https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের বিষয়টি তদন্ত করবো, সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা নাহিদ

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের বিষয়টি তদন্ত করবো, সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা নাহিদ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের বিষয়টি তদন্ত করবো, সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা নাহিদ
 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সরকার গঠন হয়েছে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে যে প্লাটফর্মের ব্যানারে এই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে, নতুন সরকারে স্থান পেয়েছেন তাদের দুজন প্রতিনিধি। প্লাটফর্মটির অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে ‘ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে বিষয়টির তদন্ত করবেন তিনি। এছাড়া এই সরকার কতগুলো প্রতিশ্রুতি সামনে রেখে গঠিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের যে পুনর্গঠন ছাড়া এবং সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বা কোনও কিছুই কাজ করবে না বলেও জানান তিনি। 

শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ নিচে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: নতুন সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টাদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সংযুক্ত করার কথা জানানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা ‘সহকারী উপদেষ্টা’ হিসেবে যুক্ত হতে পারেন। পুরো বিষয়টি আসলে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে?

নাহিদ ইসলাম: এই অভ্যুত্থান তো শিক্ষার্থীদের হাত ধরে হয়েছে। আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা অভিজ্ঞদের এখানে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) এ আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদেরও লিডারশিপে আসা উচিত, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, শেখার জন্য। শিক্ষার্থীরা মূলত এখানে তদারকির কাজ করবেন, তাদের কোনও কথা থাকলে সেটা তারা বলবেন। এ কারণে প্রত্যেক উপদেষ্টার সঙ্গে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধি বা অন্য কোনও নামে হতে পারে, একজন করে রাখার আলোচনা চলছে।

প্রশ্ন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মেয়াদ কতদিন চাচ্ছেন?

নাহিদ ইসলাম: সরকারের মেয়াদ এখনও নির্ধারিত হয়নি। এই সরকার কতগুলো প্রতিশ্রুতি সামনে রেখে গঠিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের যে পুনর্গঠন এবং সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বা কোনও কিছুই কাজ করবে না। আবার আগের জায়গায় আমরা ফিরে আসবো। সেই পুনর্গঠনের প্রস্তাবনা আমরা তৈরি করছি এবং সেই অনুযায়ী সময়টা নির্ধারিত হবে। অন্য যে রাজনৈতিক স্টেক হোল্ডাররা আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রশ্ন: আন্দোলন চলাকালে পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের যে সদস্যরা অন্যায় করেছে, তাদের ক্ষমা করবেন কিনা এবং পুলিশের রিফর্মেশনের বিষয়ে কী ভাবছেন?

নাহিদ ইসলাম: পুলিশ আজ থেকে কাজে আসা শুরু করেছে। রাজারবাগে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর পুলিশের বড় পদগুলোতে ইতিমধ্যেই পরিবর্তন করা হয়েছে। আর বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। 

পুলিশের স্ট্রাকচারাল রিফর্মেশনের দাবি তাদের (পুলিশ সদস্য) কাছ থেকে এসেছে এবং আমাদের দিক থেকে সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারই তাদের কাজে পুলিশকে ব্যবহার করে, আল্টিমেটলি দোষ পুলিশ ইনস্টিটিউশনের ওপরেই যায়। এ বিষয়টি হয়তো একটু সময় লাগবে। আপাতত আমরা পুলিশকে আস্থার জায়গায় দিতে চাচ্ছি এবং ছাত্রদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে চাচ্ছি।

প্রশ্ন: ছাত্রদের দাবি আদায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তৈরি হয়। এটিকে স্থায়ী রূপে দেখা যাবে কিনা, নাকি এই প্লাটফর্মের যাত্রা এখানেই শেষ?

নাহিদ ইসলাম: আমাদের লক্ষ্য কিন্তু এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদী কাঠামো রয়ে গেছে। আমরা এখনও গণহত্যার বিচার পাইনি। বাংলাদেশের কাঠামো একপ্রকার ভেঙে গেছে। সেটিকে গঠনের জন্যও তারুণ্যের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সেজন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কাজ করবে। ভবিষ্যৎ হয়তো অন্য কোনও নামেও হতে পারে, সেটি তখন দেখা যাবে।

প্রশ্ন: বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের রুম দখলে অভিযোগ রয়েছে— সেটি নিয়ে কী বলবেন?

