https://gocon.live/

প্রযুক্তি

ভিডিও গেম চিহ্নিত করবে আলঝেমার’স রোগ

ভিডিও গেম চিহ্নিত করবে আলঝেমার’স রোগ ভিডিও গেম চিহ্নিত করবে আলঝেমার’স রোগ
 

ভিডিও গেম চিহ্নিত করবে আলঝেমার’স রোগ


Alzheimer’s হচ্ছে এক ধরনের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিবৈকল্য, যার ফলে মানুষ স্মৃতি হারিয়ে ফেলে। এর ফলে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় আচার-আচরণে বৈপরীত্য দেখা দেয়। এর লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং সময়ের সাথে তা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবন—যাপনকে অসম্ভব করে তোলে। আলঝেমার’স-এর প্রথম দিকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে নতুন শেখা তথ্য মনে রাখতে না পারা। এ রোগে ভয়াবহ ধরনের স্মৃতিহারার ঘটনা ঘটতে পারে। আলঝেমার’স রোগীর কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়, তার মস্তিষ্ককোষগুলো মরে যাচ্ছে, যার ফলে এগুলো আর তার কাজে আসছে না। এ ধরনের রোগীরা এমনকি মনে করতে পারেন না, তাদের এই সমস্যা আছে বলে।


সে যা-ই হোক, মাত্র কয়েক মিনিট একটি নির্দিষ্ট ভিডিও গেম খেলার পরই এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা সম্ভব আলঝেমার’স—এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো ওই গেমারের মধ্যে আছে কিনা। গবেষকেরা জানতে পেরেছেন এ গেমের মাধ্যমে মেডিক্যাল টেস্টের চেয়েও আরো ভালোভাবে আলঝেমার’স রোগ চিহ্নিত করা যাবে। এক নয়া সমীক্ষায় ব্যবহার করা হয় Sea Hero Quest নামের একটি স্মার্টফোন অ্যাপ বা গেমটি। এর মাধ্যমে মনিটর করা হয় গেমারদের মধ্যে একজন আলঝেমার’স রোগী এবং একজন স্বাভাবিক মানুষ তাদের আঙুল দিয়ে কী করে ভাচুর্য়াল ওয়ার্ল্ড ন্যাভিগেট করে বেশ কিছু মেরিটাইম মেইজে একটি ছোট্ট নৌকা চালাতে। যেসব গেমারের আলঝেমার’স-এর উঁচুমাত্রার জেনেটিক ঝুঁকি রয়েছে, সেসব গেমারকে গেমের চেক পয়েন্টে পেঁৗছুতে কম দক্ষ রুট অনুসরণ করতে দেখা গেছে। অধিকন্তু, বিভিন্ন খেলোয়াড়ের মুভমেন্ট প্যাটার্ন থেকেও চিহ্নিত করা যায় জেনেটিক রিস্ক পুলের বিষয়টি, যারা এখন পর্যন্ত স্মৃতি সম্পর্কিত অন্য কোনো সমস্যা প্রদর্শন করেননি।


সবচেয়ে বড় ডিমেনশিয়া জরিপ


গবেষকেরা কাজে নেমে পড়েন একটি আদর্শ উপায়ে স্প্যাটিয়েল নেভিগেশন হাইপোথেসিস পরীক্ষা করে দেখার জন্য। এরা সৃষ্টি করেন Hero Quest অ্যাপ এবং গেমারদের এর সাথে সংশ্লিষ্ট করেন বিশ্বজুড়ে। তাদের বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপকে সামনে নিয়ে আসার জন্য ডেভেলপারেরা নজর দেন যুক্তরাজ্যের অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারীদের ওপর। তাদেরকে বলা হয়, তারা কী তাদের ভাচুর্্যয়াল জগতের ডাটা সংগ্রহ করতে গবেষকদের অনুমতি দেবেন কিনা। এতে ৪৩ লাখ গেমার ইতিবাচক সাড়া দেয়। এর ফলে এটি রূপ নেয় বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডিমেনশিয়া জরিপে।


এরপর বিজ্ঞানীরা ২৭ হাজারেরও বেশি গেমারের ডাটা সংগ্রহ করেন। এসব গেমারের বয়স ৫০ থেকে ৭৫ বছর। এই বয়সী মানুষই আলঝেমার’স-এর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। এদের ডাটা সংগ্রহ করা হয়, কী করে লোকেরা গেম ন্যাভিগেট করে, সে সম্পর্কিত একটি বেঞ্চমার্ক সৃষ্টির জন্য এদের ডাটা সংগ্রহ করার জন্য। চূড়ান্ত পর্যায়ে গবেষকেরা একটি ল্যাব সেটিংয়ে ৬০ জনের এসব ফলাফল তুলনা করেন। এর মাধ্যমে জানা যায়, এই ৬০ জনের মধ্যে ৩১ জন রয়েছে জিন APOE4, যা আলঝেমার’স—এর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বাকি ২৯ জনের মধ্যে জিন APOE4 ছিল না। ক্রস— চেকের মাধ্যমে তারা একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পায়, যাদের মধ্যে আলঝেমার’স—এর কম ঝুঁকি ও অন্যান্য বেশি ঝুঁকিপ্রবণ গেমারদের মুভমেন্ট প্যাটার্নের মধ্যে।


