দেশে প্রথমবারের মতো অফলাইনে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশ পর্ব।
রাজধানীর তেজগাও-এ অবস্থিত আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২৪ সেপ্টেম্বর সারাদিন ধরে এই অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এবছর অলিম্পিয়াডের থিম “My Robot My Friend”। সারা দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীরা দুইটি ক্যাটাগরিতে এ অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। যার মধ্যে ৬ টি দল “ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার্স” ক্যাটাগরিতে এবং ২৬ টি দল “ফিউচার ইনোভেটর্স” ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করে। জাতীয় এ পর্বের বিজয়ীদের মধ্য থেকে দুটি দল জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে অনুষ্ঠাতব্য “ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড ২০২২” এর আন্তর্জাতিক পর্বে অংশগ্রহণ করবে।
বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল মিলনায়তনে এই অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরনী এবং সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অতিথি হিসেবে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফজলে ইলাহী, প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসটিংগুইজড প্রফেসর ও বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মমলুক ছাবির আহমদ, ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড-বাংলাদেশ ২০২২”-এর আহ্বায়ক রেদওয়ান ফেরদৌস, ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন এবং ডাব্লিউআরও বিডির সমন্বয়ক মাহেরুল আজম কোরেশী সহ আরো অনেকেই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপাচার্য রোবট অলিম্পিয়াডের মতো আয়োজনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনকে নতুন প্রজন্মের সাহসিকতাকে অভিবাদন জানান। এর পাশাপাশি আজকের আয়োজনের বিজয়ীদের অভিনন্দনও জানান তিনি। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ তার বক্তব্যে এমন অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরী করে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। শিক্ষার্থীদের মেধার উপর ভর কর বাংলাদেশ আরো অনেক দূরে পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, এমন আয়োজনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণটাই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের অনুপ্রেরনাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় এ অলিম্পিয়াডে ফিউচার ইনোভেটরস ক্যাটাগরির সিনিয়র সেগমেন্ট এ টিম রোবনিয়াম গোল্ড মেডেল পেয়েছে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর থেকে ইসরাফিল শাহীন অরণ্য এবং মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে মির মুহাম্মদ আবিদুল হক । এই ক্যাটাগরিতে সিলভার মেডেল পেয়েছে টিম সেন্টিনেলস যেখানে মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ফাহিম মোশারফ রাতুল এবং রাইয়ান হক এবং ব্রোঞ্জ মেডেল পেয়েছে টিম এটলাস যেখানে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে সানজিতা সিদ্দিক, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে নুসরাত জাহান (সিনহা) এবং ঢাকা কলেজ থেকে মাহজীন জিবরান পৃথু এবং টিম ক্রস এরোর আদমজী ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে মো সামিউর রহমান খান এবং আতিক মাসুদ খান অংশ গ্রহন করে।
একই সেগমেন্টের জুনিয়ার ক্যাটাগরিতে ব্রোঞ্জ পেয়েছে টাইগার-৭১ যেখানে ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আরেফিন আনোয়ার এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে রাগিব ইয়াসার রহমান এবং এলিমেন্টরি ক্যাটাগোরিতে অনারেবল মেনশন পায় টিম সাইবার স্কোয়াড এর আফিয়া হুমায়রা এবং শবনম খান। ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার ক্যাটাগরির সিনিয়ন স্যাগমেন্ট এ ব্রোঞ্জ মেডেল পেয়েছে টিম লেইজি গো যেখানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রোফেশনালস থেকে ইকবাল সামিন পৃথুল এবং নটরডেম কলেজ, ঢাকা থেকে আবু নাফিস মোহাম্মদ নূর রোহান অংশ নেয়।
প্রতিযোগিদের মধ্য থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে আসা রোকসো (RoCSo) দলের কাজী মোঃ আলামিন রোবোটিক্স-এর প্রতি তার আগ্রহ শুরু হওয়া নিয়ে ছোটবেলায় খেলনা গাড়ির মোটর কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে ঘাটাঘাটি করার বিষয় উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে অনলাইন একটি ক্যাম্পেইন করার মাধ্যমে তার রোবোটিক্স এর হাতেখড়ি হয়।
কুমিল্লার পাইপাই ট্রিনিটি ওফ গার্লস্ (PyPy Trinity of Girls) দলের নাফিসা আমিন তাদের জেলা প্রশাসকের রোবোটিক্স নিয়ে আগ্রহ এবং উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহনের মাধ্যমে রোবোটিক্সের সাথে তার পরিচিত হয় বলে জানায়।
রোবোনিয়াম বাংলাদেশ (Robonium Bangladesh) দলের ইসরাফিল শাহীন অরন্য বর্তমানে রংপুরে পড়াশুনা করছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাদের স্কুলে আয়োজিত একটি ওয়ার্কসপে অংশগ্রহনের মাধ্যমে রোবোটিক্স নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়। সে মনে করে রোবোটিক্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কিটসগুলো আরও সহসলভ্য হলে তারা আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। বর্তমানে রোবোটিক্স এর মধ্যে তার প্রিয় বিষয় হচ্ছে মেশিন লার্নিং।
উল্লেখ্য, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে “ইন্টারন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াড” এ বাংলাদেশের ক্ষুদে রোবটবিদরা অসামান্য সাফল্য অর্জন করে। তারই ধারাবাহিকতায় রোবট কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগ গ্রহন করে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, ২০১৯ সালের শেষে শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা ও সমস্যার সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ রোবটিক্স প্রতিযোগিতা “ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড” এর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে বিডিওএসএন। ২০২০ সালের ৬ই জানুয়ারি “ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড” ও “বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)”-এর মধ্য এক চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডের সদস্য পদ লাভ করে। বাংলাদেশ ডাব্লিউআরও-এর এশিয়ার ২৫তম এবং বিশ্বব্যাপী সদস্যদের মধ্যে ৮৪তম সদস্য। “ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড”-এর জাতীয় আয়োজক হিসাবে “বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক” প্রতি বছর বাংলাদেশে “ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড-বাংলাদেশ”-এর জাতীয় পর্ব আয়োজন করে। তবে এবছর আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হল এক ভিন্ন মাত্রায়, বাংলাদেশ এবারই প্রথম বারের মত অফলাইনে আয়োজিত হলো এই অলিম্পিয়াড।
২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড-বাংলাদেশের জাতীয় পর্বের পৃষ্ঠপোষক “ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট”। আয়োজক বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। এছাড়াও এ আয়োজনে সহযোগী হিসেব থাকছে “প্রথম আলো” ও “জেআরসি বোর্ড”। এবছরের আয়োজনটির নামকরণ করা হয়েছে “ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট প্রেজেন্টস ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াড-বাংলাদেশ ২০২২”।
০ টি মন্তব্য