নাহিদ ইসলাম: আমরা সরকার গঠন, শপথসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সংগঠনের নামে কমিটি দেওয়া হচ্ছে নানাভাবে, এগুলো অথরাইজড হচ্ছে না। আমরা ওদিকটা গুছিয়ে এটি নিয়ে বসবো। আমরাও কমিটির দেওয়ার চিন্তা করছি এবং সেটিকে কীভাবে অথোরাইজড করা যায়, সে বিষয়েও ভাবছি। আমরা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিরোধিতা করেছি, এখনও করছি। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাতে চাচ্ছি। সেই সিদ্ধান্তকে মাথায় রেখেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কাজ করবে।

প্রশ্ন: নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য সমন্বয়ক সারজিস আলম কিংবা হাসনাত আব্দুল্লাহ উপদেষ্টা না হয়ে নাহিদ ইসলাম আর আসিফ মাহমুদ কেন— এমন প্রশ্ন অনেকের মনে। এ বিষয়ে আপনাদের উত্তর কী?

নাহিদ ইসলাম: আমাদের যেহেতু সরকারের থাকার পাশাপাশি সামাজিকভাবে মাঠে-ময়দানে কাজ করতে হবে, সেজন্য যে যেখানে দক্ষতা দেখাতে পারবে সে হিসেবেই নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটি সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই করা হয়েছে, এখানে বিতর্কের কোনও সুযোগ নেই।

প্রশ্ন: আপনার মন্ত্রণালয় নিয়ে কিছু বলেন এবং সেখানে কী ধরনের পরিবর্তন চাচ্ছেন?

নাহিদ ইসলাম: আমাদের আন্দোলন আটকানোর জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে দেওয়া হয়েছিল। সেই মন্ত্রণালয়ে আমার কাছে এসেছে আরকি…………(হাসি)। আমি প্রথমে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের বিষয়টি তদন্ত করবো আরকি, আসলেই কী হয়েছিল। আর আইসিটি নিয়ে যে সমালোচনাগুলো রয়েছে— অন্যের কথা আড়ি পেতে শোনা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট; এগুলো অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করবো।

প্রশ্ন: আপনাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?

নাহিদ ইসলাম: আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, এগুলোকে সামনে রেখে এক বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বন্দোবস্ত তৈরি করা। ন্যায়বিচার, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গণহত্যাসহ ফ্যাসিজমের অন্য যে ধরনের অপরাধগুলো রয়েছে, সেগুলোর বিচার করা এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন: এই আন্দোলনের শহীদ পরিবারদের চাকরি ব্যবস্থা করা বা কোনও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে কিনা?

নাহিদ ইসলাম: শহীদ পরিবার এবং আহতদের পরিবারকে এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রয়োজন। নরম জায়গা থেকে হয়তো করা হচ্ছে, কিন্তু অফিসিয়ালি একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হবে।

প্রশ্ন: তালিকায় কি শুধু শিক্ষার্থীরা আসবে নাকি যারা শহীদ হয়েছে সবাই?

নাহিদ ইসলাম: শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট শহীদ এবং আহত সবাই এ তালিকা আসবেন। এ আন্দোলনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সবাই আসবেন।

প্রশ্ন: আপনারা জাতীয় রাজনীতিতে আসবেন কিনা কিংবা জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করবেন কিনা? সেটা করলে কবে নাগাদ হতে পারে?

নাহিদ ইসলাম: জাতীয় রাজনীতিতে আমরা অলরেডি চলে এসেছি। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করবো কিনা, সেটা পরিস্থিতি ঠিক করবে। আমাদের মনে হচ্ছে, এখন সামাজিক অনেকগুলো কাজ করা উচিত। শিক্ষার্থীদের জায়গা থেকে, নিজেদের গঠনে তাদের কাজ করা উচিত। পরবর্তী জনগণ যদি আকাঙ্ক্ষা করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে যেই তরুণ নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে, তারা অবশ্যই দেশের নেতৃত্ব নিতে যোগ্য এবং প্রস্তুত।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।