https://gocon.live/

প্রযুক্তি

ডিজিটাল যুগে চাই জ্ঞানকর্ম

ডিজিটাল যুগে চাই জ্ঞানকর্ম ডিজিটাল যুগে চাই জ্ঞানকর্ম
 

ডিজিটাল যুগে চাই জ্ঞানকর্ম


এটি এখন বহুল আলোচিত বিষয়। সামনের যুগটার নাম ডিজিটাল যুগ। অন্যদিকে একেবারে ন্যূনতম স্তরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবকটি দেশকে সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল রূপান্তর করতে হবে। খুব সঙ্গত কারণেই এই যুগে প্রচলিত অর্থনীতিকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে। কেউ কেউ নতুন অর্থনীতিকে ডিজিটাল অর্থনীতি, সৃজনশীল অর্থনীতি, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ইত্যাদি নামেও অভিহিত করেন। ডিজিটাল বিপ্লব, শিল্পবিপ্লব ৪.০, সোসাইটি ৫.০ ইত্যাদি যে নামেই ডাকি না কেনো, এসডিজি, ডব্লিউইএফ বা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম যাই বলুক, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে ঘোষণা দিয়ে সবার আগে জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববাসীর জন্য ডিজিটাল রূপান্তর অনিবার্য। যেভাবেই ভাবুন, বিশ্বের সব দেশের আগে আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল ব্রিটেন ও ২০১৪ সালের আগস্টে ভারত ডিজিটাল শব্দটি তাদের দেশের নামের সাথে যুক্ত করে। পরে ইউরোপে ডিজিটাল ধারণার বিকাশ ঘটে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ১২ সালের সম্মেলনে। তারাই ডিজিটাল বিপ্লবকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে শনাক্ত করে। এখন সারা দুনিয়াই ডাভোস—এর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নাম মন্ত্র জঁপার মতো জঁপ করছে। একই কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নির্বাহী সভাপতি কার্লস সোয়াবের নাম সবাই জানে। কেউ মনে রাখেনি বলেই আমি উল্লেখ করতে চাই, ’৮০ সালে প্রকাশিত এলভিন টফলারের বই দ্য থার্ড ওয়েবই প্রথম বিশ্বসভ্যতার নতুন ধারাটিকে শনাক্ত করে। এমনকি ২০০৩ সালে জেনেভায় ডব্লিউএসআইসির ঘোষণায় বিশ্বকে একটি তথ্যসমাজ বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তরের স্বপ্নও দেখা যায়। আমি খুব স্পষ্ট করে একটি বিষয় মনে করি যে, বস্তুত ডিজিটাল বিপ্লব, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা আর যাই কিছু হোক মূল পরিবর্তনটা হচ্ছে কায়িক শ্রমভিত্তিক দুনিয়া মেধাভিত্তিক দুনিয়াতে পরিণত হবে। আমাদের নতুন প্রজন্মের সন্তানদের এজন্যই ভেবে দেখতে হবে যে, নতুন পৃথিবীর পেশাজীবী হিসেবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেকে কায়িক শ্রমিক থেকে জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের জন্য এটি অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে এই রূপান্তরটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। একবাক্যে এটি আমাদের মানতেই হবে যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শিল্পবিপ্লব মিস করে এবং প্রথম শিল্পবিপ্লবে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বসবাস করে কায়িক শ্রমিক থেকে জ্ঞানকর্মীতে পরিণত হওয়া কঠিনতম চ্যালেঞ্জ।


২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা দেশটির ডিজিটাল রূপান্তরে সরকারিভাবে কাজ করা শুরু করেন। এবার আমরা তার এক দশক পার করে দ্বিতীয় দশকে পা ফেলেছি এবং আমাদের নেত্রী আরও অন্তত প্রায় পাঁচ বছর এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছেন। ফলে খুব সঙ্গত কারণেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপায়ণের পরিধিটা অন্তত ১৫ বছর গণ্য করতেই পারি। আমি এটিও আশা করি যে, ক্রমবাহিক ১৫ বছরের ডিজিটাল রূপান্তরের প্রচেষ্টার পর আমাদের পায়ের পাতা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না।


