https://gocon.live/

প্রযুক্তি

বিশ্বের প্রথম ৭ ন্যানোমিটারের গ্রাফিক্স কার্ড

বিশ্বের প্রথম ৭ ন্যানোমিটারের গ্রাফিক্স কার্ড বিশ্বের প্রথম ৭ ন্যানোমিটারের গ্রাফিক্স কার্ড
 

বিশ্বের প্রথম ৭ ন্যানোমিটারের গ্রাফিক্স কার্ড


এএমডি (অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস) সিপিইউর বাজারে ইন্টেলের সাথে এবং জিপিইউয়ের বাজারে এনভিডিয়ার সাথে টেক্কা দিয়ে আসছে অনেক বছর ধরে। বেশ কয়েক বছর হলো হাই-এন্ড গেমিং গ্রাফিক্স কার্ডের দৌড়ে এনভিডিয়ার শক্তিশালী গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর থেকে কিছুটা পিছিয়ে ছিল এএমডি। এনভিডিয়া নতুন গ্রাফিক্স কার্ড আরটিএক্স ২০৮০ বাজারে আসার পর তার সমকক্ষ কোনো গ্রাফিক্স কার্ড এএমডির ছিল না। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সিইএস ২০১৯ (কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো) নামের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক শোতে এএমডি তাদের নতুন গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে তাক লাগিয়ে দেয়। এএমডির প্রেসিডেন্ট ও সিইও ড. লিসা সু জানান তাদের নতুন এএমডি রাডেওন সেভেন গ্রাফিক্স কার্ডটি এনভিডিয়া আরটিএক্স ২০৮০ গ্রাফিক্স কার্ডের বেশ শক্তিশালী প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে বাজারে আসবে। রাডেওন ৭-এ প্রথমবারের মতো ৭ ন্যানোমিটার গ্রাফিক্স চিপ ব্যবহার করা হয়েছে এবং সাথে যুক্ত করা হয়েছে আরো উন্নত ভেগা আর্ক্টিটেকচারের দ্বিতীয় সংস্করণ। গ্রাফিক্স কার্ডটির নামকরণে রয়েছে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। Radeon VII এই নাম দিয়ে রোমান হরফে লেখা সেভেন বা ৭ বোঝানো হয়েছে ৭ ন্যানোমিটার চিপকে। আবার আরেক দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে ভি (V) দিয়ে বোঝানো হচ্ছে ভেগা (Vega) এবং ডবল আই (II) দিয়ে বোঝানো হচ্ছে দুই, যা নির্দেশ করছে ভেগার দ্বিতীয় প্রজেক্টের আর্কিটেকচার। এতে এক নামের ভেতর তাদের দুইটি মাইলফলক একসাথে উপস্থাপন করেছে এএমডি।


বিশ্বের প্রথম ৭ ন্যানোমিটার চিপের গ্রাফিক্স কার্ড, এইচএমবি২ মেমরির ব্যবহার যা কিনা অন্যান্য মেমরির তুলনায় বেশ দামি মেমরি এবং সেই সাথে ১৬ গিগাবাইট ভিডিও মেমরি হিসেবে গ্রাফিক্স কার্ডের দাম হওয়ার কথা ছিল আকাশচুম্বী। এনভিডিয়া তাদের নতুন কার্ড বাজারে ছাড়লে তার দাম থাকে অনেক বেশি। তাই সবার ভাবনা ছিল এএমডির নতুন গ্রাফিক্স কার্ডের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য হয়তো তার দাম অনেক বেশি হবে। এনভিডিয়া আরটিএক্স ২০৮০ স্ট্যান্ডার্ড এডিশন গ্রাফিক্স কার্ডের বাজারদর ৬৯৯ ডলার। তাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রতিযোগী এনভিডিয়াকে মোক্ষম টেক্কা দেয়ার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে এএমডি কার্ডটি ঠিক একই মূল্যে বাজারে ছেড়েছে।


