বাণিজ্য নীতিমালা ছাড়াই দেশে চলছে ‘ইন্টারনেট বাণিজ্য’
যেকোনো দেশে ইন্টারনেটের প্রসারের জন্য সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম হাতে থাকবে- এমনটিই নিয়ম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই নিয়ম থাকলেও ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। এ দেশে ইন্টারনেট নিয়ে কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। শুধু বিপণন কার্যক্রম দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এর বিভিন্ন কার্যক্রম।
বিপণন এবং বাণিজ্য- এই দুটি দিয়েই ইন্টারনেটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। আর আমাদের দেশে বিপণন কার্যক্রম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার, প্রসার, রফতানি সবকিছুই করা হচ্ছে। এ দেশে নেই কোনো ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা। কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই দেশে চলছে ইন্টারনেটের ব্যবহার, বিপণন, রফতানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। ফলে এতদিনেও দেশের ইন্টারনেটের মোট চাহিদা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করেই দেশের ইন্টারনেটের চাহিদা বের করা হচ্ছে।
অথচ ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি ভুটানেও রয়েছে ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা। অথচ আমাদের দেশে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনলাইন ইন্টারনেট এসেছে। তারপর পেরিয়ে গেছে ১৯ বছরের বেশি সময়। এতদিনেও ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এদিকে ‘সবেধন নীলমণি’ ব্রডব্যান্ড নীতিমালা করা হয়েছে ২০০৯ সালে। এরপরে এর কোনো আপগ্রেড হয়নি। এ কারণে কোনো মতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ইন্টারনেট খাত। যদিও দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে ব্রডব্যান্ড নীতিমালার সংশোধন হবে, কিন্তু ওই শোনা পর্যন্তই। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ হালে ইন্টারনেট দেশের জন্য বিরাট এক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক কর্মকা- চালিত হচ্ছে ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে। দেশীয় অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়ার পেছনে ইন্টারনেটের বিশাল অবদান থাকলেও কেন যেন বারবার ইন্টারনেট উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন।
এতকিছুর পরেও ইন্টারনেটের দাম না কমানো, ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) প্রত্যাহার না করা, ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর থেকে কাঙিক্ষত হারে শুল্ক না কমানো, আনুপাতিক হারে ব্যান্ডউইডথের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দাম না কমিয়ে বারবার ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোসহ সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো দীর্ঘদিনের। বাণিজ্য নীতিমালা না থাকায় এসব সমস্যার সুরাহা হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার বলেন, ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা তো স্বাভাবিকভাবে টেলিকম নীতিমালায় প্রতিভাত হওয়ার কথা। হাইলাইটেড হওয়ার কথা। কিন্তু এর কোনো কিছুই হয়নি। কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই চলছে ইন্টারনেট খাত।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, সংশোধিত হয়ে টেলিকমের যে নীতিমালা হতে যাচ্ছে তা কি আদৌ কোনো নীতিমালা? তিনি বলেন, এটাকে নীতিমালা বললে ভুল বলা হবে।
প্রসঙ্গত, সংশোধিত টেলিকম নীতিমালার খসড়ায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে মোস্তাফা জববারের মন্তব্য চাওয়া হয়। সে সময় তিনি খসড়া দেখেছিলেন।
তিনি বলেন, টেলিকম নীতিমালার মধ্যেই তো ইন্টারনেটকে গুরুত্ব দিয়ে কানেক্টিভিটি, ভোগ বা ব্যবহার, বিক্রি, চাহিদা নিরূপণ করার কথা। কিন্তু এসবের কিছুই নেই এতে। তিনি মনে করেন, ইন্টারনেট নিয়ে দেশে বর্তমানে যত ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে, তার সবকিছু এই ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা না থাকার কারণে।