এখনো মেমরি টেস্ট আদর্শমানের


আলঝেমার’স—এর প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করা হিসেবে গবেষকেরা বিবেচনায় নেন ন্যাভিগেশন প্যাটার্নকে। আলঝেমার’স—এ ‘সি হিরো কুয়েস্ট’ টেস্টের পার্থক্য ধরা পড়ে মেমরি টেস্ট ও কগনিশন টেস্টের সাথে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন সাধারণত এ ক্ষেত্রে ক্লিনিকে এই দুইটি টেস্ট করা হয়ে থাকে।


আলঝেমার’স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রত্যেক প্রবীণ ব্যক্তির জন্য কগনিশন স্ক্রিনিং প্রয়োজন। এই গবেষকদলের নেতা মাইকেল হর্ন বার্গার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, আজকের দিনে ডিমেনশিয়া ডায়াগনোসিস জোরালোভাবে মেমরি সিম্পটমভিত্তিক। আমরা এখন পর্যন্ত জানতাম, যখন এই রোগ অগ্রসর পর্যায়ে তখন রোগী মেমরি বা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। এর পরিবর্ত, বিকাশমান তথ্য—প্রমাণ থেকে জানা যাচ্ছে স্পেটিয়াল নেভিগেশন ও অ্যাওয়ারনেস ডেফিসিট মেমরি সিম্পটমের কয়েক বছর আগেই দেখা দিতে পারে। অবশ্য স্পেটয়াল নেভিগেশন ডেফিসিট ও অ্যাওয়ারনেস ডেফিসিট সুস্পষ্ট প্রথম লক্ষণ সেই ডিমেনশিয়ার, যা কারো জীবনে ঘটতে যাচ্ছে এ অভিমত হিলারি ইভানসের। তিনি যুক্তরাজ্যের আলঝেমার’সবিষয়ক গবেষক। তিনি এই গবেষকদের কাজে সহযোগিতা জুগিয়েছেন। ইভান আমাদের মাঝেমধ্যেই শোনান সেইসব ডিমেনশিয়া তথা স্মৃতিবৈকল্য রোগীদের কথা, যারা নিজেদের বাড়ির পথ ভুলে হারিয়ে যান চিরদিনের জন্য। এই ‘সি হিরো কুয়েস্ট’ এমন একটি মোবাইল গেম, যা ডিমেনশিয়াবিষয়ক গবেষণায় গবেষকদের সহায়তা জোগাচ্ছে। এটি ২০১৬ সালে আলঝেমার’স রিসার্চ ইউকে, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার সহযোগিতায় ডিজাইন করে ব্রিটিশ গেম ডেভেলপার কোম্পানি Glitchers এবং এতে তহবিল জোগায় Deutsche Telekom। এই গেমের ধারণা আসে ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল হর্ন বার্গারের মাথা থেকে। তিনি সহযোগিতা করেন লন্ডনের ইউনিভির্সিটি কলেজের হুগো স্পাইয়ার্সদের এবং আরো ৬ জন স্নায়ু বিজ্ঞানীর একটি গ্রুপকে। গেমটি ডিজাইন করা হয়েছে থ্রিডি নেভিগেশনে মানুষের মানসিক প্রক্রিয়াটি বোঝার কাজে গবেষকদের সহায়তা জোগাতে। ডিমেনশিয়ার বেলায় মানুষ সর্বপ্রথম এই মানসিক প্রক্রিয়াটি হারিয়ে ফেলে। প্রত্যাশা ছিল, বিপুলসংখ্যক লোক এই গেম খেলবে। আর এ থেকে ডাটা বেরিয়ে আসবে সহজে, যেসব ডাটা ল্যাবরেটরিতে ক্লিনিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে তত সহজে পাওয়া যায় না।


এই গেমের পরিকল্পনায় রয়েছে একজন পুত্র, যিনি সমুদ্র ভ্রমণ করবে তার বাবার হারানো স্মৃতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। এই গেমের রয়েছে তিনটি সেকশন ন্যাভিগেশন, ওরিয়েন্টেশন টেস্টের জন্য শুটিং ফ্লেয়ারস এবং ক্রিয়েচার চেজিং। প্রতিটি সেকশন যত্নের সাথে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে এগুলো যেমনি আমাদের কাছে আমোদজনক হয়ে ওঠে, তেমনি এগুলো বৈজ্ঞানিকভাবেও হয়ে ওঠে বিস্ময়কর ও গুরুত্বপূর্ণ।


ব্রিটিশ টেলিকম এর নাম দিয়েছে ‘অ্যাপ অব দ্য উইক’। এটি ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিাভাল অব ক্রিয়েটিভিটিতে পুরস্কৃত হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত এই গেমটি ডাউনলোড হয়েছে ২৭ লাখ বার। ২০১৭ সালে আসে এর ভার্চু্যয়াল রিয়েলিটি সংস্করণ। গেমটি ‘গেম বিয়োন্ড এন্টারটেইনমেন্ট’ নামের নতুন ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পায় ২০১৮ সালের ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি গেম অ্যাওয়ার্ডস’—এর জন্য। ২০১৮ সালে এর সামাজিক প্রভাবের জন্য পায় ওয়েবি অ্যাওয়ার্ডস








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।