হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন যেভাবে
বিটিআরসির তথ্যমতে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অর্থাৎ দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখের কাছাকাছি। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে কতজন হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থেকে নিজেদের অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষা করতে জানেন? এ লেখায় সে ব্যাপারে কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হলো।
পাসওয়ার্ড
মেইল কিংবা অনলাইন অ্যাকাউন্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকলে দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে পাসওয়ার্ডই প্রথম রক্ষাকবচ। দুর্বল পাসওয়ার্ড কতটুকুঝুঁকিপূর্ণ, তা বোঝানো যায় ইউএসএটুডে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে। ছয় বর্ণের একটি পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে একজন হ্যাকারের প্রায় ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু এই ছয় বর্ণের সাথে আরও চারটি বর্ণ যোগ করলে একজন হ্যাকারের তা ভাঙতে সময় লাগবে ৪৫ হাজার বছর!
দুই স্তরের নিরাপত্তা
ইদানীং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেও হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। পাসওয়ার্ড হ্যাক করা এখন আর তেমন কঠিন কিছুনয়। এ কারণে ‘টুস্টেপ অথেনটিকেশন’ বা দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার করতে হবে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবহারকারীকে তার অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি লগইন করার সময় আরও একটি কোড ব্যবহার করতে হয়। এতে বাড়তি স্তরের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। যেমন অনলাইন অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড দেয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে দুয়েকটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সেটা হতে পারে পছন্দের গাড়ি কিংবা যেকোনো কিছু।
পরিত্যক্ত অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা
অনেকেরই একের অধিক অনলাইন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে হয়তো একটি নিয়মিত ব্যবহার করছেন, বাকিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরিত্যক্ত এ অ্যাকাউন্টগুলো থেকে খবু সহজেই গুরুতপূর্ণ তথ্য চুির করে নিতে পারে হ্যাকারেরা। এ কারণে পরিত্যক্ত অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিতে হবে।
ফোনের ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখা
ফোনে যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন না, তখন ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখতে হবে। হ্যাকারেরা সব সময় এ ধরনের সুযোগ খুঁজে থাকে। ফোনে সব সময় ওয়াই-ফাই চালু রাখলে আগে কোন কোন নেটওয়ার্কে সক্রিয় ছিলেন, তা হ্যাকারেরা জানতে পারে। হ্যাকারেরা এ নেটওয়ার্কে ছদ্মবেশে ঢুকে নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করে সেখানে ফোনের ওয়াই-ফাই কিংবা ব্লুটুথ সংযুক্ত করার প্রলোভন দেখায়। আর এ প্রলোভনে পা দিলেই সর্বনাশ। ফোনে বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে তারা তথ্য চুরি করে। এ কারণে ফোনে সব সময় ওয়াই-ফাই চালু রাখা যাবে না।
এইচটিটিপিএস ব্যবহার করা
এইচটিটিপিএসের অর্থ হলো হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল সিকিউর। এটি অনলাইনে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা দিয়ে এক ওয়েবসাইট থেকে অন্য ওয়েবসাইটে স্পর্শকাতর কোনো তথ্য সরবরাহ করা যায়। এ টুলটি ব্রাউজারের সব তথ্য ‘এনক্রিপ্ট’ করে। তাই যদি কোনো হ্যাকার ব্যবহারকারীর কোনো ডাটা নেটওয়ার্ক থেকে ক্যাপচার করেও ফেলে, তাহলেও সেখান থেকে কোনো তথ্য জানতে পারবে না।
ফেসবুক ব্যবহারে সতর্কতা
ফেসবুক প্রোফাইল কে দেখছে এ ব্যাপারে জানতে চান? ফেসবুক সাধারণত এ ধরনের তথ্য দেয় না। কিন্তু কিছুস্ক্যাম বা প্রতারণার কৌশল ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহারকারীকে বোকা বানায় সাইবার দুর্বৃত্তরা। অন্যের সম্পর্কে তথ্য জানার আগ্রহ দেখাতে গিয়ে অনেকেই নিজের পাসওয়ার্ড খোয়াচ্ছে, হ্যাক হয়ে যাচ্ছে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। এ ধরনের পোস্ট আসলে এক ধরনের চাতুরী ও দুর্বৃত্তদের তথ্য সংগ্রহের কৌশল। এ ধরনের পোস্টে অনেক সময় এমন সফটওয়্যারের প্রলোভন দেখানো হয়, যাতে অন্যের ফেসবুক প্রোফাইলের পাসওয়ার্ড চুরি করার সুবিধার কথাও বলা হয়। অনৈতিক জেনেও অনেকে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহারে প্রলুব্ধ হয়। এ ধরনের সফটওয়্যারের চাহিদা থাকায় বিভিন্ন স্প্যামমেইল, বিজ্ঞাপন, পপআপ, বান্ডল সফটওয়্যার, পর্নো সাইট বা শুধু সফটওয়্যার হিসেবেও এর বিপণন কর্মসূচি চালানো হয়। এই সফটওয়্যার ডাউনলোড করে কেউ চালালে লগইন তথ্য চাওয়া হয়। এ ছাড়া যার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার জন্য এ সফটওয়্যার চালুকরা হয়, তার লিঙ্ক দিতে বলা হয়। এরপর হ্যাক বাটনে ক্লিক করলেই ডিভাইসে রুট ইনস্টল হয়ে যায়। ফলে অন্যের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ঘটতে পারে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে সন্দেহজনক কোনো লিঙ্কে ক্লিক না করা। কোনো লিঙ্কে সরাসরি ক্লিক না করে ব্রাউজারে পেস্ট করে তা দেখে নেয়া যেতে পারে। সন্দেহজনক লিঙ্ক বা বিষয় সম্পর্কে অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখে নিতে পারেন। ফেসবুকের সিকিউরিটি সেটিং সঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সতর্কতা
সেলুন থেকে ব্যায়ামাগার কিংবা রেস্তোরাঁ থেকে রেলস্টেশন সব জায়গাতেই ওয়াইফাই সুবিধা উন্মুক্ত রাখা হয় সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য। অনেকে তো গ্রাহকদের আকর্ষণের জন্য দোকানে বড় বড় হরফে লিখে রাখেন ‘ফ্রি ওয়াইফাই’। তবে বিনামূল্যে সরবরাহ করা এই ওয়াইফাই ইন্টারনেট কখনও সাইবার অপরাধের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চুরি হয়ে যেতে পারে ফোন বা কমপিউটারের গোপন তথ্য। তাই উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই ব্যবহারের আগে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
০ টি মন্তব্য