তিনি আরও বলেন, এখন তো ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি এ দুটি বিভাগ বিভাগ। ইন্টারনেট দুটি জায়গাতেই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটাও কোনো সমস্যা কি না, তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। তিনি মনে করেন, ইন্টারনেটকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ কোনো খাত করা যায় কি না তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। তবে তিনি মনে করেন, ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা করা গেলে এসবের আর কিছুই প্রয়োজন হবে না।
এদিকে উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আমাদের গ্রাম প্রকল্পের পরিচালক রেজা সেলিম ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ কি জানে তার ইন্টারনেটের চাহিদা কত? জানে না। কারণ, জানবে কী করে। এ বিষয়ে কি কখনও কোনো গবেষণা হয়েছে? তিনি বলেন, আমরা যে পরিমাণ ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, সেটাকেই আমাদের চাহিদা বলা হচ্ছে। কিন্তু আসলে তো তা নয়। তিনি উল্লেখ করেন, খাত ধরে ধরে চাহিদা বের করতে হয়।
তিনি জানান, ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা থাকলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির জন্য আলাদা করে ইন্টারনেটের বরাদ্দ থাকত। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যও বরাদ্দ দেয়া থাকত। ফলে সহজেই দেশের মোট ইন্টারনেট তথা ব্যান্ডউইডথের চাহিদা বের করা যেত। তিনি মনে করেন, দেশে বর্তমানে যে ব্যান্ডউইডথ রয়েছে তা উদ্বৃত্ত নয়, অব্যবহৃত।
জানা যায়, বাণিজ্য নীতিমালা না থাকায় দেশে ইন্টারনেট আনার পেছনে বিশেষ করে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আনা ব্যান্ডউইডথে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় (ব্যয় না বলে বিনিয়োগ বলাই শ্রেয়) করা হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে তার কোনো রূপরেখা নেই। কতদিনে এই বিনিয়োগ উঠে আসবে, সেসবও ঠিক করা নেই। ফলে দেশের ইন্টারনেট তথা ব্যান্ডউইডথ শুরু থেকে (সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার পর থেকে) ধোঁয়াশা ছিল। ক্রমেই তা আরও বেশি হচ্ছে।
এই সমস্যার কারণে কেউ চাইলেও আমাদের দেশের পক্ষে চটজলদি এসব তথ্য হাজির করা সম্ভব হবে না। এই খাতে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে, কত টাকা আয় হয়েছে এবং অবশিষ্ট টাকা কতদিনে উঠে আসবে- তা ঠিক না করা থাকায় সিস্টেম লসসহ আরও অনেক কিছু দেখানোর সুযোগ তৈরি হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থ অনর্থ করারও পদ্ধতিগত কৌশল বের করা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা থাকলে ইন্টারনেটের দরদাম নির্ধারণের বিষয়টিও সেখানে উল্লেখ থাকত। ফলে চাইলেই ইন্টারনেটের দাম কমানোসহ সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরা যাক বর্তমানে ১ মেগা ইন্টারনেটের দাম ১০০ টাকা। দাম কমিয়ে যদি ৪০ টাকা হয় তাহলে দেখা যাবে, যারা আগে ১ মেগা ব্যবহার করত তারা এখন ৩ মেগা ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। তাহলে চাহিদা এবং ভোগ নিরূপণ কীভাবে করা হবে। এজন্য একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন।
এদিকে ইতালিতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তার মূলে ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা না থাকাকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নীতিমালা না থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড) এই সুযোগ নিচ্ছে।
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দেশে বর্তমানে ব্যান্ডউইডথ আসছে ২০০ গিগা আর আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল) মাধ্যমে আসছে প্রায় ১০০ গিগা। এর মধ্যে সব মিলিয়ে ব্যবহার হয় প্রায় ১৩৭ গিগা। বাকিটা অব্যবহৃত থেকে যায়। এই অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথ থেকে ভারতে ১০ গিগা এবং ইতালিতে ৫৭ গিগার মতো ব্যান্ডউইডথ রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে ব্রডব্যান্ড নীতিমালার কোথাও উল্লেখ নেই অব্যবহৃত বা উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইডথের কী হবে। সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশক্রমে এই ব্যান্ডউইডথ রফতানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা থাকলে এসব জটিলতা থাকত না।
