বাংলাদেশ ২য় ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য যুবদের ক্ষমতায়ন
গত ২৬ ও ২৭ আগস্ট দু’দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ২য় ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম’ শুরু হয় সিরডাপ মিলনায়তনে। ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের আওতায় জাতিসংঘের ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের একটি উদ্যোগ। এটি একটি মাল্টি-স্টেকহোল্ডার, যুব এবং যুব নারীদের নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্ম। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে যৌথভাবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (বিআইজিএফ)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই এমপাওয়ারিং ইয়ুথ ফর স্মার্ট বাংলাদেশ সেশনে আলোচনা করেন মো: শাহরিয়ার হাসান জিসান, ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট, এটুআই, আইসিটি ডিভিশন; মিসেস শরীফা আলম, টিম লিডার, স্টার্টআপ খুলনা, প্রকল্প সমন্বকারী তরুণদের ডিজিটাল সচেতনতায় সরকারি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করেন।
ফয়সাল আহমেদ ভুবন, সদস্য-সচিব, বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম; হাসান জাকির, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম; মো: তৌহিদ হোসেন, মহাসচিব, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) এই বিষয়ে অলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোস্তাফা জব্বার, মন্ত্রী, ডাক ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুব্রত রায় মৈত্র, ভাইস চেয়রম্যান, বিটিআরসি। সভায় সভাপতিত্ব করেন হাসানুল হক ইনু, সভাপতি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এএইচএম বজলুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, বিএনএনআরসি।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের চেয়ারপারসন সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
আয়েশা লাবিবা, কিডস ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম, আশরাফুর রহমান পিয়াস, বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, ফারহা মাহমুদ তৃণা কনভেনার, উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের পক্ষে সংহতিমূলক বক্তব্য রাখেন।
মো: নজরুল ইসলাম, সিওও, কার্নিভাল ইন্টারনেট, গ্রামীণ যুবকদের জন্য কার্নিভাল ইন্টারনেট নিয়ে আলোচনা করেন এবং জনাব মো: তারেক মঈন উদ্দিন, ডিরেক্টর সেলস, অড্রা, ডিজিটাল ওয়েলনেস নিয়ে আলোচনা করেন।
টিআইএম নুরুল কবির, সদস্য, গ্লোবাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল, সাইবার পিস একাডেমি, অ্যাম্বাসেডর-ইন্ডাস্ট্রি ৫.০ এবং মো: এমদাদুল হক, প্রেসিডেন্ট, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথি সুব্রত রায় মৈত্র, ভাইস-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) উদ্যোগ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
ডিজিটাল প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইন্টারনেট সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করার পাশাপাশি সবচেয়ে কম মূল্যে স্মার্ট ফোন সাধারণের নাগালে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জনিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ইন্টারনেটের ‘এক দেশ এক রেট’ চালু করেছি। দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোন ইতোমধ্যেই শতকরা ৯৬ ভাগ চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য লাগসই ডিজিটাল সংযোগ ও ডিজিটাল ডিভাইস অপরিহার্য। ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোন শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেট এখন মানুষের জীবনধারায় অনিবার্য একটি বিষয় হিসেবে জড়িয়ে আছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি হচ্ছে ইন্টারনেট। কাউকে এ থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের খারাপ দিকও আছে আবাব খারাপ দিক থেকে রক্ষার উপায়ও আছে। সেটা থেকে ছেলেমেয়েদের সুরক্ষায় অভিভাবকদেরই ভূমিকা নিতে হবে। প্যারেন্টাইল গাইডেন্স ব্যবহার করে ইন্টারনেট শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে সরকার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, ইতোমধ্যে ২৬ হাজার পর্নোসাইট ও ৬ হাজার জুয়ার সাইট আমরা বন্ধ করেছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া।
ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই প্রাথমিক স্তরে বই ছাড়া ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে আমি লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছি। দেশের ৮০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তা চালু করা হচ্ছে। আমি রাস্তাটা দেখলাম অন্যরা তা অনুসরণ করবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সন্তানদের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের সুযোগ না দিলে আগামী পৃথিবীতে তারা টিকে থাকার জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বে।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি মানুষ ইন্টারনেটের উচ্চগতিও এখন প্রত্যাশা করে। এই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে দেশে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা, ২০০৮ সালে তা ২৭ হাজার টাকা এবং বর্তমানে তা ৬০ টাকায় নির্ধারিত হয়েছে। সে সময় দেশে মাত্র সাড়ে ৭ জিবিপিএস ব্যান্ডউডথ ব্যবহৃত হতো তা বেড়ে বর্তমানে ৩৮ শত জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ফাইভজি যুগে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে বলেন, সামনের যুগের প্রযুক্তি হবে ফাইভজি। টুজি কিছু দিন চলবে, থ্রিজি মোবাইল আমদানি ও উৎপাদন জানুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন ফোরজি হবে কমন প্ল্যাটফর্ম। মোবাইল কলড্রপের টাকা গ্রাহকরা ফেরত পাবেন বলেও মন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন।
হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেট প্রযুক্তি দেশে নতুন অর্থনীতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কৃষক-শ্রমিক, প্রবাসী এবং গার্মেন্টেসের নারীকর্মীদের বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে আইটি তরুণ-তরুণী। তিনি ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিএনএনআরসির সিইও এএইচএম বজলুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির, বিআইজিএফের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু, ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের চেয়ারপারসন সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা, মিস আয়েশা লাবিবা, কিডস ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম; আশরাফুর রহমান পিয়াস, বাংলাদেশ স্কুল অব ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স; মিসেস ফারহা মাহমুদ তৃণা, কনভেনর, উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেনা ইন্টারনেট ডাটার অব্যবহৃত অংশ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তীতে ব্যবহারের সুযোগ থাকার নিয়মে রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ফোন অপারেটরগুলো তা মানছে না। তাই এ অনিয়ম বন্ধে বিটিআরসিকে ‘লাঠি নিয়ে মাঠে নামতে’ বলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম-২০২২’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
বিটিআরসি ও বিআইজিএফের দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের সমাপনী
দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ২য় ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির ডিরেক্টর জেনারেল অব সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ এনডিসি।
তিনি বলেন, বিটিআরসি আইএসপিগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ‘এক দেশ এক রেট’ চালু করেছে। স্থানীয় এবং প্রান্তিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষা করুন। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাধারণভাবে বেশি হলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দেশের মোট ব্যান্ডউইথের ৫৮ শতাংশ।
বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ, সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন, টেলিযোগাযোগের সম্প্রসারণ, মোবাইল প্রযুক্তি এবং প্রত্যন্ত, উপকূলীয় এলাকায় ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল পোস্টাল সার্ভিস প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। হাওর ও পাহাড়ি এলাকা, দ্বীপ এলাকায় স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক প্রকল্প, হাওর ও দ্বীপে উচ্চগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং হাওর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণ কার্যক্রম। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে উন্নয়ন উদ্যোগ বাংলাদেশে উন্নয়ন সংযোগ নিশ্চিত করবে।
