বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রযুক্তিগত উন্নতির সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।
ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য। তিনি হিন্দিতে জনতাকে সম্বোধন করেন এবং মুহূর্তের মধ্যে তার সেই বক্তব্য তামিলে অনুবাদ করে দেয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ‘ভাষিণী’।
এটি ভারত সরকারেই তৈরি করা টুল। একইভাবে এই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক রাজনৈতিক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের অনুষ্ঠানে দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ডিজিটাল টুইন।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) টুলগুলো দিনদিন আরও উন্নত হয়ে উঠেছে। এতে ব্যবহার সহজ হয়ে উঠলেও নতুন একটি চিন্তা ঘিরে ধরেছে বিশেষজ্ঞদের।
সেটি হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আরও পরিশীলিত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ‘ভুয়া তথ্যকে সঠিক দাবি করে’ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার শঙ্কা।
এ বিষয়ে ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কোরেশি বলেন, গুজব বরাবরই নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে মিশে ছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তাদের আশঙ্কা, ভারত সরকারের ভাষিণী এআই টুল বা কৌশলগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে শব্দ এবং বার্তা হেরফের করার ক্ষেত্রেও।
গত মাসেই দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেখানে বলিউড তারকা রণবীর সিং এবং আমির খানকে কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করতে দেখা যায়।
এরপর গত ২৯ এপ্রিল নরেন্দ্র মোদী এই প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তার এবং বিজেপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্য বিকৃত করার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি।
পরের দিন, এই ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভিডিও কেটে ছেঁটে উপস্থাপন করার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন কংগ্রেসের, অন্যজন আম আদমি পার্টির কর্মী। অন্যদিকে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলছে বিরোধী দলগুলো।
‘মোদী কি ফ্যাসিবাদী’ এই প্রশ্নের জবাবে গুগলের জেমিনি চ্যাটবটের উত্তরকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। ভারত সরকার এই ঘটনার পরেই পদক্ষেপ নেয়।
ভারতীয় তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর সে সময় জানিয়েছিলেন, এটি ভারতের প্রযুক্তি আইনের লঙ্ঘন। তখন থেকেই ভারত সরকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জেনারেটিভ এআইয়ের ক্ষেত্রে ‘কম পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে’ এবং ‘নির্ভরযোগ্য নয়’ এমন মডেল বা টুল প্রকাশের আগে সরকারের অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
‘এআই টুলের’ এমন কোনো উত্তর যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়েও প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছিল।
কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। ভুয়া কনটেন্ট প্রকাশ্যে আনা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেই জানিয়েছেন ফ্যাক্ট-চেকাররা। নির্বাচনের সময় যখন ভুল তথ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, সে সময় এই কাজটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
ভারতে এই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও জাল এবং বিকৃত কনটেন্ট মোকাবিলা করার মতো তেমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই।
এ নিয়ে দেশটির তথ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষক শ্রীনিবাস কোডালি বিষয়টার ব্যাখ্যা করে বলেন, আপনি যদি কোনো ভুল কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে আপনাকে হালকা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।








০ টি মন্তব্য