https://powerinai.com/

ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘ইউনিফাইড’ বাংলা ইউনিকোড চাই ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহার সংকট দূর করতে আরেক মুক্তিযুদ্ধের ডাক

ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘ইউনিফাইড’ বাংলা ইউনিকোড চাই

ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘ইউনিফাইড’ বাংলা ইউনিকোড চাই ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহার সংকট দূর করতে আরেক মুক্তিযুদ্ধের ডাক ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘ইউনিফাইড’ বাংলা ইউনিকোড চাই ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহার সংকট দূর করতে আরেক মুক্তিযুদ্ধের ডাক
 

ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘ইউনিফাইড’ বাংলা ইউনিকোড চাই ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহার সংকট দূর করতে আরেক মুক্তিযুদ্ধের ডাক


ওয়েব দুনিয়ায় প্রতিটি অণু-পরমাণুর প্রয়োজন নিজস্ব স্বকীয়তা। আর এই স্বকীয়তা প্রকাশ পায় সুনির্দিষ্ট মানের সঙ্কেত/সংখ্যা বা কোডে। আর জাভা, এক্সএমএল ও মাইক্রোসফটের মতো বিভিন্ন যান্ত্রিক ভাষার সাথে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঙ্কেত ইউনিকোড। কেবল যন্ত্রই নয়, মানুষের মুখের ভাষাও অনুবাদ করে নেয় নিজস্ব তরিকায়। এই শক্তিতেই বহুমাত্রিক ভাষাকে হুকুম মাত্রই বোধগম্য করে তোলে। অতলান্ত অন্তর্জালে স্বকীয় বুনটে আমাদের পৌঁছে দেয় ঈপ্সিত বন্দরে। যার ফলশ্রুতিতে ওয়েব দুনিয়ায় ইউনিকোডের রয়েছে অনন্যতা। কিন্তু এই কনসোর্টিয়ামে বাংলা লিপির স্বাতন্ত্র্য না থাকায় প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকছে বাংলা। আনসি বা আসকি থেকে স্বাতন্ত্র্য রূপান্তরের পথে তুলে দিয়েছে ‘নোকতা’র দেয়াল। ফলে বর্ণ পরিচয়ে ‘দেবনাগরী’র সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে রক্তে কেনা ভাষা বাংলা। দেখতে একরকম হলেও বর্ণের অন্তর্গঠন হয়ে যায় আলাদা। ফলে অক্ষরবিন্যাস ভেদে ওটিএফে ব্যবধান কমলেও গ্লিফস ও লিগাচারে জটিলতা তৈরি করে। বর্ণ সংযুক্তিতে ঘোঁট পাকায়। ফলে সার্চ ইঞ্জিনে ‘বাংলা’ অক্ষরের শব্দ-বাক্য খুঁজে পাওয়া হয়ে ওঠে দুষ্কর।   


চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেগেছে ডিজিটাল ছোঁয়া। আইওটি, বøকচেইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ও বিগডাটায় বাংলা লিপির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসে বাংলা লিপি ব্যবহারের ব্যাপ্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু বাংলা লিপি ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের বাধা আসছে।  মূলত ঢ-ঢ়, ড-ড়, য-য়-তে সমস্যা থাকাতে বড় তথ্য (ইরম উধঃধ) বিশ্লেষণ, সার্চ ইঞ্জিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এবং ইন্টারনেট অব থিংসে বেশ সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। মুদ্রণ জগতে ইংলিশ লিপির সাথে বাংলা লিপির সাইজের ক্ষেত্রে তারতম্য। বিভিন্ন বাংলা সফটওয়্যার ব্যবাহারে বাংলা লিপিতে ( ঁ) চন্দ্রবিন্দুর ক্ষেত্রে তারতম্য লক্ষ করা যায়। যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা প্রকট। শুধু এই তিনটি বর্ণই নয়, এর বাইরে আরো সমস্যা রয়েছে। একই সফটওয়্যারে একাধিক ফন্টে শব্দ লিখলে কমপিউটার তাকে চিনতে পারে না।


