https://gocon.live/

ই-গভর্নেন্স

যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা এবং ই-লার্নিং

যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা এবং ই-লার্নিং যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা এবং ই-লার্নিং
 

যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা এবং ই-লার্নিং


যদি প্রশ্ন করা হয়, আমাদের দেশের শিক্ষা কতটা যুগোপযোগী? আমি নিশ্চিত, উত্তর আসবে হতাশাব্যঞ্জক৷ যদি পরের প্রশ্নটি হয়, আমাদের কেমন যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা দরকার? এর উত্তর আসবে মিশ্র৷ কেউ হয়তো বলবেন, পুরোটাই পাল্টে ফেলতে হবে, কেউ বলবেন কারিকুলাম পাল্টাতে হবে, কেউবা বলবেন শিক্ষকদের তৈরি করতে হবে, এরকম নানা মত৷ আসলে সমাধান কোনটি? সমাধান যেটাই হোক, এখন প্রশ্ন হলো- সেই যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তি কতখানি এবং কী ভূমিকা রাখতে পারে?


মৌলিক ও বিশেষায়িত জ্ঞান


একটা সময় ছিল যখন আমরা জানতাম শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে৷ মৌলিক জ্ঞান ছাড়া কেউ খুব বেশি দূর এগোতে পারবে না৷ পরে জানলাম, বিশেষায়িত জ্ঞান থাকতে হবে৷ বিশেষায়িত জ্ঞান ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয়৷ বিশেষায়িত জ্ঞান মানে কারিগরি জ্ঞান, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞান জানা প্রভৃতি৷ আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এসব জ্ঞান অর্জন অনেকখানিই সম্ভব৷ এছাড়া পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন উত্স, যেমন- ট্রেনিং নিয়েও এ জ্ঞান অর্জন করা যায়৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই জ্ঞান দিয়ে একজন মানুষ বাস্তবতা মোকাবেলা করতে কতখানি সক্ষম হন? এটা আমাদের সবার কাছেই বোধগম্য, এই মৌলিক ও বিশেষায়িত জ্ঞান দিয়ে দৈনন্দিন ও সমাজ জীবনের যত সমস্যা তার খণ্ডাংশের সমাধান করা যায় মাত্র৷ পুরো সমস্যা সমাধান করার জন্য যে দক্ষতা দরকার, যে মানসিকতা দরকার, যে মনোবল দরকার, তা তৈরিই হয় না বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায়৷ এবং আপাতদৃষ্টে তা অসম্ভব৷ তবে কৌশল ও বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন আছে৷


ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং


একবিংশ শতাব্দীতে দরকার ব্যক্তির ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবিলিটি, সীমাবদ্ধতার বাইরে এসে চিন্তা করার সামর্থ্য৷ একসময় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই সত্যেন বসুর মতো ক্রিটিক্যাল থিঙ্কার বের হতেন৷ এখন শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বেড়েছে৷ কিন্তু ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবিলিটির মানুষ কমে গেছে৷ অথচ, আমাদের দেশের মানুষই অন্য দেশে গিয়ে এখনো ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং সক্ষমতা দেখাচ্ছেন৷ এজন্য আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিতও হচ্ছেন৷ এর মানে কী?


আসলে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং তৈরির সামর্থ্যই হারিয়ে ফেলেছে৷ ফলে পুরো শিক্ষণ প্রক্রিয়াটিই হয়ে পড়েছে দুর্বল৷ এ প্রক্রিয়ায় জানার, শেখার সুযোগই কমে গেছে৷ এর ফলে মানুষ বেশি জানতে চান না, বেশি শিখতে চান না৷ কারণ, এই শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির জানার ও শেখার আগ্রহই তৈরি হয় না৷ এই না জানা, না শেখা ব্যক্তি যখন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন তিনিও শিক্ষার্থীর মাধ্যমে অনেক জানার, অনেক শেখার আগ্রহ তৈরির কাজে মনোযোগী হবেন না, এটাই স্বাভাবিক৷ ফলে দ্রুতই প্রতিফলিত হয় সেখানে অল্পজ্ঞানের ভয়ঙ্কর রূপ- শিক্ষক শেখতে সহায়তা করার চেয়ে, শেখাতে ও জ্ঞানদান করতে অধিক উত্সাহী হয়ে ওঠেন৷ এখানেই ই-লার্নিংয়ের ভূমিকা৷ ই-লার্নিং শিক্ষার্থীর ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবিলিটি বাড়াতে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে৷