ফয়সাল আহমেদ ভুবন, সদস্য-সচিব, বাংলাদেশ ২য় ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম ২০২২-এর আপডেট নিয়ে আলোচনা করেছেন মো: তারেক মঈন উদ্দীন, ডিরেক্টর সেলস, অড্রা, ডটলাইন; সৈয়দা আম্বারিন রেজা, ডিরেক্টর, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। বিশেষ অতিথি হিসাবে রেজা সেলিম, ই-হেলথ কমিউনিকেশন রিচিং রুরাল, বিশেষজ্ঞ, আমাদের গ্রাম।
এর আগে এই প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ ও শহুরে যুবকদের সংযুক্ত করা নিয়ে সকালে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেশনটি পরিচালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার মো: সাফায়েত হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক, আইকিউএসি এবং প্রধান, কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), সিটি ইউনিভার্সিটি। নাজমুল হাসান মজুমদার, কো- চেয়ার, ইয়ুথ বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম, টিএলডি এক্সটেনশনের ডোমেইন নেম এবং প্রসেস অব সেফটি, সিকিউরিটি এবং জবাবদিহি সক্ষম করার বিষয়ে আলোচনা করেন। শ্রীদীপ রায়ামাঝি, প্রতিষ্ঠাতা, ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স (নেপাল) ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইকান) কীভাবে কাজ করে তা তুলে ধরেন।
মোহাম্মদ কাওসার উদ্দিন, জেনারেল সেক্রেটারি, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আলোচনা করেছেন কীভাবে ইন্টারনেট সোসাইটির সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ত থাকা যাবে এবং বিভিন্ন ফেলোশিপের বিষয়েও আলোচনা করেন।
মোহাম্মদ রেজাউল কবির, ডিরেক্টর প্রোডাক্ট, অড্রা ডটলাইনসের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন এবং কীভাবে সবার জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট সরবরাহ করে তা উল্লেখ করেন। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ইকবাল আহমেদ, চেয়ারম্যান, ফেলো সিলেকশন কমিটি, ইয়ুথ আইজিএফ বাংলাদেশ ২০২২।
রিয়াদ হাসান বাদশা, কো-চেয়ার, বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম সাইবার সিকিউরিটিবিষয়ক সেশনটি পরিচালনা করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, সাইবার থ্রেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অপারেশন বিশেষজ্ঞ, বিজিডি-ই গভ সার্ট ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নাসিম পারভেজ সাইবার বুলিং নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর মোস্তফা আজাদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, সেন্টার ফর ওপেন নলেজ, বাংলাদেশ।
ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার কোষাধ্যক্ষ, ফার ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এসডিজি ও আইজিএফ সেশন সঞ্চালনা করেন। যুব ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট নিয়ে আলোচনা করেন হীরেন পণ্ডিত, প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর, বিএনএনআরসি এবং কলামিস্ট ও রিসার্চ ফেলো। এএইচএম বজলুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ফেলো, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে মিডিয়া, বিনোদন ও সংস্কৃতি এবং সিইও, বিএনএনআরসি আদ্দিস আবাবা ইথিওপিয়া-ইউএন আইজিএফের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেন।
বিটিআরসি ও বিআইজিএফের যৌথ উদ্যোগে তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আইওটি, ব্লকচেইন ও ডাটা গভর্ন্যান্সের মতো ইমার্জিং টেকনোলজি ব্যবহার করে গুড গভর্ন্যান্স, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভনর্মেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও ই-স্মার্ট ইকোনমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে সত্যিকারের স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। আগামী আইজিএফ ময়মনসিংহ কিংবা ঢাকার বাইরের কোনো জেলায় করা হবে। জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে এই কার্যক্রম।
