https://gocon.live/

ইন্টারনেট

এসএমএস ব্যাংকিং : সময়ের ব্যাংকিং চাহিদা

এসএমএস ব্যাংকিং : সময়ের ব্যাংকিং চাহিদা এসএমএস ব্যাংকিং : সময়ের ব্যাংকিং চাহিদা
 

এসএমএস ব্যাংকিং : সময়ের ব্যাংকিং চাহিদা


গত দুই দশকে যে সব ব্যবসায় প্রযুক্তিকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগানো হয়েছে তার মধ্যে ব্যাংকিং অন্যতম। এ তথ্যটি সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে সমভাবে সত্য হলেও সবচেয়ে বেশি সত্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। এ ধরনের তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ ব্যাংকিং সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে এদেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকসমূহ। সর্বপ্রথম ১৯৮৩ সালে বাজারে আসে প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংক। শুরু করে কমপিউটারাইজড ব্যাংকিং সেবা দেয়া। সর্বপ্রথম তারা LAN বা Local Area Network-এর মাধ্যমে সেবা দেয়া শুরু করে।


এ পদ্ধতিতে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায় তা হলো :


* দ্রুত সেবা দেয়া যায় কারণ একই তথ্য একই সময়ে একাধিক লোক (ব্যাংকার) শেয়ার করতে পারে।

* বিভিন্ন লেভেলে পাসওয়ার্ড থাকার কারণে নিরাপত্তার মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

* চাহিদা মোতাবেক দ্রুত যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্য সার্ভার থেকে ডাউনলোড করা যায় ইত্যাদি।


LAN-এর এ প্রযুক্তিতে প্রত্যেকটি শাখাতে ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেজ ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ব্যাংকের প্রত্যেকটি শাখা আলাদা ডাটাবেজ ব্যবহার করার মাধ্যমে কাজ করে থাকে। পরবর্তী সময়ে ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেজ ব্যবহার করে শাখাগুলোর মধ্যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা (যেমন ভি স্যাট, রেডিও লিঙ্ক, ফাইবার অপটিক ইত্যাদি) স্থাপনের মাধ্যমে Any Branch Banking (ABB) সুবিধা দেয়া শুরু করে। এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম গ্রাহক যেকোনো শাখা থেকে ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া শুরু করে। অর্থাৎ যে শাখাতেই হিসাব থাকুক না কেন যেকোনো একটি শাখাতে গিয়েই গ্রাহক সেবা নিতে পারবে। কারণ এবিবির মাধ্যমে একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এক শাখা অন্য শাখার Semg-এ ঢুকে কাজ করতে পারে অর্থাৎ ওই নির্দিষ্ট গ্রাহকের হিসাবে ঢুকে টাকা জমা করা বা টাকা দেয়ার কাজ করতে পারে। তবে সাথে সাথে অনলাইনের মতো Reconciliation সম্পন্ন হয় না। দিনে কয়েকবার Batch Process হয়।


এবিবির মাধ্যমে ব্যাংকিংয়ে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায় তা হলো-


* গ্রাহককে তার নিকটস্থ যেকোনো শাখাতে গেলেই চলে।

* গ্রাহকের সময় নষ্ট হয় না, ফলে সহজেই ব্যাংক গ্রাহকের সন্তুষ্টি পেয়ে থাকে ।

* যেকোনো সময় প্রয়োজনে গ্রাহক অর্থ পেতে পারে ইত্যাদি।


ক্রমান্বয়ে আসতে থাকে অনলাইন ব্যাংকিং বা সেন্ট্রাল ডাটাবেজসমৃদ্ধ ব্যাংকিং। এ সুবিধা একজন গ্রাহককে যে সুবিধাসমূহ দিতে পারে তা হলো-


* একটি কাস্টমার আইডির মাধ্যমে একটি গ্রাহকের পরিচিতি থাকে।

* একজন গ্রাহকের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য খুব দ্রুত যেকোনো সময় পাওয়া যায়।

* যেকোনো অটোমেটেড সেবা দেয়ার অগ্রিম সুবিধা পাওয়া যায়।


যেসব অটোমেটেড সুবিধাসমূহ দেয়ার পূর্বশর্ত হলো সেন্ট্রাল ডাটাবেজ। যেগুলো হলো এটিএম ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এসএমএস ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি। আরো আছে মোবাইল রেমিটেন্স, মোবাইল পেমেন্ট, কল সেন্টারের মতো আধুনিক ব্যাংকিং চাহিদা।