জানা গেছে, সাবমেরিন ক্যাবলে আমাদের রয়েছে ৯ মিলিয়ন বা ৯০ লাখ মিউ কিলোমিটার বা মিউয়ের অর্থ মিনিমাম ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট (এমআইইউ)। মিউ কিলোমিটার একটি ইউনিট। সিমিউই-৪ ক্যাবল সিস্টেমের ১ মিউ কিলোমিটার মানে হলো ১ কিলোমিটারের সমান দীর্ঘ এসটিএম-১-এর লিঙ্ক। ৬৩টি ই-১ মিলে হয় একটি এসটিএম-১। আর একটি ই-১ হচ্ছে ২ মেগাবিটস/সেকেন্ডের একেকটি লিঙ্ক। এর মাত্র ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মিউ কিলোমিটার বা ৪৪ দশমিক ৮৫ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ আমরা ব্যবহার করি। বাংলাদেশ ইতালিকে মোট মিউ কিলোমিটার থেকে ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ মিউ কিলোমিটার দিতে চায়। এই হিসেবে ইতালি বাংলাদেশ থেকে প্রতি মেগা ব্যান্ডউইডথ কিনবে মাত্র ৯.৫২ টাকায়, যা দেশের মানুষ (বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানগুলো) কিনছে ৬২৫ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট বাণিজ্য নীতিমালা থাকলে এটা সম্ভব হতো না।
এদিকে ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বলেন, দেশে প্রতি মেগা ইন্টারনেটের দাম এবং মিউ কিলোমিটার দামের মধ্যে সমন্বয় করলে প্রতি মেগা ব্যান্ডউইডথের দাম পড়ে ১৩০ টাকা। দেশের আইআইজিগুলোর কাছে এই দাম অফার না করে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড ইতালিতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি আমাদের এই ১৩০ টাকাই অফার করে বলতে পারত, আমাদের দিতে হবে ওই ১৩০ টাকা। এরপর ব্যান্ডউইডথ নিতে আর যা যা খরচ হবে তা তোমাদের বহন করতে হবে। তাহলে যে পারত সে নিত। এতে কোনো বৈষম্য থাকত না। এখন বৈষম্য এবং বৈপরীত্যে একাকার অবস্থা।
বাণিজ্য নীতিমালা থাকলে এসব বিষয় সেখানে পরিষ্কার থাকত। কারও কোনো অভিযোগ থাকত না বা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে গেলে ভুক্তভোগীরা নীতিমালাকে উদাহরণ হিসেবে আনতে পারত। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই সুযোগটাই নিয়েছে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে ব্যান্ডউইডথ বিক্রির (রফতানিসহ) উদ্যোগ নিচ্ছে। তারা আরও মনে করছেন, সম্প্রতি যে ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হয়েছে, তা আসলে বিশেষ কোনো পক্ষকে দেয়ার জন্য। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, ১ মেগা ব্যান্ডউইডথের দাম ৬২৫ টাকা হবে তখনই, যখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের কেউ ১০ গিগা ব্যান্ডউইডথ কিনবে। আইএসপিগুলো তো নয়ই, কোনো আইআইজির পক্ষেও এই পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ কেনা সম্ভব হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটরের পক্ষেই শুধু এই ব্যান্ডউইডথ কেনা সম্ভব। কারণ, ওই অপারেটরের পক্ষেই (গ্রাহক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে) ব্যান্ডউইডথ কেনা সম্ভব।
কম দামে ইতালিতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে বোঝার ভুল রয়েছে। অনেকে ভারতের দামের সাথে ইতালির দামের মধ্যে পার্থক্য করছেন। যদিও এটা একেবারেই অনুচিত। কারণ, ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করতে গেলে আমাদেরকে বিদেশের ব্যাকহল চার্জ, আইপি ট্রানজিট, পোর্ট চার্জ, ওয়েট সেগমেন্ট চার্জ, ইন্টারকানেকশন কানেক্টিভিটি চার্জ ও দেশি ব্যাকহলসহ ৬টি কম্পোনেন্ট ব্যবহার করতে হয়। সেসবের ভাড়াও দিতে হয়। ফলে ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির ক্ষেত্রে এসব ব্যয় হয় বলে ভারতের কাছ থেকে আমরা যে টাকা পাব, তা ইতালির কাছ থেকে পাব না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইতালি ব্যান্ডউইডথ নেবে সমুদ্র থেকে। শুধু একটি পেপার ওয়ার্ক করতে হবে। মাত্র ৫ মিনিটের কাজ। পেপারটা ওদের পাঠিয়ে দিলেই আমাদের কাজ শেষ। সিমিউই-৪ কনসোর্টিয়াম থেকে ইতালি ব্যান্ডউইডথ নিয়ে নেবে
০ টি মন্তব্য