https://gocon.live/

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি :মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি :মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস

হীরেন পন্ডিত হীরেন পন্ডিত
 
কভিড-১৯ মহামারি সারা পৃথিবীকে প্রায় বিপর্যস্ত করে তুলেছে। মানুষের জীবন-জীবিকার সংকট এখন প্রকট। করোনা মহামারির অভিঘাতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এমনিতেই প্রবল আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্যে আছে। সরকারি হিসাবে মূল্যস্ম্ফীতির হার এখন ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু নিত্যপণ্যের বেপরোয়া মূল্যবৃদ্ধি বাস্তবে মূল্যস্ম্ফীতির এই হিসাবের তুলনায় বহু গুণ। সরকারি সংস্থা টিসিবির বাজারদরেই দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় চালের দাম গড়ে ৩১ শতাংশ, ময়দা ৩৩, সয়াবিন তেল ৪৫, চিনি ৫০ ও মসুর ডাল ৩০ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে রান্নার গ্যাসের দাম আগস্ট মাসের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বেড়েছে পানি ও বিদ্যুতের দামও। একদিকে নিশ্চিত দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে অনিশ্চিত আয়ে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এই পরিস্থিতিতে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতোই আকস্মিকভাবে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম।জ্বালানি তেল এমন একটি কৌশলগত পণ্য, যার দাম বাড়ানো হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাপনে সরাসরি প্রভাব পড়ে। কেননা, ডিজেলের দাম বাড়লে যানবাহনের ভাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচসহ কৃষি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন আর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশবাসী যখন নাকাল, তখনই দেশে নতুন করে আরও দারিদ্র্য বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেল নতুন এক জরিপে। এই জরিপের ফল প্রকাশে বলা হয়েছে, দেশে গত ছয় মাসে আরও ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে দরিদ্রের এই সংখ্যা বেড়েছে। নতুন এই সংখ্যা নিয়ে করোনাকালে দেশে দরিদ্র হয়েছে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ। চলতি বছরের মার্চ মাসে এই সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৫ লাখ।এই বাস্তবতায় মধ্যবিত্ত কী করে টিকবে- সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। কভিডের কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন শতকরা ৩৬ জন। ৩ শতাংশ মানুষ চাকরি থাকা সত্ত্বেও বেতন-ভাতা পান না ঠিকমতো। চাকরিহারা কেউ কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। সেখানেও সুবিধা করতে পারছেন না। জীবনযুদ্ধের এক কঠিন সময় যাচ্ছে এখন।নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অভাব আর দারিদ্র্যের কশাঘাতে আজকের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্ণ। মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া অবস্থা দরিদ্র ব্যক্তিদের পক্ষে বজ্রাঘাততুল্য। বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। সরকারকে কঠোর হাতে অতিলোভী অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টানানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কিনা, সেটি পর্যবেক্ষণে সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ মানুষের স্বস্তিতে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কিন্তু যা হচ্ছে, তা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।সরকারকে এদিকে আরও দৃষ্টি দিতে হবে। সরকারের সদিচ্ছাই অনাকাঙ্ক্ষিত বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে মধ্যবিত্তের জীবনকে দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব প্রতিবেশী দেশেও পড়বে। তাহলে তারা না বাড়িয়ে উল্টো কমাল কীভাবে? রবি মৌসুম সামনে রেখে তারা কৃষককে স্বস্তি দিতে ও বাজার স্বাভাবিক রাখতে চেয়েছে। এসব ভাবনা আমাদের নীতিনির্ধারকদের মাথায় রাখলে ভালো। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে সমন্বয়ের জন্য অনেকেই উতলা হয়ে যায়। কিন্তু দাম কমলে তেমন উদ্যোগ থাকে না। মাঝখানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কম ছিল। সাত বছরে সরকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। আর এখন এক মাসে ৭২৩ কোটি টাকার লোকসান পোষাতে ২৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের কথা ভাবতে হবে সরকারকে। চতুর্দিকে কত অনিয়ম, অপচয়! সেদিকে নজর দিলে, একটু নিয়মের মধ্যে নিয়ে এলে সরকারকে তেলের দাম বাড়াতে হতো না।করোনাকালে সরকার অনেক প্রণোদনা দিলেও তার সুফল সাধারণ মানুষ পায়নি। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস, তখন নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। সবকিছুর দামই বাড়তি। মধ্যবিত্তরাও এখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন ধরতে বাধ্য। সেখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সরকারের উচিত আগে বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা; সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করা। তারপর তো লাভ-লোকসান বিবেচনা।ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। অথচ এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিষ্ঠিত। আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে তাদের। তা না হলে ক্যাব ভোক্তা অধিকার কতটুকু সংরক্ষণ করতে পারছে- তা বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে আসতে পারে। তাই সবাই মিলেই এ বিষয়ে কাজ করা উচিত।







০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।