২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর আমরা শুধু আমাদের নিজেদের দেশটাকেই ডিজিটাল করছি না বরং আমাদের পথ ধরে সারা বিশ্ব বহমান সভ্যতাকেই ডিজিটাল করার চেষ্টা করছে এবং সারা বিশ্ব ডিজিটাল বিশ্বে রূপান্তরিত হয়েই চলেছে। বিশ্বজুড়ে এখন এই বিষয়টি সর্বোচ্চ আলোচ্য বিষয় হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামেও ডিজিটাল অর্থনীতি আলোচিত হয়েছে। ওরা এখন উপলব্ধি করছে যে, দুনিয়া চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে হাঁটছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি সেই বিপ্লবের হাতিয়ার এবং সারা দুনিয়াতেই ডিজিটাল অর্থনীতি এখন চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে।


আমাদেরকে ডিজিটাল অর্থনীতি বলতে কী বোঝায় এটি আগে স্পষ্ট করে বুঝতে হবে। এই বিষয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। ডিজিটাল অর্থনীতি যদি বোঝায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাইজড হয়ে গেছে; তফসিলি ব্যাংকগুলো ডিজিটাইজড সেবা দিচ্ছে; মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামেগঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা পৌছে যাচ্ছে; এটিএম ব্যবহার করে টাকা তোলা যাচ্ছে; অনলাইন ব্যাংকিং চালু হয়েছে; ডিজিটাল কমার্স ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে; এমন সব ধরনের কার্যক্রম, তাহলে হতাশ হওয়া ছাড়া বলার কিছু নেই। এগুলো হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতির এক ধরনের প্রদর্শন প্রভাব। বরং এগুলোকে ডিজিটাল অর্থনীতির মুখোশ বলা যাবে। ডিজিটাল অর্থনীতি বুঝতে হলে আমাদেরকে অর্থনীতির রূপান্তর সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। এক সময় আমাদের এই পৃথিবীর সব দেশই ছিল কৃষিভিত্তিক।


তারপর কৃষিভিত্তিক সমাজ ভেঙে হলো শিল্পভিত্তিক সমাজ। শিল্পভিত্তিক সমাজ থেকে সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ হলো। সমাজ বিকাশের ধারায় উৎপাদনশীলতা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উৎপাদনশীলতার কারণে সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে যন্ত্র, তারপরে বিদ্যুৎ এবং তারও পরে ইন্টারনেট উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছে। এরপর উৎপাদন ব্যবস্থায় আসছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে মেধাভিত্তিক উৎপাদনশীল একটি অর্থনীতি, যার ভিত্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। কৃষি, শিল্পবাণিজ্য, সেবা খাতকে বাদ দিয়ে কাগজে কলমে ডিজিটাল প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নাম ডিজিটাল অর্থনীতি নয়। ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা মেধাভিত্তিক সৃজনশীল উৎপাদনমুখী অর্থনীতি। কেউ কেউ একে খুব সহজে সৃজনশীল অর্থনীতিও বলেন।


ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে আমাদেরকে প্রথমে মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ পেতে হবে, যারা প্রয়োজনীয় ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল টুলস বা প্রযুক্তি বা উপকরণ ব্যবহার করে অতীতের সব সময়ের চেয়ে বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারে। একটি গাড়ি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় লোহার। লোহার দাম সারা বিশ্বে প্রায় একই। এই লোহা দিয়ে টয়োটা, মার্সিডিজ, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির সময় প্রযুক্তিগত জ্ঞান লোহার মূল্য সংযোজন বহুগুণ বৃদ্ধি করে। এটাই হচ্ছে মেধাবী মানবসম্পদের তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের একটি দৃষ্টান্ত। এসব গাড়িতে ব্যবহৃত লোহার মূল্যের সাথে যদি মেধার মূল্য সংযোজন তুলনা করেন, তাহলে মেধার মূল্য অনুভব করতে পারবেন। এটি যদি এমন হয় যে, কোনো একটি সফটওয়্যারে যাতে কোনো বস্তুগত কাঁচামালেরই প্রয়োজন হলো না কিন্তু সেটির মূল্য সংযোজন বহুগুণ বেশি হলো বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, বিগ ডাটা, আইওটি ইত্যাদি ব্যবহার করে পণ্যের উৎপাদন বা মূল্য সংযোজন বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব হলো, তবে সেটি তৃতীয় শিল্পযুগের ছকটা অতিক্রম করে গেল। যে দেশে মেধাবী মানবসম্পদ রয়েছে তারাই অর্থনীতিকে এখন ডিজিটাল করতে সক্ষম হচ্ছে।


