নেটওয়ার্কে কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইস্যু
কোয়ালিটি অব সার্ভিস (QoS) অনেক নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ছাড়া নেটওয়ার্কে ভয়েস/ডাটা অ্যাপ্লিকেশন ইন্টিগ্রেশন করা সম্ভব নয়। এছাড়া কার্যকর মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) বাস্তবায়নেও কোয়ালিটি অব সার্ভিস বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এ লেখায় কোয়ালিটি অব সার্ভিসের মৌলিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিসের উপাদানগুলো এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হয়, তা এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস কী?
কোয়ালিটি অব সার্ভিস মূলত বেশ কিছু মেকানিজমের সমষ্টি, যা একজন নেটওয়ার্ক ম্যানেজারকে নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি যেমন- ব্যান্ডউইডথ, ডাটা ট্রান্সমিশন ডিলে, ডাটা প্যাকেট অনাকাঙিক্ষতভাবে হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়। এর ফলে বিশেষায়িত নেটওয়ার্ক সার্ভিস যেমন- ভয়েস ওভার আইপি, ওয়ানে (ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক) ডাটা ট্রাফিক প্রায়োরাটাইজ করা অনেকখানি সহজ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, নেটওয়ার্কে ডাটা ট্রাফিক প্রায়োরাটাইজ করা হয় ব্যবহার হওয়া প্রটোকলের ওপর ভিত্তি করে। এর বাইরেও কোয়ালিটি অব সার্ভিস পুরো নেটওয়ার্কে বিভিন্ন রিসোর্স বরাদ্দের গুরু দায়িত্ব পালন করে। এ কারণে খুব ব্যস্ত নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ বা সংবেদনশীল অ্যাপ্লিকেশনগুলো নির্বিঘ্নে রান করতে পারে।
অনেক ব্যস্ত মহাসড়কে গাড়ি চলাচল প্রায়োরাটাইজ করার মতো নেটওয়ার্কে ডাটা ট্রাফিক প্রায়োরাটাইজ করা অনেকটা ব্যস্ত হাইওয়েতে অনেক ধরনের গাড়ির মধ্যে বিশেষ কিছু গাড়িকে যেমন- ভিআইপি গাড়িকে অগ্রাধিকার দেয়ার মতো। ভিআইপি বাদ দিলে বাকি গাড়িগুলোকে একই ধরনের গুরুত্ব এ ক্ষেত্রে দেয়া হতে পারে। যেমন- আমরা ভয়েস ওভার আইপি অ্যাপ্লিকেশনকে মিশন ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে ধরে নিয়ে এর জন্য টপ প্রায়োরিটি নির্ধারণ করতে পারি। এরপর প্রায়োরিটি পাবে মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন এবং সবচেয়ে কম প্রায়োরিটি তালিকায় থাকবে বেশি ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে এমন অ্যাপ্লিকেশন, যেমন- ফাইল ট্রান্সফার ইউটিলিটি।
কোয়ালিটি অব সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা
প্রধানত দুটো বড় অ্যাপ্লিকেশনের কারণে নেটওয়ার্কে কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে :
ক. মিশন ক্রিটিক্যাল বা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করার প্রয়োজন হয়, যাতে নেটওয়ার্কে অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশনগুলো কোনোভাবেই যেন প্রভাবিত না হয়।
খ. রিয়েল টাইম বা বাস্তব সময়ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, যেমন- লাইভ মাল্টিমিডিয়া এবং ভয়েস চালানোর জন্য নেটওয়ার্কের কোয়ালিটি অব সার্ভিস ফিচারটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো রান করার জন্য নেটওয়ার্কের পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যান্ডউইডথ থাকে এবং এগুলোর জন্য অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধক হিসেবে যেন কাজ না করে। নেটওয়ার্কে নতুন অ্যাপ্লিকেশন যুক্ত হওয়া সত্ত্বেও যাতে পুরনো অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের দক্ষতা বা বিশ্বস্ততা কোনো ধরনের আপস করতে না হয়, সে বিষয়টি কোয়ালিটি অব সার্ভিস ফিচার নিশ্চিত করবে।