যখন খুশি তখন শেখার সুযোগ নেই


গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ শিক্ষায় একাধিক সফলতা অর্জন করেছে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার বাড়ানো৷ কিন্তু ঝরেও পড়ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই৷ ঝরে পড়ার এ গতি মাধ্যমিক পর্যায়েও বিদ্যমান৷ কিন্তু কেনো? এর একাধিক কারণ বলা যায়৷ সমাধানও রয়েছে নিশ্চয়ই৷ কিন্তু যে শিশু পরিবারের আয় বাড়াতে শ্রম দিতে বাধ্য হয়, কৃষিকাজে যুক্ত হতে হয়, তার পক্ষে তো ওই কাজ ফেলে স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়৷ এ শিশু তো ঝরে পড়বেই৷ কারণ, সে তো তার সুবিধামতো শিক্ষা নেয়ার সুযোগ পায় না৷ একজন বয়স্ক কৃষকের কথাই ধরুন৷ তিনি কি চাইলেই যখন খুশি তখন শিখতে পারেন? না৷ কারণ, শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষাকে একটি ঘর আর সময় দিয়ে বেঁধে ফেলেছে৷ এর ফলে অনেকের আগ্রহ থাকলেও বিদ্যমান এ শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তাল মেলাতে পারছে না৷ কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা তো হবার কথা এমন- যেখানে সবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার সুযোগ থাকবে৷


কেমন যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চাই


আমরা এই বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে একটি যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চাই৷ কী চাই সে শিক্ষাব্যবস্থায়? আমরা চাই নতুন এমন সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা মৌলিক ও বিশেষায়িত জ্ঞানের মধ্যে নিজেকে আটকে ফেলবে না৷ বরং প্রতিটি শিক্ষার্থী তার যাচাই করে বুঝার ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হবে৷ প্রতিটি শিক্ষার্থী তার ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং এবিলিটি বাড়াতে সক্ষম হবে৷ চিন্তা করার সামর্থ্য বাড়াতে সক্ষম হবে বহুগুনে৷ শিক্ষার্থী সমন্বয়ক ও উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার রসদ পাবে ধাপে ধাপে৷ শিক্ষার্থীর উপলব্ধি হবে কেবল পড়ালেখা করাই তাদের একমাত্র কাজ নয়, সমাজের জন্য তাদের অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে৷ কারণ, সমাজের কাছে এরা অনেক ঋণী৷ শিক্ষক এই পুরো প্রক্রিয়ায় হয়ে উঠবেন শিক্ষা সহায়ক হিসেবে৷ আর বিদ্যানুরাগীরা হবেন অনুঘটক৷


ই-লার্নিংয়ের ভূমিকা


শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হলে ই-লার্নিং অনিবার্য৷ কাঙ্ক্ষিত এই শিক্ষাব্যবস্থায় ই-লার্নিংয়ের ভূমিকা হবে সুদূরপ্রসারী৷ এর ফলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে বহু উন্নত দেশের কাছেও অন্যতম দৃষ্টান্ত৷ কিভাবে?