এএমডির দ্বিতীয় প্রজেক্টের ভেগা আর্কিটেকচার পূর্ববর্তী প্রজেক্টের ভেগা থেকে ২৫ শতাংশ বেশি পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম একই পাওয়ার খরচ করে। নামকরা গেম ডেভেলপার কোম্পানির জনপ্রিয় গেম ডেভিল মে ক্রাই সিরিজের পঞ্চম পর্বটি দিয়ে এএমডি তাদের নতুন ভেগা গ্রাফিক্সের কারিশমা দেখিয়েছে। গেমটি ফোরকে রেজ্যুলেশনে আল্ট্রা সেটিংস দিয়ে চালিয়েও প্রতি সেকেন্ডে ৬০টিরও বেশি ফ্রেম এনে দেখিয়েছে। লিসা সু জানান কার্ডটিতে রয়েছে টেরাবাইট পার সেকেন্ড মেমরি ব্যান্ডউইডথ। বাজারে থাকা অন্যান্য জনপ্রিয় গেমগুলোর মধ্যে ফোর্টনাইটে ২৫%, ব্যাটলফিল্ড ৫-এ ৩৫% ও স্ট্রেঞ্জ ব্রিগেড গেমে ৪২% পারফরম্যান্স বুস্ট পাওয়া যাবে রাডেওন আরএক্স ভেগা ৬৪ গ্রাফিক্স প্রসেসরের তুলনায়। এএমডি তাদের নতুন গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে রেসিডেন্ট ইভিল ২ রিমেক, ডেভিল মে ক্রাই ৫ ও দ্য ডিভিশন ২ এই তিনটি গেম বিনামূল্যে সরবরাহ করবে এবং এই গ্রাফিক্স


কার্ড সংবলিত গেমিং পিসিতে গেমগুলো আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকবে। আমেরিকার ডেল কোম্পানির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এলিয়েনওয়্যার এরেনা-৫১ রাইজেন থ্রেডরিপার সিরিজের গেমিং ডেস্কটপ পিসিতে এ কার্ডটি প্রথম সংযোজন করে বাজারে ছাড়া হবে।

এবার এক নজরে দেখে নেয়া যাক এএমডির নতুন গ্রাফিক্স কার্ডের বিশেষ ফিচারসমূহ, টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এবং নেতিবাচক দিকগুলো।


রাডেওন সেভেনের বিশেষ ফিচারসমূহ


১. বিশ্বের প্রথম ৭ ন্যানোমিটার চিপ দিয়ে গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে ছাড়াটা এএমডির একটি অভাবনীয় সাফল্য কারণ এনভিডিয়া এখনো ১২ ন্যানোমিটার চিপে রয়েছে। 

২. এএমডি রাডেওন সেকেন্ড জেনারেশন ভেগা আর্কিটেকচার পূর্ববর্তী রাডেওন আরএক্স ভেগা ৬৪ এর চেয়ে ভিডিও রেন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে ১.৩ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন এবং এক্সট্রিম গেমিংয়েও আগের গ্রাফিক্স কার্ডের চেয়ে ১.৩ গুণ বেশি ভালো পারফরমেন্স দিতে সক্ষম। ভেগা ২০ জিপিইউর কোডনেম হচ্ছে মুনশট (আরুবা)। 

৩. ৭ ন্যানোমিটার চিপের কারণে একই পাওয়ার ব্যবহার করে ২৫% বেশি ভালো পারফরম্যান্স দিয়েও জিপিইউয়ের টেম্পারেচার আগের তুলনায় কম রাখা সম্ভব হয়েছে। পাওয়ার সেভ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাডেওন চিল (Chill) টেকনোলজিরও অনেক অবদান রয়েছে। 

৪. এইডিআর (হাই ডাইনামিক রেঞ্জ) গেমিংয়ের অভিজ্ঞতা আরো মসৃণ ও স্পন্দনশীল করার জন্য এএমডি রাডেওন ফ্রিসাইঙ্ক টেকনোলজি বেশ উপযোগী। 