নেটওয়ার্কে ভয়েস এবং ডাটা একীভূত হওয়ার বা কনভারজেন্সের কারণে ডাটা নেটওয়ার্কে বিলম্ব সংবেদন (delay-sensitive) অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। ব্যয় সাশ্রয় এবং ভয়েস ও ডাটা একীভূত করে নতুন ফিচার যুক্ত করার (যেমন- ভয়েস ওভার আইপি বা ভয়েস ওভার এটিএম) কারণে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইউজারের প্রত্যাশা। তারা ভয়েস নেটওয়ার্কের মতোই ভয়েস ও ডাটার মিলিত অ্যাপ্লিকেশনের জন্য শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা আশা করে থাকে। এ ধরনের একটি বিশ্বস্ত নেটওয়ার্কের জন্য এর ব্যবস্থাপনা এবং টেকনোলজির বিষয়গুলো আগের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বের সাথে দেখতে হচ্ছে।
প্রশ্ন হতে পারে মিশন ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন কী? মিশন ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনের বড় উদাহরণ হচ্ছে ইআরপি (ERP) বা এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিং। এর আওতায় থাকতে পারে ডাটা এন্ট্রি, ফাইন্যান্স, ম্যানুফ্যাকচারিং, হিউম্যান রিসোর্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। এর বাইরেও মিশন ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে বিবেচনা করা যায় নির্বাচিত ফিজিক্যাল পোর্ট, নির্বাচিত নেটওয়ার্ক হোস্ট বা ক্লায়েন্ট ইত্যাদি।
কোয়ালিটি অব সার্ভিসের সুবিধাদি
কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এটি নেটওয়ার্ক ম্যানেজারকে বুঝতে সাহায্য করে নেটওয়ার্কের কোন রিসোর্সটি কোন ইউজার বা অ্যাপ্লিকেশন কতটুকু ব্যবহার করছে। অর্থাৎ রিসোর্স বরাদ্দ এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নেটওয়ার্ক ম্যানেজারকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। খুব গুরুত্বপূর্ণ বা মিশন ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনগুলো যে নেটওয়ার্ক রিসোর্স সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিতে ব্যবহার করতে পারছে তা কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করবে। এছাড়া বর্তমান সময়ে এবং আগামী দিনের উঁচুমানের মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন নির্বিঘ্নে রান করানোর বিষয়ে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
যেখানেই নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের পরিমাণ বেশি, সেখানেই কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হয়। নেটওয়ার্ক বিশেষ করে ওয়ানের (ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক) ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই কোয়ালিটি অব সার্ভিসের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণে ওয়ানে ব্যান্ডউইডথ, ডিলে (delay) এবং ডিলে ভেরিয়েশনের মতো প্যারামিটারগুলো নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের জন্য বিবেচনায় আনা হয়। মিশন ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন এবং ভয়েস ওভার আইপির ব্যাপক প্রচলনের কারণে ওয়ানের মতোই ল্যানের ক্ষেত্রে কোয়ালিটি অব সার্ভিস ফিচারটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সময়ের সাথে সাথে ইন্ট্রানেট এবং এক্সট্রানেটের সম্প্রসারণের কারণে পুরো নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর ওপর ব্যাপকভাবে ডাটা ট্রাফিকের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট দুই প্রামেত্ম কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করার প্রয়োজন হচ্ছে।
কোয়ালিটি অব সার্ভিসের উদাহরণ
চিত্র-২-এ কোয়ালিটি অব সার্ভিসের একটি নমুনা তুলে ধরা হলো। এখানে একই নেটওয়ার্কে (ল্যান ও ওয়ানের সমন্বয়) রয়েছে মিশন ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন ইআরপিসহ (অর্ডার এন্ট্রি, ফাইন্যান্স) সেলস, প্রোডাক্টশন, ট্রেনিং ইত্যাদি বিভাগের কার্যক্রম। এছাড়া এ নেটওয়ার্কে রয়েছে ভিডিও এবং ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন। এখানে দেখা যাচ্ছে, কোয়ালিটি অব সার্ভিসের ঘরে নেটওয়ার্ক রিসোর্স তথা ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের বিষয়ে ইআরপি অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরপর রয়েছে ভিডিও এবং অগ্রাধিকার তালিকায় সবচেয়ে ভিওআইপি।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস সিগন্যালিং
