https://gocon.live/

প্রযুক্তি

লর্ম গ্লাভ : টাচ সঞ্চালন করবে ইন্টারনেটে

লর্ম গ্লাভ : টাচ সঞ্চালন করবে ইন্টারনেটে লর্ম গ্লাভ : টাচ সঞ্চালন করবে ইন্টারনেটে
 

লর্ম গ্লাভ : টাচ সঞ্চালন করবে ইন্টারনেটে


বোবাকালা ও অন্ধ লোকদের প্রায়ই একটি ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন জগতে আটকে রাখা হয়। কিন্তু একটি দস্তানা তথা হ্যান্ড গ্লাভ তাদের জন্য খুলে দিতে পারে সহজতর যোগাযোগের এক মহাসুযোগ। এর নাম লর্ম গ্লাভ। আমাদের ভাষায় লর্ম দস্তানা। এ নিয়েই এই প্রতিবেদন।


বালক ইদি হগ এবং বালিকা লরা শোয়েঙ্গবার। এরা দুজন বন্ধু সেই শৈশব থেকেই। কিন্তু তাদের এই বন্ধুত্বের প্রথম বছরেই স্নায়ু সমস্যার কারণে ইদি হগকে হারাতে হয় তার দেখার ও শোনার ক্ষমতা। তখন তার বয়স ছিল ৯ বছর। কিন্তু শিশুরা স্বভাবতই উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী। তাই এদের বলা হয় ন্যাচারাল ইনোভেটর। শোয়েঙ্গবার বলেছে ‘আমরা এক সময় ভাষা উদ্ভাবন করতে শুরু করলাম। আমরা সৃষ্টি করলাম এক ধরনের যোগাযোগের উপায়। কারণ, আমরা ছিলাম শিশু এবং আমরা খেলতে চাই, এর জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক যোগাযোগ। ইদি হগ আমার কথা শুনতে পায় না, সেটা ছিল বিরক্তিকর। আর আমি কিছু লিখতেও পারতাম না।’ এমনি অবস্থায় এরা উদ্ভাবন করল এদের নিজস্ব ট্যাক্টাইল ল্যাঙ্গুয়েজ তথা স্পর্শনেন্দ্রিয়গ্রাহ্য ভাষা।


এরা যখন আরো বড় হয়ে উঠল, তখন এরা এই প্রাইভেট ল্যাঙ্গুয়েজের জায়গায় নিয়ে এলো আরো বেশি বোধগম্য খড়ৎস নামের এক ধরনের ট্যাক্টাইল অ্যালফাবেট বা স্পর্শের মাধ্যমে বোধগম্য বর্ণমালা, যা শরীরে মৃদু হাত বুলিয়ে লেখা হয়। এটি উদ্ভাবিত হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে। এই বর্ণমালা উদ্ভাবন করেন Heinous Lorm, এটি অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত কবি, সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক HeinrichLandesmann-এর অপ্রকাশিত ছদ্মনাম। তার এই ছদ্মনাম অনুসারেই এই বর্ণমালার নামকরণ। জার্মান ভাষাভাষী দেশগুলোতে আজো লর্ম নামের স্পর্শ বর্ণমালা ব্যবহার হয় বোবাকালা ও অন্ধ সমাজে।


লর্ম গ্লাভ


এটি বলা কঠিন ইদি হগ ও শোয়েঙ্গবারের জীবনে এই লর্ম কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু লর্ম ও অন্যান্য ধরনের ট্যাক্টাইল ল্যাঙ্গুয়েজ তথা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ভাষার রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। একজন বোবাকালা ও অন্ধ মানুষ এমনি আরেকজনের সাথে সামনা-সামনি থেকে পরস্পরের মধ্যে স্পর্শগ্রাহ্য বর্ণমালা দিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ গড়ে তোলার সুযোগ সব সময় না-ও পেতে পারেন। এ ধরনের যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমিত। যারা সময় নিয়ে এই বর্ণমালা শেখেন, এর অনুশীলন করেন, শুধু তারাই এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন, হতে পারেন ব্যক্তি পর্যায়ের সামাজিক নেটওয়ার্কের অংশ। উদাহরণ টেনে বলা যায়, ইদি হগের সোশ্যাল সার্কেল বা সামাজিক চক্রের বর্তমান সদস্যসংখ্যা মাত্র ৫ জনÑ তার মা, শোয়েঙ্গবার, শিক্ষক ও থেরাপিস্টেরা। বছরে একবার তিনি ১০ দিনের মতো সময় কাটান দক্ষিণ জার্মানির স্টুটগার্টের আত্মীয়দের বাড়ি সফর করে। শোয়েঙ্গবার বলেন, ‘প্রথম ৫ দিন প্রয়োজন হয় লর্মিং অনুশীলনের জন্য। তখন এরা বর্ণমালাগুলো মনে রাখতে পারেন। ১০ দিনের মাথায় এরা দ্রুত লর্মিং ব্যবহার করতে পারেন। তখন এরা লর্মিং শিখে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।’ কিন্তু এই লর্মিং খুব শিগগিরই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, যদি টম বিলিংয়ের একটি নয়া উদ্ভাবনের বাণিজ্যিকায়ন শুরু হয়।


ট্যাক্টাইল ট্র্যান্সলেশন


টম বিলিং। বার্লিনের ‘ডিজাইন ল্যাব’-এর একজন গবেষক। তিনি উদ্ভাবন করেছেন এই দস্তানা বা হ্যান্ড গ্লাভ, যাতে জুড়ে দেয়া হয়েছে কাপড়ের প্রেসার-সেন্সর। একটি ট্যাক্টাইল হ্যান্ড দিয়ে টাচ করে বর্ণমালাগুলোকে রূপান্তর করা হয় ডিজিটাল টেক্সটে। এই মোবাইল গ্লাভ ব্যবহার করলে বোবাকালা ও অন্ধ মানুষকে যোগাযোগের জন্য কাউকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হবে না। আরো সুখের কথা, যেহেতু ডিজিটাল কমিউনিকেশন অনলাইনভিত্তিক, তাই এই দস্তানা কাজ করতে পারে একটি ট্র্যান্সলেটিং ডিভাইস তথা সঞ্চালনযন্ত্র হিসেবে। ফলে একজন বোবাকালা ও অন্ধ লোক যেকোনো লোকের সাথে অবাধে অনলাইনে যোগাযোগ করতে পারবেন। অন্যরাও চাইলে তার সাথে অনলাইনে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবেন। 


এই উদ্ভাবন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় জেমস বন্ড মুভিতে দেখা সেই অদ্ভুত এক গ্যাজেটের কথা। আলোচ্য উদ্ভাবন সূত্রে টম বিলিং ১৯১৪ সালে পান ‘ফলিং ওয়ালস ল্যাব কম্পিটিশনের’ প্রথম পুরস্কার। এই প্রতিযোগিতা প্রতিবছর বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।