৫. ভিআর বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পূর্ণ স্বাদ অনুভব করার জন্য রাডেওন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি রেডি প্রিমিয়াম টেকনোলজি বেশ কার্যকর। 

৬. এখন সবাই নিজের খেলা গেম বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে লাইভ দেখান গেম রিভিউ বা ওয়াকথ্রু হিসেবে। তাদের জন্য কাজটি সহজ করার লক্ষ্যে গেমিং মোমেন্ট ক্যাপচার, স্ট্রিম ও শেয়ার করার জন্য রাডেওন রিলাইভ টেকনোলজি ব্যবহার করা যাবে। 

৭. কার্ডটি ডাইরেক্ট এক্স ১২, ওপেনজিএল ৪.৬ ও শেডার মডেল ৬.২ সাপোর্ট করে। 

৮. যারা একের অধিক মনিটর পাশাপাশি রেখে মাল্টি-ডিসপ্লেতে গেম খেলতে পছন্দ করেন তাদের দূর্দান্ত এক অনুভূতি দিতে আছে এএমডি আইফিনিটি টেকনোলজি। 

৯. যেকোনো গেমে ক্যারেক্টারের চুলের গ্রাফিক্স বেশ জটিল একটি বিষয় তাই চুলের গ্রাফিক্স আরো প্রাণবন্ত করতে ট্রেসএফএক্স হেয়ার টেকনোলজি দেবে নজরকাড়া সূক্ষ্ম গ্রাফিক্সের ছোঁয়া। 

১০. যাদের ৪কে ডিসপ্লে নেই কিন্তু ১০৮০পি ডিসপ্লেতে ৪কে গেমিং কোয়ালিটি কিছুটা স্বাদ পেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য রয়েছে ভার্চুয়াল সুপার রেজ্যুলেশন টেকনলজি। 

১১. কার্ডটিতে আরো রয়েছে উন্নত অপারেটিং সিস্টেম কম্প্যাটিবিলিটি, রেন্ডারিং ও হার্ডওয়্যার ইফিশিয়েন্সি পাওয়ার জন্য ভালকান এপিআই টেকনোলজি। 

১২. কানেকশন পোর্ট হিসেবে এতে আছে ১.৪ এইচডিআর ও ৪কে৬০ সাপোর্টেড এইচডিএমআই কানেক্টিভিটি পোর্ট।


টেকনিক্যাল ফিচারসমূহ


নিঃসন্দেহে রাডেওন সেভেন এনভিডিয়ার আরটিএক্স ২০৮০ গ্রাফিক্স কার্ডকে ভালোভাবেই টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ এতে রয়েছে ৪ গিগাবিট পার সেকেন্ড মেমরি স্পিড। এতে দেয়া হয়েছে ১৬ গিগাবাইট এইচবিএম২ ভির্যাম যা কিনা আর কোনো স্ট্যান্ডার্ড গ্রাফিক্স কার্ডে দেয়া হয়নি। এনভিডিয়ার টাইটান ভি গ্রাফিক্স কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে ১২ গিগাবাইট এইচবিএম২ ভির্যাম। টাইটান আরটিএক্স কার্ডে ২৪ গিগাবাইট ভির্যাম ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু তা হচ্ছে জিডিডিআর৬ মেমরি। টাইটান আরটিএক্স কার্ডের মূল্য ২৪৯৯ ডলার। দামের কথা চিন্তা করলে ১৬ গিগাবাইট এইচবিএম২ ভির্যামে গ্রাফিক্স কার্ডের বিশাল এক প্লাস পয়েন্ট। কার্ডটির মেমরি ব্যান্ডউইডথ হচ্ছে ১ টেরাবাইট বা ১০২৪ গিগাবাইট পার সেকেন্ড।