ই-লার্নিং বাস্তবায়ন কঠিন নয়৷ কারণ, ই-লার্নিং কেবল কমপিউটারের মাধ্যমে ঘটবে না৷ ই-লার্নিং মানে মোবাইল, টিভি, রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি প্রভৃতি ইলেকট্রনিক ডিভাইসকেও শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা৷ মোবাইলের কথাই ধরা যাক৷ মোবাইল শিক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে৷ চীনে ইতোমধ্যে মোবাইলের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা শুরু হয়েছে৷ বাংলাদেশে তা কেনো সম্ভব হবে না? মোবাইল বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের কাছেও এখন সহজলভ্য৷ সে কারণে সমাজের সবচেয়ে সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষও এই ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষার সুযোগ নিতে পারেন৷ এই সুযোগ এরা নিতে পারেন তাদের সুবিধামতো সময়ে- যখন খুশি তখন৷ টিভি, রেডিও, ভিসিডি, ডিভিডি শুধু বিনোদনের মাধ্যম না হয়ে, হয়ে উঠতে পারে ব্যাপক ব্যবহারের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে৷ সপ্তাহ বা দিনের নির্দিষ্ট সময় রেডিও ও টিভিতে বয়সভিত্তিক কোর্স চালু হতে পারে৷


শিক্ষাব্যবস্থার এত যে সীমাবদ্ধতার কথা বলা হলো তার সম্পূর্ণ সমাধান অবশ্যই আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সাঙ্গে যুক্ত৷ কিন্তু এর মধ্যেও কিছু বিশেষ বিশেষ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা রাখার আছে৷ মূলত তিনটি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সুফল বয়ে আনার ক্ষমতা রাখে৷ এগুলো হলো- শিক্ষাদান পদ্ধতি আর কারিকুলাম উন্নত করতে, শিক্ষকসহ শিক্ষার সাঙ্গে যুক্ত সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে এবং মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বত্র স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে৷


শিক্ষাদান পদ্ধতি আর কারিকুলাম উন্নত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বুঝতে আমরা ভিন্ন দেশের উদাহরণ নিতে পারি৷ মালয়েশিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন একটি স্বতন্ত্র টিভি চ্যানেল আছে যেখানে প্রতিদিন শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়েই অনুষ্ঠান প্রচার হতে থাকে৷ আমাদের দেশে বিটিভির মাধ্যমে অনায়াসে এরকম কিছু চালু করা যায়৷ হতে পারে এমন একটি স্বতন্ত্র চ্যানেল, যা শুধু শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়েই অনুষ্ঠান প্রচার করবে৷ অবশ্যই এখন যেমন প্রচার করা হয়, তেমন একঘেয়ে লেকচারধর্মী অনুষ্ঠান নয়৷ হতে পারে অন্যরকম৷ যেমন ধরা যাক, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পড়ার মান ভালো এটা সারাদেশে অনেকেই মনে করেন৷ এজন্য ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে এনে বক্তৃতা না করিয়ে স্কুলের একটি ক্লাস কার্যক্রমই টিভিতে প্রচার হতে পারে৷ এটা সারাদেশের ছাত্র-শিক্ষকদের জন্যই কার্যকর হতে পারে৷ আর তা ছাড়া বিজ্ঞান, গণিতসহ সব বিষয়কেই আরও গভীরভাবে বুঝাতে নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচারের বাস্তবতা তো থাকেই৷


চীনের উদাহরণটি স্পষ্ট করে বলা যায়৷ চীন চালু করেছে মোবাইলের মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষার পদ্ধতি৷ আমরা যেমন এখন মোবাইলে রিংটোন ডাউনলোড করি, চীনে এমনি করে ইংরেজি শিক্ষার পাঠ যেকেউ ডাউনলোড করতে পারে৷ যুক্তি হলো মোবাইলের ব্যবহার কেবল বিনোদনেই কেনো সীমাবদ্ধ থাকবে, শিক্ষাতেও এর ব্যবহার ঘটুক! যুক্তিটা অকাট্য৷


শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষকদের তো বটেই, প্রশিক্ষণ দেয়া যায় স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের৷ এই পর্যায়ে আমাদের দেশে যে গুরুতর সঙ্কট আছে সেটা একভাবে সবারই জানা৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে চালু হয়েছে ইন্টারেকটিভরেডিওশিক্ষণ৷ এ ব্যবস্থায় ক্লাসরুমে একটি ইন্টারেকটিভ রেডিও থাকে, স্টুডিওতে থাকেন একজন বিশেষজ্ঞ বা প্রশিক্ষক৷ তিনি শিক্ষককে নির্দেশনা দেন এখন ক্লাসে কী করা উচিত৷ সে নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষক পাঠ পরিচালনা করেন৷ এ পদ্ধতিতে সেখানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ খুব কার্যকার হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়৷


