সম্প্রতি কার্বন ধারণ বা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির বড় এক বাধা কাটিয়ে ওঠার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও বাস্তব-বিশ্বের প্রয়োগের ব্যবধান কমিয়ে আনা, যা প্রায়ই ‘মৃত্যুর উপত্যকা’ হিসাবে পরিচিত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
‘কার্বন ক্যাপচার’ বা কার্বন নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সত্য, যা এমন এক ক্ষেত্র, যেখানে বিভিন্ন শিল্প থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসারণের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
কার্বন ডাইঅক্সাইডকে কার্যকর উপায়ে ধরতে ধাতব-জৈব কাঠামোর মতো অনেক নতুন উপাদানই তৈরি হয়েছে। তবে, সেগুলো পরীক্ষাগারে ভাল ফলাফল দেখালেও বাস্তব জীবনে এর কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
এ অনিশ্চয়তার মানে, এইসব উপাদানের মধ্যে এমন অনেক উপাদানও আছে, যা কখনও গবেষণার পর্যায় পেরিয়ে আসতে পারেনি।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ‘হেরিয়ট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি’র একদল বিজ্ঞানী ‘প্রিজমা (প্রসেস-ইনফর্মড ডিজাইন অফ টেইলর-মেড সরবেন্ট ম্যাটেরিয়ালস)’ নামের একটি যুগান্তকারী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন।
কার্বন ডাইঅক্সাইড ধারণের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও টেকসই উপাদান শনাক্ত করার লক্ষ্যে প্ল্যাটফর্মটিতে উন্নতমানের সিমুলেশন ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে পরবর্তীতে গিয়ে বাস্তব জগতেও এর পরীক্ষা করা যায়।
‘হেরিয়ট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক সুসানা গার্সিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ।
“গত এক দশক ধরে কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ করতে পারে এমন উপাদান খুঁজে বের করতে অনেক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে,” বলেন অধ্যাপক গার্সিয়া।
“রসায়নবিদরা হাজার হাজার নতুন উপাদান প্রস্তাব করেছেন। তবে কার্বন ধারণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এদের কার্যকারিতা দ্রুত মূল্যায়ন করার মতো পর্যাপ্ত টুল নেই।”
“এজন্য অনেক পরীক্ষামূলক তথ্য ও প্রক্রিয়াটির বিশদ জ্ঞানের পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব বোঝা প্রয়োজন।”
নোরিজ বলছে, কার্বন ধারণের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটকে একটি মডেলিং টুলের আওতায় আনার মাধ্যমে এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রিজমা। এর মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম রসায়ন, আণবিক সিমুলেশন ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন উপাদানের কার্যকারিতা অনুমান করার সুযোগ মেলে।
প্ল্যাটফর্মটিতে গোটা বিশ্বের ৬০টিরও বেশি কেস স্টাডির পরীক্ষামূলক বা সিমুলেট করা ডেটা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, যার ফলে কার্বন ধারণের সম্ভাব্য সেরা উপাদান খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত পরিচালনা করা সম্ভব।
প্ল্যাটফর্মটি শুধু রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীদের বেলাতেই সহায়ক নয়, বরং বিভিন্ন কার্বন ধারণ প্রযুক্তির অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
০ টি মন্তব্য