ইলন মাস্ক বিশ্বের সর্বাধুনিক আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন। প্রতিযোগিতায় নেমেছেন বিশ্বের এই খাতের রাঘব বোয়ালদের সঙ্গে।
তবে বেশ কিছু সুবিধা থাকলেও এরকম প্রতিযোগিতাপূর্ণ এক খাতে ইলন মাস্কের সফলতার সম্ভাবনা কতটুকু, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
চ্যাটজিপিটির মূল প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই’কে টেক্কা দিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এক্সআই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে।
এরই মধ্যে আলোচনার তুঙ্গে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত কয়েক সপ্তাহে ‘কোরওয়েভ নামের একটি এআই ক্লাউড কমপিউটিং প্রতিষ্ঠান এবং ফরাসি এআই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘এইচ’ এখাতে আর্থিকভাবে লাভের দেখা পায়।
তবে চলতি বছরের ২৬ মে দিনটি ছিল সম্ভবত ইলন মাস্কের। এদিন এক্সএআইয়ের মূল্যমান ৬ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
মাস্কের এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দুটি ভেঞ্চার-ক্যাপিটাল (ভিসি) জায়ান্ট- সিকোইয়া ক্যাপিটাল এবং অ্যান্ড্রিসেন হোরোভিটস এবং সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি বিনিয়োগ তহবিলও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তাদের আর্থিক বিনিয়োগ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আসা প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস কর্মীবাহিনী কাজ করবে ইলন মাস্কের নেতৃত্বে।
তাই এআই সুপারস্টার খ্যাত ওপেনএআই এবং এনথ্রোপিক-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দেয়ার চ্যালেঞ্জ মাস্ক পূরণ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে এক ধরনের জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
চ্যাটজিপিটির মূল প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই'র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলন মাস্ক। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সিইও স্যাম আল্টম্যানের সঙ্গে ঝামেলা করে কার্যনির্বাহী পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
বর্তমানে ওপেনএআই’র অন্যতম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। অন্যদিকে এক্সএআই’র কর্মকর্তাদের মধ্যে আছে গুগলের সাবেক প্রকৌশলী ইগর বাবুশকিন ও টনি উ, গবেষণা বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান সেগেদি ও মাইক্রোসফটের সাবেক কর্মকর্তা গ্রেগ ইয়াং।
চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি তার বিনিয়োগকারীদের জানান, তার বৈদ্যুতিক-যান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান- টেসলা’কে একটি এআই ফার্ম হিসাবে দেখা উচিত।
তার এআই বা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ এর আগেও বেশ কয়েকবার দেখেছে বিশ্ববাসী। তিনি এমন এআই প্রযুক্তি তৈরি করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন, যা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের ক্ষেত্রে মানুষের মতো কিংবা মানুষের চাইতে আরও ভাল কাজ করতে পারবে।
এই কারণেই তিনি এক্সএআই নিয়ে অনেক আগ্রহী বলে ধারণা করা হচ্ছে। কীভাবে তিনি তার আকাঙ্ক্ষিত এই স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছেন- তার একটা ধারণা পাওয়া যায়, অন্যসব বিনিয়োগ থেকে।
২০২২ সালে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট- টুইটার কেনার মাধ্যমে মানুষের চিন্তা-ভাবনা করার প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা এবং মানব-উত্পাদিত ডেটার রিমে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে যান তিনি।
সুতরাং মানুষের যোগাযোগের প্রক্রিয়া নকল করার সুযোগ পেতে যাচ্ছে এক্সএআই। তাছাড়া টেসলা গাড়ির বিভিন্ন কার্যকলাপের ফুটেজ ব্যবহার করে এক্সএআইয়ের ডেটাবেজে রাখা হচ্ছে।
পাশাপাশি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সফলতা পেতে যা যা করা দরকার, সেটাই আপাতত নেয়া হচ্ছে এক্সআই প্রতিষ্ঠানের জন্য।
এছাড়া বিশ্বের সেরা সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মেধাবী সব প্রকৌশলীদের বেশি অর্থের লোভ দেখিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ করছেন।
এছাড়া মাস্কের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে সুপারকমপিউটার তৈরিও একটি। এক্ষেত্রেও তিনি মাইক্রোসফট এবং ওপেনএআই’য়ের সঙ্গে একধরনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
এ ধরনের প্রতিযোগিতার ঝুঁকি নিতে তিনি বরাবরই পছন্দ করে থাকেন। তার শেয়ারহোল্ডাররা ব্যবসায় তার সময় দেয়া এবং চিন্তা-ভাবনা নিয়ে বরাবরই একটা আশংকার মধ্যে থাকেন।
তার অন্যান্য ব্যবসা যেমন- রকেট তৈরির প্রতিষ্ঠান- স্পেসএক্স, মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান- নিউরালিংক এবং টানেল খননকারী প্রতিষ্ঠান- বোরিং।
এগুলো তাকে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যস্ত রাখতে না পারলে, ভবিষ্যতে এধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ ও সিদ্ধান্ত নিতে তিনি পিছু পা হবেন না বলে মনে করেন অনেকেই।
এই ধরনের মানসিকতার ফলাফল হিসেবে অনেক মামলা ও অভিযোগের তীর এরইমধ্যে ছোঁড়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইলন মাস্কের জন্য এক্ষেত্রে আরও চিন্তার কারণ হতে পারে প্রতিযোগিদের সংখ্যা।
এরই মধ্যে এআইয়ের বাজারে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক। যারা প্রত্যেকেই নিজস্বতার মাধ্যমে বাজারে আলো ছড়াচ্ছে। অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং মেটা এরইমধ্যে নিজেদের বাজারে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে।
তাছাড়া সেলসফোর্স এবং এডোবি’র মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর তালিকায়। বাজারে এতো পরিমাণ প্রতিষ্ঠান থাকলে, যে কোনো সময় ব্যবহারকারীরা এক এআই মডেল থেকে অন্য মডেলের ঝুঁকে যেতে পারে।
তাছাড়া এক্সএআই-এর চ্যাটবট ‘গ্রোক’-এর নির্দিষ্ট কোনো বিক্রির প্লাটফর্মও তৈরি হয়নি এখনো, যা মাস্ককে আরও পিছিয়ে রেখেছে।
এর পাশাপাশি ওপেনআইয়ের কাছে এখনো অন্যান্য সব প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় অনেক বেশি অর্থ মজুত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট বাজার-ব্যবহারকারী এবং অনেক বেশি আস্থা অর্জনের জন্য ইলন মাস্কের এক্সএআই পিছিয়ে রয়েছে অনেক।
তাই আপাতত জাগতিক যত কল্পনা বা চিন্তা-ভাবনাই করুক না কেন, অন্যসব প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিয়ে বাজার দখল করতে বেগ পেতে হবে অনেক বিশ্বের অন্যতম ধনকুবেরকে।
০ টি মন্তব্য