আমাদের অর্থনীতিতে একসময় কৃষির অবদান ছিল ৮০ শতাংশ। অথচ তখন ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। এখন আমাদের অর্থনীতিতে কৃ ষির অবদান নেমে হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশে। তারপরও বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। এই যে মেধা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে, এটাই হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রাথমিক রূপ। এরপর আমরা কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, আইওটি ইত্যাদি প্রযুক্তি ব্যবহার করব এবং কৃষি অর্থনীতিকেই একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত করব। আবার উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরাসরি ভোক্তাপর্যায়ে পেঁৗছানোর জন্য মেধা ও প্রযুক্তির ব্যবহারই হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতি। উৎপাদনশীলতাকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আধুনিক বিশ্বে মেধাভিত্তিক সম্পদ যাদের বেশি রয়েছে তারা কিন্তু কৃষি, শিল্প—ব্যবসায়—বাণিজ্য, সেবাখাতসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে। যার কারণে অনেক শিল্পোন্নত দেশের কৃষি উৎপাদন কৃষিভিত্তিক দেশের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। আমেরিকার অর্থনীতিতে ৩৭ শতাংশ অবদান রাখছে মেধাভিত্তিক সম্পদ। চীন, ভারত এখন মেধাভিত্তিক সম্পদ গড়ে তোলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিতে বস্তুগত সম্পদের চেয়ে মেধাসম্পদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদেরকে অর্থনীতির প্রতিটি খাতের জন্য মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তবে এটা ঠিক, আমাদের অর্থনীতি সময়ের প্রয়োজনে ক্রমেই ডিজিটাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।


নিবন্ধটির এই অংশটি শেষ করার আগে জ্ঞানকর্মীর সংজ্ঞার ধারণাটি উইকিপিডিয়া থেকে একটু তুলে ধরতে চাই। এতে বলা হয়েছে, জ্ঞানকর্মকে অন্য ধরনের কাজ থেকে এভাবে আলাদা করা যায় যে, জ্ঞানকর্মের গুরুত্ব রুটিনহীন ও সমস্যা সমাধানের ওপর দেয়া হয়ে থাকে। এজন্য দরকার সমন্বয় ও বহুমুখী ভাবনার। তবে এখনও জ্ঞানকর্মের একটি সমন্বিত, গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মতামত দিয়ে থাকেন। ২০০৭ সালে মসকো ও ম্যাককেনার তাদের মতামত দেন। কিন্তু সেটি এখন বোধহয় আর তেমন প্রযোজ্য নয়। এই বিষয়ে মতামত দেন ফ্লোরিডা। তাদের ধারণা, সিম্বল বা প্রতীককে কোনো নতুন কাজে রূপান্তর করা বা কোনো বিদ্যমান কাজকে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে নবায়ন যিনি করেন, তিনি জ্ঞানকর্মী। এতে জ্ঞানকর্মকে সৃজনশীল কাজ হিসেবে অনেক বেশি চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ধারণাটিকে একটু বিস্তৃত করে বলা যেতে পারে যে, যিনি তথ্য বা উপাত্ত নিয়ে কাজ করা বা বিতরণ করার ক্ষেত্রে সৃজনশীল অবদান না করলেও কিছু প্রকৃত মূল্য সংযোজন করেন তিনি জ্ঞানকর্মী। অন্যদিক থেকে জ্ঞানকর্মী হিসেবে তাকেই চিহ্নিত করা হয়েছে, যিনি একটি জ্ঞানপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন। একজন স্থপতিকে জ্ঞানকর্মীর দৃষ্টান্ত হিসেবে উইকিপিডয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। উইকিপিডিয়ার মতে, জ্ঞানকর্মীরা তাদের মোট সময়ের ৩৮ শতাংশ তথ্য আহরণের জন্য ব্যয় করেন। তারা নির্দিষ্ট স্থানে বা ভৌগোলিক সীমানায় কাজ নাও করতে পারেন। তার বাড়িটা অফিস হতে পারে। আকাশে প্লেনে চড়ার সময় বা বিমানবন্দরের লাউঞ্জে তিনি কাজ করতে পারেন। আমরা সবাই জানি যে, শিল্পযুগোত্তর এক ধরনের কর্মীকে হোয়াইট কলার বলা হয়। এরপর একদল লোককে ব্লু কলারও বলা হয়। জ্ঞানকর্মীদেরকে কেউ কেউ স্বর্ণকলারও বলে থাকেন। তাদের উচ্চ বেতন ও স্বেচ্ছাধীন কাজ করাকে শিল্পযুগের তিন স্তরের কর্মীদের সাথে মেলানো কঠিন। জ্ঞানকর্মীর সংজ্ঞাবিষয়ক এই আলোচনার প্রেক্ষিতে আমাদের প্রয়োজন হবে বহমান বিশ্ব প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে জ্ঞানকর্মী গড়ে তোলার জন্য আমাদের কী করণীয় রয়েছে সেটি অনুভব করা। বাংলাদেশ যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার দশ বছর পার করেছে, তখন জ্ঞানকর্মী গড়ে তোলার বিষয়টি বিস্তারিত না জেনে আমরা পারি না।


