https://powerinai.com/

ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি

যেখানে-সেখানে যখন-তখন ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি

যেখানে-সেখানে যখন-তখন ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি যেখানে-সেখানে যখন-তখন ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি
 

যেখানে-সেখানে যখন-তখন ব্যাংকিং এবং প্রযুক্তি


নগদ টাকা ওঠানো, কিংবা জমা দেয়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, পানি ইত্যাদি পরিষেবার বিল পরিশোধ, কর্পোরেশন ট্যাক্স, আয়-কর, আগাম-কর, অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর, স্থায়ী আমানত জমা, শেয়ার ব্যবসায় এবং আরো নানা কাজ চলে ব্যাংকের মাধ্যমে৷ আপনি যদি ব্যস্ত-সমস্ত একজন কর্মকর্তা কিংবা পেশাজীবী কিংবা ব্যবসায়ী হন, তাহলে এতসব করতে আপনার হাতে এত সময় কই? আপনার জন্য সুখবর, তথ্যপ্রযুক্তি এগিয়ে এসেছে সহজেই আপনার এসব ঝামেলা মিটিয়ে দিতে৷


তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাংক ব্যবসায়কে এখন ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে৷ হতে পারে সেটি ইন্টারনেট, হতে পারে এটিএম তথা অটোমেটিক টেলার মেশিন, কিংবা হতে পারে মোবাইল ফোন ব্যাংকিং৷ আর এমনকি ট্রেনে বসেও খুব শিগগিরই চলতে পারে ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড৷ শিগগিরই আপনি মুক্তি পেতে পারেন মাল্টিপল পিন তথা পার্সোনাল আইডেন্টিটি নম্বর নিরাপদ রাখার মতো দুঃসহ যন্ত্রণা থেকেও৷ বায়োমেট্রিকের সুবাদে প্রয়োজন ফুরাবে পাসওয়ার্ডেরও৷ এসব কিছুই আসছে তাদের নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে৷ এ লেখায় প্রয়াস পাবো সেসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে৷ জানাতে চাইবো কিভাবে ব্যাংকগুলো নানা উদ্ভাবনীমূলক উপায়ে সমাধান করে চলেছে তাদের কাজগুলো৷


নগদ টাকা ওঠানো, কিংবা জমা দেয়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, পানি ইত্যাদি পরিষেবার বিল পরিশোধ, কর্পোরেশন ট্যাক্স, আয়-কর, আগাম-কর, অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর, স্থায়ী আমানত জমা, শেয়ার ব্যবসায় এবং আরো নানা কাজ চলে ব্যাংকের মাধ্যমে৷ আপনি যদি ব্যস্ত-সমস্ত একজন কর্মকর্তা কিংবা পেশাজীবী কিংবা ব্যবসায়ী হন, তাহলে এতসব করতে আপনার হাতে এত সময় কই? আপনার জন্য সুখবর, তথ্যপ্রযুক্তি এগিয়ে এসেছে সহজেই আপনার এসব ঝামেলা মিটিয়ে দিতে৷ ব্যাংকগুলো তার গ্রাহকদের জন্য চালু করছে কেবল ব্যাংকিং, এসএমএস ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম, ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড ও এমনি আরো কত কি? এসব সেবা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ব্যাংকগুলো ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে বা করতে যাচ্ছে৷ কিন্তু ব্যাংকগুলোকে তা করতে হচ্ছে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই৷ আর ব্যাংকের সিআইও তথা প্রধান তথ্য কর্মকর্তাকেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলতে হয়৷ এক্ষেত্রে একটি মুখ্য চ্যালেঞ্জ বা উদ্বেগ হচ্ছে, এসব চ্যানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ চ্যানেলের সংখ্যা যত বাড়বে, তত বেশি সংখ্যার পোর্ট খুলে যাবে৷ পাশপাশি প্রশ্ন আসবে, এসব চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে নিশ্চিত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা যেনো বিঘ্নিত না হয়৷ আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও এগুলোর ডাটার মধ্যে সুসংহত সমন্বয়৷


