ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল সংযুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগাতে দক্ষ মানব সম্পদ অপরিহার্য। দেশব্যাপী উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের পাশাপাশি দক্ষ মানব সম্পদ এবং ডিজিটাল সংযোগ সহজলভ্য করতে সরকার কাজ করছে। মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তির প্রসার ও প্রয়োগে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতের বা ট্রেডবডিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী গতকাল ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে আন্তর্জাতিক সংস্থা এলায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেট আয়োজিত বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল অর্থনীতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অবদান বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেটকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে তুলনা করে বলেন, পৃথিবীর কোন কোন দেশ ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিযেছে। তিনি বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কেবলমাত্র শহরের মানুষের জন্য নয় দেশের প্রত্যন্তে প্রতিটি বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। দেশের ১৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন অপটিক্যাল ফাইভার সংযোগের আওতায় আসছে।
ইন্টারনেটের মূল্য সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম অনেক কম। ৬০ টাকায় এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়। অথচ ২০০৬ সালে এক এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ছিলো ৭৮হাজার টাকা, ২০০৮ সালে ২৭ হাজার টাকা এবং বর্তমানে একদেশ এক রেটের আওতায় এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায় মাত্র ৬০টাকায়।
তিনি দেশে ইন্টারনেট প্রসারের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের শতকরা ৯৮ভাগ এলাকায় ৪জি নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এরই মাঝে ৫জি স্পেকট্রাম নিলাম করা হয়েছে এবং ৫জি চালু করা হয়েছে। তিনি একই সাথে দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কানেক্টিভিটির প্রসারের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন যে এখন মধুপরের পাহাড় বা হাওরে বসে ইন্টারনেটের সহায়তায় তরুণ তরুণীরা বিদেশে আউটসোর্সিং এর কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে দেশে মাত্র সাড়ে সাত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ৮ লাখ। ২০২০ সালে কোভিড শুরুর প্রাক্কালে দেশে ১০০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে তা বেড়ে ৩৪৪০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে এবং ব্যরবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তের কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মোবাইল ইন্টারনেটের দাম তুলনামূলক একটু বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, টেলিটকের মাধ্যমে ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতা তৈরি করে সেটিও গ্রাহকের স্বার্থের অনুকুলে আনার চেষ্টা আমরা করছি। ইতোমধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের আনলিমিটেড প্যাকেজও চালু হয়েছে। টেলিটক এটি প্রথম শুরু করে এবং অন্য অপারেটররাও সেটা কার্যকর করেছে বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত।
মোবাইলের কলড্রপ কমিয়ে আনতে অপারেটরসমূহকে সম্প্রতি অতিরিক্ত বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে গ্রাহকগণ এই সুবিধা পাবে। দেশে ডিজিটাল ডিভাইস বিশেষ করে মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা প্রসংগে কমপউটারে বাংলা ভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশে গত চার বছরে সরকারের প্রযুক্তি বান্ধব নীতি কাজে লাগিয়ে স্যামসাংসহ ১৪টি ব্র্যান্ডের মোবাইল কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
এর ফলে দেশের মোট চাহিদার শতকরা সত্তরভাগ এই সব কারখানার উৎপাদিত মোবাইল থেকে মেটানো সম্ভব হচ্ছে। তিনি মোবাইল কারখানার পাশাপাশি ল্যাপটপ ও কমপিউটার কারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী দেশে প্রযুক্তির লেটেস্ট ভার্সন ফাইভ-জি চালু করাকে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশের যুগান্তকারি উদ্যোগ উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা, শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিকাশে মাইলফলক স্থাপিত হবে।
মন্ত্রী বাংলাদেশ বিষয়ে এলায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেটের ২০১৮ সালের তথ্যনির্ভর প্রতিবেদনটি আপডেট ভার্সন প্রকাশের মাধ্যমে ২০২২ সালে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসির সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন এর ফলে ডিজিটাল সংযুক্তি, ইন্টারনেট সহজলভ্যতা এবং ডিজিটাল ডিভাইস ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জনের প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসি জানতে পারবে।
এলায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেটের বাংলাদেশ বিষয়ক সমন্বয়ক শহীদ উদ্দিন আকবরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বেসিস-এর সভাপতি রাসেল টি আহমদ এলায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেটের গ্রোবাল পলিসি বিষয়ক কর্মকর্তা এলিনোর এবং এশিয় প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বয়কারী আনজু মাংগল বক্তৃতা করেন।
বক্তারা হাইটেকসহ ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি তার যথাযথ প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি তার জন্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে হবে।
০ টি মন্তব্য