গড়ে তুলি জ্ঞানকর্মী : জ্ঞানকর্মীর সংজ্ঞা থেকেই উপলব্ধি করা যায় যে ডিজিটাল যুগে কাজগুলো, শিল্প উৎপাদন প্রক্রিয়া, বাণিজ্য, শিক্ষা, সরকার তথা জীবনধারা ডিজিটাল হওয়ার ফলে অতীতের ধারাবাহিকতা বা দক্ষতার ওপর নির্ভর করে সামনের দিনে টিকে থাকা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথাটি হচ্ছে, ডিজিটাল অর্থনীতির মানবসম্পদের জোগান সেই ধারার অর্থনীতির সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের একটি সুবিধা হচ্ছে, তারা খুব দ্রুত উন্নত প্রযুক্তি নিজেদের আয়ত্তে নিতে পারে। দেশে বর্তমানে ১৫.৭০ কোটি মোবাইল সংযোগ আছে এবং অন্তত ১০ কোটি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এখন প্রায় ১০ কোটি ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এখন ৫ মিনিট যদি ইন্টারনেট বন্ধ থাকে তবে আমাদের অর্থনীতির ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে তা চিন্তাও করা যায় না। অথচ আজ থেকে ১০ বছর আগে ইন্টারনেটের কোনো প্রভাবই অর্থনীতিতে ছিল না। ফেসবুক ব্যবহার করে হাজার হাজার তরুণ নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অনুমান করা হয় যে, ১০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী এতে ব্যবসায় করে। বিপণন ও সামাজিক যোগাযোগের কথা না হয় উল্লেখই করা হলো না। ফেসবুক থেকে সরাসরি জিনিসপত্র বেচাকেনা হচ্ছে। এখন আর ভোক্তাকে বাজারে গিয়ে পছন্দের জিনিস কিনতে হচ্ছে না। ইন্টারনেটে জিনিস পছন্দ করে অর্ডার দিলেই তা বাসায় পেঁৗছে যাচ্ছে। মূল্য পরিশোধ করে ভোক্তা তা গ্রহণ করতেও পারছে। মানুষ যতটুকু সুযোগ—সুবিধা রাষ্ট্রীয়ভাবে পেয়েছে তা সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। যেটা বর্তমানে ডিজিটাল অর্থনীতি হিসেবে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। মানুষ কিন্তু বসে নেই। তার নিজের প্রয়োজনে এগিয়ে যাচ্ছে। যার সুফলটা পাচ্ছে রাষ্ট্র এবং সরকার। এখানে আরো অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং যুগোপযোগী করার দরকার রয়েছে। তাহলে মেধাভিত্তিক একটি মানবসমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারব। আমাদের মানবসম্পদের ৯০ শতাংশ এখনও কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাদেরকে যদি মেধাভিত্তিক সম্পদে পরিণত করা যায়, তাহলে সত্যিকার ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠক্রম, পাঠ্যবিষয় ও পাঠদানের আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে ডিজিটাল যুগের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে পারার উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি করা। আমরা আগেই আলোচনা করেছি, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হচ্ছে সৃজনশীলতা। থাইল্যান্ডের জাতীয় নীতিমালা হচ্ছে তারা যাই উৎপাদন করুক না কেন, এর মাধ্যমে ১৫ শতাংশ সৃজনশীলতার মাধ্যমে মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে। এই মূল্য সংযোজন বাড়াতে হলে মেধাবী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। সৃজনশীলতা বাড়ানো এবং মূল্য সংযোজন বাড়ার উপযোগী মানবসম্পদ আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। দেশের ১৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টি সরকারি—বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। এখান থেকে যারা পাস করে বের হচ্ছে, তারা যে জ্ঞানকর্মী হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে খুব ভালো করতে পারছে এমনটাও নয়। কমপিউটার সায়েন্সে পড়া শতকরা ৫ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রোগ্রামার হিসেবে পাওয়া যায় না। দেশের উচ্চশিক্ষার বড় দুর্বলতাটি হচ্ছে যে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিষয়গুলো সেই পর্যায়ে পড়ানোই হয় না। এমনকি সরকার একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেও তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন এসব বিষয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করেনি। মাধ্যমিক স্তরে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি থাকলেও তার বহমান মান অতি নিম্ন। সঙ্কট অনেক বেশি। প্রাথমিক স্তরে এখনও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির শিক্ষা দেয়া হয় না।


আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে সৃজনশীলতা বাড়ছে না। যে কারণে উচ্চশিক্ষার হার বাড়লেও মেধাবী মানবসম্পদের পরিমাণ বাড়ছে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মান যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি শিক্ষাব্যবস্থাকেও যুগোপযোগী করতে হবে। বাংলাদেশে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে যাওয়ার পথে বড় বাধা ও কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রচলিত ও বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা। এর ডিজিটাল রূপান্তর প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ ডিজিটাইজেশনের পক্ষে। আমরা দেখেছি সিলেটে রাজন হত্যাকাণ্ড ইউটিউব এবং ফেসবুকে প্রচারের পর সরকার খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছে। সাধারণ মানুষ খুনিকে চিহ্নিত করে সৌদি আরবে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাইজেশনের কারণে খুনির অপরাধ সম্পর্কে কোনো সাক্ষী ছাড়াই জানা সম্ভব হয়েছে। এতে বিচারও সুষ্ঠু হয়েছে। নুসরাতের ঘটনাটিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই ব্যাপক প্রচার পায়। এটি হচ্ছে ডিজিটাইজেশনের দৃশ্যমান ফলাফল। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ডিজিটাইজেশন হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য। যার কারণে অনেকে নিজেদের কৃতকর্ম আড়াল করার স্বার্থে ডিজিটাইজেশনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তরুণ সমাজের মধ্যে আমরা ডিজিটাইজেশনের পক্ষে যে জোয়ার দেখছি, তা কোনো বাধা দিয়ে আটকে রাখা সম্ভব হবে না। জনগণ যেভাবে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে চলতে চাচ্ছে তার সাথে সরকারের প্রশাসন যন্ত্রকেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে দুনিয়ার সব কিছু বদলানো যায় শুধু ব্রিটিশ ধাঁচের আমলাতন্ত্র পরিবর্তন চ্যালেঞ্জিং। ২০১৮ সালে যে আইসিটি পলিসি আমরা প্রণয়ন করেছি, সেখানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময়কাল সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের টাইমলাইনের আগেই মানুষ সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশেরা আমাদেরকে অফিসের কেরানি, কলকারখানার শ্রমিক তৈরি করার যে শিক্ষাপদ্ধতি দিয়ে গেছে এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য এখন বিশাল একটা বোঝা। এই বোঝা কমাতে হলে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল রূপান্তর করে উৎপাদনশীল, সৃজনশীল, ডিজিটাল ও নতুন যুগের ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা চালু করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি যেভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে এর সাথে চাহিদা অনুযায়ী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। না পারলে অর্থনীতি গতিশীল ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে না। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে ক্ষতস্থানে মলম লাগানোর উপযোগী। এখানে ছোটখাটো বা অপরিকল্পিত সংস্কার করা হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করা হলে ডিজিটাল অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কোনো স্তরে ডিজিটাল যুগের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত হয়নি।


