এআইয়ের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এটি কাজে লাগানো মানেই লাভ, সেটা আর্থিক তো বটেই। এমনকি কোনো কোনো কাজের বেলায় আপনার প্রযুক্তিগত জ্ঞান একটু কম থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের পেশাগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই নতুন আঙ্গিকে সাজাচ্ছে। নিজেদের কাজগুলো নিয়ে আমাদের ভাবাচ্ছে নতুন করে। ব্যবসাসংক্রান্ত লেখালেখি থেকে শুরু করে বিপণন, গ্রাহক সেবা, মিটিং, নতুন পণ্য তৈরি, নতুন পণ্য বাজারে আনার জন্য প্রয়োজনীয় বাজার গবেষণার মতো ক্ষেত্রগুলোয় এআই নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়া এক প্রযুক্তি।
আগে একটা কাজ করতে আপনার যতটা সময় লাগত, সেই একই কাজ এআই ব্যবহার করে এখন আরও কম সময়ে করে ফেলা যাচ্ছে। এতে সময় বাঁচছে, কম সময়ে বেশি কাজ করার ফলে আয়ও বাড়ছে।
প্রথমত, এআই ব্যবহার করে আপনি ইতিমধ্যে যেসব কাজ করেছেন, সেসবই আরও বিস্তৃত করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনি ব্লগার হয়ে থাকলে নতুন কনটেন্টের আইডিয়া তৈরি, এসইও ও গুগল র্যাঙ্কিং বাড়ানোর জন্য এআই ব্যবহার করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, এআইয়ের মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ নতুন একটি আয়ের উৎস সৃষ্টি করতে পারেন। চলুন, এআই ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের ৫টি উপায় দেখে নেওয়া যাক।
এআই চ্যাটবট তৈরি
প্রোগ্রামিংয়ে আপনার দক্ষতা থাকলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফরমায়েশে চ্যাটবট তৈরির কাজটি ভালোভাবে শিখে নিতে পারেন। কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কাজে চ্যাটবট ব্যবহার করে। যেমন কর্মীদের কাজে সাহায্য করা, অনলাইনে গ্রাহকদের সেবা দেওয়া, পণ্য বিক্রি ইত্যাদি। আপনি ফ্রিল্যান্সার চ্যাটবট ডেভেলপার হিসেবে ফাইভারসহ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নিজের কাজের কিছু নমুনা প্রদর্শন করুন। কাজগুলোর কারণে আপনার ক্লায়েন্টদের ‘রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট’ কতটা হয়েছে কিংবা তাদের ব্যবসায় কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, এসব তথ্যপ্রমাণসহ উপস্থাপন করুন।
কোর্স ডিজাইন করতে এআই
অনলাইন কোর্স তৈরি ও বিক্রি করা বাড়তি আয়ের ভালো উৎস। এসব কোর্স তৈরির প্রক্রিয়ায় এআই ব্যবহার করা হলে কাজগুলো আরও দ্রুত হয়। এআই এবং বিভিন্ন অ্যালগরিদমভিত্তিক টুল ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন কোর্সের কনটেন্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মার্কেট রিসার্চ বা বাজার গবেষণা করতে পারেন। কোন কোন বিষয় আজকাল সবাই শিখতে চাইছেন, জানতে চাইছেন, সেটা বুঝতে পারলে আপনি অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা কোর্স ডিজাইন করতে পারবেন।
চ্যাটজিপিটির মতো কিছু এআই টুল আপনাকে কোর্সের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস পর্যন্ত তৈরি করে দিতে সক্ষম। একটা কোর্সে কয়টা ক্লাস নেওয়া হবে, ক্লাসগুলো নিতে কত সময় লাগবে, কী কী বিষয় শেখানো হবে, কয়টি পরীক্ষা, কয়টি অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে, এসবই চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে কয়েক মিনিটেই নির্ধারণ করে ফেলা যায়।
‘কুইজগেকো এআই’–এর মতো টুল ব্যবহার করে আপনি আপনার কোর্সের পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন তৈরি করতে পারবেন মাত্র কয়েক মিনিটেই। আপনার আর ঘণ্টাখানেক কষ্ট করে প্রশ্ন তৈরি করতে হবে না।
নিজস্ব এআই পণ্য তৈরি
বাজারের চাহিদা বুঝে আপনার নিজস্ব সলিউশন তৈরি করুন। এ ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ‘অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস’–এর ‘এআই সার্ভিসেস’ ব্যবহার করে নিজস্ব অ্যাপ তৈরি করতে পারবেন, কিংবা ইতিমধ্যে তৈরি করা আছে, এমন কোনো অ্যাপে এআই ফিচার যোগ করতে পারবেন। ‘ওপেনএআই’–এর এপিআই ব্যবহার করেও এ ধরনের কাজ করা যায়।
এআই–বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তুলনামূলক নতুন প্রযুক্তি। তাই এখনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বেগ পাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার দক্ষতা থাকলে আপনি এআই কনসালট্যান্ট বা পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে পারেন। একেক কোম্পানির প্রয়োজন একেক রকম। তাই এ ক্ষেত্রে আপনাকে কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী সেবায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
‘ক্যানভা’ অ্যাপে এআই ব্যবহার
যাঁরা ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনবিষয়ক কাজ করেন, তাঁদের কাছে ‘ক্যানভা’ অতি পরিচিত অ্যাপ। ক্যানভা ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের উপযোগী ছবি, ভিডিও, লোগো ইত্যাদি তৈরি করা যায়। ক্যানভায় যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন, তাঁরা এআই ব্যবহার করে কাজগুলো আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে পারেন। ‘ম্যাজিক ডিজাইন’ নামে ক্যানভার একটা ডিজাইন টুল আছে। এ ছাড়া আছে একটা ইমেজ জেনারেটর, যা ‘ওপেনএআই’–এর ‘ডাল-ই’ ও ‘গুগল ক্লাউড’–এর ‘ইমাজেন’ ব্যবহার করে কাজ করে।
এআই ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করার জন্য যে শুধু এই পাঁচটি পথই খোলা আছে, তা নয়। প্রতিনিয়ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি ঘটছে এবং এর কাজের ক্ষমতা ও পরিধি বাড়ছে। তাই এটা হলফ করে বলা চলে যে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে পুঁজি করে আপনি বাড়তি আয় করতে পারবেন নিশ্চিত।
সূত্র: ফোর্বস
০ টি মন্তব্য