এসব সমস্যার সমাধানে আমাদের ভাষাকে যন্ত্রের বোধগম্য করে তুলতে একক মানে নিয়ে আসতে না পাড়ায় বাংলা ডাটা মাইনিং এখনো ইন্ডাস্ট্রির সমতুল্য নয়। ল্যাংগুয়েজ মডেল করতে বাংলা করপাসে দেখা যাচ্ছে বেশ সমস্যা। বাংলা লিপি ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি মানসম্পন্ন নীতি থাকা দরকার। বাংলা লিপি নিয়ে এডহক ভিত্তিতে কাজ না করে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন ভাষা-প্রযুক্তিপ্রেমীরা।


গত ২ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারের সংকট ও সমাধান নিয়ে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে দেয়া বক্তব্যে এই দাবি জানানো হয়। প্রযুক্তিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা কমপিউটার জগৎ-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজয় বাংলা’র রূপকার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাযুক্তিক সমস্যাটার পেছনে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, ‘তারা আমাদের ভাষা-কে এমন জটিল অবস্থায় করেছে এবং এটি একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে গণ্য না করে তারা আমাদেরকে দেবনাগরীর অনুসারী করে যে প্রচÐ রকম ক্ষতি করেছে, আমার কাছে মনে হয় যে বাঙালিদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এ জন্যই এখনো আমাদের নোকতা নিয়ে যুদ্ধ করে বেড়াতে হচ্ছে। অথচ বাংলা বর্ণে কোনো নোক্তা নেই।... ইউনিকোড যদি বাংলা-কে বাংলার মতো দেখে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলতো তাহলে যে সমস্যাগুলো এখন ফেস করতে হচ্ছে তা করতাম না।’


এর দায় প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও রয়েছে বলেও মনে করেন মোস্তাফা জব্বার। সে জন্য ভারত থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়া এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ডিন এবং ভাষা বিজ্ঞান চেয়ার অধ্যাপক উদয় নারায়ণ সিং-কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘দেরি করে হলেও বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে ২০১০ সালে। তার আগে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে ভারতীয় ভাষা পরিবারের যে এনকোডিংগুলো করা হয় তখন আমাদের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা সেখান থেকে কোনো ধরনের কথাবার্তা বলা হয়নি। এটি দেবনাগরীর অনুসরণ করে যেভাবে কোডিং করা হয়েছে এটাকে কিন্তু আলাদা ভাষা না করে দেবনাগরীর একটি ভাষা হিসেবে করার ফলে আজকে আমরা এই সমস্যাগুলোতে দারুণভাবে ভুগছি।’


এ সময় প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা ব্যবহারে আসকি, ইউনিকোড এবং প্রমিতের নির্দিষ্ট মান থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় স্পেল চেকার, অভিধান, ওসিআর ইত্যাদিসহ বাংলা এনএলপি ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখনো আমাদেরকে নোক্তা নিয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। অথচ বাংলা বর্ণে কোনো নোক্তা নেই। দেরি করে হলেও ২০১০ সালে বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে। প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা ব্যবহারে আসকি, ইউনিকোড এবং প্রমিতের নির্দিষ্ট মান থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় বানান পরীক্ষা, অভিধান, ওসিআর ইত্যাদিসহ বাংলা এনএলপি ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে।’


সমস্যাগুলো সমাধানে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের জনক। গর্বের সাথে ‘বাংলা সফটওয়্যারই আমার জীবিকা’ এবং ‘আমিই প্রথম বাংলাদেশী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসকি ও ইউনিকোডের মধ্যে যে দেয়াল আছে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তারপরও ইউনিকোড কনভার্সনে যে জটিলতা হয় তার অপরাধ বাংলা ভাষাভাষীদের নয়; এই অপরাধ ইউনিকোডের। তাই এখনো আমরা ইউনিকোডের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাই তাদের মেধা-মনন দিয়ে এই যুদ্ধ জয় করবে।’


তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষীর জন্য বাংলাদেশই হচ্ছে বাংলা ভাষার রাজধানী। বাংলাদেশই ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলার এনকোডিং ও কিবোর্ডের মান প্রমিত করেছে। বাংলার ১৬টি টুলস উন্নয়নের জন্য সরকার ১৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার কাজ এখনো চলছে। অন্যদিকে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলার জটিলতাকে ভয়ংকর করে তুলেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ইউনিকোডে বাংলা এনকোডিং করার সময় আমরা তার সদস্য ছিলাম না। তখন ভারতীয় বাংলা ভাষাভাষীরা বাংলাকে দেবনাগরীর মতো করে এনকোডিং করে আমাদের ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। বাংলাদেশে প্রকাশনার জন্য মূলত একটিই কিবোর্ড ও সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এখানে আসকি ও ইউনিকোডের মধ্যে যে ব্যবধান আছে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তারপরও ইউনিকোড রূপান্তরে যে জটিলতা হয় তার অপরাধ বাংলা ভাষাভাষীদের নয়, এ অপরাধ ইউনিকোড কর্র্তৃপক্ষের।’


প্রযুক্তিবিষয়ক মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক অনুর সঞ্চালনায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই নীতি সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের ভাষা-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শক মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ইউনিকোডে বাংলা বর্ণ পরিচয়, এর রূপ এবং অন্তর্গত কাঠামোতে স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। কেননা বাংলা ভাষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মান অনুসরণ করার ক্ষেত্রে আমরা ভুলভাবে এগুচ্ছি। বলতে গেলে আমরা জোড়াতালি দিয়ে এগুচ্ছি। বর্ণের আকার, অবস্থান বিষয়গুলোকে ভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। ওয়েবে ও মুদ্রণে নেই একইরকম স্টাইলশিট। হোমোগ্রাফেও ব্যবহার হচ্ছে বিকল্প আকৃতি। কম্পোজের সময় ফন্টের সমস্যা না থাকলেও ডিভাইস ভিন্নতার কারণে ক্রস প্ল্যাটফর্মে শব্দগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সবাইকে তর্ক করে হলেও একটা জায়গায় পৌঁছতে পারলে ভালো হয়।’


সমস্যা


• ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এখনো বাংলা ইউনিকোড ফন্ট ইউনিফাইড নয়। এটা ইউনিকোড নামের সাথে সাংঘর্ষিক।

• বাংলা ইউনিকোডে ডাটা অ্যানলিটিক্সে ‘নোকতা’ সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ‘য়’ বর্ণ লিখে সার্চ করলে ‘য’ও শনাক্ত করে। মূলত দেখতে একরকম হলেও অন্তর্গঠন আলাদা হওয়ায় সার্চ করে যথাযথ বর্ণ/শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। 

• ওয়েবে বাংলা অক্ষরে লেখা বাক্যের দৈর্ঘ্য, উচ্চতা ও ঘনত্ব এবং লাইনের মধ্যের দূরত্ব ভিন্ন ভিন্ন হয়। এতে একই সাথে বাংলা বা ইংরেজি কিংবা বিভিন্ন ফন্টের লিপি ব্যবহারের সময় আলাদা আলাদা করে ফন্টের আকার নির্ধারণ করতে হয়।


প্রস্তাবনা 


• তাই অবিলম্বে অসমি বা দেবনাগরী প্রভাবমুক্ত হয়ে বাংলা লিপিকে স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা দিয়ে স্বতন্ত্র কোড বরাদ্দ দেয়ার জন্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামকে বাধ্য করতে হবে। প্রত্যাশিত অনুসন্ধান ফলাফল পেতে বিদ্যাসাগর লিপিকে বাংলা ইউনিকোডের মান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।   

• টাইপোগ্রাফিক্যাল বিবেচনায় বাংলা ফন্টের জন্য একটি গ্রাফিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে হবে। এতে বর্ণের মাত্রার আপার ও লোয়ার বেইজ লাইনের ভিত্তিতে রস্বিকার বা রস্বুকারের মতো প্রতিটি কারের অবস্থান ও আকার নির্ধারণ করে দিতে হবে। এজন্য ওয়েব ও মুদ্রণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলা বর্ণমালার একই রকম স্টাইলশিট থাকতে হবে। 

• হোমগ্রাফে বিকল্প আকৃতি বা রূপ বাছাই করে একটি নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করতে হবে। 