সরকারের প্রশাসন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে চলে গেলে সেখানে অনেক মেধাবী লোকবলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যাদের সৃজনশীলতা আছে তারা দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পাওয়ার কারণে বর্তমানে বিদেশ চলে যাচ্ছে। তারা সেখান থেকে আয় করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। দেশে বিশাল সফটওয়্যার মার্কেট রয়েছে। আমরা যদি দেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করি, তাহলে যারা আইটি প্রফেশনাল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে এসেছে তারা সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবে। দেশে যেহেতু এখন কোর ব্যাংকিং সলিউশন তৈরি হয়, তাহলে বেশি দামে বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে কি? আমাদের জাতীয় নীতিমালা হওয়া উচিত আমরা যা উৎপাদন করি, তা যেন আমদানি না করি। ভারত এই নীতিমালা প্রয়োগ করে সব ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পেরেছে। যে ব্যাংকগুলো বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তারা দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে উদ্যোগ নিতে পারে এবং কোর ব্যাংকিং সলিউশন তৈরিতে সহায়তা করতে হবে। আমরা দেশে যদি সফটওয়্যার তৈরিতে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি, তাহলে তা রফতানিতেও ব্যবহার করতে পারব। ডিজিটাইজেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যা দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাসংস্কৃতি সব কিছুকেই প্রভাবিত করবে। ডিজিটাল অর্থনীতি অগ্রসর করার জন্য দেশে মানুষের যে আগ্রহ এবং চাপ রয়েছে আমি মনে করি এর মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে বাধ্য। আমরা সামন্ততান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী সমাজের মধ্যে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন যদি চাই, তাহলে সেটা একমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি দিয়েই সম্ভব হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হচ্ছে এখন সামাজিক যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ছিল সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তোলা, সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। ’১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে যদি তাকাই তবে সব সূচকে এর অগ্রগতির একটি বড় কারণ হচ্ছে যে এমনকি প্রচলিত প্রথম শিল্পযুগের শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ মানবসম্পদকেও আমরা ডিজিটাল যুগের কাজে ব্যবহার করতে পারছি। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি বড় সফলতা। তবে শিশুশ্রেণি থেকে যদি ডিজিটাল দক্ষতা গড়ে তোলার কাজটা আমরা করতে পারি, তবে বিশ্বের সেরা দেশে পরিণত হতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে না। ডিজিটাল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনাটা হচ্ছে আমাদের মানবসম্পদ। আমাদের জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগের বয়স ৩০ বছরের নিচে। আমরা শুধু যদি এই মানবগোষ্ঠীকে ডিজিটাল যুগের মানবসম্পদে পরিণত করতে পারি তবে সেটিই হবে অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা।


জ্ঞানকর্মী গড়ে তোলার যে বিষয়গুলো আমরা আলোচনা করেছি, তার সারাংশটি এ রকম হতে পারে প্রথমত, বিদ্যমান বা প্রচলিত শিক্ষায় যারা শিক্ষিত হয়েছে বা যারা কায়িক শ্রমের দক্ষতা নিয়ে কাজ করছে তাদেরকে জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ডিজিটাল দক্ষতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রগুলো থেকে বাছাই করে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেয়া হলে আমাদের মানবসম্পদ রফতানির গতি পাবে। যদি তা করতে না পারি তবে মানবসম্পদ রফতানি স্থবির হবে ও এক সময় উল্টো স্রোতে প্রবাহিত হবে। একই সাথে দেশের ডিজিটাল রূপান্তরে নিজের দেশে যেসব পেশাগত পরিবর্তন হবে এবং জ্ঞানকর্মীদের যে চাহিদা তৈরি হবে তার জন্য ডিজিটাল দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।


বড় কাজটি করতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়। এই শিক্ষার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ স্তরে বিষয়বস্তু, পাঠ্য উপকরণ, পাঠদান, মূল্যায়ন এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিকে সমন্বিতরূপে ডিজিটাল করতে হবে। গত এক দশকে এই খাতে সমন্বয়ের অভাব প্রকট ছিল। পরিকল্পনার সঙ্কট এবং ডিজিটাল রূপান্তরে গুণগত মান অর্জনে ঘাটতি ছিল। ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু তাতে অপ্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করার পাশাপাশি পেশাগত ডিজিটাল কনটেন্টও দেয়া হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা প্রচলন করার পাশাপাশি ডিজিটাল ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছে, কিন্তু ল্যাব পরিচালনা ও ব্যবহার সমন্বিত বা পর্যাপ্ত ছিল না।


সবচেয়ে বড় প্রয়োজনটি হচ্ছে প্রাথমিক স্তর থেকেই প্রোগ্রামিং- রোবটিক্সের মতো বিষয় যুক্ত করা এবং ডিজিটাল যুগের বিষয়গুলো সব স্তরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অংশ হিসেবে চালু করা।









০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।