অনেক সময় শিক্ষকরা অনেক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বুঝতে পারেন না৷ যেমন- আমাদের দেশে খুব অল্প করে হলেও সহায়তামূলক শিক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে৷ এ পদ্ধতিতে ছাত্ররা গোলাকৃতির টেবিলের চারধারে বসে৷ শিক্ষকের প্রতি নির্দেশনা থাকে তারা ছাত্রদের আলোচনায় উত্সাহিত করে দেবেন, যাতে তারা নিজেরাই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা সেই পুরনো কায়দায় বক্তৃতা করে যান; গোল টেবিলে গোল হয়ে বসে থাকা ছাত্রদের জন্য সে বক্তৃতা বুঝা আরও দুরূহ হয়ে পড়ে৷ এখন শিক্ষকদের করণীয় বিষয়টি দৃশ্যমান করে বুঝাতে টিভিতে যেমন অনুষ্ঠান প্রচার হতে পারে; হতে পারে শিক্ষক প্রশিক্ষণের সময় নানান মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা৷


গণতান্ত্রিক প্রশাসন :


শিক্ষা প্রশাসনের স্বচ্ছতার ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির আছে সীমাহীন সম্ভাবনা৷ এ প্রযুক্তি যেভাবে সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে, তেমনটি আর কিছুই নয়৷ টিভির সীমিত পরিসরের একটি টক শোর কথাই চিন্তা করুন৷ অনেক কর্তাব্যক্তিকে জনগণ যেভাবে প্রশ্ন করতে পারে, জবাবদিহি চাইতে পারে, এটা গত দশকেও ভাবা যেত না৷ এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার ফল ওয়েবে প্রকাশ করার সুফল তো আমরা দেখেছিই৷ আর একটি সুফলের ক্ষেত্র হলো প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ৷ এক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বহুল আলোচিত৷ কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষাটি কমপিউটারাইজড হওয়া এবং পরীক্ষার ফল ওয়েবে প্রকাশ করা নিয়োগ সংক্রান্ত অনেক বিতর্কেরই অবসান ঘটাতে পেরেছে৷ শুধু স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতার ব্যাপারই নয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রশাসনিক আমলাতন্ত্রের অনেক জটকে ছাড়িয়ে সহজ করে দিতে পারে৷ জনগণের শিক্ষার কল্যাণে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্ভব করে তুলতে এ প্রযুক্তি বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে৷


ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের একটি আকর্ষণীয় দিক হলো এখানে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া সম্ভব৷ এর ফলে যেকোনো পেশার মানুষের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে উঠবে৷ একইসাঙ্গে টিভি, রেডিও, ডিভিডি, ভিসিডি ব্যবহার করে শিক্ষা যেকোনো বয়সী মানুষের জন্যই আনন্দদায়ক করে তোলা সম্ভব৷ গণিত, জ্যামিতি, পদার্থবিদ্যা ও ইংরেজির অনেক জটিল বিষয় সহজ করে উপস্থাপন করা সম্ভব৷ এর ফলে বিজ্ঞানকে আরো জনপ্রিয় করে তোলা সহজ হবে৷ এক্ষেত্রে আর একটি তাত্পর্যপূর্ণ দিক হলো, এ প্রক্রিয়ায় গবেষণালব্ধ সর্বোচ্চ জ্ঞান ব্যবহার করা সম্ভব৷ যেখানে বিদ্যুৎ ও উল্লিখিত মাধ্যম আছে, সেখানে এখনই এ সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব৷ এর ফলে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের চাপ কমবে অনেক৷ শিক্ষার্থীরা ভিডিও দেখার পর যা বুঝা যায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করবে৷ শিক্ষক শুধুু এই প্রশ্নের সূত্র ধরে আলোচনা করবেন৷ যুক্ত করতে পারেন নতুন নতুন উদাহরণ৷ শিক্ষকের দীর্ঘ সময় ধরে বক্তৃতা দেয়ার আর দরকার পড়বে না- যা বর্তমানে শিক্ষার্থীর আগ্রহ বা প্রয়োজন না থাকলেও শুনতে হয়৷


এভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক করে তোলা সম্ভব৷ এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকরা হয়ে উঠতে পারেন সহায়ক যা খুবই তাত্পর্যময়৷ ক্লাসে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করবে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী, শিক্ষক সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন৷ উত্তর যে তাকেই দিতে হবে এমন কথা নয়৷ ক্লাসে এমন শিক্ষার্থী থাকতে পারে, যার সে প্রশ্নের উত্তর জানা আছে৷ শিক্ষকের প্রথম দায়িত্ব হবে তাকে খুঁজে বের করা৷ এভাবে চললে, প্রাইভেট পড়ানোর যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে দেশে, তা দ্রুতই কমিয়ে আনা সম্ভব, যা শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রশ্নে খুবই জরুরি৷ উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যে প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষকরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশের বা দেশের বাইরের ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন৷ একই কাজ আমাদের দেশের শিক্ষকেরাও শুরু করতে পারেন৷


ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের আর একটি বিশেষ দিক হলো এতে শিক্ষকনির্ভরতা কমবে৷ কারণ, একজন শিক্ষক ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে কম সময়ে বেশি কাজ করতে সক্ষম হবেন৷ এতে করে সারাদেশে যে শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে, তা ধীরে ধীরে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব৷ বিদ্যমান ব্যবস্থায় যা অকল্পনীয়৷


করণীয়


এখন এই কাঙ্ক্ষিত যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা এবং তাতে ই-লার্নিং নিশ্চিত করতে হলে কার ভূমিকা কী হবে? আইসিটি সম্পর্কে সব পর্যায়েই কমবেশি অসচেতনতা ও গতানুগতিক মানসিকতা রয়েছে৷ কিন্তু দেশে ই-লার্নিং নিশ্চিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট সবারই বিশেষ করে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই তাদের গতানুগতিক মানসিকতা ও চিন্তার বাইরে এসে দাঁড়াতে হবে৷ আইসিটি সম্পর্কেও তাদের যে অস্বচ্ছ ধারণা রয়েছে, তা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷ এ নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কাজ চলছে৷


শিক্ষকরা কী করতে পারেন? শিক্ষকদের ভূমিকা এক্ষেত্রে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ৷ প্রাথমিকভাবে ই-লার্নিং বিকশিত হবে শিক্ষকের মাধ্যমেই৷ ই-লার্নিং তৃণমূল পর্যায়েও জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করতে শিক্ষকদের ভূমিকা হবে সহায়কের৷ একজন শিক্ষক ই-লার্নিং প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারেন৷ শিক্ষক যাতে করে সহায়ক হয়ে উঠতে পারেন সে লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণেও মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে৷ সে বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা শুরু করতে হবে৷


বিদ্যানুরাগী যারা তাদের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ৷ সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যে আইসিটি সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে বিদ্যানুরাগীরা অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারেন৷ একজন বিদ্যানুরাগীই অধিকার নিয়ে উচ্চকণ্ঠ হয়ে সমাজে বলতে পারেন- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে ই-লার্নিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম । এ জন্য আমাদের সমবেত হয়ে কাজ করতে হবে৷ এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে তিনিই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেন ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় নেতৃত্ব, অভিভাবক, শিক্ষার্থী সবাইকে৷ এভাবেও নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হতে পারে৷


গণসচেতনতার ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে শিক্ষার্থীরা৷ এ জন্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও ই-সচেতনতা গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিতে হবে৷ ই-লার্নিং সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও গণসচেতনতা বাড়াতে টিভি টক-শো হতে পারে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার৷








১ টি মন্তব্য

  • Shamim Miah

    Shamim Miah

    ২০২২-১০-১৮ ১২:১০:৪৫

    Valo



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।