• কম্পোজ করতে গেলে ক্রস প্ল্যাটফর্মে যুক্তাক্ষর ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ডিভাইসগুলোতে যে সমস্যা দেখা দেয় তা ঠিক করতে হবে। 

• বাংলা ভাষা প্রযুক্তিতে যে কাজগুলো হয়েছে সেগুলো শিল্পমানের করতে যথাযথ ভাবে ডকুমেন্টেশন করতে হবে। এ সবই ওপেন সোর্স করে দিতে হবে। 

• ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ে সফলতা নিশ্চিত করতে বাংলা করপাসকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি ভাবে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। 

• বাংলায় ডেটা প্রসেস করার জন্য ডেটাসেট তৈরির মধ্যে বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ডাটা মাইনিংয়ে সফল হতে টোকেনাইজার ও এমবেডিং ডাইমেনশন নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। 

• ‘অ্যাডহক’ ভিত্তিতে বাংলা ভাষা প্রযুক্তির কাজ না করে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো শনাক্ত করে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। 

• প্রযুক্তিতে বাংলার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড পলিসি করতে হবে। বিগডেটায় সফলতা পেতে করপাস সমৃদ্ধ করতে প্রত্যেক প্রকাশককে তাদের নিজেদের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর ইউনিকোড ভার্সন প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। 

• যারা ভাষা ও ভাষাপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তাদের একত্রিত করে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা দরকার। গঠন করা হোক একটি টাস্কফোর্স।

• বাংলাদেশ একা না করে পশ্চিমবঙ্গের গবেষকদের সমন্বয় করে একটি অভিনব স্পেল চেকার তৈরি করা উচিত।  

• প্রযুক্তিতে বাংলার প্রমিত মান প্রয়োগে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। 


বিষয়গুলো নিয়ে গবেষকরা কাজ করছেন উল্লেখ করে মামুন জানান, তাদের গবেষণা ও পরামর্শের ভিত্তিতে ইউনিকোডের দ্বাদশ সংস্করণে একটা টিকা দেয়া হয়েছে। এর কিছু সমাধান হলেও আগে ওয়েবে জমা থাকা ফন্টগুলো ওভারকাম করা সম্ভব হয়নি।  


আলোচনার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি জানান, দাপ্তরিক কাজের ডি নথিতে ওসিআর সংযুক্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পাশাপাশি এর সাথে খুব শিগগিরই বাংলা বানান সংশোধনী সফটওয়্যার প্রকাশ করবে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল।


ওয়েবিনারে মনোনীত আলোচক ডেটা বিজ্ঞানী রাকিবুল হাসান বলেন, বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। কীভাবে বাংলায় মেশিন লার্নিং এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বাংলা করপাসের সাথে ডাটা মাইনিং এখনো শিল্পমানের করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন টোকেনাইজারের মাধ্যমে বাংলা শব্দকে যখন ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ে এমবেডেড করার বিষয়ে আরো কাজ করতে হবে। ভোকাবুলারি সাইজ এবং এমবেডিং ডাইমেনশন নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন এবং অনুবাদ ও সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিসের ওপর আমাদের আরো গুরুত্ব দিতে হবে। এরই মধ্যে বাংলা ভাষায় যে কাজ হয়েছে তার যথাযথ ডকুমেন্টেশনের দিকে নজর দিতে হবে। 


বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান বলেন, ভাষাপ্রযুক্তি নিয়ে যেনো আমরা পাঁচ হাত এগুনোর পর আবার চার হাত নেমে যাই। আমাদের অর্জন মাত্র এক হাত থাক। এর দায়টা এখন আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার দাবি জানান তিনি।   


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিপা জাহান বলেন, আমরা যখন বাংলা টাইপ করি তখন ড্যাশ, হাইফেন এবং এক্সট্রা লার্জ ড্যাশ ব্যবহার করতে পারি না। আমি চাই বিষয়টি যেন আমলে নেয়া হয়। পাশাপাশি সর্বস্তরে বাংলা চালু না করা হলে বাংলা লিপির সংকট কখনই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময় অতিক্রম করার এই সময়ে লিপি টিকিয়ে রাখার কাজটি সহজ করতে হলে মুখে উচ্চারিত শব্দ টাইপিংয়ের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। তা না হলে এর ব্যবহার কমবেই। এই সমস্যাগুলো সরকারিভাবেই করতে হবে।   