এ সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এসএমএস ব্যাংকিং বা অ্যালার্ট ব্যাংকিং সুবিধা। এসএমএস অ্যালার্টের ক্ষেত্রে গ্রাহক সুবিধাটির অন্তর্ভুক্ত হলেই বিভিন্ন রকম হিসাবের তথ্য অটোমেটিক অ্যালার্টের মাধ্যমে পেয়ে যাবে। এ সার্ভিসটিকে সাধারণ নামে পুশ সার্ভিস হিসেবে পরিচিত। এই পুশ সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহক বিভিন্ন রকম তথ্য মোবাইলে অ্যালার্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। আর পুশ-পুল সার্ভিস সম্পূর্ণভাবে গ্রাহকের সুবিধা ও স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেই দেয়া হয়। এর মাধ্যমে গ্রাহক তার প্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য অনুরোধের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। যেসব অনুরোধ গ্রাহক সাধারণত করে থাকে তা হলো মিনি স্টেটমেন্ট, লাস্ট ব্যালেন্স, এফওআর ম্যাচুরিটি, ইনস্টলমেন্ট ডিউ, ক্রেডিট কার্ড ব্যালেন্স ইত্যাদি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেসেজের মাধ্যমে একটি শর্ট কোড নাম্বারে রিকোয়েস্ট পাঠাতে হয়। গ্রাহককে এসএমএস সার্ভারে এক্সেস সুবিধা দেয়ার জন্য একটি PIN (Personal Identification Number) নাম্বার দেয়া হয়। এ নাম্বারের মাধ্যমেই গ্রাহক পরিচিত হয় সিস্টেমের সার্ভারের কাছে। পাসওয়ার্ড বা পিন দেয়ার জন্য সাধারণত অ্যাপ্রোভাল চিঠি বা মোবাইল মেসেজ ব্যবহার করা হয়। অ্যাপ্রোভাল চিঠির মাধ্যমে গ্রাহককে পিন নাম্বার দিতে একটি কাগুজে চিঠি ব্যবহার করা হয়। সেখানে গ্রাহককে প্রাথমিক পিন নাম্বার পরিবর্তন করে নেয়ার অনুরোধ করা থাকে। পরিবর্তন করে নিলে পিনটি একান্ত গ্রহাকের হয়ে যায় এবং তার তথ্য বা হিসাবের বিবরণ অন্য কোনো ব্যক্তির জানার ঝুঁকি কমে যায়। আর মোবাইলের মাধ্যমে পিন নাম্বার দিলে একটি রিকোয়েস্টের বিপরীতে ফিরতি মেসেজ হিসেবে তা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যে অসুবিধাটি থাকে সেটি হলো পিনটি অন্য কোনো ব্যক্তি জেনে যেতে পারে, যদি মেসেজটি মোবাইলে আসার সাথে সাথে ওই নির্দিষ্ট গ্রাহক ব্যাক্তি অন্য কেউ মোবাইলের কাছে থাকে এবং মেসেজটি জানার চেষ্টা করে।


চিঠির মাধ্যমে পিন বরাদ্দ করলে নিন্মলিখিত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। এগুলো হলো-


* চিঠিটির একটি কপি অফিসে সংরক্ষণ করা হয়।

* পিনটি যাকে বরাদ্দ করা হয়েছিল তাকে দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

* দীর্ঘদিন চিঠিটি অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে সংরক্ষণ করা যায়।

* নিরাপত্তা বিধান করা সহজ হয়।


আর মোবাইলের মাধ্যমে পিন পাঠালে যে অসুবিধাগুলো হতে পারে তা হলো-


* অন্য কেউ পিন নাম্বার জেনে যেতে পারে।

* সার্ভারের সমস্যার কারণে গ্রাহক মেসেজটি নাও পেতে পারে।

* ভবিষ্যতের জন্য ডকুমেন্টটি সংরক্ষণ করতে কিছুটা অসুবিধা হয়।


এসএমএস ব্যাংকিং চালু করার জন্য যেসব প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে হয় তা হলো-


* ব্যাংকটিতে অবশ্যই সেন্ট্রাল ডাটাবেজসমৃদ্ধ অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকতে হবে।

* একটি মোবাইল অপারেটরের সাথে সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে। ওই অপারেটরের সাথে আবার অন্যান্য অপারেটর যুক্ত থাকবে।

* মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন থাকতে হবে যা একটি Semg-এ চলবে ও এর ডাটাবেজটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে।


বর্তমানে আমাদের দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য ফান্ড ট্রান্সফার বা মোবাইল কমার্স সুবিধা চালুর অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যাংকই শুধু এসএমএস ব্যাংকিংয়ের দিকে নজর দিচ্ছে এবং এই সেবাটি নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সচেষ্ট হচ্ছে।


কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো দেখা যায় তা হলো-


* আর্থিক বিষয়গুলো এর সাথে সংযুক্ত নয়।

* বেশ অল্প খরচেই সুবিধাটি গ্রাহককে দেয়া যায়।

* ব্যবসায় পুঁজি বা বিনিয়োগ হিসেবেও কম।

* এসএমএসের মাধ্যমে দেয়া তথ্যগুলো গ্রহাকের খুবই দরকার।


বর্তমানে এসএমএস ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে একই সিস্টেমের মধ্যেই ভয়েজ সুবিধাও দেয়া সম্ভব। এ ধরনের দু’একটি অ্যাপ্লিকেশন বাজারে পাওয়া যায়। তবে ফান্ড ট্রান্সফারের সুবধিা দেয়ার আগে ব্যাংককেই অবশ্যই ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে সিস্টেম কতটুকু নিরাপত্তা দিচ্ছে।


যাই হোক, এসএমএস ব্যাংকিং আজ সময়ের চাহিদা। গ্রাহককে সেবা দেয়ার মাধ্যমে ধরে রাখতে চাইলে এ ধরনের সুবিধা ব্যাংকগুলোকে দিতে হবে। পারলে কোনো ধরনের চার্জ বা ফি ছাড়াই। তাহলেই আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেবার মানে সত্যিই এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আর সেই পরিবর্তনের হাত ধরেই ব্যাংকগুলো এগিয়ে যাবে আরো নতুন নতুন প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সেবার দিকে। দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া তাই।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।