বর্তমানে পৃথিবীর ৪৬০ কোটি মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ। গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশন ইনটেলিজেন্সের (জিএসএমএ) সাম্প্রতিক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
গত নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ২০১২ সালে যখন ফেসবুকে ১০০ কোটি ব্যবহারকারী যুক্ত হয়, প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বলেছিলেন, ‘আর ১০০ কোটি ব্যবহারকারী যোগ হওয়ার বড় কারণ হবে মোবাইল।’
তবে জিএসএমএ বলছে, সম্প্রতি নতুন মোবাইল ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইবারের বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমছে। ২০১৫-২১ সাল পর্যন্ত গবেষণায় প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২০ কোটির বেশি নতুন ব্যবহারকারী মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইনে যুক্ত হয়। কিন্তু গত দুই বছরে এ সংখ্যা ১৬ কোটিতে নেমে আসে। রেস্টঅবওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কিছু উন্নয়নশীল দেশে নতুন মোবাইল ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা এখন স্থির হয়ে গেছে।
জিএসএমএর মোবাইল ফর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রধান ম্যাক্স কুভেলিয়ার জিয়াকোমেলি জানিয়েছেন, বিশ্বের অনেক মানুষের এখনো মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। এর মূল কারণ হলো ইন্টারনেট খরচ। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডাটার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন বলেছে, বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে এখনো এ-সংক্রান্ত বড় পার্থক্য রয়ে গেছে। যেমন আফ্রিকায় ডাটার খরচ আমেরিকার তুলনায় দ্বিগুণ। আফ্রিকার মতো অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের এ উচ্চ ব্যয় একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
জিএসএমএর বিশেষজ্ঞের মতে, উদ্ভাবনের শুরুর দিকে মোবাইল ইন্টারনেটের মতো নতুন প্রযুক্তির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা দেখা যায়। বাজারে নতুন হওয়ায় এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যারা সামর্থ্য রাখে, তারা এর উপযোগিতা ভালোভাবেই বুঝতে পারে।
এদিকে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোয় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। চীনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৮১ ও সিঙ্গাপুরে ৯৩ শতাংশ জনসংখ্যা এরই মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এ কারণেই এসব দেশে নতুন মোবাইল ইন্টারনেট সাবস্ক্রিপশনের হার ধীরে ধীরে কমে আসছে।
বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোয়ও নতুন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছে। বর্তমান তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ৩৭ শতাংশ, নাইজেরিয়ায় ৩৪ ও পাকিস্তানে মাত্র ২৪ শতাংশ জনসংখ্যা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এ তথ্য নির্দেশ করে, যাদের কাছে মোবাইল ইন্টারনেট পৌঁছানো সহজ ছিল, তারা এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু বাকিদের কাছে এ সেবা পৌঁছানো এখন আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে ২০১০ সালের শেষের দিকে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ভারতের এ প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশটির প্রায় অর্ধেক বা ৪৬ শতাংশ মানুষ এখনো মোবাইল ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত নয়।
মোবাইল ইন্টারনেট কাভারেজ এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বিশ্বের ৩৫ কোটির মতো মানুষ, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৪ শতাংশের সমান, এমন এলাকায় বাস করে যেখানে মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের কাভারেজ নেই। জিএসএমএর তথ্যানুযায়ী, সাবসাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে কাভারেজ ঘাটতি সবচেয়ে বেশি।
০ টি মন্তব্য