আলোচনায় ভারত থেকে অংশ নেন এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ডিন এবং ভাষা বিজ্ঞান চেয়ার অধ্যাপক উদয় নারায়ণ সিং। তিনি বলেন, ‘বাংলালিপির সাথে একটা অদ্ভুত আত্মিক যোগাযোগ আছে। এটা এত বেশি যে কোনো রকম পরিবর্তনের কথা বলতে গেলেই নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এটা নিয়ে আমরা পাঁচ পা এগিয়ে চার পা পিছিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে যেমন বেশি স্বাধীনতা দেয়া যাবে না; তেমনি একেবারে সঙ্কীর্ণ অবস্থানে থাকা যাবে না। ভাষাকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। এই নেতৃত্ব আমাদেরকেও মেনে নিতে হবে।’


তিনি আরো বলেন, ‘যে নানারকম প্রযুক্তির কথা আমরা ভাবছি, এর সবই নির্ভর করছে আমরা কীভাবে আমাদের লিপিকে গুছিয়ে তুলতে পারব। বানান ব্যবস্থাকে কীভাবে নিয়ে আসতে পারব। তাহলেই কৃষকের মুখের ভাষাতেই ফরম পূরণ করা সম্ভব হবে।’ 


ইউনিফাইড করপোরা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে উদয় নারায়ণ সিং বলেন, প্রত্যেক প্রকাশককে নিজেদের ফন্টের ইউনিকোড ভার্সন দেয়ার বিষয়টি বাধ্য করতে হবে। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই এটা জরুরি। 


প্রসঙ্গত, মুদ্রণ প্রক্রিয়া কমপিউটারনির্ভর হওয়ার পর লিপির উপস্থাপন ছিল আসকিনির্ভর। প্রথমে আসকি বেসিক ল্যাচিনের ১২৮টি ক্যারেক্টার নিয়ে গঠিত হয়। এরপর ৮ বিটের ২৫৬ বিটে উন্নীত হয়। এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ৩৮৩টি বর্ণ প্রকাশ করা যেত। ফলে স্বভাবতই আসকির মাধ্যমে অন্যান্য ভাষার বর্ণ এতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এই বাধা দূর করতে ১৯৮৭-৮৮ সালে অ্যাপল জেরক্সসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞানীরা একটি সাধারণ এনকোডিং সেটের প্রস্তাব করেন। এই সেটটি এখন ইউনিকোড নামে পরিচিত। 


সেই সময় অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম মিটিংয়ে মোস্তাফা জব্বার বাংলা ইউনিকোড চার্ট ড়, ঢ়, য়, ৎ চারটি লিপিকে বাদ দিয়ে গঠিত করার প্রথম প্রতিবাদ করেন, তারই প্রেক্ষিতে ৎ সক্রিয় লিপি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর বাংলাদেশে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম এবং বিসিসির উদ্যোগে ২০১৮ সালে রুপির পরিচয়টি পরিবর্তন করে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকা হিসেবে গ্রহণ করে ইউনিকোড। 


সর্বশেষ গেল বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডের ১৪.০ সংস্করণ প্রকাশ করেছে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম। এই সংস্করণটি মোট ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯৭টি অক্ষরের জন্য ৮৩টি অক্ষর যোগ করে। এই সংযোজনগুলোর মধ্যে মোট ১৫৯টি স্ক্রিপ্টের জন্য রয়েছে পাঁচটি নতুন স্ক্রিপ্ট। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ৩৭টি নতুন ইমোজি অক্ষর।


তবে এসব উদ্যোগ তখনই সফল হবে যখন প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা মাঠের কৃষকের ভাষার সাথে ভাব বিনিময় করতে পারব। বাংলা ভাষা লিপির স্বতন্ত্র বৈশ্বিক মান সৃষ্টি করতে পারব। বাংলা লিপিকে পুরোপুরি গুছিয়ে এর বানান ব্যবস্থাকে কীভাবে একটি ধারায় নিয়ে আসতে সফল হব।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।