রিসোর্স রিজার্ভেশন প্রটোকল (RSVP) হচ্ছে প্রথম তাৎপর্যপূর্ণ ইন্ডাস্ট্রি-স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল, যার মাধ্যমে একটি মিশ্র (ল্যান ও ওয়ানের সমন্বয়) নেটওয়ার্কব্যাপী ডায়নামিক্যালি কোয়ালিটি অব সার্ভিস স্থাপন করা হয়। রিসোর্স রিজার্ভেশন প্রটোকলের সাহায্যে প্রটোকলটি সাপোর্ট করে না এমন রাউটারের মধ্য দিয়েও চলমান ডাটা ট্রাফিকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়।
বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করলে বলা যায়, রিসোর্স রিজার্ভেশন প্রটোকল হচ্ছে একটি প্রান্ত স্টেশন বা হোস্ট কমপিউটারের ক্ষমতা, যার সাহায্যে সার্ভার থেকে নেটওয়ার্কে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের কোয়ালিটি অব সার্ভিসের জন্য অনুরোধ জানাতে পারে। রিসোর্স রিজার্ভেশন প্রটোকল নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে অনুরোধটি পাঠায়। এজন্য সে ডাটা ট্রাফিক বহন করে নেটওয়ার্কের এমন প্রতিটি নোড পরীক্ষা করে। প্রতিটি নোডে রিসোর্স রিজার্ভেশন প্রটোকল ডাটা স্ট্রিমের জন্য কিছু পরিমাণ রিসোর্স সংরক্ষণ করে থাকে। এজন্য প্রটোকলটি বর্তমানে প্রচলিত মজবুত আইপি রাউটিং এলগরিদম কাজে লাগাতে পারে। প্রটোকল তার নিজের রাউটিংয়ের কাজ করে না। এর পরিবর্তে সে নিমণস্তরের রাউটিং প্রটোকল পরীক্ষা করে নির্ণয় করে রিজার্ভেশন সংক্রান্ত অনুরোধ পাঠাবে কি না।
কোয়ালিটি অব সার্ভিসের কার্যপদ্ধতি
এখানে কোয়ালিটি অব সার্ভিসের কার্যপদ্ধতি সংক্রান্ত দুটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো :
উপরের দুটো উদাহরণ থেকে বলা যায়, কোয়ালিটি অব সার্ভিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে নেটওয়ার্কে ডেডিকেটেড ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ ও ডাটা প্যাকেট হারানোর সম্ভাবনা কমিয়ে এনে অধিকতর নিশ্চিত সার্ভিসের গ্যারান্টি দেয়া। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নেটওয়ার্ক কনজেশন ব্যবস্থাপনা, নেটওয়ার্ক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যয়বহুল ওয়াইড এরিয়া লিঙ্ক আরও দক্ষতার সাথে কাজে লাগানো এবং নেটওয়ার্ক ট্রাফিক পলিসি সেটিং ইত্যাদি ম্যানেজারিয়াল টুল কাজে লাগানো হয়ে থাকে। মোট কথা নেটওয়ার্কের কোয়ালিটি অব সার্ভিস ফিচারের কারণে আপনি নিসণবর্ণিত সুবিধাবলী পাচ্ছেন :
ক. সুনির্ধারিত বা প্রায়োরাটাইজ অ্যাপ্লিকেশনের সুনিশ্চিত নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইডথ বরাদ্দ করা যায়।
খ. মিশন ক্রিটিক্যাল এবং সাধারণ অ্যাপ্লিকেশনগুলো পৃথকভাবে চিহিত করে এদের জন্য নেটওয়ার্ক রিসোর্স পৃথকভাবে অ্যাসাইন করা যায়।
গ. ইন্টারেক্টিভ এবং সময়-সংবেদনশীল (time-sensitive) অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়।
ঘ. যেসব অ্যাপ্লিকেশন অডিও, ভিডিও এবং ডাটা নিয়ে কাজ করে সেগুলোকে ইন্টিগ্রেট করার সুবিধা দেয়।
কোয়ালিটি অব সার্ভিস একটি নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন একই সময়ে নির্বিঘ্নে রান করানোর কাজটি সহজ করে দেয়। দিন দিনই নেটওয়ার্কভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের প্রকৃতি জটিল হচ্ছে। বিশেষ করে নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইডথ দখল করে এমন অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কোয়ালিটি অব সার্ভিস ফিচারটি যথাযথভাবে ইনস্টল এবং কনফিগার করা থাকলে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়
০ টি মন্তব্য