ব্যাংকগুলোর সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমাদের ব্যাপক পল্লী গ্রাহকদের সামনে কী করে এই বাজার সম্প্রসারণ করা যায়৷ আসলে আমাদের দেশের ব্যাংক ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তির অ্যাপ্লিকেশনের একটি অবহেলিত ক্ষেত্র৷ এর বড় কারণ টেলিকমিউনিকেশনের অপর্যাছপ্ততা৷ হতে পারে ব্যাংকগুলোর জন্য এটাই প্রকৃষ্ট সময় ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং সলিউশন থেকে বেরিয়ে আসা এবং নজর দেয়া উদ্ভাবনীমূলক সলিউশনগুলোর দিকে৷ এমনি একটি বিকল্প হচ্ছে, সুদূর প্রসারিত অঞ্চলে ব্যাংক সেবা সম্প্রসারণে বায়োমেট্রিক টেকনোলজির ব্যবহার৷


আইটি এসেছে কাজকে সহজ করে তুলতে


শুরুতেই বলা দরকার, ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন চ্যানেলের ব্যবহারকারীর জন্য নিশ্চিত করতে হবে কাস্টমার ইনফরমেশনে গ্রাহক সাধারণের প্রবেশ৷ এই একই তথ্যভণ্ডার ব্যবহার করা যাবে একইভাবে নতুন ও পুরনো গ্রাহকদের কাছে নতুন পণ্য ও সেবা বিক্রির সমঝোতা তৈরির কাজে৷ একই সাথে সেলস টিমের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি কার্যকর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম তথা এমআইএস৷


এ সমন্বয় চ্যালেঞ্জের একটি জোরালো সমাধান হতে পারে এসওএ তথা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড আর্কিটেকচার৷ আর তা ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেবে তাদের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের প্রোপ্রাইটরি কোড না লিখে অথবা ব্যক্তিবিশেষের ডাটাবেজের সংমিশ্রণ না ঘটিয়েই৷ এ কাজে এসওএ ব্যবহারে ব্যাংকগুলোর জন্য রয়েছে ব্যাপক সুযোগ৷


নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে নানা ধরনের ব্যাংকিং সলিউশন বের করতে সক্ষম হয়েছে৷ অবশ্য একটি সলিউশন কাজ করতে সক্ষম একটি কমপ্লিট ইনফরমেশন সিকিউরিটি সলিউশন হিসেবে৷ অর্থাৎ এটি সক্ষম সব অ্যাপ্লিকেশনে এন্ট্রি চ্যানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে৷ একটি উদাহরণ দিই কিভাবে এসএমএস ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার করে থার্ড পার্টি তথা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অর্থ লেনদেন সম্পাদন করা যায়৷ একজন ক্রেতা কিছু কেনার জন্য একটা ম্যাসেজ পাঠান৷ ব্যাংক পণ্য ও সেবা কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করে ম্যাসেজ পাঠায় মার্চেন্ট ও বায়ার উভয়ের কাছে৷ গ্রাহকের অথেনটিসিটি তথা যথার্থ গ্রাহক নির্ণয়ে এখানে মুখ্যত ব্যবহার হয় ডেভিট কার্ড নম্বরের৷ নিরাপদ লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হয় দুটি স্তরে৷ প্রথমত, আপনার মোবাইল নম্বর যথার্থতা ব্যাংক যাচাই করে অথেনটিকেশন কী ব্যবহার কবে। এরপর গ্রাহক প্রবেশ করেন একটি গোপন এমপিআইএন তথা মোবাইল পার্সোনাল আইডেনটিফিকেশন নাম্বার-এ৷ এর যথার্থতা আবার যাচাই করে নেয় ব্যাংক৷ নিরাপত্তা পদক্ষেপ আরো জোরদার করার জন্য তিনটি ইনভেলিড লগইন উ্যোগ অগ্রহণযোগ্য ধরে নেয়া হয়৷


বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন


ব্যাংকগুলো ব্যাপকভিত্তিক গ্রাহকদের জন্য বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ছিল অনেকটা অনাগ্রহী৷ কারণ, মানুষ ভাবতো এটা অনেকটা অপরাধ তদন্তের মতোই কাজ করে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে এলো বিএফএস টেকনোলজি৷ অনেকেই এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷ তা সত্ত্বেও গ্রামাঞ্চলে এখনো সাক্ষরতার হার গ্রহণযোগ্য পর্যালয়েরও নিচে৷ সেখানকার মানুষও এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী৷ আমাদের বিশ্বাস, যেসব পদক্ষেপের ফলে একটি সহজতর ইন্টারফেস তৈরি হবে এবং আপনি যেখানে ঝামেলামুক্ত থাকবেন মাল্টিপল পিন নম্বর থেকে, সেসব পদক্ষেপকে সবাই স্বাগত জানাবে৷ মোটের ওপর অন্যান্য শারীরিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অনন্য আইডেনটি বা পরিচয় প্রকাশের৷


ফিঙ্গার স্ক্যানিং বা আঙ্গুলের ছাপ আজো অটোমেটিক টেলার মেশিনে একটি জনপ্রিয় বায়োমেট্রিক অ্যাপ্লিকেশন৷ এটিএম-এর পেছনে একটি বহনযোগ্য স্ক্যানিং যন্ত্র সংযোগ দিয়েই যেকোনো এটিএম মেশিনকে এ কাজের উপযোগী করে তোলা যায়৷ আর এ মেশিনটি সংযুক্ত করা যায় ব্যাংকের সার্ভারে, যা জমা রাখা রেকর্ডের সাহায্যে ভিজিটরের অথেনটিফিকেশন কিংবা সঠিক পরিচয় জানিয়ে দেবে৷ কোনো ব্যক্তিপরিচয় নির্ণয়ে এটি একটি স্থির-নিশ্চিত উপায়, কোনো লোকই এর ফলে পরিচয় গোপন করতে পারে না৷ শুধু এটিএমগুলোই নয়, বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে ব্যাংকের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে যেমন লকার রুম বা ডাটা সেন্টারে প্রবেশ সংরক্ষিত করা যায়৷


বায়োমেট্রিকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রত্যেক মানুষের বায়োমেট্রিক রেকর্ড অনন্য৷ অতএব একটি পাসওয়ার্ড কিংবা পিন হারিয়ে গেলেও বায়োমেট্রিক ট্রেইল বা প্রলক্ষণ হারিয়ে যায় না৷ তা কেউ চুরি করতে পারে না কিংবা নতুন করে সৃষ্টি করাও যায় না৷ সেজন্যই আইডেনটিটি চুরি হয়ে যাওয়া থেকে মুক্ত থাকতে বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়৷ ডাটাবেজের পাশাপাশি পার্সোনাল ইনফরমেশন চুরি যাওয়ার বিষয়টি যেখানে একটা ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে বায়োমেট্রিক তো অগ্রাধিকার পাবার দাবি রাখতেই পারে৷ আসলে কিছু আর্থিক লেনদেনে, যেমন-ভোক্তাদের পক্ষ থেকে ক্রেডিট কার্ডে বায়োমেট্রিক অ্যাপ্লিকেশন একটি ভালো পছন্দ হতে পারে৷ অধিকন্তু এরা আরো অধিকতর চটপটে হয়ে ওঠে৷