প্রধান অতিথি আরো বলেন ডিজিটাল বিভক্তি কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, বিটিআরসি এখন ফেসিলেটর হিসেবে কাজ করছে। ইন্টারনেটকে ছড়িয়ে দিতে পলিসি তৈরির পাশাপাশি দেশের তরুণদের জন্য বেশি কিছু করতে আলোর দিকে এগিয়ে এসেছে বিটিআরসি ও বিআইজএফ। বিডিসিগ, ইয়্যুথ আইজিএফ, ওমেন আইজিএফ ও কিডস আইজিএফ এর সঙ্গে অনেক দূর এগিয়ে দিতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এনইআইআর এর মতো উদ্ভাবনী সল্যুশন নিয়ে এখন নেপাল ও পাকিস্তান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও ২০২৫ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ড খরচ মাথাপিছু আয়ের ২ শাতংশের নিচে রাখতে ইউএন ব্রডব্যান্ড কমিশন যে লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিলো আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। এক দেশ এক রেট বাস্তবায়নে শহর-গ্রামের বৈষম্য দূর করেছি। ফলে পৃথিবীর ১৯০টি দেশের মধ্যে ডেটার খরচ কমের দিক দিয়ে পেছন থেকে অষ্টম বাংলাদেশ। তবে ইন্টারনেট মূল্য ফ্রি করে দয়া হলে এর অপচয় হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ই-হেলথ বিশেষজ্ঞ ও আমাদের গ্রাম প্রতিষ্ঠাতা জনাব রেজা সেলিম, ফুডপ্যান্ডার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ই-ক্যাব পরিচালক সৈয়দা আম্বারিন রেজা।
ইন্টারনেট বেসিক নিড
আম্বারিন রেজা বলেন, ইন্টারনেট সবাইকে সংযুক্ত করে। তাই ইন্টারনেটকে নিরাপদ এবং এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে তারুণ্যের ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। এটা খাবারের মতো বেসিক নিড। এই দুই সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই এখন দেশের ৬৪ জেলায় ‘হোমসেইফ’ গড়ে উঠেছে। তরুণরা ফ্রিল্যান্স রাইডিংয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। ফুডপ্যান্ডায় এমন অনেক তরুণ আছে যারা ঢাকায় এসে পারটাইম রাইডিং করে পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছে। তাই ইন্টারনেট যতটা তরুণদের হাতের নাগালে আসবে দেশের অর্থনীতি ততবেশি চাঙ্গা হবে।
ফেসবুক ৩৩ শতাংশ সময় নষ্ট করে
‘ইন্টারনেট মানেই সংযোগ বা কানেক্টিভিটি বলে মনে করি না’ উল্লেখ করে রেজা সেলিম বলেন, আমাদের যোগাযোগ দরকার। তবে কানেক্টিভিটি মানেই আমি ইন্টারনেট বা ইন্টারনেট সংযোগ বলে মনে করি না। ১৯৯৮ সালে যখন আমরা ডিজিটাল অপরচুনিটি টাস্কফোর্স তথা ডটফোর্স এবং গ্লোবাল নলেজ বা জিকে নিয়ে কাজ করতাম। আজ ইন্টারনেটের সুশাসনের পাশপাশি আমরা ব্যক্তিগত তথ্যেও গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষায় আন্দোলন করছি। এরই অংশ হিসেবে আমি আমার মোবাইল ফোন/সিম নিতে গিয়ে আমার আঙুলের ছাপ দেইনি। দেড় দুই মাস আগে আমার আঙুলের ছাপের নিরাপত্তা দেয়ার পর আমি ভোটার হয়েছি, এনআইডি পেয়েছি।
ফেসবুক সময় নষ্ট করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি ফেসবুক ৩৩ শতাংশ প্রোডাক্টিভ সময় নষ্ট হয়। তাই আমি আমার ফেসবুক বন্ধ রেখেছি। নলেজ সোসাইটি তৈরি করতে আমি আমার জ্ঞানগ্রাম তথা রামপালের শ্রীফলতলায় ৯৭ শতাংশ মানুষ কমপিউটার জানে। অবসরে তারা দাবা খেলে। এখানে গত কয়েক বছরে ইভটিজিংয়ের কোনো ঘটনা নেই।
নানা অভিমান করে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে রেডিও লিংকের মাধ্যমে ওয়্যারলেস টাওয়ার করে গ্রামে ইন্টারনেট সেবা চালুর আবেদন করেন রেজা সেলিম। তিনি বলেন, মোস্তাফা জব্বারের কল্যাণে আমি আমার এলাকায় বিটিসিএলের ১০০ এমবিপিএস ইন্টারনেট পেয়েছি।
সেফ ইন্টারনেটে ১০ শতাংশ ইন্টারনেট বাঁচে
মালয়েশিয়ার নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ‘ফ্যামিলি ইন্টারনেট সেফটি’ ব্যবহার করলে দেশে ‘১০ শতাংশ ব্যাড ট্রাফিক সেফ হয়’ উল্লেখ করে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অড্রা ডটলাইন পরিচালক তারেক মঈনুদ্দীন বলেন, এই হিসেবে যদি দিনে এক হাজার কোটি টাকার ব্যান্ডউইথ বাঁচবে।
দুই দিনে মোট ৭টি সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষে সাইবার কূটনীতিক হিসেবে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। দুই দিনের ইয়ুথ আইজিএফ ২০২২ উপলক্ষে সেরা ভিডিও কনটেন্ট নির্মাতাকে হিসেবে সম্মাননা দেয়া হয়।
এছাড়াও সম্মাননা দেয়া হয় ইয়্যুথ আইজিএফ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ার ফয়সাল আহমেদ ভুবন, কো-চেয়ার রিয়াদ হোসেন বাদশা, নাজমুল হাসান মজুমদার, সৈয়দা তামিম জাহান রিপা, বিডিসিগ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আশরাফুর রহমান পিয়াস, ইউমেন আইজিএফ আহ্বায়ক ফারাহ মাহমুদ তৃণা, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হীরেন পণ্ডিত, ইকবাল আহমেদ, মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু, এএইচএম বজলুর রহমান।
অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।
ফিডব্যাক : [email protected]
০ টি মন্তব্য