৬০টি কমপিউট ইউনিটযুক্ত ৪০৯৬ বিট মেমরি ইন্টারফেসের এই কার্ডের বেস ও পিক ফ্রিকোয়েন্সি যথাক্রমে ১৪০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ। কার্ডটির পিক পিক্সেল ফিল রেট হচ্ছে ১১৫.২৬ জিপি/সেকেন্ড এবং পিক টেক্সচার ফিল রেট ৪৩২.২৪ জিটি/সেকেন্ড। এর পিক হাফ, পিক সিঙ্গেল ও পিক ডবল প্রিসিশন কম্পিউট পারফরম্যান্স হচ্ছে যথাক্রমে ২৭.৭ টেরাফ্লপস, ১৩.৮ টেরাফ্লপস ও ৩.৪৬ টেরাফ্লপস। ৩৮৪০টি স্ট্রিম প্রসেসর ও ১৩.২ বিলিয়ন ট্রানজিস্টরসমৃদ্ধ এই গ্রাফিক্স কার্ডটি ডুয়াল স্লটের হওয়ায় তা দুটি ৮ পিনের পাওয়ার কানেকটরের সাহায্যে ডেস্কটপ পিসিতে কানেক্ট করতে হবে। ১২ ইঞ্চি আকারের এই কার্ডটি চালানোর জন্য পাওয়ার লাগবে ৩০০ ওয়াট তাই ন্যূনতম ৭৫০ ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে।


নেতিবাচক দিকগুলো


নতুন গেমগুলোর কিছু গেমের মধ্যে যেমন ব্যাটলফিল্ড ৫ গেমে এ কার্ডটি বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য নতুন গেমে এনভিডিয়ার সাথে উনিশ-বিশ পার্থক্যে পিছিয়ে আছে। অনলাইনে বিভিন্ন রিভিউ সাইটে কার্ডটির বেঞ্চমার্ক দেখলে বোঝা যায় কিছু ক্ষেত্রে বেশি পারফরমেন্স দেখাচ্ছে তবে বেশিরভাগ বেঞ্চমার্কে একটু পিছিয়ে আছে। আরেকটি দুর্বল দিকের মধ্যে রয়েছে এর ক্রসফায়ার সাপোর্ট না থাকাটা। অনেকেই কার্ডটির ডাইরেক্ট এক্স ১২ পারফরমেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এএমডির প্রসেসর ও গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর চিরাচরিত অপবাদ হচ্ছে তা বেশি পাওয়ার কনজ্যুম করে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কার্ডটিকে আরো পাওয়ার ইফিশিয়েন্ট করতে পারলে ভালো তাদের এই দূর্নামটি ঘুচতো। এনভিডিয়া তাদের আরটিএক্স ২০৮০ এর ওভারক্লক ভার্সন আরটিএক্স ২০৮০ টিআই বাজারে এনে এএমডির সাথে পারফরমেন্সের দূরত্ব আরো বাড়িয়ে ফেলেছে। কারণ আরটিএক্স ২০৮০ এর চেয়ে ২০৮০ টিআই আরো ভালো পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম। তাই এনভিডিয়াকে টেক্কা দিতে এএমডিকে আরো কষ্ট করতে হবে। এনভিডিয়ার ভি-রে ট্র্যাকিং ও টুরিং প্রযুক্তিকে টেক্কা দেওয়ার জন্যও এএমডিকে গবেষণা করতে হবে বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে।


পরিশেষে বলতে হয়, ভেগা ২০ গ্রাফিক্স আর্কিটেকচার হয়তো সামনে এএমডিকে আরো ভালো পারফরম্যান্সের গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে আনতে সাহায্য করবে। অনেকদিন পর হাই এন্ড গেমিং ও সার্ভার গ্রাফিক্সের জন্য এএমডির নতুন এ উদ্যোগ প্রশংসারযোগ্য। আর যাই হোক, প্রথম ৭ ন্যানোমিটারের চিপে প্রবেশ করাটা এএমডির জন্য একটি বিশাল মাইলফলক কারণ ইন্টেল ও এনভিডিয়ার আগে তারা এ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।