অথেনটিকেশন নিরাপত্তা
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে। রিপোর্টটি আরও জানায়, প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি লগইন ফেসবুকে করা হয়, যার মধ্যে ০.০৬ শতাংশ ক্ষেত্রে লগইন কম্প্রোমাইজের ঘটনা ঘটে। জি-মেইল, ইয়াহুসহ সব ওয়েবভিত্তিক ই-মেইল সার্ভিসের ক্ষেত্রেও এই ধরনের প্রচুর হ্যাকিংয়ের বা কম্প্রোমাইজের ঘটনা ঘটে। এ লেখায় আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে আমরা আমাদের এসব অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বলয় আরও শক্তিশালী করতে পারি।
ফেসবুক নিরাপত্তা
যখন আমরা কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করি, তা সাধারণত http প্রটোকলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যাদের কাছে http প্রটোকল শব্দটি অপরিচিত মনে হচ্ছে, তাদের জন্য বলি- http প্রটোকলে আমাদের সব তথ্য নরমাল টেক্সট হিসেবে বিনিময় হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ফলে যেকেউ আমাদের তথ্য ইচ্ছে করলে ইন্টারসেপ্ট করে পড়তে পারবে। তাই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা, গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় তথ্য এনক্রিপটেডভাবে পাঠানোর পরামর্শ দেন। এনক্রিপটেড তথ্য কেউ যদি ইন্টারসেপ্ট করতেও পারে, তবুও সে সেখান থেকে মূল বা আসল তথ্যটি বের করতে পারবে না। সাধারণত ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং ও ইউজার অথেনটিকেশনের জন্য এনক্রিপটেড পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ওয়েবের তথ্যকে এনক্রিপটেডভাবে পাঠানোর জন্য https প্রটোকল ব্যবহার করা হয়। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, নরমাল http প্রটোকলের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করলে যেকেউ বিভিন্ন হ্যাকিং টুল (বার্প সুইট) বা নেটওয়ার্ক মনিটরিং টুল (ওয়্যার শার্ক) দিয়ে আমাদের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিতে পারে।
প্রতিকার : ফেসবুক সিকিউর ব্রাউজিং
এজন্য আমাদের ফেসবুকের https ব্রাউজিং এনাবল করতে হবে। নিচে এর ধাপগুলো আলোচনা করা হলো-
০১. প্রথমে অ্যাকাউন্ট সেটিংসে যেতে হবে।
০২. ডান পাশে সিকিউরিটি অপশনে ক্লিক করতে হবে।
০৩. সিকিউর ব্রাউজিংয়ে ‘Browse Facebook on a secure connection (https) when possible’ ক্লিক করে সেভ চেঞ্জেসে ক্লিক করতে হবে।
০৪. সিকিউরড ব্রাউজিং এনাবলের আগে।
০৫. সিকিউরড ব্রাউজিং এনাবলের পরে।
মোবাইল সিকিউরিটি কোড
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি মোবাইল সিকিউরিটি কোডের (লগইন অ্যাপরোভাল) মাধ্যমে আরও নিরাপদ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে যখনই কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে অন্য কোনো (আননোন) কমপিউটার থেকে অ্যাকসেস করতে চাইবে, সে আপনার মোবাইলে একটি সিকিউরিটি কোড পাঠাবে এবং ওই কোডটি তাকে লগইনের সময় ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু মোবাইল ফোনটি আপনার কাছে থাকবে, তাই সহজে কেউ আপনার কাছ থেকে কোডটি চুরি করতে পারবে না। সুতরাং, আপনার পাসওয়ার্ডটি চুরি হয়ে গেলেও অ্যাকাউন্টটি থাকবে নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, সিকিউরিটি কোডটি তখনই চাইবে, যখন কেউ অন্য কোনো কমপিউটার থেকে ফেসবুকে লগইন করার সময় সঠিক ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিতে পারবে। সুতরাং, এখন একজন হ্যাকারকে প্রথমে ব্যবহারকারীর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড চুরি করতে হবে। তারপর তার ফোনটিও চুরি করতে হবে।
মোবাইল সিকিউরিটি কোড এনাবল করতে
০১. আগের মতোই অ্যাকাউন্ট সেটিংয়ে যেতে হবে। তারপর সিকিউরিটি অপশনে।
০২. এরপর লগইন অ্যাপরোভালসে ক্লিক করতে হবে।
০৩. এরপর সেটআপে ক্লিক করলে স্ক্রিনে আপনার কাছে মোবাইল নম্বর চাইবে। আপনি যে নম্বরটি দেবেন সেই নম্বরে একটি গোপন নিরাপত্তা কোড এসএমএসের মাধ্যমে মোবাইলে চলে যাবে।
০৪. এখন আপনাকে মোবাইলের এসএমএসে আসা নিরাপত্তা কোডটি দিতে হবে।
০৫. পরে যখনই আপনি বা অন্য কেউ নিজের কমপিউটার ছাড়া অন্য কোনো কমপিউটার বা ডিভাইস দিয়ে ফেসবুকে লগইন করতে যাবেন, তখনই আপনার কাছে নিরাপত্তা কোডটি এসএমএসের মাধ্যমে চলে যাবে এবং আপনাকে তা দিয়ে লগইন করতে হবে। বিষয়টি বিরক্তিকর মনে হতে পারে, যদি ব্যবহারকারী একাধিক কমপিউটার বা ডিভাইস ব্যবহার করেন। আপনার ঝামেলা কমাতে পারে রিকগনাইজড ডিভাইস অপশনটি। এর মাধ্যমে আপনি নতুন নতুন ডিভাইসকে ফেসবুকে অ্যাড করে নিতে পারেন। এই অপশনটি প্রথমবার ওই ডিভাইস থেকে ফেসবুকে অ্যাকসেস করার সময়ই পাবেন।
জি-মেইলের নিরাপত্তা
ইদানীং জি-মেইলের পাসওয়ার্ড চুরির ঘটনাও অনেক বেরে গেছে। আপনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আপনার জি-মেইল অ্যাকাউন্টটির নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে পারেন। এজন্য আপনাকে জি-মেইলের টু-ওয়ে ভেরিফিকেশন অপশন ব্যবহার করতে হবে। টু-ওয়ে ভেরিফিকেশন কীভাবে কাজ করে, তা নিচে দেখানো হয়েছে।
যা করতে হবে
০১. প্রোফাইল থেকে অ্যাকাউন্ট সেটিংয়ে যেতে হবে।
০২. ২-স্টেপ ভেরিফিকেশনের এডিট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
০৩. আপনার মোবাইলের নম্বর দিতে হবে এবং সেন্ড কোড বাটনে ক্লিক করতে হবে। অবশ্য ভয়েজ কলের মাধ্যমেও কোডটি পেতে পারেন।
০৪. আপনার মোবাইলে পাঠানো সিকিউরিটি কোডটি দিয়ে ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করুন।
০৫. এরপর আপনাকে ২-স্টেপ ভেরিফিকেশনটি অন করতে হবে।
এখন কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে অবৈধভাবে অ্যাকসেস করতে চাইলে তাকে মোবাইল কোডটি পেতে হবে এবং তা ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু কোডটি একবার মাত্র ব্যবহার করা যাবে, সুতরাং কেউ আপনার আগের কোডটি জানতে পারলেও অ্যাকাউন্টটি থাকবে নিরাপদ।
০ টি মন্তব্য