বিশ্ব আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এইতো কিছুদিন আগেই ইন্টারনেটে কিছু খুঁজতে হলে মানুষের একমাত্র উপায় ছিল গুগল। যাকে ছাপিয়ে গেছে এক অভিনব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটজিপিটি। তিনি মানুষের চিন্তার ধরণ ব্যবহার করে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এবার বিশ্বকে অবাক করে দিলেন একদল গবেষক। হাতেকলমে বিষয়টি দেখিয়ে দিলেন কিভাবে মানুষের মন পড়তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যায়।
গবেষণাটি সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্কুলের ইয়ং লু লিন স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা পরিচালনা করেছেন। যেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিতে যাচ্ছেন লি রুলিন নামের এক যুবক।
তিনি বলেন, 'মস্তিষ্কের সিগন্যালকে ডিকোড করে জানা যাবে,আমি কী ভাবছি!বিষয়টি আমার কাছে বিস্ময়কর ও দারুণ মনে হয়েছে। তাই আমি এখানে গবেষণায় সাহায্য করতে এসেছি। এখন আমি দেখতে চাই যে আমি যা মনে করি তা কীভাবে রিড করা হয়।
এই কাজের জন্য রুলিনকে একটি বিশেষ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে তাকে এমআরআই মেশিনে রাখা হয়। তার পরে, গবেষকরা বাইরে থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
জুয়ান হেলান ঝু নামের একজন গবেষক বলেছেন, 'এই প্রক্রিয়ায় আমরা অংশগ্রহণকারীকে কিছু ছবি দেখাই। প্রথমটি একটি ৯ সেকেন্ড একটানা। এরপর সমপরিমাণ বিরতি দিয়ে পরেরটি। ছবিগুলো দেখার পরে তার মস্তিষ্ক কী চিন্তা করে সেটা আমরা ম্যাগনেটিক ডিভাইসের মাধ্যমে রেকর্ড করি।’
জিয়াক্সিন কিন, যিনি গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, এই জটিল প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছাসেবক লি রুলিনকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন: "আপনার সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রথমে সংগ্রহ করা হবে। তারপরে একটি পৃথক এআই মডেল তৈরি করা হবে। এটি ট্রান্সলেটরের মতো কাজ করবে। চ্যাটজিপিটি যেমন মানুষের ভাষা বুঝতে পারে, এটি আপনার মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড বুঝতে পারবে। এরপর স্টেবল ডিফিউশন নামক এক প্রক্রিয়ায় সেগুলো রূপান্তরিত করা হবে টেক্সট থেকে ছবিতে। মূলত এর মধ্য দিয়ে মনের কথা পড়ে ফেলা সম্ভব।’
কথা বা শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মানুষ যেখানে মনের ভাব প্রকাশ করে, সেখানে মাইন্ড রিডিং করে তাকে বোঝার এত আয়োজন কেন? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে, আরেক গবেষক, চেন জিজিয়াও বলেছেন “শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য মাইন্ড রিডিং একটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি হতে পারে। অনেক রোগী আছে যারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না এমনকি কথা বলতে পারে না। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের জন্য একটি রোবট তৈরি করা হবে। সেই রোবট তার পক্ষে কথা বলবে, তার ভাবনা-চিন্তাগুলো প্রকাশ করবে।।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের জটিল গঠন ও কর্মক্ষমতার ভিন্নতার জন্য কাজটি বেশ কঠিন। তবে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি বাজারে আনা সম্ভব হবে বলে তারা আশাবাদী।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মানুষের মস্তিষ্কের গোপন রহস্য বের করতে এই প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের উদ্দেশে এই গবেষক দল বলেন, এ জন্য কঠোর আইন ও নীতি প্রণয়ন করতে হবে। তবেই বিস্ময়কর এই প্রযুক্তির আশীর্বাদ পাবে মানুষ।











০ টি মন্তব্য