ফিঙ্গার স্ক্যানকে ছাপিয়ে


ফিঙ্গার বেজড স্ক্যান হচ্ছে বায়োমেট্রিক অথেনটিফিকেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের নানা প্রযুক্তির একটি৷ এর অন্যান্য বিকল্প হচ্ছে হাতের জ্যামিতিকে রেটিনা স্ক্যান থেকে শুরু করে চোখের কর্ণিয়া স্ক্যানের সাথে মিলিয়ে নেয়াসহ আরো কিছু বিকল্প৷ quasi-behavioral তথা আপাত-আচরণ লক্ষণ ভিত্তি করেও পরিচয় যাচাই করে নেয়া যায়৷ যেমন কোনো ব্যক্তির কণ্ঠ, হাতের লেখা ইত্যাদি৷ তার পরও আছে মুখ দেখে চেনে নেয়া, যাকে বলা হয় ফ্যাসিয়েলরিকগনিশন৷ এত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যক্তির মুখমণ্ডল স্টোর করে রাখা হয়৷ প্রতিটি লেনদেনে এর সঙ্গে ব্যক্তির সরাসরি মুখমণ্ডলটি তুলনা করে নেয়া হয়৷ ডাটাবেজে রাখা সংরক্ষিত সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর রাখা মুখমণ্ডলটাই এখানে মিলিয়ে দেখা হয়৷ হাতের জ্যামিতি তথা হ্যান্ড-জিওমেট্রিভিত্তিক ব্যবস্থাটি বাস্তবায়ন ততটা সহজ নয়৷ কারণ, এগুলোর প্যারামিটার ব্যহৃতিক কারণে পরিবর্তন হয়৷ যেমন আবহাওয়া পরিস্থিতি, হাতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি৷ একইভাবে রেটিনা স্ক্যানের সময় প্রয়োজন হয় চোখের পেছনের রেটিনায় পৌঁছানোর জন্য যথার্থ শ্রেণীবন্ধন বা পারফেক্ট এলাইনমেন্ট৷ জনবহুল এলাকায় এটি একটি সময়ক্ষেপী কাজ৷


গ্রাম এলাকার ক্ষুদ্র ব্যাংক


আমরা দেখেছি কী করে বায়োমেট্রিক অথেনটিফিকেশনের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে প্রবেশযোগ্য ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য নিরাপদ ব্যাংক সেবা দিতে পারে, কী করে তা কাজ করতে পারে গ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যও৷ এবার দেখা যাক, গ্রাম এলাকার ব্যাংকগুলো কী ধরনের প্রযুক্তি পদক্ষেপ এক্ষেত্রে নিতে পারে৷ গ্রামীণ ব্যাংকিং হচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে রাজনৈতিক চাপ একটি অংশ৷ গ্রামীণ গ্রাহকদের ব্যাংক সেবা দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কৃষিঋণ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চাপ বা অগ্রাধিকার৷ তা সত্ত্বেও, প্রাযুক্তিক দিক থেকে এগুলোর উদ্যোগ নির্ভরশীল টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর প্রাপ্যতার ওপর৷ এখানে আশার আলো হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে গ্রাম এলাকায় মোবাইল ফোনের সুবিধা দ্রুত বেড়ে চলা, আর এই সুবিধা মানুষ এখন ভোগ করতে শুরু করেছে সস্তা থেকে সস্তাতর উপায়ে৷ এরই প্রবণতা এগিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট সম্ভাবনা বিদ্যমান৷ এটা সব গ্রাহকের জন্য সুখের৷ ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য তো বটেই৷ ব্যান্ডউইডথের খরচও কমছে৷ এর অর্থ ব্যাংকগুলো সুদূর সম্প্রসারিত শাখাগুলোর সাথেও অনলাইন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সুযোগ বর্ধিত হারে পাবে৷ ব্যাংকগুলোতে বর্ধিত হারে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক দিক৷


