ্টির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তিনি অবশ্য এই সিস্টেমটি ঘোষণার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাজির ছিলেন। তিনি এই সিস্টেমটি সম্পর্কে প্রবল আশাবাদী। তিনি বলেন, রোগীর জীবন-মান উন্নয়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এর ফলে একজন রোগী তার হার্ট বাল্বে চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা না করেই প্রতিদিনের কাজে যেতে পারবেন। তিনি যদি চার্জ করতে কয়েক ঘণ্টার জন্য ভুলেও যান, তবে তার সহায়তায় এগিয়ে আসবে এলভিএডি (লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস)। আমরা চিকিৎসক সমাজ, কার্ডিওলজিস্ট, কার্ডিয়াক সার্জন, ভিএডি কোঅর্ডিন্যাটর এবং রোগীরা দশকের পর দশক ধরে এমনি একটি ডিভাইসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।


বিভাকর


অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছেন নতুন ধরনের হার্ট বাল্ব। এটি কোনো পালস (হৃদস্পন্দন) ছাড়াই রোগীর সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন করে। এটি বিশ্বের প্রথম পালসহীন বায়োনিক হার্ট। এর নাম দেয়া হয়েছে বিভাকর (BiVACOR)। এই ডিভাইসটি সফলভাবে সংযোজন করা হয়েছে একটি ভেড়ার দেহে এবং তা ভালোভাবে কাজ করছে। খুব শিগগিরই এই বায়োনিক হার্ট মানুষের দেহের সংযোজনের আশা করছেন। এটি এ ধরনের হার্ট বাল্বের মধ্যে শুধু প্রথমই নয়, এর আকার অন্যান্য হার্ট বাল্বের তুলনায় ছোট এবং এর পরিধান সহজতর এ অভিমত এই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ড্যানিয়েল টিমসের।


বিভাকর ডিভাইসটি তুলনামূলকভাবে সরল। এটি তৈরি দুটি টাইটানিয়াম সেন্ট্রিফিউগাল ইম্পেলার বা ডিস্ক দিয়ে। এগুলো স্থাপন করা হয় একটি সরল রোটরে। যন্ত্র চালানোর জন্য যে অংশ ঘোরাতে হয়, তাই হচ্ছে রোটর, যেমন হেলিকপ্টারের প্রপেলারের আনুভ‚মিক ঘূর্ণনশীল পাখাগুলোর সমাবেশ। এই ডিস্ক প্রতি মিনিটে দুই হাজারবার ঘুরে রক্তকে ডিভাইসের অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেয়। এটি প্রচলিত পালসভিত্তিক ডিজাইন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণ। এতে রয়েছে বেলুনসদৃশ রক্তঝিল্লি পাম্প করার ব্যবস্থা। যেহেতু এ যন্ত্রটির একটি মাত্র মুভিং পার্ট (মধ্যভাগের রোটেটিং ডিস্ক) রয়েছে, সেহেতু এটি অকার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুই কম।


একেকজন মানুষের গড়ে ৪ কোটি ২০ লাখ বার হৃদস্পন্দন ঘটে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, যদি তা করা হয় একটি যন্ত্রের সাহায্যে, যার থাকবে প্রচুরসংখ্যক যন্ত্রাংশ, তবে তা দ্রুত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে বললেন এই যন্ত্রটির উদ্ভাবক কোম্পানি বিভাকরের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ড. উইলিয়াম কোহন। সে কারণেই বিভাকর প্রথমবারের মতো উদ্ভাবন করে একটি মাত্র মুভিং পার্টওয়ালা এই যন্ত্র। এটি রোগীর দেহে রক্ত পাম্প না করে প্রপেল করে। কোহনের দাবি এ পর্যন্ত বাজারে আসা যেসব কৃত্রিম হার্টগুলোর মধ্যে বিভাকরই সবদিক থেকে ভালো কাজ করছে।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।