পরীক্ষামূলক সেবা চালুর দু’বছর পার হচ্ছে। নিলামে তরঙ্গ বিক্রিও হয়ে গেছে দেড় বছর আগে। কিন্তু এখনও দেশে পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভজি) প্রযুক্তি সেবা চালু হয়নি। যদিও ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেবাটি চালুর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলছে, তরঙ্গ দেওয়া হয়েছে, এখন ফাইভজির বাজার সৃষ্টির দায়িত্ব অপারেটরদের। তবে মোবাইল অপারেটররা বলছে, নীতিমালা না থাকায় বাজার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না, সেবাটি চালু করার জন্য যা খুবই জরুরি।
২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর টেলিটকের মাধ্যমে দেশের ছয়টি স্থানে পরীক্ষামূলক ফাইভজি সেবা চালু হয়। এরপর ২০২২ সালের মার্চে নিলামে চার মোবাইল অপারেটরের কাছে ফাইভজি তরঙ্গ বিক্রি করে সরকার।
কিন্তু সেবাটি চালুর ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতি নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ফাইভজির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট সিটি, স্মার্ট যোগাযোগ, শিল্পে অটোমেশন, শিক্ষা ও চিকিৎসার আধুনিকায়নে ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহার হবে।
কিন্তু দেশে এখনও এর ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠেনি। যেমন– ফাইভজি টাওয়ার, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো এখনও নিশ্চিত হয়নি।
তরঙ্গ নিলাম
২০২২ সালের মার্চে নিলামে দুটি ব্যান্ডের ১৯০ মেগাহার্টজ কিনেছে চারটি মোবাইল অপারেটর। ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজের ১০টি ব্লক এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ১২টি ব্লক নিলামে তোলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
প্রতি ব্লকে ছিল ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ১৫ বছরের জন্য ৬ মিলিয়ন ডলার। তবে তা বিক্রি হয় ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারে। এতে সরকারের আয় হয় ১০ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। নিলামে ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ৬০ মেগাহার্টজ করে ১২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে গ্রামীণফোন ও রবি।
বাংলালিংক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের ৪০ মেগাহার্টজ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক একই ব্যান্ডের ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে। গ্রামীণফোনের কাছে তরঙ্গ রয়েছে ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্টজ, রবির ১০৪ মেগাহার্টজ, বাংলালিংকের ৮০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটকের ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ।
খসড়া নীতিমালায় কী আছে
ফাইভজি সেবার খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স হবে ১৫ বছরের। অপারেটরদের জন্য বরাদ্দ করা তরঙ্গ হবে প্রযুক্তিনিরপেক্ষ। টুজি, থ্রিজি, ফোরজি, ফাইভজিসহ সব প্রযুক্তির জন্যই একটি লাইসেন্স হবে। আগের বরাদ্দ করা টুজি, থ্রিজি ও ফোরজির লাইসেন্স মেয়াদ থাকা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বিটিআরসি চাইলে নির্ধারিত ফি নিয়ে নীতিমালা অনুসরণ করে আগ্রহী নতুন কোম্পানিকে ফাইভজি ব্যবসার লাইসেন্স দিতে পারবে। ফাইভজির বার্ষিক লাইসেন্স ফি হবে ১০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে নির্ধারিত তরঙ্গ ফি ও আয়ের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বিটিআরসিকে দিতে হবে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে দিতে হবে আয়ের ১ শতাংশ। মোবাইল কোম্পানিগুলোকে কল, ট্রানজেকশনসহ গ্রাহকের সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত দুই বছর সংরক্ষণ করতে হবে।
তবে বিটিআরসি ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের চাহিদা অনুসারে আরও বেশি সময় নির্দিষ্ট তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের চাহিদামতো তথ্য সরবরাহ ও নেটওয়ার্কে প্রবেশের অধিকার দিতে হবে।
নীতিমালা অনুমোদন কতদূর
ফাইভজি সেবার নীতিমালার খসড়া তৈরির জন্য ২০১৯ সালের আগস্টে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০২০ সালে তাদের তৈরি খসড়া বিটিআরসির কমিশন সভায় উত্থাপন করে। কথা ছিল ওই বছরই তা চূড়ান্ত হবে, কিন্তু তা হয়নি।
কমিশন থেকে মন্ত্রণালয় হয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে যাচাই-বাছাই শেষে ২০২২ সালেই খসড়াটি প্রায় চূড়ান্ত হয়। নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত বিটিআরসির এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলেই দ্রুততম সময়ে নীতিমালাটির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সেবা চালু কবে
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম জানান, তারা ফাইভজি চালু করতে প্রায় প্রস্তুত। এখন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বসিয়ে সফটওয়্যার চালু করতে হবে। এতে মোটা অঙ্কের অর্থ যাবে।
তবে কোন খাতে কীভাবে ব্যবসা করব, বুঝতে পারছি না। কারণ, নীতিমালা এখনও অনুমোদন হয়নি। তা ছাড়া দেশে ফাইভজির ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠেনি।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবিরও মনে করেন, দেশে এখনও ফাইভজির ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, ‘শুধু ঘোষণা দিলেই তো সেবা চালু করা যায় না! এ জন্য অবকাঠামো প্রয়োজন।’
ফাইভজি সেবার জন্য মোবাইল অপারেটরকে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। নীতিমালা অনুসারে পদক্ষেপ নিয়েই গ্রাহক তৈরি করতে হবে।’ তবে এ উদ্যোগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাঁর।
সুমন আহমেদ বলেন, দেশে এখনও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় না। মানসম্মত ফোরজি সেবা মিলছে না। দেশে কবে চালু হচ্ছে ফাইভজি– এমন প্রশ্নে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার শুধু বলেন, ‘আরও সময় দিতে হবে।’
০ টি মন্তব্য