ভারতে RFID এবং NFC এই উভয়কে একীভূত করে এর প্রয়োগ এখন ভারতের গ্রামাঞ্চলের মানুষের ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য তৈরি৷ ফিলিপস-এর গড়ে তোলা NXP Semiconductor যৌথভাবে উদ্ভাবন করেছে NFC টেকনোলজি মোবাইল প্লাটফরম উদ্ভাবক A Little World-এর সহযোগে৷ এই মোবাইল প্লাটফরম একান্তভাবেই উদ্ভাবিত ব্যাংকিংয়ের জন্য৷ অ্যা লিটল ওয়ার্ল্ড চেষ্টা করেছে মাইক্রো-ব্যাংকিংয়ের ধারণা ভারতে ৪টি রাজ্যের ৪৫০টি গ্রামে কার্যকর করতে৷ এ প্রযুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত আছে একটি কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট গড়ে তোলা, যেখানে থাকে এনএফসি সাপোর্ট করে এমন সুনিপুণ মোবাইল ফোন৷ প্রত্যেক গ্রামবাসীর জন্য একজন অ্যাকাউন্টধারী৷ এদের প্রত্যেককে দেয়া হয় একটি বায়োমেট্রিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ আরএফআইডি স্মার্ট কার্ড, যা সংযোগ রক্ষা করবে কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টের মোবাইল ফোনের সঙ্গে৷ স্মার্ট কার্ডে অপরিহার্যভাবে থাকে গ্রাহকের পরিচিতি৷ যেমন নাম, ঠিকানা, ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট টেমপ্লেট ও সঞ্চয়ের সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত বিবরণ অথবা ইস্যুয়িং ব্যাংকের লোন অ্যাকাউন্ট৷ স্বল্পপাল্লার ওয়্যারলেস সংযোগ প্রযুক্তি হিসেবে এনএফসি সুযোগ করে দেয় দুটি ডিভাইসের মধ্যে নিরাপদ ডাটা বিনিময়ের৷ শুধু এগুলো একীভূত করে, ঠিক যেমনটি কাজ করে ব্লুটুথ৷ যেহেতু এনএফসি কার্যকরভাবে সমাবেশ ঘটায় অসংখ্য আইডেনটিফিকেশন ও নেটওয়ার্কিং টেকনোলজি, সেহেতু এটি যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে আরএফআইডি কার্ড ও একটি এনএফসি মোবাইল ফোনের মধ্যে অথবা প্রয়োজনে দুটি এনএফসি ডিভাইসের মধ্যেও৷ বর্তমানে এ প্রকল্পে ব্যবহৃত এনএফসি অ্যানাবলড মোবাইল ফোনগুলো নেয়া হচ্ছে মটোরোলা আর নোকিয়া থেকে৷


এনএফসি কাজ করে ম্যাগনেটিক ফিল্ড ফাংশনের ধারণার ওপর৷ আর এটি অপারেট করা হয় লাইসেন্সবিহীন ১৩.৫৬ মেগাহার্টজ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে৷ স্পিড হতে পারে ১০৬ কিলোবিট, ২১২ কিলোবিট ও ৪২৪ কিলোবিটের কাছাকাছি৷ এটি একটি ওপেন প্লাটফরম টেকনোলজি, প্রমিতকরণ করা হয়েছে ECMA-340-এ৷ আর অপারেট করা হয় অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ আরএফআইডি উভয় মোডে৷ পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরিচালনার সময় উত্তরখণ্ড, মিজোরাম, মেঘালয় ও অন্ধ্রপ্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ আর স্টেট ব্যাংক, অন্ধ্র ব্যাংক আর অন্ধ্রপ্রদেশ গ্রামীণ ব্যাংক এ প্রকল্পে সহযোগিতা যুগিয়েছে৷ অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়ারাঙ্গাল জেলায় সোশ্যাল সিকিউরিটি পেনশনারদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয় এই মাইক্রো-ব্যাংকিংয়ের আওতায়৷ মিজোরাম রাজ্যের আইওয়্যাল ও উত্তরখণ্ডের পিথোরাঘরের মতো স্থানে এ প্রজেক্ট সেখানে চালু করেছে ব্যাংকিংয়ের ধারণা৷ এর আগে এসব স্থানে ব্যাংকিংয়ের কোনো অস্তিত্ব ছিল না৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, আরএফআইডি কার্ড এখন বিশ্বের নানা দেশে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে চালু রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে৷ সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৩৫টি দেশে এসব কার্ড ব্যবহার হচ্ছে এদের নতুন ইস্যু করা ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে৷ পাসপোর্টজুড়ে দেয়া হয় আরএফআইডি চিপ৷ এর মধ্যে পেপারওয়ার্ক কমিয়ে আনা এবং পাসপোর্ট ডাটাকে টেম্পার গ্রুফ করে তোলা হয়৷


ট্রেনে এটিএম


ভারতে গেলে দেখা যাবে সেখানকার বিভিন্ন নগরীতে ও গ্রামাঞ্চলে রয়েছে মোবাইল এটিএম ভ্যান৷ ভারত সরকার রেলওয়ে প্লাটফরমে এটিএম সেটআপ করতে দেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে ট্রেনের মধ্যে এটিএম সেটআপ করার৷ টেলিযোগাযোগের অগ্রগতির পাশাপাশি যেমন উন্নীত ভি-স্যাট ও মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক টেকনোলজিই এখন সম্ভব করে তুলেছে এ অবকাঠামো গড়ে তুলতে৷ আজ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রেলওয়ে প্লাটফরমে ১৮০০ এটিএম বসানো হয়েছে৷ বেশিরভাগই বসানো হয় বড় বড় মেট্রো এলাকার রেলস্টেশনের প্লাটফরমে৷ যেসব যাত্রী ছোট ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে যাতায়াত করে এবং যেখানে পর্যারপ্ত ব্যাংকিং সুবিধা নেই তাদের জন্য ট্রেনে এটিএম ব্যাংকিং সেবার সুযোগ সত্যিই উপকারী৷ এর পাশাপাশি কমবে নিরাপত্তার উদ্বেগও৷ আসলে দূরপাল্লার একটি ট্রেন কাজ করতে পারে দূরতম স্থানের জন্য একটি দ্রুততম এটিএম ক্যারিয়ার হিসেবে৷ এর মাধ্যমে যাত্রীর নিরাপত্তা বাড়বে৷ এদেরকে বেশি অঙ্কের অর্থ সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে না৷ এর বদলে এটিএমের মাধ্যমে এরা যখন যেখানে যতটা প্রয়োজন তত অর্থ তুলে নিতে পারবে৷ এটিএমের পাশাপাশি একটি টিকেটিং কিয়স্ক স্থাপন করতে পারলে যাত্রীদের সুবিধাটা আরো বেড়েই যাবে৷ অর্থাৎ তখন যাত্রীরা এটিএমের সাহায্যে প্রয়োজনের সময়ে অর্থ তুলে নিয়ে একই স্থান থেকে টিকেটটাও কিনে নিতে পারবে৷


শেষ কথা


যখন-তখন যেখানে-সেখানে ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট যে প্রযুক্তির ওপর এখানে আলোকপাত করা হলো এর বেশকিছুর প্রয়োগ এখন বাংলাদেশে চলছে৷ প্রয়োগটা সর্বব্যাপী না হলেও দিন দিন ব্যবহারটা বাড়ছে৷ আর কিছু কিছু প্রযুক্তির প্রয়োগটা এখনো আমাদের এখানে শুরুই হয়নি৷ তবে শুরু হওয়াটা কঠিন, তেমনটি নয়৷ এখন শুরু করার উদ্যোগটাই বড় কথা৷ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা এ নিয়ে ভাববেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, আর এর মাধ্যমে আমাদেরকে প্রযুক্তির উচ্চতর সিঁড়িতে নিয়ে দাঁড় করাবেন, আমাদের কাজের গতি বাড়াবেন, কাজকে সহজতর করে তুলবেন, সে তাগিদ রেখেই শেষ করছি আজকের এ লেখা৷








১ টি মন্তব্য

  • Shamim Miah

    Shamim Miah

    ২০২২-১০-১৮ ১২:১২:০১

    Already much benefit exit



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।